Skip to main content

Full text of "Banglay Biplabbad Ed.2"

See other formats




৮০ 
৮ 


উ/নলিনাকিশোর ই 


স্বর্গীয় তরল! সুন্দরী বনু 


স্রৃস্চি সগ্মানার্খ 

পৃষ্যাক সংগা 
বঙ্গ সাহিতা পবুহছ 
পপ নাথ বু) 









আর্য সাহিত্য ঘবজ্ 
কঙেড় ইট মাকে, কলিকাতা 


প্রকাশক-- 
শ্রীবারিদকাস্তি বস্থু 


দ্বিতীয় সংস্করণ 


মাঘ, ১৩৩৬ 


মুাধর--শান্তকুমার চা 


দীম আড়াই টাকা *.. বাণী প্রেস 
৩৩-এ,. মদন মিত্র লেন, 


উতুনর্প 


মাঃ বাংলার বিপ্রবযুগে বাংলাকে মন্থন করিয়া] বিষ 
অমৃত ভগবান উঠাইয়াছিলেন, কিন্তু দে হলাহুলঃ ছুঃখ- 
বদনা নীরবে বাংলার মায়েদেরই আক পান কনিতে 
ইয়াছে। বাংলার ত্র যুগের ব্যথার বড় অংশই গ্রহণ 
রিয়াছিল, বাংলার অসংখ্য তরুণ যুবকের মায়েরা ! মাঃ 
মি আজ পরলোকে, অনেক মাই পরলোকে। কিন্ত 
হলোক ধা পরলোকের ব্যবধান সন্তানের কাছে মাতৃত্বের 
হিমাকে ছোটও করে নাঃ অস্পষ্টও করেনা। যাহাদের 
থা এখানে থাকিতে অনেক শুনিয়াছ, যাহাদের জন্ত 
“কটা মস্ত দরদ নিজের বুকে পোষণ করিতে, সত্য হউক 
ঘথ্যা হউক, বাহাদের চাইতে “ভাল ছেলে” বলিয়া কাহাঁকেও 
নে করিতে না, সেই বিপ্লববাদীদের প্রসঙ্গে লিখিত আমার 
ই “বাংলায় বিপ্রববাদ”, তোমার ও সেই সঙ্গে আর সব 
ীবিত ও পরলোক-গত মায়েদের শ্রীচরণে উৎসর্গ করিয়! 
স্ত হইলাম। যাহারা সন্তানদের অত ব্যথার দান নীরবে 
হণ করিয়াছেন, প্রত্যাখ্যান করিতে পারেন নাই, তাহারা, 
যোগা হইলেও, সন্তানের দান বলিয়াই “বাংলায় বিপ্লববাদ, 
হণ করিবেন, জানি / ইতি-- 


তোমাদের”. 
নলিনী 


দ্বিতীয় সংস্করণের নিবেদন 


“বাংলায় বিপ্রববাদ' দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হইল । পাঠক- 
দের এবং প্রকাশকের বথেষ্ট চাহিদা ও তাগিদ থাক! সর্তেও আমারই 
'অনবসর জন্ত পাঞলিপি প্রস্তুত করিতে সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত 
5ওয়ায় এই সংস্করণ প্রকাশে অনেক বিলম্ব হইয়া গেল। 

বাংলার বিপ্লব আন্মোলনের মর্ম কথাটি প্রকাশ করাই আমার 
উদ্দেশ্য ছিল প্রথম সংস্করণে মেই চেষ্টাই করিক্লাছি, দ্বিতীয় 
সংস্করণেও তাহাই করা হইয়াছে । সেই মন্দ কথাটি--তাহাদের 
কর্ম, চেষ্টা, তাঁগ, হুঃখ, ভুলঃ ভ্রান্তি সকলের অন্তরালে দেশ 
সেধার পরম আকুতি । তাঁহাচের বাহিরের প্রকাশের অন্তরালে 
যে তন্তু ও সত্য ছিল তাহার বথার্থ পরিচয় দিতে হয়ত সক্ষম 
হইয়াছি, হয়ত হই নাই; কিন্তু দেশকে স্বাধীন করিবার আকুল 
আগ্রহে যে তাহারা ঘর ছাড়িয়াছিল, পথে পথেই বাস! বাধিয়াছিল, 
সঙ্গীর 'অদশনে, পতনেও পথ ছাড়িয়া গৃহে ফেরে নাই? পথের 
কণ্টকে রক্তাক্ত চরণ বিদ্ধ করিয়াছে--আন্দোলনের এই মন 
কথাটিই বক্তব্য, তাহাই বলিয়াছি। 

ইতিহাস লিখিবার "মত করিয়া! “বাংলায় বিপ্লববাদ” লিখি 
নাই, তাই ব্যক্তি ও ঘটনার হিসাব যথাবথ ভাবে করি নাই, 
অনাবশ্ঠক বলিয়াই রূুরি নাই। আমীর বক্তব্য বিষয়টি, বিপ্লব 


আন্দোলনের মন্ম কথাটি প্রকাশ করিতে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই 
ব্যক্তি” ও “ঘটনার আশ্রয় লইয়াছি। 

বর্তমান সংস্করণে কিছু পরিবর্তন হইয়াছে, বহু বিষয়বস্তুও 
বাড়িয়াছে। 


বিনীত 
গ্রন্থকার 





প্রথম সংস্করণের নিবেদন 


“বাংলায় বিপ্রববাদ” পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইল । “শঙ্ঘে? 
ইহার কতকট। বাহির হইয়াছিল, সবখানি হয় নাই । বিপ্রবযুগের 
সঠিক ইতিহাস 'আমি লিখি নাই । লেখা সম্ভবও নহে । বিপ্রব- 
বাদের 'অনেক খবরই নানা! ভাবে প্রচারিত হইয়াছে । সংবাদ পত্র 
ও পুলিশের রিপোর্ট, প্রচলিত জনরব, কোন কোঁন রাজনৈতিক 
মামলার বিবরণী, বিপ্রবধুগের স্বীয় ব্যক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা 
এবং রৌলট কমিটির রিপোর্টের উপর নির্ভর করিরা বিবৃত ঘটনাগুলি 
সাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছি । কোথাও ভূল থাকিতে 
পারে--তবে তাহাতে বিশেষ কোনও ক্ষতি হইবে না, কেন না 
আমি যাহা দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি তাহা ইতিহাস নহে, বিপ্লব, 
বাদের অন্তনিহিত কতগুলি ভাব । অনেকেই বিপ্লবষুগকে সরাসরি 
ভাঁবে বিচার করিয়া, সেটা ভাল কি মন্দ, ইহা এক নিংশ্বাসেই 
রলিয়। ফেলে, কিন্তু বিষয়টা সত্যই অত অনায়ামে ধরা যাঁয় না। 
প্রকীশটাই সংসারে সবখানি কথা নহে-- প্রকাশের অন্জরালেও 
সময়ে অনেক সত্য আত্মগোপন করিয়া থখাঁকে-সে কথা 
না জানিলে, যাহ! প্রকাশ হইয়াছে, তাহারও সত্যকার রূপকে 
ধর! বায় না । এই ধারঙ্কার বশবন্তী হইয়াই বিপ্রববাদের তথা বিপ্লব- 
যুগের কতগুলি দিক দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি । বিপ্লবযুগকে তা 
ব! মন্দ বলিবার কৌন উদ্দেশ্যে এই গ্রন্থ লিখিত নহে । গ্রন্থ লিখিবার 


উদদেস্ত ভূল ত্রান্তি,..দোয় গুণ “সহ দেশবাসীর কাছে বিপ্লবযুগকে পরি 
চিত করা । ধাহার! মেই'যুগর্ষে নিছক প্রশংসা করেন, আর যাহারা 
সে ধুগকে নিছক দিন্দার্থ মনে করেন, তাঁভারা সেই ঘুগের সত্যকার 
পরিচয় পাইলে, প্রশংসা করিতে বা নিন্দা, করিতে হয়ত নার 
একটু বিবেচন! করিবেন। 

বাংলার বাহিরের বিশেষ কোন কথা আমি লিখি নাই। 
বাংলার বিপ্লববাদীদের কথাই আমি প্রধানত বলিয়াছি। বাক্তিগত 
ভাবে কোন বিপ্লববাদীর জীবনকথা বলি নাই। সমগ্র 
ব্যাপারটাকে ফুটাউয়া তুলিতে স্থানে স্থানে ব্যান্তগত ছুই চারটা 
কথা বলিয়াছি মাত্র । 

বিপ্লববা্দীদের জেলভোগের কোন পরিচয় দেই নাই । ভবে 
জেলভোগটা বিপ্লববাদীরা কে কেমন ভাবে গ্রহণ করিও 
তাহার পরিচয় দিতে, ঢাকা জেলের সামান্ত পরিচয় দরিয়াছি | 

পলাতক নলিনী বাগচার কথা শ্রীযুক্ত সতীশচন্ত্র পাকড়াশ। 
লিখিত বিবরণী ভঠতে গ্রহণ করিয়াছি । সিডিশন কমিটির 
রিপোর্ট হইতেও অনেক সাহায্য পাইয়াছি। পধিশিষ্টে লিখিত, 
অভিযোগের কথা, 19061, 1১10১ 45101100138281 
90712 ও 15051511027 প্রকাশিত তদস্থ কমিটির মন্তব্য 
হইতে সংগ্রহ করিয়াছি। ইহাদের সকলের নিকটই 'আমার 
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি । 

্ীনলিনীকিশোর গুছ 
জ্যৈে্, ১৩৩০ 


[স্ব্গীয়া-তরলা নুন্দরী বন্ধু 
পি স্মৃতি সন্থানার্থ 
পুস্তক সংগ্রহ 
বঙ্গ সাহিত] ৮বিষৎ 
ছানা নাথ বনু। 












লাংলাম্ ভ্িগ্পহ্যল্াদ 





উপক্রমণিকা। 


বাংলার কবি শিখ জাতির ইভিহান ঘটিরা একটা দত 
পাইয়াছিলেন। ছন্দো-বন্ধে তাহাই ফুটাইয় লিখিয়াছেন-- 
“এসেছে দে একদিনঃ 
লক্ষ পরাণে শঙ্কা না জানে, না রাখে কাহারো খন, 
জীবন মুত্যু পায়ের ভৃত্য, চিত্ত ভাঁবনাহীন।” 
কবিরই জীবনকালে, তাহীবই স্বদেশে গ্রদেশে, এই কথাটা 

সাণ্চক হইল, ছনঃ মূর্ত হইয়া উঠিল। “লক্ষ পরাণে-শঙ্কা না 
জানে, না রাথে কাহারো খণ”--মসে মতা যে কেমন ধারার তা 
বাংলার' বিপ্লববাদীদের জীবন-থেলীয় (১৯০৬--১৯৯৭ পর্যন্ত ) 
দেশবামীরা গ্রত্যক্ষ করিলেন। 


২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


এমন আপন-ভোলা, এমন হিসাব নিকাশে অবুঝ অনভিজ্ঞ 
মানুষ__ যাহারা দেশকে পাইয়া আপন ভূলিয়াছিল, রাখিয়া ঢাকিয়া 
কিছু করিতে পারে নাই, দেশের হিসাব নিকাঁশ বুঝিতে গিয়া আর 
সব হিসাব নিকাশ ছাড়িয়ছিল, গুনিয়া গুনিয়া পা না ফেলিয়া 
একেবারে মৃত্যুর দ্বারে গিয়া অত সন্ধানে পাঁয়তীঁড়া অভ্যাস 
করিয়াছে,_ থাঁহারা নামের ব্যাঁধিকে মন্ত্রগুপ্তিতে নিঃশেষ করিয়াছে, 
প্রকাশকে লুকাইয়া উপেক্ষা ও অবহেলা করিয়াছে-_তাহাদের 
এই মৃত্যুরক্ষের জীবন-খেলা কেহ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখে নাই । 
সেই অজ্ঞাত অথচ কর্ম্বহুল জীবন-ভঙ্গীর একটু ছারা-চিত্রও 
তে। কেহ রাখে নাহ! আর সত্য সত্য, তাহা বাখাও যায় না, 
যাঁহাদের খবর তাহাদের কাছ হইতে না পাইলে পাওয়া যায় না, 
ভাঁই বন্ধুও ঘাহণদের জীবন 'ও গতির সহিত 'অপরিচিত বা পরিচয় 
রাখে নাই, দেশবাসী দূর হইতে যাহাদের "ধু লক্ষ্য করিয়াছে, কিন্ত 
পরিচয় লইতে সাহসী হয় নাই; যাহাদের আপন জনে ছাড়িয়াছিল, 
অথচ, যাহারা সেই 'আঁপন জনেরই মুক্তি ক্রয় করিতে আপন 
জন হইতে দূরে, দূর হইতে দূরে, তাহাদের জ্ঞানের বাহিরে গিয়াই 
সাধনায় লি ছিল, তাহীদের ইতিহাস লেখা চলে না; আমরাও 
সে ইতিহাস লিখিব ন1। ঘাহারা ঘরে বাহিরে লাঞ্ছিত হইয়াও 
সেই লাঞ্ছনাকেই তাহাদের সান্বনীর বস্তু ক্ররিয়া তুলিয়াছিল 
যাহাঁদের লাঞ্ছনাকে দেশবাসী উৎসাহিত করিয়া, সন্মান করিয়। 
সহ করিবার মত গৌরবের সামগ্রী করিয়া তুলে নাই, যাহাদের 
অগ্র পশ্চাতে ০9০717£ ০:০৬ জয়ধ্বনি করে নাই--বাহার| 


উপক্রমণিকা ৩ 


জেলে নির্বাসনে বাঁইতে বা তথ হইতে ফিরিয় আসিতে 
দেশবাসীর বাহবা পাঁয় নাই, হয়ত খুব বেণী, খবরের কাগজে শু 
খবর (2০৬5) মাত্রই বাহির হইয়াছে--ফীসি-কাষ্ঠে ঝুলিলেও 
বাহাদের জন্ক এক ফৌটা চোখের জল ফেলিবাঁর সামর্থাও 
দেশবাসীর হয় নাই,-বুদ্ধিমান অভিজ্ঞদের কথায়, যাহারা কেবল 
ভুলই করিয়াছে, সেই ত্রীন্তি-পথের মৃত্যু-ঘাত্রী এমন অন্তত 
মাষগুলির কথা কেমন করিয়া বলিব? 

যাহারা নির্বাসন, জেল ও দ্বীপান্তির হইতে রুগ্ন, ভগ্র-দেহে, 
দেশে কোনরূপ উত্তেজনার সৃষ্টি না করিয়া! নীরবে, দেশবাসীর 
দৃষ্টি আকর্ষণ না করিয়া ফিরিয়া আপিয়াছিল, সেই নিন্দা-প্রশংসার 
অতীত মানুষগুলির কথা আজ কেন লিখিতে বসিলাম, সে 
কৈফিয়ৎ দিতে হয় পরে দিবং তবে তাহাদের কথা জানা ও শোন! 
ভাল, তাহাতে এই নাম যশের কাঙ্গাল আমাদের মঙ্গল হইবে । 

বাংলার বিপ্লববাদীদের, দেশবাসী সাধারণ ভাবে 4502101019 
অর্থাৎ অরাজকপন্থী আথ্য। দিয়াছিলেন ; কিন্তু ইংরেজ কর্মচারীর 
তাহাদের কাধ্যকলাপ ব্যাপকভাবে জানিতে পারিয়া বলিয়- 
ছিলেন-ইহারা কেবলই £৮1810৮50 অরাজকপন্থী নহে, ইহারা 
ত্বাধীনতীপ্রয়াসী, বিপ্রববাঁদি । 

বাংলার বিপ্লববাদীর! হয়তো ভূল করিয়াছিল, হয়তো ভ্রান্ত 
ধারণাঁয় পরিচালিত হইয়াছিল, কিন্ত এ যুগে স্বাধীনতার মুস্তি 
তাহারা যে অন্তত কল্পনা করিতে পারিয়াছিল সে বিষজ়্ে 
সন্দেহ নাট । 


৪ বাংলায় বিপ্লববাঁদ 


তাহারা যাঁহা চাহিয়াছিল সেজন্য তাহারা কতখানি দিতে 
পারিয়াছে, কতখানি দিতে পারে নাই, কতখানি বার্থ হইয়াছে, 
কতখানি সফল হইয়াছে, তাহা জাঁনিতে হইলে, তাহাদের ভিতরকার 
সত্যটির অনুসন্ধান করিতে হইবে। তাহাদের বাহিরের প্রকাঁশটার 
অন্তরালে কোন্‌ বন্তটি লুকাইয়া আছে,__তাহাঁর সন্ধীন পাইলেই 
বুঝা যাইবে ইহার কতখানি সতা কতখানি মিথ্যা । একেবারে 
লুকাইয়! লুকা ইয়া কাঁহাকেও জানিতে না দিনা মৃত্যুর দ্বারে .গিয়াও 
যাহারা আত্মগোপন করিতে পারে, তাহাদের এ গোপন বাপারটির 
মধ্যে কেবল কি সংসাহসের অভাবজনিভ ভীরুভাঁর প্রানি 
রহিয়াছে না আরে কিছু আঁছে-_তাহও "আমাদের জানিতে 
হইবে। এই জানায় আমরা কতখানি শিখিতে পাবি, কতখানি 
ভুলিতে পারিব, তাহার বিচার পরে করা বাইবে। 

এমন ঘটনাও জানা গিরাছে,উতয় পক্ষের (পুলিশ ও 
বিপ্লববাঁদী ) সাক্ষাতের ফলে দুই দিকেই খুলি চলিল ........ 
বিপ্রববাদী আহত অবস্থায় হাসপাতালে শায়িত পুলিশ নাম লইতে 
ব্যগ্র--9175 05017720100, ফুহাকালীন জবানবন্দী চাহে । 

মৃত্যুশয্যাশীরী বিপ্রবনাঁদী অসহ্য যগ্রণা পহা করিয়া আসন্ন মু্যুকে 
অপেক্ষা করিয়া আছে । অপরে বাগ জানক, সে নিজে জানে 
দেশহিত ব্রতে উদ্ধদ্ধ হষ্টয়াই সে জাজ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিতেছে । 
তাহার এই ধারণার মধ্যে আম্ম-প্রবঞ্চনাব লেশমানও নাই । 

বাহাই হউক, জীবনের এমন শেষ সনে সাধারণ ব্াঞ্চি 
আত্মগোপন করিতে পারে না, বরং মাত্বগ্রকাশ করিয়! ধাঁয়। 


উপক্রমণিকা ৫ 


ইচ্ছা হয়ঃ তাহার কাধ্যাবলী দেশবাসী সম্যক বুঝে। যাহাদের 
জন্ সে মরিতেছে তাহারা জানুক যে, তাহাদের জন্তই সে প্রাণপাঁত 
করিল । এমন ধারার ইচ্ছাই সাধারণ মানুষের হয়। কিন্ত 
বাংলার বিপ্রববাদীদের আত্মগোপন-ভঙ্গী সাধারণ নহে ; শিক্ষা ও 
সাধনা ভিন্ন তেমন আত্মগোপনে সামর্থ্য আসে না। মৃত্যুর 
সময়েও ইচ্ছী নাই, কেহ তাঁহাকে জান্নক, কেহ তাহার “মূল্য 
বৃঝুক--কোন 16552755 নাই,--80775160) 81100170160 
70911)0৮ই সে যাইতে চান !-- 

তাই মৃভাশধ্যাশায়ী বিপ্রববাদীর ক্ষীণ কণ্ঠে উত্তর বাহির হুইল, 
1)07,0 01515751606 416 069091011) :--বিরক্ত কর না, 
আমাকে শান্তিতে মরতে দাও । 

পুলিশ নানা ভাবে চেষ্টা করিল;--বলিল, নামটি বল,_বাড়ী 
কোথায়? বিপ্রববাদীর একই উত্তর 1070 01581, 016855 
1511০ 019 [১৪০50119-- অনুগ্রহ ক'বে শান্তিতে মরতে দীও. 
গোলমাল কর না।-- 

একবাৰ স্থির হইয়া এমন মৃত্যুর মহিমাঁর কাছে আমাদের নাম 
যশের আকাজ্ষার কথা ভাব, আর বুঝিতে চেষ্টা কর, কেমন 
কনসিয়া তাহারা আত্মধিকাশ করিয়াছে । জীবনের সমস্ত আশা 
ভরসা অপূর্ণ রাখিয়া সংসার হুইভে নিশ্চিহ হইয়া গিয়াছে, 
প্রতিষ্ঠার একবিন্দু কামনাও রাখে নাই | মৃত্যুর দ্বারে গিয়া 
যেখানে প্রকাশের ভয় নাই সেখানেও খ্যাতিকে প্রত্যাখ্যান 
করিষাই শান্তিতে মরিয়াছে। নিজের কর্মে নিজের তৃষ্চি হইয়াছে, 


৬ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


তাই অপরের অপেক্ষা না রাখিয়াই, আত্মগ্রসাদের শান্তিতে মরিতে 
চাঁহে.। জগতে. অর চাওয়ার কিছুই নাই, কেবল দেওয়ারই সে 
মালিক। এ আত্মগোপনকে কি বলিব ? ঘধাহা বলিতে হয় বল, 
কিন্তু ইহা অপূর্ব ! 

এই বেজাদপি কঠোরাণি মুছুনি কুগমাদপি লোকগুলির 
চরিত্র যে কেমন করিয়া! এমন মদ্ুত হউয়া পড়ডিয়াছিল, তাহা 
বাংলার বিপ্রববাদীদের ক্রনবিকাশের ধারা জানিতে পারিলে 
সম্যক বুঝা যাইবে। 


স্বরগীয়া তরল! সুন্দরী বন্দু 
স্মৃতি সম্মানার্থ 
পুস্তক সংগ্রহ 

বঙ্গ সাহিত্য পরিষৎ 

নিতেন নাথ বক্র । 














প্রথম পরিচ্ছেদ 


বাংলায় মাল মসল। ছিল 


একটা জাতির উঠা-পড়া, বাচা-মরা কাহারো অনুগ্রহে হয় নাঃ 
নিগ্রহেও হয় না-সে বাঁচা-মরার একটা নিয়ম 'আছে। সেই 
নিয়মের ব্যত্িক্রমে আমরা মরিও নাই বাচিবও নাঁ। 

মতুকে বরণ করিয়া 'অনেক জাতি বাঁচে আবার বাচাকে 
'বকড়াইয়া থাঁকিয়। অনেক জাতি মরে। ভোঁগকে ত্যাগের দ্বারা 
সত্য করিয়া তুলিতে হয় ; সেই খবর না! জানিলে, ভোগ সম্ভব হয় 
না। উপনিষদে আছে “তেন ত্যক্তেন ভূ্্ীথা ॥, 

- ক্বদেশীবুগের বাঙালী ত্যাগের মন্ত্র উচ্চারণ করিয়াছিল | সেই: 
ত্যাগ-মন্ত্ে দীক্ষিত হইয়াই বাংলার যুবজন শেষে বিপ্রবাঞ্জিতে 
বপাইয়া পড়ে। সেই আগুনের খেলায় জীতিহিসাবে বাঙালী 
তথা ভারতবাসী সায় দেয় নাই । সম্রাট পঞ্চম জঞ্জ ইহাদের উদ্দেশ 
করিয়া বলিয়াছেন--৬2০ ঠা 00910 956917555 09£ 090110521 
[১05755512৬৩ 0:৩7 0০ 1৬শকিস্ত সেই “আইন ভঙ্গ 
যে কেমন ধারার তাহা অনেকেই জানে না। 

( বাংলায় বিপ্লববাদ সাধারণতঃ ও মুখ্যতঃ ইংরেজী শিক্ষিত 
ব্যক্তি ছার! প্রচারিত হইয়া নব্য বাঁডালী-সমাজে বিস্তৃত হইয়াছিল, 


৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


তাহা অতিক্রম করিয়া বাংলার সাঁধারণ মনকে স্পর্শ করে নাই, 
করিতে পারে নাই।) 

( রাষ্ীয় বিপ্লব একটা জাতিতে হঠাৎ সম্ভব হইয়া উঠে নী; 
তাহার গোড়ায় আরো অনেকখানি কথা থাকে] বাংল দেশে 
বিপ্রব আরম্ভ হইত না ঘদ্দি বিপ্রবের যোগ্য মন বাংলার 
শিক্ষিত সমাজ পূর্বাহ্থেই প্রস্তত করিয়া না রাখিত। “স্বদেশীর'ও 
বু পুর্বে মনের দ্দিক দিয়! বাঙালী “বিপ্লববাদী+ হইয়া পড়িয়াছিল। 
এই খবরটি না রাখিলে বাঁডালীকে কিন্তু সম্যক বুঝা বাইবে 
না। ধন্শে, সমাজে, শিক্ষায় সেই বিপ্লব সংঘটন হইয়াছিল বলিয়া 
বাঙাঁলীর মনেই স্ববপ্রথন এই বাষ্্ীয় বিপ্রদের আকাঙ্কাও জাগিয়া 
উঠিয়াছিল। 

এঁষে নদীয়ার আঙ্গিনায় গোরাঙ্গটা নাচিয়াছলেন, তাহার 
প্রভাবে বাডালীর সাহিত্য সাজ ও ধর্খী বে কোন্‌ বিচিত্র নবীন 
রাগে বাঙ্গা হইয়া উঠ্িয়াছিল-_মাঁচুষকে শেঠ করিয়া দেখিবার যে 
গণ্তীকটি। গতি সে বুগে বাঁঢালীকে পাগল করিয়াছিল, - বাঙালী 
সে সন্ধান কতটা রাখে, জানি না। স্তাঁভাৰ পরধন্তী যুগে রামনযোহন, 
বিষ্াসাগর পুরীতনের বন্ধনকে ভাঙ্গিবার থে আয়োজন আরম্তু 
করিয়া দিয়াছিলেন,_এই যে যুক্তির ন্দক্ত সে যুগের ব্যাকুলতা, 
এই যে বন্ধনকে, অবসাঁদকে, ভীনতা ও মিথ্যাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিতে 
ধন্মঃ সমাজ, সাভিত্য ও শিক্ষায় বিদ্রোহ--এথানেই বিপ্লবযোগ্য 
মনের পত্তন। একদল বাগালী স্বদেশীযুগে এই মনের জোরেই 
বিপ্লব পথে ছুটিয়া রাষ্ট্রীয় মুক্তি অর্জন করিতে চািয়াছিঙ্ | 


বাংলায় মাল মসলা ছিল ৯ 


( ধর্শে, সমাজে, রাষ্ট্রে ও সাহিত্যে খন মানুষ মুক্তিকে চাহে, 
তখন সকল সময় সে মাত্রা ঠিক রাখিয়া চলিতে পারে না) মুক্ত 
হইবার ব্যাকুলতায় সে গণ্ডা কাটিয়াও চলে। নব্য বাংলায় সে 
গন্ভতীকাটার যুগ ঠিক কবে আরম্ভ হইয়াছিল বলা না গেলেও 
একথা বলা চলে যে, ডিরোজিওঃ রাঁমতনু, বরাজনারায়ণ প্রভৃতির 
যুগেই সেই ভাঙ্গার হুত্রপাত হয়। নূতনের নেশায় পুরাতনকে, 
মুক্তির আগ্রহে বন্ধনকে ভাঙ্গিবার ও ছিন্ন করিবার উন্মাদনা সেই 
সময়কার যুবজনের চিন্ত আক্ুষ্ট করিয়াছিল । সেই ভাঙ্গার মুখে 
তাহাদের যে ত্যাগ ও দৃঢ়তা দেখি) তাহা! কেবলই উচ্ছঙ্খলতা 
বা ভ্রান্তি বলিয়া মনে করিতে মন সরে না; সেখানেও তাহাদের 
মুক্তির বাসনায় ব্যাকুল টাটকা তাজা চিত্তগুলি জাতীয় সম্পদ 
হইয়াই রহিয়াছে! জোর করিয়া “অভক্ষ্য” তক্ষণে উচ্ছ,ঙখলতা 
থাকিতে পারে, কিন্ত ঘুক্ত হইবার ভ্রান্ত বাসনাকেও শ্রদ্ধা না করিয়া. 
পারা যায় না। বাঁঙাঁলীকে জানিতে হইলে বাংলার সেই ভাঙ্গার 
অধ্যায়ট।ও আমাদের জানিতে হইবে। / 

( রামমোহন, বিদ্ভাসাগর। রামকৃষ্ণ বিবেকানন্ব সকলেই জাতির 
কাছে নানাভাবে সেই এক 'মুক্তি-ই প্রচার করিয়াছিলেন। বন্ধনহীন, 
মুক্ত, তাজা মন তাহাদের শিক্ষায় গড়িয়! উঠিয়াছিল। উত্তরাধিকার 
স্ত্রে সেই মনের মালিক ইয়াই বাংলার যুবজন দেশাত্মবোধের নৃতন 
ধারায় মাতিয়। একেবারে এক অপুবব পথে যাত্রা করিয়া বসিল।+ 

সে পথের আদি মধ্য অস্তে যে কত অদ্ভুত কমন, কত কঠোঁর 
ব্যথা, কত রক্তাক্ত*স্বতি রহিয়াছে, দে পথে যে কত দেবতা- 


১০ ংলাঁয় বিশ্লববাদ 


অপদেবতার মিলন ঘটিয়াছে, স্বর্স-নরক এক সঙ্গে পাশাপাশি 
্াড়াইয়াছে, তাহাঁও সেই বন্ধুর দুর্গম পথের বিস্ৃত পরিচয়কালে 
আমরা প্রতাক্ষ করিতে পাঁরিব। 

বাংলার বিপ্লববাঁদীদের এই স্থদীর্ঘকালের কাধ্য-প্রণালীর মধ্যে 
আর-একট! জিনিষ বুঝিতে পাঁরিব, তাহা এই, যে উদ্দেশ্য লইয়! 
একটা জাতি প্রথম জাগে; নানা অবস্থায় পড়িয়া, কর্মক্ষেত্রের নানা 
অভিজ্ঞতায় কিন্তু সেই উদ্দেশ্য ছাড়িয়া ক্রমে বৃহত্তর উদ্দেশ্য, বুহততর 
আদর্শে সেই জীঁতি অনুপ্রাণিত হয়। তদানীন্তন বাংল কোন্‌ 
উপলক্ষে, কোন্‌ মূল সুত্র অবলম্বনে জাগিয়া ক্রমে কোথায় গিয়া 
ঈাড়াইয়াছিল, তাহাও ঘটন! বিবৃতি কালেই প্রকাঁশ হইয়া পড়িবে । 

জাতির ধর্ম, সািত্য, সমাজ বিগ্রববার্দীদদের কাছে যে একটা 
স্বতন্ত্র রূপে দেখা দিয়াছিল-_বাঁংলার উগ্রপন্থী-মধ্যপন্থী বাঁজনীতি- 
'বিদগণের, বাংলার সংরক্ষণশীল গৌড়া এবং উদীরনীতিক সমাজ- 
সংস্কারকগণের কোন একট! মতই বে তাশ্ারা পরম সত্য বলিয়া 
মানিয়। নিতে পারে নাই, এদিকেও তাহাদের চিস্তাদারা থে একটা 
হ্বতন্ত্র পথ ধরিয়াই চলিয়াছিল, তাচাও এই ইতিহাস আলোচনায় 
কতকটা বুঝ! বাঁইবে। 


দ্বিতীয় পরিচ্ছদ 


সুচনা 


রধ-জাঁপান যুদ্ধ বাংলার জাতীয় জাগরণের গোড়ায় কতখানি 
কাজ করিয়াছে ভাহা 'আঁজ বুঝা শক্ত বটে, কিন্ত বড়র সঙ্গে ছোট 
বিরৌধ বলিয়াই হউক বা এসিয়াবাসীর সঙ্গে ইউরোপের গুবল 
রাজশক্তির লড়াই বলিয়াই হউক, আমাদের সহান্তভূতি কিন্তু 
স্বভাবতই জাপানের উপর গিয়াছিল এবং সেইখানেই যেন বাঁউণলীর 
মনেও একটা ক্ষীণ আশা জাঁগিয়াছিল। এবং ক্ষুদ্র জাপাঁন 
যেমন রুষকে পর্াভব করিফ়াছে তেমনি গুপ্ত সমিতি স্থাপন করিয়া 
আমরাও-ইংরাজকে শেষে পরাভূত করিতে পারিব এমন আশাও 
কারো কারো ছিল। জাপানের উপর সহানুভূতিতে বাঙালী একটা 
27200121200 0901033 পধীন্ত খাঁড়া করিতে উদ্যত হইল | এ সময়ে 
এবং তাহার কিছু পুর্ব হইতেই শরীর-চচ্চার দিকেও একদল লোক 
বেশ নজর দিলেন । শ্রীধুক্তা সরলা দেবী, স্বগীয় পি, মিত্র প্রভৃতির 
উৎসাহে তেমন একটা! দলও গড়িয়া! উঠিলল। সেখানে আত্মরক্ষার 
নানাবিধ কৌশল ও লাঠিখেলার চেষ্টা চলিতে লাগিল। তখনকার 
শরীর-চচ্চা কিন্ত সাধারণত রাস্তাঘাটে রেল-টিমারে, গোরার 
অত্যাচার হইতে আত্মরক্ষার নিমিভই চলিয়াছিল। এ লাঠি" 


১২ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


খেলা ও আঁখড়ার সঙ্গে এ সময়ে গুপ্ত সমিতির কল্পনা এবং 
তাহ। গড়ার চেষ্টা চলিতেছিল। তবে তাহাদের কোন বিশেষ 
কাধ্যকলাপ তখনও দেশে প্রত্যক্ষ হয় নাই--দ্ুই চার দশজন 
সভ্যই হয়ত ছিল। কল্পনায় আকাশকুনুমও খুব গড়া হইত। 
তরোয়ালের প্রতিনিধি লাঠির ভ'জের কৌশলে, আর আনন্দমতের 
ছত্রে ছত্রে তখনই একদল বাগালী স্বাধীনতার স্বপ্র দোঁথিতে 
লাগিল। তখনো! কেবল মনের মধো, বন্ধুর সঙ্গে, গল্পে সময় মত 
ও ঘটন! চক্রে এক-আধবার স্বাধীনতার অসম্ভব রকদের জঙ্না-কল্পনা 
চলিত । বলা বানল্য তখনো সেটা কার্যে পরিণত করার কোন 
চেষ্টা চলে নাই। এই সময়ে, স্বদেখা আন্দোলনের অব্যবহিত পূর্বে 
বোমাওয়ালাদের কয়েকটা বিপ্রবকেন্তও স্থাপিত হইয়াছিল । অগচ 
তাহাও ব্যাপক কিছু নহে, দুইন্চারদশজন লইয়া শলা-পরামশ 
মাত্র । 5০০০6 50921515, পু সমিতি গ্রাপনেহ চেষ্টা মাত্র। 
ব্যাপক 9:07)182560) বাঁজীকে বলে, তখন পধ্যন্ত তাহার কিছুই 
নহে । ভঙ্গ ব্যাপারে স্থদেশা আন্দোলনের যে ফুত্রপাত হয়, 
তাহা হইতেই দুখ্য ভাবে বাংলার বিপ্লববাদের সুচনা ও তাহ! প্রসার 
লাঁভ করিতে থাকে । শ্তরাং প্রধানত ্বদেশী আন্দোলনের আমল 
হইতে আমরা কথা আরম্ভ করিব । 

বুঝি বড় শুভক্ষণে বাংলা দেশ বিভক্ত করিতে বড়লট কাজ্জন 
গৌ ধরিলেন। এই উদ্দেস্টে পূর্বববাংলায় সঞ্চর দিয়াও আসিলেন। 
জমীদারদের বুধাইলেন,-_কিন্ু মহারাজ কূর্ঘযকান্ত ভাঙার বাড়ীতে 
বলিলেন “আমি সমর্থন করিব না”। বাংলা গেশ সমস্বরে আবেদন 


চলা ১৩ 


করিল, নিবেদন জানাইল--“ওগো আমাদের ভাগ করিও ন11” 
কত সভাসনিতি, কত দৌড়-ঝাঁপ! সেই উচ্ছাস বাহার! দেখিয়াছে 
ভাহারাই জানে সেকি ব্যাপক উন্ভেজনা ! যখন 'আবেদন বিফল 
হইল, ক্ষোভে ঘন বাঙালী গর্জিয়া! উঠিল । «বয়কট? মন্ত্র চারিদিকে 
ঘোষিত হইল! 'দুস্লানান ভি সমগ্রবাংলা তখন.এক।( 

সকল আন্দোলনই 'মারস্ত হয় কলিকাতায়--তারপর তাহা 
লুফিয়া লয় মফঃস্বল। বাংলার লাঠিখেলা বল বোমা বল, সব 
কিছুরই আরম্ভ এইখানে । 

ভখন আমাদের ছাঁত্রজ্জাবন। পূর্ব বাংলার থেন একটু বেশী 
হজুক। "গাজিকার এ দিনেও এ স্বভাবটা তাহার যায় নাই, বুঝি 
বাইবেও না 1 “বাঙালের গৌ” নাকি বড় বিশ) ছাত্র হইলে 
কি হয়_ছাত্র শিক্ষক একসজেই আমরা না ্বদে্দী সভা করিয়া বেড়াই। 
তখন 'সঙ্লীবনী” আর 'প্রবাসী”ই বেশী স্বদেশী ছিলেন। এই, 
দুথাঁনা কাগজ "আমরা বেশী পড়িতাম | 'সন্ধা” প্রড়তি একটু পরে 
'মাসে। তখন কিন্ধ আমরা “খাটি স্বদেশী অথাৎ তখনও "অপবিভ্র" 
হই নাই, বিপ্পের বালাই রাখি না। বঙ্গভঙ্গ বদ করিতেই হইবে, 
নভুবা আমাদের মান ইত্জত আর থাঁকে না--উহাই ছিল তখনকার 
ধধান কথা । বাঁডালীকে ভাগ করিয়া ফেলিস--কি সর্বনাশ ! 
কত যুক্তি যে তখন দিতীম তাহার 'আার অন্ত নাই। সে সমস্ত কথ! 
মনে হইলে হাসি পায় । তবে বঙ্গভঙ্গে ঠিক যে কি ক্ষতিবৃদ্ধি হইল, 
তাহ! কিন্তু বুখিলাম না। না বুঝিলে কি হয় ও ত নিমিত্ত মাত্র । 
বাংলার প্রাণে যেঞ্জোয়ার 'মাসিয়াছিল সে জোয়ারে “জয় মা” 


১৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


বলিয়া তরী ভাঁসাইয়াছিল সকলেই, ভাবিয়াছে পরে । ভাল- 
মন্দ বলিব না, কিন্তু ইহাই দত্তর। যাক্‌, শ্বদেশী হইয়! কিন্তু 
প্রথমেই রৌদ্র বৃষ্টির সঙ্গে দস্তর মত 'নন্ককৌ-অপারেশন” আরম্ক 
করিয়! দিলাম । অর্থাৎ রৌদ্র বা বুষ্টি হইলে আর ৫6161706 
আত্মরক্ষার জন্ত ছাত। ব্যবহার করিতাঁম না| কেন জানি নাঃ 
স্বদেশী কাপড় পরিতে আরম্ভ করিয়াই দেখিলাম দেহথানি বেশ 
সাত্বিক হইয়াছে__চুল একটু এলেমেলো হইয়াছে, পাদুকা 'অদৃষ্ঠ 
হইয়াছে! এদেশে সাধিকভাঁর ইভা লঙ্গণ । প্রথম মিলনের 
আবেগে, কেবলই আনন্দ! শ্নিয়াছি, ছাতী বিক্রয় কমিয়া 
গিয়াছিল। নুষ্টিতে ভিজিরাই মকলে নুরেন্ধনাথ ও বাপিনচন্দ্রের 
কথা শুনিবে। দৈবাৎ যদি কেহ ছাতা মেলিয়া ফেলিত তীহাও 
এ ত্যাগের রাজ্যে তৎক্ণাত্বন্ধ। গ্রামে গ্রামে সভা-পাচ মাইল 
দশ মাইল দূরে দূরে সভা । রৌদ্র মাথায় রা থা খা মাঠের মধ্য 
দিয়া দল বীধিয়া সভায় চলিলাঁদ ;- থে আবার এ সময়েই গানের 
সুর খেলিতেছে--'নগরে নগরে জাল্রে আগুন, জদয়ে হদয়ে প্রতিজ্ঞা 
দারুণ।” সে কি বেপরোয়। 'আনন্দ--আক্গ কেবলই মনে হয় 
“তে হি নে দিবসাঃ গতাঃ1 বাহ্লার তরুণ হাদয়গুলি আজ 
তেমনি ত মাতিয়া উঠিয়াছে, আজ মাতৃম্জল শখধবনিতে তেমনি ত 
উৎফুল্ল হইয়া উঠিতেছে ; তাত 'আশা, জাভির ফাগারী তগবানই 
জীতির হাল ধরিয়া আছেন--আনরা ত নিমিন্ত মগজ ! 


তত ঠীয় পরিচ্ছেদ 


8000৯ 


দেশাত্মবোধ 


বঞ্িমচন্দ্রের মামল হইতে বাংলা দেশে বিশেষ করিয়া দেশাত্মববোধ 
জাগিতেছিল ।--ভেমচন্দ্র নবীন, র্ঙ্গলাল দেশের কথা গাছিলেন; 
--গোবিন্দ রায় আক্ষেপ করিলেন “কতকাল পরে বল ভারত রে, 
দুখ সাগর সাতাবি পার হবে-একিন্ত সে দেশাত্মবোধ বেন 
সরবীমমাজেরই একচেটিয়া ব্যাপার, জ্নসাধারণ তাহাতে মাঁতিল 
না। শেষে বঙ্গভঙ্গ উপলক্ষে সারা বাংলার একাত্মতা বুঝাইতে গিয়া 
বাঁডালী এক্যমন্্ উচ্চারণ কিল । সেইখানেই দেশাত্মবোৌধ্র জন্ম । 
তাহা পর আবেদন-নিবেদন করুণ ক্রন্দন বখন ব্যথ হইল; তখন 
বাঙালী বুঝিল, “ভিক্ষায়াং নৈব নৈব চ*। তখন আত্মপ্রতিষ্ঠার 
চেষ্টা । ক্রমে বাঙালা কেমন কতিয়া দেশাতআবোধে সু প্রতিষ্ঠিত 
ইইল,+--প্রথম জাগরণের উত্তেজনা ও বিদ্বেষের অস্তে' কেমন 
করিয়া দেশভক্তিকে আশ্রহধ করিয়া দেশমাতৃকার চরণে জীবন 
উৎসর্গ করিল, সর্ধবস্ব ত্যাগ করিয়া নবীন বাঙালী নবীন সম্গাসী 
সাজিতে বসিল --একে একে তাহা বলিতে চেষ্টা কিব। একটা 
জাতি একদিনে জাগে না; গোঁড়ায় অনেক মালমসলা ব্যয় 
করিলে তবে তাহার জাগরণের হৃঙি কুচিত হয় 1 ধে সময়কার কথ 


১৬ বাংলায় বিপ্রববাদ 


বলিতেছি, তখন একদিকে “বয়কট” আবি “পিকেটিং-এর উন্মাদনা, 
অপর দিকে বাংলার সাহিত্যিক ও কবিকুল সহম্ধারে শুদ্ধ 
দেশীআবোৌধকে ঢালিয়া দিয়া জাতিৰ চিত্তটি কানায় কাঁনায় ভরিয়া 
তুলিতেছিলেন। 

আত্মসনম্মধ্নে আঘাত পাইয়া ইংবেজের উপর ক্রুদ্ধ আবেগে 
ঘাহীর গতি, বঙ্গভঙ্গ বদ করিবার দারুণ জেদই যাহার কম্ম- 
প্রবর্তনার মূল, ইংরেজের পালণমেণ্ট ভইতে বঙ্গভঙ্গ বদের হুকুম 
আদায় কিয়! লইবাঁ জনই যাহাদের তক্জন-ণ্জ্ন--তাহারা কিন্ 
ছুই দিন পরেই আবৈদন-নিবেদন, তক্জন-গঞ্জন একই কালে 
অকিঞ্চিংকর মনে করিয়া নতন হ্ররে গান বাধিল। সে গানের 
ছত্রে ছত্রে মাতৃমহিমা কীভিত হইল, সে গানের অপূর্ব ছন্দে, 
স্থবে, মুর্ছনার দেশমা়কাঁর চিরন্তন সুষ্ি মুর্ভ ভইয়া বাঁগালীর 
কাছে প্রত্যক্ষ ভভল; সে গান বাংলার প্রাণনিংড়ানো হসে 
সিক্ত হইয়া ভাষা জননীকে পুষ্ট, স€ ও ্রেষ্গ করিল; সে গানের 
আকুল আহ্বান তরুণ বাংলাকে দু ছাঁড়াইরা পাগল করিল । 
সে-বাঁডালা বাংলা দেশকে এমন সাতা করিয়া পাইল যাহা 
সহডেই তাভার কাছে দেশ-বন্বোঠ পরিণত ভষ্টল। দেশ ঘে আর 
মাটির বন্তটিই নহে--এ বে ছাঁতির ফুগ-যুগাস্তরের সাধনার জমাট 
বিগ্রহ - এ খিগ্রহের সেবায়ই যে জীবন ধন্চ ভয়, জাবের 'অযুত লাগ 
হয়--এই ধারণা বাজার কর্দাদের মপেই থম জাগিয়া উঠিল । দে 
শুদ্ধ ভাবধারায় আবেদন নাই, নিবেদন নাই, ভঙ্জন নাক, গঞ্জন 
নাই, পরমুখাপেক্ষিতা নাই, পরবিদ্বেষ না৯-যাহা! রহিল সে শুধু 


দেশাতবোধ ১৭ 


মাতৃভক্তি--অনাবিল দেশপ্রাতি ! যাহা রহিল, তাহ! দেশমাতৃকার 
জন্য সর্ধস্বত্যাগের উদ্দাত্ত গদ্গদ্‌ করুণ আহ্বান--সে গান, সে 
সাহিত্য যে সত্য হৃষ্টি করিযাছে তাঁহা৷ অমর। বাংলার দেশাত্ম- 
বোধের আকৃতি, প্রকৃতি সে ধারায় স্থারী হইয়া রৃহিয়াছে। সে 
ভীবের ধারায় অবগাহন করিয়াই বাংলার যুবকগণ বঙ্গভঙ্গ বদ 
করাই আর দেশসবা। বলিয়া! গ্রহণ করিতে পীরে নাই--দেশকে 
মনাতন ও নিত্যনৃত্তন করিয়া এক সঙ্গেই পাইল । 
বঙ্গভঙ্গ রদ করিতে বখন বিদেশী বজ্জনের দারুণ প্রতিজ্ঞা 
লইয়া পল্লীতে পল্লীতে, নগরে নগরে বাংলার ছাত্রগণ জোর 
“পিকেটিং, চাঁলাইতেছিল, আর প্রৌটগণ বক্তৃতা দ্বারা তাহাতে 
ইন্ধন যোগাইতেছিলেন, তখনও কিন্তু বাহির-নিরপেক্ষ হইয়া 
বাঙালী দেশাজ্বোধকে একান্ত আশ্রয় করে নাইস্তখনও লর্ড 
কাঁজ্জনের হঠকারিতাই ছিল তাহাদের দেশসেবার প্রধান 
উপকরণ। 
তখন বাঙালী উদ্মাদকঠ্ে গাভিত-_- 
(সাতকোটা লোকের করুণ ক্রন্দন, 
শুনে” না শুনিল কুর্জন হুর্জজন 
তাই, নিতে এপ্রতিশোৌধ মনের মতন 
করিলাম বাঁখি-বন্ধন ।» ) 
তারপর গাহিল-- 
(নগরে নগরে জাল্রে আগুণ 
হৃদয়ে ছদয়ে প্রতিজ। দাকণ, 


১৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


বিদেশী বাণিজ্যে কর্‌ পদাঘাত 
মীয়ের দুর্দশা ঘুচারে ভাই ।” ) 
শুধু বিদেশী বাঁণিজ্যে পদাঘাত করিলেই বে মায়ের দুর্দশা ঘোঁচে 
না-__একথা বাঙালীর কাছে তখনও সত্য হইয়। উঠে নাই । কিন্ত 
দুই দিন না যাইতেই, বাংলার প্রাণে থে শ্বদেশীর শুদ্ধ সত্য ধারা 
চলিতেছিল, তাহা কবি ও সাহিত্যিকদের মুখে মুত্ত হইয়া উঠিল । 
যে রবীন্দ্রনাথ প্রস্ৃতি একদিন বিদেশার সঙ্গে তুলনা করিয়া 
বিদেশীর স্্রথ সভ্যত। সম্পদের কাছে দাড়াইয়া নিজেদের কেবলি 
ছোট ভাবিয়া দেশের ছুঃখে গাহ্রাছিলেন, "মলিন মুখচন্ত্রমা 
ভারত তোমারি”, “একি অন্ধকার এ ভারত ভূমি' প্রস্তুতি 
নানা ছুঃখ-দৈন্সের গান, সেই রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতিই দেশাম্সমবোধের 
নৃতন ধারার গাহিলেন,-- 
( “ওগো মা, তোরে দেখে দেখে 
আখি না ফেরে ।» 
“তোর ছুয়ার আজ খুলে গেছে 
সোনার মপ্দিরে।” 
€ দেশ বে দনাতন, দেশ বে কুজ্জনের আগেও "ছিল, পরেও 
থাকিবে ইংরেজ সভ্যতার সৃষ্টির আগেও ছিল পরেও থাঁকিবে-_ 
সে সত্যকার দেশ যে জীবন্ত--সেখানে 'আমার ভক্তি আশ্রয় 
করিলে আর ত সে ছোটিটি থাকে না। মাকে ত কোন অবস্থায়ই 
কেহ ছোট ভাবিতে পারে না-মাতৃত্ব নিজেই যে সভা, পূর্ণ । 
তাই অন্গতাপে কৰি গাহিলেন-- 


দেশাতঝজবোধ ১৯ 


প্যখন অনাঁদরে চাইনি মুখে, 
ভেবেছিলেম দুঃখিনী ম! 
'আছে ভাঙ্গা ঘরে একলা পড়ে, 
ছুঃখের বুঝি নাইকো সীমা”__ 

কিন্তু আজ মাকে চিনিয়াছি-_মার এশখবর্যে, মার চরণের দীপ্তিতে 
আকাশ আজ আলোকিত। 

“আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল, 

এ চরণের দীপ্তিরাশি 1৮ 
কাঙ্গাল যে আর মামি নই, তাঁহাও জানিয়াছি ; মার হৃদয়ে, 
যেখাঁনে রতন মাণিক জ্মির1! আছে, তাহারও সন্ধান পাইয়াছি। 
“কে বলে তোর দরিদ্র ঘর, হৃদয়ে তোর র্ৃতনরাশিঃ জানি গো 
তোর মূল্য জানি, পরের আদর কাড়ব না, মা ।৮ 
শুধু কি তাই ! দেশ-মাতৃকার মধ্যে বাঙালী কবি তখন বিশ্ব- 
মাতাকে সত্য করিয়া উঠাইলেন। 
| “ও আমার দেশের মাটি 
তোমার »পরে ঠেকাই মাথা । 
তোমাতে বিশ্বময়ীর, 
তোমান্তে বিশ্বমায়ের অচল পাতা” 
অনেক পমর বাহিরের কোন ঘটনা! উপলক্ষ করিয়। মানুষ ও 

জাতি জাগে--কিঞ্ত যদি সে জাগরণের উপকরণ শেষে নিজের 
মধ্যেই সে একাস্ত করিয়া না পায়, তবে তাহার জাগরণ কখনে। 
স্থায়ী হয় না। কাম্মণ বাহিরের তা।গদ, 'আঘাত তাহাকে বরাবর 


২০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


সজাগ রাখিতে পাঁরে না, কর্মের গ্যোতনা দিতে পাঁরে না) তাগিদ 
আস! চাই ভিতর হইতে, অন্তরের মণিকোটায় বে আম্মদেবতা 
রহিয়াছেন সেইখাঁন হইতে,-তবেই তাহা স্বাভাবিক হয, সত্য 
হয়, তত্র: স্থায়ী হয়। 

কথাটা হইতেছে এই, লর্ড কাজ্জনের বঙ্গভঙ্গকেই ঘাঁচার। 
দেশসেবার প্রধান ও শেষ উপকরণ করিয়াছিল, তাহারা দু 
দিন পরে যখন “আসল পথে আঁধার নেমে তখন আর দেশসেবার 
লাগিয়া থাকিতে পারিল না- কিন্তু, যাহার! বঙ্গভঙ্গকৈই আর 
দেশসেবার উপকরণ করিয়! দেখিল না--দেশকে বাহির-নিরপেক্ষ 
হইয়াই পাইল--তাহারা ঘন অন্ধকারেও পথ খু'জিল, সে আর 
ফিবিল ন!। 


পরিচ্ছেদ 


সন 


স্বদেশী আন্দোলনের আর-এক দিক 


সেই বয়কঢের পুরাদমের সময়, নেতাদের গাড়ীও খুব টান 
হইল । ঘোড়া গুলি বুঝি হতভঙ্গ হইয়া ভাঁবিল-_'এরা। ক্ষেপেছে !? 
তথ্নও ফুলের মালা, বাহবা, ধন্ত ধন্ক থামে নাই । করদিন পরেই 
যখন সরকার রুদ্রমুক্ভি ধারণ করিলেন, ১৬মুসলমানদের সহায় করিয়া 
নি্যাতন আরস্ত, করিলেন”-পূর্বব বাংলার জামালপুর প্রস্তুতি 
স্থানে মুসলমানেরা ক্ষিগ্প্রায় হইয়া হিন্দুভাইদের উপর অত্যাচার 
কৰিতেও কুঠিত হইল না--তখন আন্দোলনের গতিভঙ্গী চঞ্চল 
হইয়া উদিল। তখন অত্যাচারের হাত হইতে বঙ্গ পাইতে নানা 
স্থানে সমিতি হু হু করিয়া বাড়িয়া যাইতে লাগিল । দলবদ্ধ হইয়। 
শরীর-চচ, লাঁঠিখেলা চালাইল--দলবন্ধ হইয়া যুবকগণ নানা- 
স্বানের অত্যাচারের সন্ুথীন হইতে প্রস্তুত হইয়া উঠিল |). স্থদেশী 
সান্টোলনে মুসলমানেরা ' শুধু যোগ না দিয়াই কান্ত হয় নাই, 
বিরদ্ধতাঁও" (করিতে লাগিল। হিন্দুর মন্দির, প্রতিমা উন্মত্ত 
মুসলমানেরা ভাবিয়া ফেলিল; কুমিল্লায় ঢাকার নবাব বাহাদুরের 
গমন উপলক্ষে দাজা-হাক্গামা বাঁধাইল | একদল মুদলমাঁন হিন্দুদের 
নির্যাতন করিতে “চেষ্টা করিল, হিন্দু যুবকেরাঁও আত্মরক্ষায় বন্ধ- 


২২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


পরিকর হইল । ইংবরেজের ভেদনীতির জয় হইতে দেখিয়া দেশ ভক্ত 
হিন্দু মুসলমান সমভাঁবেই মর্খাপীড়া ভোগ করিতে লাগিলেন । 
জামালপুরে উম্মত্ত জনসঙ্ঘকে কে বাঁ কাহার। গুলি করিল ! 
বিপ্রববাঁদীরা এই সময়ে চুপ করিয়া বসিয়া থাকিল নাঁ। তাহারা এই 
উন্মাদনার অবসরে তাহাঁদের দলপুষ্টি করিয়া যাইতে লাগিল । বলা 
বাহুল্য বিপ্রববাদীরা এই বিরোধের মূল যে ইংবেজের ভেদনীতি 
এই কথাই বুঝিল। [মূদলমানদের সঙ্গে বিরবোদের প্রনুত্তি ইচ্ছা বা 
দুর্বদ্ধি তাহাদের ছিল না । তবে নাগালীকে সংঘর্ষের জন্য প্রস্থ 
ও সজাগ করিতে বুবকদের বাছিয়া বাছিয়া! দলে লইতে লাগিল) 
এই সংঘধের মধ্যে ঘে নৃতন শক্তি জাগিয়া উঠিতেছিল, তাহা 
দেখিয়! যুগপৎ রাজপুরুষেরা ৪ দেশের মাথাওয়ালা নেতারা সকলেই 
শঙ্কিত হইয়া! উঠিলেন। নেভারা বক্তা পর্য্যক্থই দিয়াছেন, কিন্তু 
সত্যই যে বাঁংলার যুবকগণ তাদের হাতভাঁড়া হইয়া ক্রমে এক 
নৃতন পথের পথিক হইয়া পড়িতেছে, ভাঁভার উন্গিত পাইয়া তাহারা 
কতকটা শঙ্কিত হয়া উঠিলেন। রান্গপুরঘৈরাও দেখিলেন, 
মুসলমানকে লেলাইয়' বা গুরখা পিটুলনীর দৌলতে বাঁঢীলীকে ঠাসা 
করা যায় না, বরং নূতন শক্তিন্ন "স্বাদ পাইয়া বাঙালী নৃতন 
ভাবে চঞ্চল হইয়া উঠিতেছে । হুঙ্মাদর্শী রাশির একথা বুঝিতে 
বেশী বিলম্ব হর নাই। ঘযাহাই ভউক, সরকার মূলে কুঠীরাখাত 
করিতে নূতন 'মাইন করিয়! সমিতি বে-শাইনী বলিয়া! ঘোষণা 
করিলেন--নানা আইনের নাগপাশে জাতিকে বন্ধ করিলেন। 
সভাদমিতিতে বক্তৃতা দেওয়ার ও বাবা পাওয়ায় কোন সুযোগস্ট 


স্বদেশী আন্দোলনের আর-এক দিক ২৩ 


রাঁখিলেন না। যাঁভাঁরা ্র্যাট্ফরম্ঠ কাঁপাইয়া কত বক্তৃতা 
দিতেন তাহারা সরিয়া গেলেন, বন্তৃতামঞ্চগুলি কয়দিনের জন্য 
জুঁড়াইল | কিন্তু সবঠাগ্ু) হইল না। পূর্বেই বলিয়াছি, বঙ্গ- 
ভঙের পুর্বেই বাংলায় কয়েকটা বিপ্লবকেন্দ্র গড়িয়া উঠিয়াছিল। 
তাহার অনষ্ঠাতারা সহাম্ভূতির আন্ভাবে তখন কিছুই ব্যাপক- 
ভাবে কৰিতে পারেন নাই । এই সমস্ত সমিতি স্থাপিত হওয়ার 
পর তাহাদের কর্মুক্ষেত্র কিছু বাড়িল।--বলা। বাহুল্য, প্রত্যেক 
সমিতির মধোই অল্প-বিস্তর উাদের প্রভাব আমিয়া পড়িয়াছিল। 

“যুগান্তর প্রভৃতি এক প্রকার প্রকাশ্তেই গুপ্তসমিতির 
প্রয়োজনারতাঁর আভাষ দিয়া চলিয়াঁছিল। সকল আখড়ার 
মোঁড়লরাই সে সমন্ত পড়িত ও পড়াইত। এই ভাবেই নানা 
কেন্দ্রে, কোথাও সাহিতোর ভিতর দিয়া, কোথাও প্রচারকের 
মারফতে বিপ্লবের পথ গড়িয়া উঠিল । সুতরাং সমিতি যথন বস 
হয়া গেল তখনই সব বিপদ শেষ হল না। সরকারও দেখিলেন 
বিপদ লোকচক্ষুর অন্তরালে পুর্তীকৃত হইয়া উঠিতেছে । 


পঞ্চম পরিচ্ছেদ 
নানাভাবের লোকপমাগম 


টলষ্টয় তাহার 12501150610 গ্রন্থে বিপ্ববাদীদের কয়েকটা 
শ্রেণীতে বিভত্ত: করিয়াছেন। এই কন অ্রেণাদ লোকই নান। 
রকম উদ্দেগ্য লইয়া বিপ্রধানষ্ঠানে োগদান করেন। বিশ্লেষণ 
করিলে বাংলার বিপ্লববাদাদের মধ্যেও তেখন লোক দৃষ্ট হহবে 
মনে হয়। প্রথম শ্রেণীর লোক কতকটা দাশনিক ভাঁবাপন্ন। 
বলা বাহুল্যঃ ইহারা৷ জীবনটাকে অত্যন্ত উচ্চ মাদশের দিক হইতে 
বিচার করিয়া দেখেন-বাস্তব-অবাস্তবেদ প্রশ্ন-উদ্তরের অপেক্ষা 
তেমন রাখেন না। উহারাই বিপ্লবের ভাবসম্পদের শ্রষ্টা । ইহারা 
স্বভাবতই ত্যারগী। জগতের বৈষম্য ইভা দিগকে পীড়া দের, 
সেই পীড়িত হৃদয় লইয়াই ইহারা কন্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। 
কোমলে-কাঠিন্তে ইহারা গড়া। বগ্তরাপি কঠোরাণি ষুছুনি 
কুম্থমাদপি-বাক্য ইহাদের প্রতি খাটে । 

দ্বিতীয় শ্রেণীর লৌক কতকটা উত্তেজনা পূর্ণ কম্মানু্ঠান প্রয়াসী। 
বিপ্রবের মধ্যে যে “রোমান্স, আছে তাহা তাহাদের কাছে প্রিয়তর। 
ইহার স্বভাবত কতকটা নির্ভীক । অবশ্য এই শ্রেণীতেও দেশগ্রীতি 
বথেষ্ট থাকে । " টু 


নানাভাবের লোকসমাগম ২৫ 


আর একটি শ্রেণী বা! তৃতীয় শ্রেণীও এই বিপ্লবানুষ্ঠানে যোগদান 
করে । ইহারা সাধাবণতই কোন নিয়মের অধীনে থাকিতে চাহে না । 
্বাধীনতা” বা উচ্ছজ্খলতা তাহাদের প্ররুতিতে অত্যধিক প্রবল ) 
'কাহাকেও তোয়াক্কা করি না ভাবটাই তীহাদের মধ্যে বেশা দেখা 
বায়। তোয়াক্কা করিতে চাচে না বটে কিন্তু 'অপরে তোয়াক্কা করুক, 
এটা তাহারা চাহে । প্রবৃত্তির অন্রূপ চলিবার অবসর খুব মিলিবে 
বলিয়াই ইহারা এ দলে যৌগদান করে । পরে ইঠারাই প্রতৃত্ব লইয়া 
দলাদলি করে, ঝগড়া করে। 

আর এক শ্রেণী আছে-_চতুর্থ শ্রেণী, ইচ্চারা শুধু স্বার্থসিদ্ধির 
উদ্দেক্তে বিপ্রবাচ্চচ্ানে যোগদান করে। বিপ্রবের শত্রও আবার 
ইহারাই । বিপ্লবদলে কোন্‌ কোন্‌ শ্রেণীর লৌক যোগ দিয়াছিল, 
তাহার একটা তালিকা 'মামাদের ধারণান্যায়ী আমরা এখানে 
দিলাম । বাংলার বিপ্রবধার্দীদের নধো এই চারি শ্রেণীর লোকই 
ছিল। অবশ্ঠ মুখাভাঁবে বিপ্লব গড়িয়া তুলিয়্াছে প্রথম ও দ্বিতীয় 
শ্রেণীর বাক্তিগণ। তবে কোন্‌ কোন্‌ শ্রেণীর লোক ইহাতে 
আসিয়া কেমন করিয়া যোগ দান করে তাহাঁও ক্রমেই আমরা. 
বৃঝিব। 

বলিয়াছি বা'লার “মরা গাঙে বান, ডাকিয়াছিল, তরী আর 
কেহ ঘাটে স্থির রাখিতে পারে নাই। বাংলার যাহার! প্রাণ 
তাহারা সাড়া ন! দিয়া তিঠিতে পারে নাই । তখনো 'মধ্যপন্থীঃ- 
চত্মপন্থা হট হয় নাই। তখন একগন্থী-হয় দেশ না হয় 
সরকার। যাহার! দেশের নহে, তাহার! সরকারেরসহায়। 


২৬. বাংলায় বিপ্রববাদ 


বক্তৃতার তখন পূর্ণ যৌবন। বক্তৃতা, সঙ্গীত, লেখা অভম্রধারে 
জাতীয় ভাব পুষ্ট করিতে লাগিল। এমনি তখন দেশের অবস্থা 
যে তখন ব্বেদেশী” না হওয়াটাই একটা বিড়ম্বনা । 

ঠিক এমনি অবস্থা যখন দেশের হর অর্থাৎ ঘশঃ প্রার্থনা করিতে 
হইলেও এই এক পন্থা ভিন্ন আর উপায় নাই, তখন কাঞ্চনের 
সঙ্গে কাচও আসে। শুধু তাই নহে তখন মেকি আপিয়া 
খীঁটাকেই তাঁড়াইতে চাহে । অন্ততঃ মেকি আসিয়াই আসর 
জমকাইরা বদে। কারণ দেকি ধরিবার কষ্টিপাথর তখনো ত জন্মায় 
নাই ! কথা পর্যন্তই বখন লোকের দষ্টি আকুষ্ট করিতে সক্ষম তখন 
এ সমস্ত বশঃ লাঁভেচ্ছু বাক্তিরা আসিয়া সমুখে দাড়ায় । এমন 
কি প্ররুত কন্মারা তাহাদের ভিড়ে পিছনে থাঁকিতে বাধ্য 
হয়। আন্দোলনের ঠিক শুত্রপাতে ইহারা আসে নাকি জাঁনি 
যদি ইহাতে মনোবাসনা সিদ্ধ না হয়; কিন্ত থে দেখে যে এই ত 
যশঃ লাভের সময় তখন ইাঁরাই ভয় অগ্রদৃত 1 

বিপ্লববাদের কথা বলিতে গিয়া সেই দেশী আন্দোলনের 
কথা আবার টানিয়া 'আনিলাম ; ভাভার কারণ, এখান 
হইতেও তাহার কতকটা উপকরণ মাগাঁদের সংগ্রত করিতে 
হইবে | 

স্বদেশী আন্দোলন যখন একেবারে পুরা দমে চলিয়াছে, বাংলার 
প্রায় সমস্ত শ্রেষ্ঠ মনীষী ও জদয়বানই যখন ইহাতে যোগ দিয়াছেন, 
অথচ তখনও উদ্যত রাঁজরোষ পতিত হয় নাউ, তখনকাঁর একট! 
স্বদেশী সভার কথ! বলি বক্তা প্রন করিলে স্বদেশের জন্ক কে 


নানাভাবের লোকসমাগম »ই৭ 


জীবন ও সর্বস্ব ত্যাগ করিতে পাঁরে ! অমনি টেবিলের পাশ হইতে, 
তিনজন ভদ্গুলোক দাড়াইলেন--চশমা চোঁখে, চমৎকার জামা গায়ে 
মাথার টেরী-_দেশের জন্য ইাঁর। জীবন দিবেন! ছোট সহর-- 
হৈ চৈ পড়িয়া গেল। মা ও ক্ত্রীত কাদিয়া আকুল-- “শ্দেশের জন্য 
গন্গ্যাপী হইল 1” কিন্ধ শেষে জার সর্বম্থ ত্যাগের প্রয়োজন 
তাভাদের ভয় নাই । আজও তাহারা আছেন । বেশ সুখেই 
আছেন--কেহ প্রোফেলার, কেহ উকিল, কেহ ব্যবসায়ী--অতীত 
স্মৃতি একেবারে ভুলিয়! গিয়াছেন। অথচ মনে পড়ে সরকারের 
ধর্ষণ নাতি আরম্ভ হইবার পূর্ব পর্যান্ তারা কথার জোরেই 
নেতৃত্ব করিয়াছিলেন। শেষকালে, বিপদ আসিয়াই অনেক সম্পদ 
আমাদিগকে দেখাইয়াছে । স্বদেশী আন্দোলনের বে সময়টা 
কথ! বলিতেছি তখন বক্তৃতা ও বয়কটই প্রধান কাধ্য । সে বয়কটে 
অন্নয়-বিনয় ছিল, হাতে-পাঁয়ে ধরা ছিল, জোর-জবরদস্তিও 
ছিল। বয়কট দ্বারাই ইংরেজ সায়েস্তা হইবে, ইহাই ছিল 
প্রধান ভাব। সেই ভাব আশ্রয় করিয়াই বাংলা চালিত। 
সুতরাং দ্বেহিংসা! ছিল না বলিতে পারি না। 

একদিকে বাঠালীর বিলাতী বঙ্জনের উগ্র চেষ্টা, 'অপর দিকে 
লাট ফুলার প্রভৃতির লাঠির আগায় বিলাতী প্রচলনের প্রয়াস, 
এই দুয়ের মধো পড়িয়া “স্বদেশী, আর টি'কে না। একদল লোক 
“বদেশী'র অর্থ নূতন করিয়াই বুঝিতে চাহিল ।--স্বদেশী অপে। 
দেশ লাঠিতে আস্থা যেন কিছু বেশী। “জুড়ে দে ঘরের তাঁত 
সাজা দোকান, বিদেন্ষশ না যায় ভাই গোলারি ধান" প্রভৃতি 


২৮ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


উক্তি, বাঙালীর প্রাণে তখন আর ভাবের সাড়া তুলিতে পাঁরিল 
না। কিন্ত “আয় আজি আয় মরিবি কে” আহ্বানে বাঙালীর 
গ্রাণে উদ্মাদনা! জাগাইল। মরণের কথায় কি রস আছে কে 
জানে, কিন্ত সেই মরণের ধ্বংসের কুদ্রতালে তরুণ বাঙালীর হ্ৃদ্যস্ত্ 
নৃতন ছন্দে নৃত্য করিয়া উঠিল; বাঁগালী সেই 'ভাবাবেগে সৃষ্টিকে 
একেবারেই বাঁদ দিয় চলিল, ধ্বংসকে বরণ করিয়া ধ্বংসের জন্যই 
শক্তিসংগ্রহে ব্ত্ত ভইল। ্ 

সরকার পক্ষ হইতে তখন ধ্ধণনাত আরম হইয়া গিয়াছে । 
সম্প্রনীর় হিসাবে মুসলঘানগণ সরকারের সভায়। নেতাগ? 
09551৮9 £€515017০€ প্রভৃতি না বলিয়াছিলেন তাহা নহে কিন্ত 
বর্জন দ্বারা বঙ্গবিভাগ বদ হইবে এ সমশ্তগ কথা তখন তরণ 
বাঙালীকে 'আর বিশ্বাস করান যাইত না। গিদেশীর কল্যাণে, 
বিলাতা বর্জনে ইংরেজ কাহিল ভইয়া নেতাদের গ্রাগিত বস্ত দিতে 
বাধ্য হইবেন--সেউ আশা শেব হইল 1 পে বিশ্বাসকে কেন্্র 
করিয়া যে রাঞ্নৈতিক আন্দোলন গড়িয়া উঠিয়াছিল, স্বভাব 
তাহার যবনিকা পাত হইল । শুধু কি তাতাই ? জমে এই ধর্ষণের 
প্রতিষেধ প্রয়াসে একদল বাঙালী *হ্ছদেশীঃকে অবান্তর বিষয়ই 
করিয়া বমিল। তখন অন্ত প্ার সন্ধানেই তরুণ বাঙালী ব্যস্ত। 
সেই শ্রেণীর বাঁঙাঁলী বঙ্গভঙ্গ রদ' করাটাই আর বড় করিয়া 
দেখিল না। একেবারে বলিয়া বসিল "্বাধীনতা হীনভায় কে 
বাচিতে চায়। তখন ভাবের মুখে কেন্ট বা ভাবিয়াছে, এত সত্তর 
স্বাধীনতা মিলে নাঁঁ_ছুর্বাল জাতি এত ভঠীঃ সবল ভয় না। থে 


নানাভাবের লোকসমাগম ২৯ 


ব্যাপারে জনসাধারণের চেতনা নাই তাহা আকাশ হইতে কি 
জাতির কাছে আসে? তবু অসাধা সাধনের প্ররাসই চলিবে-_- 
বিধাতার তাহাই ছিল ইচ্ছা। বিধাতা কোন্‌ চেতনাকে কেমন 
করিয়া সফল করেন কে জানে ! 


বচ পরিচ্ছেদ 
বিপ্লবের এক অঙ্ক শেষ হইল 


১৯০৮ সালের ডিসেম্বরে বে আইন পাশ হয়, সে আইনের জোরেই 
১৯০৯ সালের জানয়ারীতে পূর্ববঙ্গের কতকগ্ত ৪ভি সমিতি বেমাইিন 
বলিয়া ঘোষণা কর] হয়। ১৯০৮ সালের নভেম্বরে অশ্বিনী বাবু 
কষ্ণকুমার বাবুঃ মনোরঞ্জন বাঁ গালন বোধ বাহ প্রাঃ 
নির্বাসিত ভন। বলা বাহুল্য, ইহাদের মধ্যে সকলেই বিপ্রবরাদী 
ছিলেন না । বাহাই হউক এতদিন পধ্যন্ত্র অর্থাৎ স্বদেশী 
আন্দোলনের স্ত্রপাত হইতে ১৯০৯ পথ্যস্থ- সমিতিগুলি দাড়ানহ 
ছিল। বিপ্লববাদাদের নানা কাণ্যক্লীপ তখনই দেশে আর 
হইয়া গিয়াছে--তাহা দেখিয়া ও শুনিয়া সাধারণ দেশবাসী এবং 
এই সমস্ত সমিতির সাধারণ অভ্যরা সহজেই বুঝিল "দেশে একটা 
কিছু হইতেছে ।, 

চাঁদ্রিদিকে যখন লাঠিখেলা, কুদ্ধিতডন, স্বেচ্ছাসেবকের ড্রিল, 
কৃত্রিম বুদ্ধ চলিতে লাগিল এমনি সময়ে, ঢাকার ম্াৃজিট্রেট সিং 
এলেনের উপর গোয়ালন্দে পিস্তল ছুটে । এই ঘটনা ঘটে ১৯৭ 
সালের ডিসেম্বরে । তাহার পর বোণাও ছু" এক জায়গায় ফাটে। 
প্রফুল্ল চাঁকী আত্মহত্যা করিয়া! ধরা! দিবার দায় হইতে নিষ্কৃতি 


বিপ্লবের এক অঙ্ক শেষ হইল ৩৯ 


পাইল, ক্ষুদিরাম হত্যাপরাধে ফাঁসিকাণ্ে ঝুলিল--ক্ষুিরাম বাঁলকঃ 
গ্রফুল্লের বয়নও বেশী নহে। 

যুগান্তর খোলাখুলিই লিখিত। কলিকাঁতার বৌমার আঁও্ডায় 
পুলিস হানা দিল--বাঁছা বাছ? কেহই বাঁচিল না-_-একে একে 
বোমার ও বিপ্লবের অগ্রদূতেরা (1)101)601 ) প্রায়ই ধরা পড়িলেন। 
বিপ্রবনেতারা দেশবাসীকে গুপ্ঠসমিতির অস্তিত্বের কথা! জানাইতে 
শ্বীকার করিলেন ! দেশবাসী ভাল মন্দ ছুইই ভাবিল। যে সমস্ত 
বিপ্নবধার্দী তখনও বিভিন্ন স্থলে বাহিরে ছিলেন, তাহারা অনেকেই 
এই স্বীকার উক্তিকে ভাল চক্ষে দেখিলেন না| যাহাই হউক, 
মাষগ্ডলি থে জীবনটাকে কিছুই ঘনে করে নাঃ কীচা মাথা দিতে 
বে একেবারেই গররাজা নহে--একথা দেশ বুঝিল। তাহার পর 
'এপ্রভার। নরেন গৌসাই যথন ইংরেজেরই জেলের মধ্যে কানাই 
ও সত্যেন্ত্রের পিস্তলের গুলিতে ধরাশায়ী হয়। তখন দেশ ভাবিল, 
এঝা দুজ্জয় সাহসাই শুধু নহে, এরা অদ্ভুত কৌশলী-ও । ছুজ্ঞেয়: 
রহস্থাভিদের জন্ক কত থে অদ্ভুত কাহিনী কলিত হইয়াছিল, তাহার 
য়ত্তা নাই । ফালির হুকুমের পর কানাই ওজনে বুদ্ধি পাইল । 
ধম্ম ও অধন্মের তন্তকণা বুঝা বা বুঝানো সহজ কথা নহে। কে 
জানে কিসে ধন্মরক্ষ হয় আর কিসে ধন্ম বায়। পাপ পুণ্য, হিংসা 
অহিংদা সকলেরই বিচারকপ্তা যিনি তাঁহার দৃষ্টিই অন্রান্ত। 
যাহাই হউক, হত্যাকারী হইলেও কানাইকে দেশবাসী অধার্মিক 
বলিয়া গণা করে নাই--নিশ্িত | ফাঁসির দড়ি যে গলায় দেয়, 
সেই মীহেব বলিল--এমন লোক দেখি নাই! কানায়ের মৃতদেহ 


৩২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


লইয়া শোভাঁধাত্র! হইল, কানায়ের ন্তপ্ম পবিত্র বলিয়া অনেকে 
গৃহে স্থান দিল। সেই মৃত্যুবাসরে, বাঙালী কলিকাতার রাস্তায় 
কাব্যবিশারদের গাঁনের পদটি পরিবর্তন করিয়া গাহিল £-_ 
মার ফাঁসি দিয়ে কি মা ভূলাবি 
আমি কি মার সেই ছেলে? | 

এ সমন্ত মরণের কথায় এমন একা উন্মাদনা তখন স্ট্টি 
করিল যে, অনেক তরুণ যুবক জীবনকে তেমন মরণের ভন্থাই তৈরী 
করিতে পাঁরিলে যেন কুতাঁথ হয়| জীবন যুদ্ধের আর কৌথাঁও 
ইহারা জয়ী হইতে চাহিলল না, একেবারে মরণ-যুদ্ধে ভয়ী হইতে 
বন্ধপরিকর হইল ।| ফলে ভাঁগরা ক্তকটা এ্টিছাড়া ও সংসারে 
অপটুই রহিরা গেল। নেতারা কিন্তু এইসব সংসারে 
অনভিজ্ঞদের মধ্যেই ণভ্যাগের বস্তু” অধিক লক্ষ্য কবিভেন। 
মরণের বীজ শুদ্ধ শান্ত, সংসারানভিজ্ঞদের কানেই দিতেন আগে । 
বামরুষ্খ পরমহংসের কথায় বলিতে চাহিলে, নেতারা বলিতেন, 
“এ শুদ্ধ আধার” লোভ নাই, নান ঘশের খেয়াল নাই, সংসারেনু 
ভাল-মন্দ তেমন বুঝে না-কিন্ মরণের জন্ত নেতার উক্গিতের 
অপেক্ষায় একপায়ে খাঁড়া । বেখানে মবিতেই হইবে, বাচিবার 
কোন উপায় নাই সেখানে এমন সর 'আধারই প্রেরিত হইত | 
কানায়ের মৃতদেহের শোভাধাতার পর সরকার সতোনের বেলায় 
সাবধান ভইলেন। যাহাই ভউক, এ সমন্ত মরণ ও মারণের ভঙ্গীতে 
এব* দুঃসাহসী ও শৃঙ্খল (01157101560) কয়টা রাজনৈতিক 
ডাকাতিতে যে একটা অভিনব ভাব-তরঙ্গ রাংলার বুকে বহিয়া 


বিপ্লবের এক অঙ্ক শেষ হইল ৩৩ 


গেল তাভার “রোমান্স, ও ভাবাবেগে স্বদেশভক্তদের যুগ বুগান্তর- 
নিরুদ্ধ ক্ষাত্রশক্তি যেন “উকি” মারিয়া উঠিল। কেহ নেতাদের 
কাছে যুক্তি শুনিয়া কেহ বা স্বভাঁবেরই ঝৌকে এ বুর্ভিটি 
অনুশীলনের সামান্য একটু বিকৃত অবসর পাইয়াই যেন মাতিয়া 
উঠিল । বলা বাহুল্য, নেতাদের ইচ্ছানুযায়ী খুব চমতকার আধার 
সকলে না হইলেও এই মরণ-ঘারণের ভীষণ পথে লোক জুটিল। 
এই মরণ্পাগল মাশ্ুষগুলির কথা বলাও শন্ত, বুঝাঁনও শক্ত! 


সপ্তম পরিচ্ছেদ 


রা 


প্ত ধারা 


গপ্তব্যাপারে কল্পনার স্থান অনেকখানিই থাকে--ফলে ঘাহারা 
ভিতরের খবর রাখে না তাহার৷ বাহিরে থাকিয়া ইতিমধ্যেই ৩৫ 
সমিতিওয়ালাদের অসম্ভব শক্তির কথা, অসম্ভব সফলতার কথ 
প্রচার করিতে লাগিল । 

আমাদের দেশ আধ্যাম্মিক দেশ; ভারতবধের শ্থা দানা 
এক দৈব উপায়ে সুসিন্ধ হইবে, দেশের কোন কোন উব্বর মস্তি 
ইহা লইয়া দস্তর মৃত ভল্পনা-কল্পনাও চলিত । খ্বকর্ণে শুনিয়াছি, 
কেহ কেহ বলিয়াছেন, ( অবশ্য ইহারা বিপববাদা নহেন, কিন্ত গঞ্প 
করিতে বিপ্রববাদীর দাদা) দিপাহী বিদ্রোহের কুনারসিংহ তগস্কা 
করিতেছেন, দেবীর বর পাইলে ভিন আবার দেশোদ্ধারে বহিগত 
হইবেন ; তিনি জন্যাসীবেশে এখনো! দেশের ভষ্ত নহাসাঁধনা 
করিতেছেন-অগানুষিক ক্ষনতা লু করিয়াছেন ইত্যাদ 
ইত্যাদি । বিপ্রবধাদীরা দাঁধারণত একথা অবশ্যই খিশ্বীদ 
করিত না। তবে দেশের লোক ষে দেখ ব্যাপারে অনেকটা 
অদ্ধাবানঃ একথা তাহার! জানিত ) উঠবাদ প্রয়োজনদমত সন্ামীর 
ভোল তাভারও সময় সময় গ্রহণ কাঁরিতে কলর করে নাহ । 


গুপ্ত ধার! ৩৫ 


যাহা হউক ১৯০৬ হইতে ১৯০৯ পর্যন্ত কতকগুলি খুন ও 
ডাকাতি হইয়া গিয়াছে। এ সমস্ত উপকরণ সংগ্রহ করিয়া ইহীতে 
অসম্ভব রং চড়াইয়া, সদ্য সছ্য স্বাধীনতালাভের জল্পনা-কল্পনা যুবক 
মহলে চলিত | ইতিমধ্যেই মজফবরপুরের হত্যাকাণ্ডের পর আলিপুর 
বোমার মামলাঁরও এক অধ্যায় অভিনীত হইয়া গেল। সুতরাং 
তাহা লইয়াও দেশে একটা আন্দোলন চলিতে বাধা থাঁকিল না। 
অনেকে এমনও ভাবিল, খুব সামান্ধ পিস্তল বন্দুকই ধর 
পড়িয়াছে--রহিয়াছে অনেক । 

এমনি যথন দেশের মনের অবস্থা, তখন সমিতিগুলি বে-আইনী 
বালিয়া ঘোষণা করা হইল। কিন্তু বাহারা ভুল করিয়াই হউক 
বা প্রকৃতির গ্রভাবেই হউক, এ সমিতির নধা দিয়াই দেশে কাঁজ 
করিবে ভাবিরাছিল, তাহারা এই আইনকেই চরম বলিয়া মানিয়! 
নিল না। বাহিরে ইহার সঙ্গে ছন্দে পরাজয় অবশ্স্তাবী জানিয়া 
মুন্তগানি কম্মই গুপ্ুভাবে করিতে মনস্থ করিল। 

জান্দোলনের ইহা নূতন ধারা । আগে প্রকাশ্য সমিতির 
অন্তরালে গুধধ কন্মপঞ্থ! চলিত--এখন সবথানিই গুপ্ত । এখন 
যাহারা কল্মা ও প্রধান হইয়া রহিলেন--তাহাদের নিজের 
আগ্মপ্রসাদ ভিন্ন কিছুই সাস্বনার রিল না। ম্বদেশী আন্দোলনের 
গোড়াকার সে সহাগুভূতি, প্রশংসা মাই অন্তত গ্রকান্ে 
হিপ না )-_কাঙ্গারও ভাঁল বলার নাই, একেবারে “একলা চল্রে।+ 
ধাতাদের কথায় কর্মীরা কম্মক্ষেতে নামিয়াছিলেন, তাহারা আর 
কথা কহেন না। এমনি ভাঁবে বিপ্রববাদীরা একলাই হইয়া পড়িল । 


৩৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


কেহ কেহ দুই দিন সখ করিয়া বিপ্লবদলের খবর লইতে ইচ্ছা 
করিতেন। তখন ভাবিয়াছিলেন, তেমন কিছু ভয় নাই। কিন্তু 
পরে বিপদ দেখিয়া তাঁহারাঁও অচেনা হইলেন। বিপ্রববার্দীরা 
লোকচক্ষুর অন্তরালেই স্থান বাছিয়৷ লইল। 

বিগ্লববাদীদের সেই আত্মগোপনে, সকল রাজনীতিক কর্ম- 
প্রচেষ্টা হইতে দূরে থাকার ফলে; বাংলার রাজনীতিক্ষেত্রে 
অনেক দিকেই আর যোগা লোৌকেত্র আবির্ভাব সম্ভব হয় নাই। 
ইহার কারণ আছে । 

কারণ, সাহিতাক্ষেত্রেই হউক বা পাজনীতিক্ষেত্রেই হউক কোন 
একটা উচ্চ আদর্শে অন্গ্রাণি না ভইলে, একটা বুহতের আকাজ্ণ 
ভিতরে ন! জীগিলে, কোন দিকেই বড়লোক জন্মায় না, সাহিত্যে ব 
রাঁজনীতিতে কোনও নৃতন বাঁণী শুন! বায় না। বাংলা দেশে যথন 
সিভিলিয়ানদের বাংলাশিক্সার যোগ্য করিয়', সেই সীমাবদ্ধ আদর্শকে 
সম্মুখে রাখিয়া; গোড়ায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের জন্য বাংলা পুস্তক 
প্রণীত হইতেছিল তখন বাঁংল। সাহিত্যের মধ না ছিল কোনি নৃতন 
বাণী, নাছিল কোন সত্য কষ্টি। বাজলাতিক্গেত্রেও তেমনি যখন 
গতান্গগ্িক পদ্ধতিতে বড় বড় চাকুরী লাছের স্বিধাশুলি ভারত" 
বাসীর করায়ত্ব করিবার উদ্দেশ্যেই কংগ্রেস বছরের পর বছৰ রাঁজ- 
নৈতিক চ্চ। করিয়া যাইতেন, তখন ভাভাতেও না ছিল কোন 

তভাঁর বিকাঁশ, না ছিল কোন নৃভন বাণী। 

যাহাই হউক, তবু বাংলায় বাচার! রাজনীতিক আন্দোলন 
করিতেন তাহারা একভাবে গড়ি উস্সিয়ন ; পরাধীন দেশে 


গুপ্ত ধার! ৩৭ 


তাহার! রাজনীতিক বলিয়া খ্যাতি অর্জীন করিলেন। কিন্তু 
প্পধ্যস্ত।| তাহারা যতটুকু হইয়াছেন, ততটুকুই । আর কোন 
নৃতন শক্তি বা! নৃতন ভাব এ ক্ষেত্রে কাজ করে নাই। এমন কি 
অন্য প্রদেশে তবু কতকটা তেজন্বী, যোগ্য লোকের আবির্ভাব 
হইয়াছে, কিন্তু বাংলার রাজনীতিগ্ষেত্রে যোগ্য তেজস্বী লোকের 
একান্ত অভাঁব। 

ইহার একটি প্রধান কারণ বাংলার বিপ্রবপ্রচেষ্টা। এ 
কথায় একটুও ভুল নাই, গুরুকে সোজা রাখে খাঁটি শিষ্য; 
নেতাকে নেতার যোগ্য করিয়' তোলে খাঁটা কন্মী। নেতা 
যাহাদের উপর নেতৃত্ব করিবেন? তাহার! যর্দি খাপখোঁলা তরোয়ালের 
মত ধারালো ও আগুনের মত উজ্জল হয়, তাহার! যদি তেজস্বী, 
ভ্াগী, সত্যকার কন্মী ও উচ্চ ভাঁবাপন্ন বুদ্ধিমান হয়। তবে 
হর নেতা দিন দিন ঘোগ্যতর হইয়া উঠিবেন নতুবা নেতৃত্বের 
আসন ছাঁড়িয়। দিতে বাধ্য হইবেন | বাংলার যে সমস্ত যুবক 
বীজনীতিক মুক্তি চাহিত, যাহারা ত্যাগী; যাহারা কাধ্যত 
উীবন্পণ করিয়া কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করিতে চাঁহিত-_ 
তাভারা অধিকাংশই তখন এই বিপ্রবদলে যোগ দিয়াছিল। 
বাংলার যুবজন হয় এই বিপ্লৰে যোগ দিয়াছিল, নতুবা রাজনীতি 
ছাড়িয়া অন্ত দিকে আত্মনিয়োগ করিয়াছিল; ব! কিছুই করে নাই। 
ঈতরাং বাংলার রাজনীতিক্ষেত্রে ন্তোদের যোগ্যতর হইবার প্রবল 
তাগিদ যেমন ছিল না, তেমনি এদিকে নুতন যোগ্য লোকের 
আবির্ভাবও হয় নাই। *বাংলার বিপ্লবপ্রচেষ্টা বাদ দিলে, বাংলার 


৩৮ বাংলায় বিপ্রববাদ 

রাঁজনীতিক্ষেত্রে এই জন্ত তেমন তেজন্বী রাজনীতিবিদের সন্ধান 
মিলে না । কেবল “খাঁড়া বড়ি থোড়, থোড বড়ি খাড়া অনুবৃত্তি 
করিয়৷ প্রথম আমলের ছুই চার জনের নাম করা যাক মাত্র । 


অসহযোগ আন্দোলন উপগক্ষে দেশবধ্চু চিন্তরপ্রনের রাজনীতিক্ষেত্র 
আবির্ভাব আর এক নুতন অধ্যায় | ্ 


অষ্টম পরিচ্ছেদ 
সমিতির ছুর্দিন 


সমিতিগুলিকে বে-আইনী বলিয়া ঘোষণা করার পূর্বেই বিপ্রব- 
বাদীরা লোক সংগ্রহে মন দিয়াছিল। ইতিমধোই অনেক বালক 
ও যুবক ঘর ছাড়িয়া 'মাসিয়াছে, তাহারা সমপিত-প্রাণ । তাহাদের 
বন্তমান ও ভবিষ্বৎ সমিতির জন্যই বিলাইয়া দিয়াছে । সমিতি 
বে-আইনী ঘোষণা হওয়াঁয় ইহারা কোথায় যায়? আড্ড। 
সবই উঠিয়া গিয়াছে; অন্রসংস্থানেরও কোন উপায় নাই! 
এতকাল ইহারা সমিতির কাঁজ করিয়াছে, খাওয়া-দাওয়া থাক। 
সমিতিতেই হইত | গড়া জিনিষ হঠাৎ ভাঙ্গিয়া গেল, 
কল্ীরা নিকপাঁয়। নেতাদের কেহ জেলে, কেহ নির্বাসনে । 
সমিতির বড় বড় সভ্য, মুরুবিব সহায় ধাহারা তাহীরা অনেকেই 
অবস্থার গুরুত্ব বুঝিয়া সরিয়া পড়িলেন। পরিচিত অনেকেই ভরসা 
করিয়া সংশ্রব রাখে না। *'পদস্থ, ব্যক্তিদের দ্বারও বন্ধ হইল । 
একেবারে যাহারা অন্তরঙ্গ, যাহ।রা সব ছাড়িয়া আসিয়াছিল 
তাহারাই এ ছুদ্দিনেও পরস্পর ঘুক্ত হইয়াই রহিল। অপর যাহারা 
অর্থাৎ যাহারা তেমন অস্তরঙ্ষ' নহে কিন্তু দলেই 'মাছে, তাহারা 
মূল দল হইতে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হইল । 


৪৬ ংলায় বিপ্রববাদ 


বিভিন্ন দলের ধাহীরা নেতা, অথচ ধর! পড়েন নাই, তাহারা 
নিজ বাঁটাতেই কোন প্রকারে আঁড্ডাগুলি রাখিলেন, অর্থাৎ পুরাতন 
বন্ধুগণ সেইখানে যাওয়া-আসা করিত। কিন্তু যে সমস্ত দলে 
ঘরছাঁড়া লোকের সংখা! অধিক, তাহাদের হইল বিপদ | একট! 
স্থান ত চাই । পুলিশের ১০৯ ধারা হইতে রঙ্গাও ত পাইতে 
হইবে। বাড়ী ফিরিতেও কেহ চাঁহে না, বাড়ী গেলেই আবদ্ধ হইতে 
হইবে। অনেকের বাড়ী ফেরাও সহজ ছিল না। সাজানো ঘরগুলি 
ত ভাঙ্গিয়াছেই, এখন সীমান্ত কাঁঠ খড়গুলিই ইহারা কতকটা 
ভবিষ্কতের আশার কুপণের ধনের মতই বুকে করিয়া রহিল । এই 
ভাঙ্গা অবস্থার একটা দিক 'মামরা দেখাইতেছি ' 

কলিকাতা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুর শ্রভৃতি 
স্থানের সমিতিগুলি বে-আইনা বলিয়া ঘোফিভ হইয়াছে | এক 
ঢাকা সমিতিতেই প্রায় ছয় শত শাখা সমিতি ছিল । সবই আজ 
উঠিরা গিয়াছে। 

এমনি ভাঙ্গ। অবগ্রায় কলিকাতার একটি বাটিতে কয়েকটি যুবক 
থাকে । হাতে কিন্ত তাহাদের টাকা নাই । এই সমস্ত যুবকদের 
মধ্যে আবার ফেরারীও ছুই চাঁর জন 'আছে। কলেজের ছাত্রের! 
বাড়ী হইতে নির্দিষ্ট টাক! আনিয়া পড়ে ভাহাদের কাছ হইতে 
কিছু কিছু পায়। কতই বা আর হইবে) জল খাবার পয়স| বীচাইয়া 
ছাত্রের! কিছু কিছু দেয়। আরে| বাহিরের দুই একজন হয়ত সময় 
সময় সামান্ কিছু কিছু দেয়। এমনি ভাবে দিন কাটিতে লাগিল। 
এক আধটা জামা হয়ত আছে, তাহাই প্রয়োজন হইলে সকলেই 


সমিতির ছুন্দিন ৪১ 


বাবার করে। পোষাক পরিচ্ছদের জন্য কোনও কষ্টই কাহারো 
হয় নাই, সেদিকের অভাব কেহ অনুভব করে নাই। কিন্ত 
অন্নাভাব ক্রমেই বাড়িয়া চলিল। একদিনের কথা, সেদিন 
ঠিসাবে দেখা গেল, মূলধন যাহ! আছে তাহ ভাগ করিলে মাথা 
প্রতি ছুই পয়স! মাত্র পড়ে । সাব্যস্ত হইল, “আলু লইয়া আইস ।১ 
_-শুধু আলু সিদ্ধ করিয়াই সেদিন খাওয়া হইল, ভাত আর জুটিল 
না। এমনি কষ্টের খাওয়া এক আধ দিন নহেঃ মাসের পর মাম 
চলিল।--্র সময়টায়ই অনেকে নান! প্রকার যোগ-ধ্যান আরম্ত 
করেন। ষোগের নানা নিয়ম "অনুষ্ঠান প্রবলভাবে চলিতে লাগিল । 
পার্থিব জগতের অবস্থা তখন বড়ই শোচনীয়, কিন্তু আধ্যাত্মিক 
অবস্থা বেশ আশাপ্রদ ! 

এ অবস্থায়ও দল একটু একটু করিয়া বাড়িতে লাগিল ! যাহার! 
নেশা পাঁন করিয়াছিল, নেশাখোর খুঁজিয়। সহজেই বাহির করিল। 
অবশ্য যাহাদের দেশ! স্বল্লকালস্থায়ী তাহারা নেশা ফুরাইয়া 
বাওয়ায় সুবোধ বালকের মত বাড়ীতে গিয়া “যাহা পায় তাহাই 
খাইতে” লাগিল । সকলেই বোকা নহে, একটু ধাক্কা খাই 
শিখিবার মত সেয়ানা লোক সংসারে আছে । তেমন সেয়ানারা 
মমন্ন থাকিতেই সবিয়া পড়িল। বিপদের এ ত শুধু সুত্রপাত-_ 
একথা যাহারা সেয়ান। ভাহারা ভাল করিয়াই বুঝিল | 

কলিকাতার বোমার মামলায় অনেকের শাস্তি হইল। যাহারা 
ধরা পড়ে নাই--সংখ্যায় তাহাধা খুবই কম--তাহীদেরও তেমনি দুঃখ- 
কষ্ট। এদিকে সেদিক্লে তাহারাও নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করিতে 


৪২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


লাগিল'"[519090 আর্ত হইল। নন্দলাল, আশুতোষ, 
সামশুল প্রভৃতি পিস্তলের গুলিতে প্রাণত্যাগ করিলেন । পুলিশ 
“কলিকাতায় বোমার মামলা ও হাওড়া 08775 ০৪56 করিয়া 
পূর্ধব বাংলায় মনোনিবেশ করিল। সামশুল-আলমের হত্যার পর 
১৯১৪ সাল পধ্যস্ত কলিকাতার দিকের দলের আর বিশেষ কোন 
প্রচেষ্টা চলে নাই। 


নবম পরিচ্ছেদ 


মাঝলা 


১৯১* সালের প্রথম ভাগে পুলিন বাবু প্রভৃতি নির্বাসন 
(10610010869) হইতে ফিরিয়া আসিলেন। পূর্ব বাংলায় 
ইতিমধ্যেই আবার সমিতি ( গুপ্ততাবে ) কতকটা সংঘবন্ধ হইয়া 
উঠিয়াছে। খোঁজখবর রাখার বন্দোবস্ত হইয়াছে । জিনিষপত্র, 
বন্দুক, পিস্তল, টোটা ইতাদি যথাস্থানে রক্ষার স্থবন্দোবস্ত 
হইয়াছে । হঠাৎ যাহ! বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছিল ধীরে ধীরে তাহা 
জমাট বাঁধিয়া উঠিতে লাগিল! সরকারও নূতন পন্থা! অন্থসরণ 
করিলেন । ্‌ 

'পুলিশ যে এক বিরাট ফড়যন্ত্র মামলা বাঁধাইতে প্রবল ভাঁবে 
চেষ্টা করিতেছে তাহা প্রকাশ হইয়া পড়িল । “অনুশীলনের, 
কাহাকেও আর বাদ দিবে না--ইহাই জান! গেল। পুলিন বাবুকে 
গা-ঢাকা দিতে অনেকেই বলিল, কিন্ত তিনি অস্বীকার করিলেন ; 
বলিলেন--ছেলেরা নিকৎংসাহ হইবে । 

যাহা হউক, সমিতির কেন্দ্র স্থানান্তরিত হইল। মনে রাখিতে 
হইবে এখন হইতে সবখানিই গুপ্ত । যাহাকে পুলিশ সন্দেহ করে 
তাহার বন্ধুবাঞ্ধব আজ্মীয়-ম্বন সকলেই সন্দেহের পাত্র .হয়। ফলে 


88 বাংলায় বিপ্লববাদ 


বন্ধ আত্মীয়-স্বজন কেহই আর বন্ধুর, আত্মীয়ের সঙ্গ চাছেন ন1। 
রাস্তায় দেখা হইলে, আড়চোখে চাছেন। দেশের সাধারণ অবস্থা 
এই প্রকার । 

আমর! তখন কলিকাতার মেসে থাকিয়া পড়ি। যাহারা 
পরবর্তীকালে বিপ্লববাদী বলিয়া সর্ফজন গণা, ভাহার। সে স্কানে 
পদার্পণ অবশ্যই করিতেন । তাঁহাদের অনেকের স্বভাবে অনেক 
দেখিবার ও শিখিবার জিনিষ ছিল। যথাস্থানে ছুই একটি চরিত্র 
আমরা দেখাইব। সাধারণভাবে বাঁলতে গেলে বলা চলে--বিপ্রব- 
বাদাদের ভিতরে ধন্মভাঁব অর্থাৎ একটু ব্যানধারণা বর্ভমান 
থাকিত। দাদাপিধাভীব, আহারে-বিহারে সংযম তাহাদের মধ্যে 
খুবই দেখিয়াছি । মেসে বাহারা আসিতেন ( বিপ্লববাঁণী ) তাহাদের 
অনেকের ভিতরেই এই রকম একটা সান্বিক ভাব দেখিয়াছি | 

ৰা ্ 

_-ছুইটা বাজিতেই মনটা কেমন হইল | চারিদিকে অনেকেই 
ধরা পড়িয়াছেন। ক্লাস হইতে বাহির হইয়া পড়িলাম। খবরের 
কাগজখানা হাতে লই'়া বাসায় ঢকিতে খাইতেই দুইজন ভদ্রলোক 
নাম জিজ্ঞাসা করিলেন-_হাতও ধরিয়া ফেলিলেন । সঙ্গে সঙ্গে 
এদিক সেদিক হইতে লালপাগড়ি স্যাঁদিয়: জুটিল। গাড়ীতে 
উঠাইল। পরে সাহ্বমুখে জ্ঞাত হইলাম ঢাকাই-পরোয়ান! বলে 
ধৃত হইয়াঞি, “ঢাকাই মাল ঢাকায়ই ধাইর | কলিকাতার পুলিশ 
বেশী সম্মান ( অর্থাৎ [01105 8627৭ ) দেখাইল না, একজন 
্রা্মণ চোরের সঙ্গে বাধিয়া লালবাজারের %দকে রওনা করিল! 


১ 


মামল। ৪৫ 


সঙ্গে ছুই চার জন পুলিশ। রাস্তায় একটি স্ত্রীলোক আমাদের 
দেখিয়া বলিল,__বাঃ রে, ভদ্রলোকের কোমরে দড়ি!” মনে প্ননে 
ভাঁবিলাম, তবু গলায় দড়ি নয়। 'আমিই একা সেদিন ঢাকার 
যড়যন্ত্রের মামলার জন্য লাঁলবাজারে অপেক্ষা করিয়| আছি । নরক 
গুলজার করিয়া কতকগুলি চোর, মাতাল সেখানে হল্লা স্থর 
করিয়া দিয়াছে । সেখানেই এক পাশে বসিলাম-_বুড়া মাঁয়ের 
কথা মনে হইল ! 'আঁমাঁর সেই সঙ্গী ব্রাহ্মণ চোরটা (সে ইতিমধ্যেই 
কমেক বার ব্রাঙ্গণ বলিরা আমার কাছে ও অপরের কাছে তার 
হাঁধা দাবী জানাইয়াছে ) আমার সঙ্গেই আছে! কলির এই 
র্ুষের জীবটী পাঁচ ছয় বার এ বড়-বিদ্যার অনুশীলনে ধূত হইয়াছে ! 
_ন্্তরীং সে চোর । 

এই সদ্বাক্ষণটি গা ঘেসিয়া আলাপ আরন্ত করিল | 

"ভাই একটা সিগারেট দাও না। 

'আমি 'বিনীতভাঁবে বলিলাম--মিগারেট আমি খাই না। 

--একটা বিডি । 

-বিড়িও খাই না। 

বেচারা কিন্তু বিশ্বাস করে নাই । 

একটু পরে বলিল, মাচিস্টা দাও না ভাই । 

বলিলাম--আমার কাছে নাই।--বন্ধু এবার একেবারে হতাঁশ 
ইইলেন। 

ঘরের নানাদিকে নাঁনা দল। মাতালেরা একটু হুসিয়ার 
হইয়াই নিজের বংশমর্যমাদা জ্ঞাপন করিতেছে । সমাজের এতগুলি 


৪৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


ধুরন্ধর কথনো একত্র দেখি নাই--মনে একটা অসোয়াস্তির 
ভাব আসিল। একটু পরে--রাত্রি তখন প্রায় দুইটা হইবে সেই 
ব্রাহ্মণ চোরটা আমাকে বলিল, তোমার এঁ কাগজটা দাও ত 
ভাই ।--মনে নাই, সঙে আমার কি একবান। সংবাদপত্র ছিল। 

প্রশ্ন করিলাম-কি করবে? 

--সিগারেট ধরাব। 

বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞানা করিলাম”_সিগারেট ধরাবে? 

বুঝাইয়া বঙ্গায় বুঝিলাম,--উপরে যে গ্যাস-বাতি জলিতেছে 
সেখান হইতে কাগজ মারফতে আগুন সংগ্রহ করা হইবে। 
কাগজের অংশ গ্রহণ করিয়া বাত্রে বারে ব্যর্থ হইয়াও ব্রাহ্মণ 
অধ্যবসায়ের মাহাত্ম্য কীর্তন করিলেন । কাগজের অংশ পাকাহয়া 
লাঠিগোছ করিয়া মাগুন সংগৃ্ভাত হইল । ভায়ারা কেহ থাকলে 
গান চলিত,--"ও তোর বারে বারে জাঁল্তে হবেঃ হয়ত বাতি 
জল্বে না|? ্রাঙ্মণ তনয়ের মুখে আপদ অপ্রিনাই- কিছ প্রাণে 
অধ্যবসায় আছে । সিগারেট ত ধরান হইল আর যায় কোথায়, 
-একট। ছোকরা, ব্রাহ্ম টিপিয়া ধরিয়া মারে আর কি! 
শাল] চোর, 'আমার পকেটনেধে বাঁড় নিয়েছে১হৈ) চে? হল্লা। 
এমনই সদয় আবার এক বুড়া, (চাথে দেখে না) চাকার 
করিয়া উঠিল “আমি হাগবো 1১ ভাগৰ বপিয়াই বসিতে উদ্ভত | 
আবার চারদিক হইতে গালাগালি । কেউ বলিলঃ "ডানে যা” 
কেউ বলিল “বায়ে ঝা 'আর সথাহ হাসিতে লাগিল! আমা, 
পাশে একটা ছোকরা বাসরাছিল, ধলিলান, "ওকে ধরে আদিকে 


মামলা ৪৭ 


বসিয়ে দাও।”--বেচারী কথাটা শুনল । রাতটা প্রভাত হইলে 
ঘেবাচি! বিচারের পুর্বে হাজতের এ অপূর্বব ব্যবস্থা দেখিয়া, 
শাস্তিলাভের পূর্বেঘ দৌষী নির্দোধার অদ্ভুত শান্তির নমুন৷ দেখিয়া 
মনে হুইল, বিচারের অভিনয় কারতে গিয়া মাহুষকে বুঝি বা! 
ভগবানের বিচারশালার় হাজির হইতে হয়। যাহাই হউক শেষ, 
রাত্রতে "ঠাকুর; ভাত ডাল দিরা গেল--আমি লইলাম না। 
বে-ভর্লাতে আসিয়া প্রভূ প্রসাদ গ্রহণ করিতে বলিলেন, তাহাতে 
হঠাৎ মুখ হইতে বাহির হহরা আদিল, "থাব না।+-দ্বিতীর 
বাক্য-ব্যয়ের প্রয়োজন হইল না। 
শ শী শঁ 

ভোর হইতেহ আর দকলকে লইয়া গেল, রাহলাম একা 
মাম। বড়হ ভাল লাগিল। শুই! পাড়লাম। একটু পরেই 
উএয়া দেখি সন্ুখের কামরায় আরও দুইজন ভদ্রলোক । “দেখে. 
বেন মনে হয় 19 হারে চেহারায় ধুঝিলাম--ন্বদেণ! আলাপ 
হহল। প্যামফ্রেটিংএ হত হইয়াছেন ওরা জেলেই থাকেন। 
এখানে কি যেন প্রয়োজনে আনজাছে। প্রথমেহ জ্ঞাসা 
কাঁরলীম - "হা দাদা, জেলে থাকার জারগা কেমন--এখানকার 
মত নয়ত ?--গুর|। বলিলেল।--নাঃ এক একটা "সেল? 1 এ. 
বাদে হাতে বেন স্বগ পাইলাম ! ভাবলান - শুইয়াঁও ত দিন 
কাটাহতে পারিব, না হয় আপন মনে গান গাহিব। বৈকালে 
দু৬ (দিয়া গেল, খুধ থাইলাম। আজহ ঢাকা মেলে খাহব--মন' 
কতকচা প্রচুল্প হহল।ঃ 


৪৮ ংলায় বিপ্লিববাদ 


বাক্স, পুস্তকও আমার সঙ্গে চলিল। ট্রেনে একটা বন্ধু রাস্তায় 
খাওয়ার জন্য পুলিসের হাঁতে টাকা দিয়া গেলেন। আর একজন 
সাধারণ লোক, বাবুটাবু নহেন, “ম্বদেশী” শুনিয়! পুলিশ কম্মচারীর 
দিকে বারে বারে দৃষ্টিপাত করিয়া খাবারের ঠোজ| 'আনিয়! আমায় 
বলিলেন, কিছু খান ।-_-খাইতে পারিলাম না, ধন্বাদ দিলাম! 
খাইলাম না বটে, কিন্তু পুলকিত হইলাম। ব্লাজনীতিক শিক্ষা 
নাই কিন্ত দেশবাসীর প্রাণ মাছে। বুৰিয়া 'আঁঘাত করিতে 
পারিলে প্রাণের তার সুরে বাজে । বিপ্রববাদীহা কোথাঁও বড় 
সহথান্চভূতি পাঁয় নাই; "অথচ দেশবাসীর সহান্তভতিই মানুষকে 
উৎসাহিত করে, শক্কু করে। সাধারণ একজন লোকের এই 
সহান্ভূতিতে সত্যই সেই দিন সেই সময় পুলকিত হষগ়াছিলাম, 
পুলিশের অন্টমতি লইয়া খাইতে প্রবৃত্তি হইল না_-বেচারী কোন্‌ 
বিপদে পভিবে তারই বা নিশ্চয়তা কি! কিন্ক 'এমন শ্রদ্ধার দান 
উপভোগ করায়ও অন্তর পরিশ্তদ্ধ হয়| 

ই্ীঘারে পরিচিত লোক দেখিলাম । কথা কহে না! মনে 
হইল, “যদি কেউ না কথা কয়, ওরে ও অভাগা ।, আমাদের 
তেমন অবস্থায় দেখিয়া আম্মীয়-স্বজন, বিপ্রধবাদী, বিপ্লববাদীর 
পরিচিতের পরিচিত, অথবা বুদ্ধিমান কেহ কাছে 'আপিত না 
সরিয়া সরিয়া বাইত, পাছে পুলিশ নাম টুকিয়া লয়! কিন্তু কাছে 
আসিয়! হী করিয়া ঈাড়াইঈত, কথ! জিজ্ঞাস! করিত ভাবাগঙ্গারাম 
ছুই চার জন, আর বিপ্লবের নামগন্ধ জানে না যাহার, 
তাঁহারা । 


মামলা ৪৯ 


ঢাকায় একট কি দেড়টায় গেলাম । ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের 
কুঠিতে যাওয়ার হুকুম হইল--গেলাম। চারিদিকে সঙ্গীন চড়াউয়া 
প্রচরীরা “অভ্যর্থনা” করিল । সাহেব ঘুমাইয়াছেন, সুতরাং আমর! 
অপেক্ষী করিয়া রহিলান। সেখানে আরও একটা ভদ্রলোক 
অপেক্ষা, করিতেছিলেন--একই গোয়ালে যাইব । ছুইটা বাঁজে-_ 
তিনটাও বাজিয়া গেল দারোগার হাতে টাঁকাটা রুহিয়! যাঁয় দেখিয়া, 
কনগ্রেবলগুলি কতকটাঁ সেই ছুঃখেই যেন বলিল “আপনি খান না, 
খাবার খান ।” খাবারে নামে আমার মাথা গরম হওয়ার যোগাড় । 
অগত্য। পশ্চিম দেশীয় দৌম্তদের কথায় খাবার আসিল--.ঢাঁকাই 
অমৃতি। একটু খাইয়া ফেলিয়া দিতে বাধ্য হইলাম । সহান্ভূতিতে 
গ্তর্থা সিপাই পধ্যন্ত ধমকাঁইল, “বোকা বাবু, জেলে এ সমস্ত 
খাবার কোথায় পাবে ?,--ঘাক, সাতটা বাজিলে সাহেবের সুখনিডরা 
তাঁক্ষিেল! ডাক হইল, হাজির হইলাম । জিজ্ঞাসা করিলেন, 
খাওয়া হইয়াছে ?--আঁগি উত্তরে “নাঃ বলার আগেই, দীরোগাপুলব 
বলিলেন, ছা, আমি খাঁওয়াইয়াছি।, সাহেব জিজ্ঞাসা! করিলেন, 
“ভাত খাইয়াছে ?, খাই নাই, শুনিয়া জেলে লিখিয়া দিলেন--" 
“ভাঁত দিবে ।* ম্যাজিছ্েট এক-আধট রসিকতাও করিলেন। 

ঢাকা জেলে রওনা হইলাম ক্রমেই পদবী বাঁড়িতে লাগিল ! 
সাটজন সিপাহী সঙ্গীন তুলিয়া লইয়া চলিল। হাটিয়া চলিলাম। 
--ভকুম হইল, হল্ট 1 থামিলাম । জেলের ফটক ফাঁক হইল-- 
টুকিলাম। স্বয়ং সুপারিন্টেণ্ডেট আসিলেন। পায়ের জুতা 


পরিধানের কাপড় খুলিয়৷ নিজ হস্তে দেখিলেন। 
এ | 


৫০ বাংলায় বিল্লববাদ 


“অরণ্য আড়ালে রহি” কোনো মতে 

একমাত্র বাস নিল গাত্র হতে, 

বাহুটা বাড়ায়ে ফেলি দিল পথে, ভূতলে 1” 
আমরাও তেমনি দরজার আড়ালে কোনও মতে থাকিয়া সাহেবের 
হস্তে পরিধেয় বস্ত্র ফেলিয়া দিলাম । নূতন নৃতন তথনও লঙ্জ] 
ত্যাগ করিতে পাঁরি নাই। পরে আর গাত্ততল্লাস দিতে সরে 
মরিতাম না। যাহাই হউক, আইন মাফিক লেখালেখি হইল। 
আবার ফটক খুলিল। জন ত্রিশ গুর্থা খুকরা হাতে সারি দিয়া 
দাড়াইয়। আছে? মধো গিয়া দীড়াইলাম ; হুকুম হইল, “মাচ” | 
আমরাও উৎসাহেই চলিলাম। মনে হইল, ক্রমোন্গতি। ঢাকা 
জেলের ৪৫টা “সেলেস্র একটাতে ঢুকিলাম। গৃহসজ্জা একটা 
চাঁটাই, একটী কথ্ছল ! চমৎকার এত আশা করি নাই ! দরজায় 
তাল! দিতে না দিতেই পাশের সেল হইতে ভাক “কে-_- 
কোখেকে ? উত্তর শুনিয়া।ঠ। আবার প্রশ্ন--আর কে কে 
কলকাতায় ধরা পড়েছে? উত্তঙ্ষ দিলাম । আবার দরগ। 
খোলা! হুইল, “ঠাকুর, ভাত ভাল দিরা গেল । জল দেওয়ার সমস, 
আন্তে বলিল,পুলিন বাবু পাঠাইয়াছেন, নাম কি ?--নাম বলিলাম। 
মনে হইল, ছুঃ ছাই, এ থে বাড়ীর মত গো !-_-ভাবিয়াছিলাম 
সবটাই লালবাজার! ছুঃখ সখ তুলনামূলক ! এ রাত্রির পচা 
ডাল ভাতও সুস্বাদু লাগিল, লাঁলবাজারের স্থৃতি মনে ছিল কি না! 

পাশের কুঠুরি হইতে আবে! ছুই একটা কথা হইতেই গুর্থার 

ধমক আসিল, হিল্লা ম্ করো । বাৎচিৎ একদম মানা হায় । 


মামলা ৫১ 


ব্যাপার কিছু বুঝিলাম। চাটাই বিছাইয়! শুইয়। পড়িলাম, মাটা 
ঝাড়িবার ধৈর্যও জার ছিল না! যখন ঘুম ভাঙ্গিল তখন দেখি 
-- দরজা খোলা । 


দশম পরিচ্ছেদ 
জেলের এক অধ্যায় 


বিপ্লববাদীরা কীসিতে প্রাণত্যাগ করিয়াছে, গুলির আঘাতে 
মরিয়াছে ; সুদীর্ঘ” দুঃসহ কঠোর কারাবাদের ফলে কেহ 'প্রীণ- 
ত্যাগ করিয়াছেঃ কেহ রগ ভইয়াছে, কেই বা উন্মাদ ভইযাছে, 
কেহ স্স্থ অবস্তায়ও ফিরিয়াছে | পিগ্রববাদীরা নিক্ঠন কারাগুঠে 
সুদীর্ঘকাল রহিয়াছে ও গম ভার্গিয়াছে, ঘানি টানিয়াছে, বেজদাণ্ডে 
দণ্ডিত হইয়াছে, ভাঁত-বেড়ি পা-বেড়ি পরিয়াছে ; জাদারণ কয়েদীর 
খাস খাইয়াই জীবনধারণ করিরাছে, কিনা সাধারণ করেদার 
নতও ল্বচ্ছন্দে জেলবিভাি করিতে পাত্র নাই | বিপ্ধবাদীরা 
অন্তরীণে, কে সুদূর পল্লান্তে, কেন মমুদ্দের বেলাডিমে। কে 
ন্ুন্দরবনের জঙ্গলে জান পাইম়াছে,বিধিব্বাদীরা দিলনা 
কী ট্রাটে, ডিদ্রা্ট জেলের ভাজছে পক্ডি ৪ ভক্তির পরীক্গা 
দিয়াছে; ভূল-ন্রান্তি ও সত্যের ঘাচাই সেট কষ্টিপাথরে হইয়াছে । 
কোনিও বিপ্লববাদীই তার সাধাবণ কানাবাসকে দুঃখের কাপে 
ত দেখিতে পারে না! ভাতার শত শত সতীথ দে তিলে তিলে 
স্বদীর্ঘকাল ছুঃণে কষ্টে কঠোর কাঠিন্তের এধো মতগ্বাহকে বজাষ 
রাখিয়াছে ! ছুই এক বসরের গেলো গু, চারি পাঁচ বৎসরের 


জেলের এক অধ্যায় ৫৩ 


রাঁজবন্দী (56806 [115926 ) রূপে জেলবাসের ব্যবস্থা যে সে 
কঠোরতাঁর ব্যথার কাছে প্লান হইয়া যায়। তুলনায় আমাদের 
দুঃখের কথা যে একেবারেই ছেলেখেলা । তাই জেলের কোন 
ঘঃখের কথা গাঠিবার আহাম্মকী আমাদের নাই | যে কয় বংসর 

বারাবামে ও রাজবন্দী অবস্থায় থাকিয়া নানা সঙ্গলাতে নানা 

অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি) সেই কথাই বলিব। সে অগ্িজ্ঞতার 
কণায় বিপ্লববাদীদের মহ্ষন্ধে দেশবাসী থে কতকটা কথা জানিতে 
পারিবেন, ইহাতে সন্দেত নাই । জেলের কথা সামান্ত ভীবেই 
কিছু বলিব। 


ঢাকার জেলেই আছি। মামলার ব্যাপার দেশবাসী জানেন, 
সে মন্বন্ধে বিশেষ কিছু বলা নিশ্রয়োজন। বাহার! সবধু "সঙ্গে" 
'াসিয়াছে। তাহারা জেলে আমিয়াই প্রথম আপদোষ করে-- 
“ছাই এ জামানত সম্পর্কটুকু না রাখিলেই ত হইভ ! মোটকথ। 
সে-বেচাবা মনে প্রাণে কখনো বিপ্রববাদী নহে, কেবল “সঙ্গে 
আসিম়্াছে | কিছ্কু যখন ঠিক হইল যে, "নিস্তার নাই” তখন 
সেও "সর পিছনে থাকতে চাহে না" দখ জনের মধ্যে 
এক জন হইতে চান । বলা বাছুলা, ইহারা প্ররুত বিপ্লবের 
মাথাও নয়, হাতও নয়, পা-ও নয়, ইহারা শুধু স্পশদোষে দুষ্ট ! 

যাহারা সমিতির লাঠিখেলার পরে সত্যই এমন ভীষণ অবস্থায় 
গড়িবেন ভাবেন নই, অথবা হাতে যাহা পাইয়াছেন করিয়াছেন 


৫৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


কিন্ত এমন করিয়। জেলভোগের জন্য প্রস্তুত হন নাই, তীহার৷ 
প্রথমটায় একটু “কেমন কেমন, হইয়া পড়েন, মনে হয়, সবটাই 
বড় নূতন! কিন্তু ইহাদের মধ্যেও ধাহাদের প্রাণ থাকে, তাহার! 
দুই দিনেই সামলাইয়া উঠেন, কারাছুঃখ সহজেই অপর সকলের 
মৃতই বরণ করিয়া লন! হয়ত থে কথা আগে ভাবেন নাই, 
বুঝেন নাই, তাহাই এখন এত সব নতন ধলোকের সঙ্গে পড়ি! 
ভাবেন ও বুঝেন। সরকারের এই ভাবের ধরপাকড়ের ফলে 
কেহ কেহ ভেলে গিয়াই প্রকৃত বিপ্রববাঁদীদের সঙ্গ লাভ করিয়া 
বিপ্রব-পথে পা দেন । রর 

অপর বাহারা, বিপ্লবে ঢুকিয়াছিল নিজের সুবিধার জগ, 
যাভাঁরা মনে মুখে এক নন্ে, স্বার্থে যাঁভারা শত স্থানে বাধা, তাভার! 
কিনব আসিয়াই খুঁজিপ, পালাবার স্বন্দব পথ মাছে কিনা। 
তাহাদের এই মানসিক ভাবনা যে মুখে প্রকাঁশ পাইত তাহা নহে । 
কারণ, ইচ্ছ! কার্যে পরিণত ভওয়ার সন্তাঁবনা না থাকিলে, চতুর 
ইহারা, ইচ্ছাকে গোপন বাঁখিতে জানিত। লোকচরিজজ্ঞ নেতা 
যিনি, তিনি হয়ত ছুই দিনে ইাদের চিনিয়া ফেলেন; কিন্তু সকলে 
সব সময় ইাঁদের চিনিতে পারে না। সম্ভাবনা থাকিলে ইহারা বাঁচির 
হইবার পথ খোজে কিন্তু অসম্ভব হইলে ও ভয়ের কারণ থাকিলে, 
স্থযোগ ও স্থবিধার অপেক্ষায় থাঁকে। বলা বাহুলা, দলের 
অত্যধিক প্রভাবে বাঁ অন্য কোন কারণে 'ারকারী সাক্ষী? না 
হইতে পীরিলেও কাঁরাবাঁসকালে এবং জেলের বাহিরে আসিয়া 
তাহারা বিপ্লবের স্থহছদরূপে আর থাঁকে না 1; অপর পক্ষে ধাহার। 


জেলের এক অধ্যায় ৫৫ 


ইহার অন্তরঙ্গ, ধাহারা ইহার প্ররুত অষ্টা, ধাঁহারা বুঝিয়া শুনিয়া, 
জানিয়াই আসিয়াছেন,-ধাহার! জেল-বীপাস্তর বা আর যা কিছুর 
জন্য প্রস্তত ছিলেন, তীহীরা জেলে আসিয়াও সে চিন্তায়, সে 
ভাবনায়ই কাল বাঁপন করেন। নিজেদের কথা, বাহির হইবার 
কথা ভাবেন না, ভাবেন কি করিয়া অভীষ্টলাঁভ হইবে। 
'মার এক প্রকৃতির লোক জেলে দেখা যায়, ধীহাদের যুক্তিব 
পরিবর্তন খুব সত্বর হইতে থাকে , অর্থাৎ যে ঘুক্তি ছুই দিন আগে 
নিজেই দিয়াছেন, জেলবাসের সময় তাহার বিরুদ্ধেই যুক্তি দেন! 
ঠ্প করিয়া! থাকার দরুণ অবসর পাইয়া, নিজেদের ভাল করিয়া 
পরীক্ষা করিতে পারিয়াই হউক বা! সুদীর্ঘ দুঃখকগ্টের কথা ম্মরণ 
করিয়াই হউক, ইহার! সুখা বিপ্লববাদীদের মতে আর মত মিলাইতে 
পারেন না, পূর্বের পথের ভুল-ভ্রান্তি জেলে আসিয়া! নূতন 
করিয়া দেখেন । 

পূর্বে বূলিয়াছি, বিপ্লববাদীদের মধ্যে ধর্্মভাব কিছু বেশী দেখা 
যাইহ। 'অরবিন্দ বাবু হইতে আরস্ত করিয়া, যিনিই যখন ক্কেলে 
গিয়াছেন, তখনই এই ভাবটা খুব ফুটিয়া উঠিয়াছে। বিপ্ববাদীরা 
সাধারণত তপ্ত । ভোগাকাজ্ষা একটু কম বলিয়া এবং জেলে 
মার কিছু করিবার নাই ঝলিয়াঃ সহজেই তাহার! ধ্যান-ধারণার 
ব্যাপারে লিপ্ত ও আকৃষ্ট হইত। আলিপুর মামলা হইতে 
আরম্ভ করিয়া বিপ্লববাদীদের রাজবন্দী ও কারাবাস অবস্থায়ও 
ধ্যান-ধারণা করিতে দেখ! গিয়াছে । এ ধর্মের দেশ” বলিয়াই 
হউক, আর যে কারণেই হউক অনেক বিপ্লববাদী শেষকালে 


৫৬ বাংলায় বিশ্লববাদ 


ধাশ্মিক,ই হইয়াছেন, বিপ্রবপন্থাকে পথ মনে করেন নাই। 
তে বিশ্বাস) ধন্ম ভিন ভারতের মুক্তি নাই || আবার কেহ 

ই সমস্ত ধ্যান-ধারণাঁয় পরম আনন্দ লাভ করিয়া, অধ্যাতবজীবনের 
ব্যাকুল হইয়া-গৃহ ত পূর্যেই ছাঁড়িয়াছিলেন-_ 
একেবারে সমস্ত ত্যাগ করিয়া সন্াসও নিয়াছেন । কেহ কেহ দে 
পথে উন্নত অবস্থায় জীবন ঘাঁপন করিতেছেন । বাংলার ধিপ্রববাদীনা 

জাতীয়তাকে মানব জীবনের উচ্চ ভাবসম্পদের দিক দ্রিয়াই বিচার 
করিয়াছিল। ভারতের জাতীয়তাকে ভারতের বিশিষ্ট সাধনা ও 
সভ্যতার দক দিয়াই বুকিতে চাহিয়াছিল। মন্ুম্যত্বের পূর্ণতার 
প্রয়োজনের দিক দিয়াই স্বাধীনতাকে একান্ত জাতীয় প্রয়োজন 
বলিয়! বুঝিতে ও বুঝাঁউতে চাতিয়াছিল, আর কে কেভ "রাজনীতি? 
বে ভারতের কথা নহে, ইত বলিয়।, অধাত্ সম্পদের সঙ্গে ধন্দেব 
গ্রয়োজন হিসাঁবে-ঠিক “রাজনীতি” নহেঃদেশসেবাকে জুড়ি 
দিলেন। তাহাদের ব্যাখ্যাত রাজনীতি বুঝিতে যতখানি দন 
শান্তর অধ্যয়ন করিতে হয়, ততখানি বাবিজ্ঞান জ্ঞানের প্রয়োজন 
হয় না| ভারতের বিশিষ্টতার ভন্তুই হউক বা যে জন্তাই হউক 
ইহারা দেশকে মুক্ত করিতে, ভারতের বিশিষ্ট অধ্যাজভীবন লাগ 
করিতেই ব্যস্ত হইলেন । 

কিন্তু ধীভাদের বিপ্লবে পাইয়া বসিয়াছিল ১ “দেবী আমার। 
সাঁধনা আমার, দর্গ আমার, আমার দেশ এ যাহারা মনে প্রাণে 
বিশ্বান করিতেন, তাহারা ধ্যনিধারণা ব্যাপারেও যেন মাও 
রাখিয়া চলিতেন। এমন কি, ্সনেক ঘময় যেন তাচার! শঙ্কিত 





জেলের এক অধ্যায় ৫৭ 


হইতেন, পাছে অধিক ধম্মচচ্চীয় এ পথ কেহ ছাড়িয়। দেয়, দেশের 
সেবাকেই একমাত্র ধন্ম মনে না করে। ধাহারা বেশী ধর্মচচ্চায় 
লিপ্ত থাকিতেন, তাহারা “বুঝি বা চলিয়া! যায়-__বিপ্রব গৃহ" ছাড়িয়া 
বুঝি যায় !--এ রকম ভাবনাও ভাবিতেন। বাহা হউক ভাল 
কি মন্দ আজও বলিতে পাবি না, বাহারা জেলে ও রাজবন্দী 
অবস্থায় নিত্য নিয়মিত ধ্যান-ধারণায় অধিক সময় ব্যয় করিতেন, 
তাভারা অনেকে বাহিরে 'আাঁসিরা তেমনটা আর করেন না। "অথবা 
অন্ভাবের তাড়নায় বা নানা কন্মপ্রসঙ্গে করিতে পারেন ন1। 

সে ঘাক্‌, ষড়বস্ত্ মামলায় এখান সেখান হইতে ক্রমে অনেকেই 
আপিরা হাঁজির হইলেন । ৪৫টী সেল্‌ পূর্ণ করিরা আমরা রহিলীম। 
কেহ কেহ “পায়ের মল' বাজাইয়া 'আসিল। ইহাঁদের নান! 
ধারার পূর্ধেই শাস্তি দিয়াছে ; আবার এ ফ্ডবন্ত্র মামলারও আসামী 
ইহারা । পায়ে ডাগুা বেড়ি! কোন বিশেষ অপরাধের জন্ত 
এই শাস্তি নহে--বাজনৈতিক বলিয়াই ইহার! 0917997:015 
'সাজ্বাতিক+ঃ। ইহাদের মধ্যে একটী ছিল বালক, বয়স ১৪১৫ 
মুখে হাদি লাগিয়াই আছে। হাসির প্রধান কারণ, কাছাকাছি, 
মধোমুখি হইলেও মুখ খুলিবার হুকুম নাই । ইহারা কি সাধনা 
করিয়াছে জানি না--তবে এ বয়সে ২৪ বছরের কঠোর কারাবাস 
আরো ৫1৭ বছর মাথার উপর ঝুলিতেছে ১ কিন্ত তবু গম পিষে 
গান গায় 5 স্পেশাল 416 নহে, একেবারে খাসা জেল ৫16: 
রোজ খায়, বাড়ী হইতে কোন তদবির নাই? কিন্ত তবু মুখের 
হাঁসি, বুকের আনন্দ রূমে নাই । 


৫৮ ংলায় বিপ্লববাদ 


অনেকে কঠোর শান্তির জন্তাই প্রস্তুত হইয়া অপেক্ষা করিয়া 
আছেন, স্থতরাং জেলের ভাঁত খারাপ, ভাঁল বিশ্বাদ, বলিয়া কিছু 
মনে করিতেন না। বীহারা ধর! পড়িবার পূর্বে সমিতির মধ্যেই 
থাইতেন তীভারা বলিতেনই, “সমিতিতে ত শুধু শ্নন-ভাঁতও 
খতিয়াছি। সমিতির ব্যবস্থা হইতে এ ব্যবস্ঠা মন্দ নহে 1, 
বিপ্রববাদীরা আহার লইয়া গোলমাল করিয়াছে রাঁজবন্দী 'অবস্তাঁয়। 
তাহাও নাঁনা কারণে, নতৃবা জেলের খাওয়া ঘতই খারাপ হউক, 
সেজন্য কোন অভাব অভিযোগ জানায় নাই। কারণ এ যেন 
জানা কথাই । ' 

ভোর হইলে না জাগিলেও দরজা খোলার শন্দেই জাগায় । 
মুখ হাতি ধুইতে, পায়খানায় যাইতে একদণ্টা বাহিরে রাখে, 
আবার “সেলে? । বৈকালে এক ঘণ্টার কনক বাহিরে নে 
আবার “সেলে”। 

কতকটা! খোল! জায়গায় এক একজন গুর্খ রাখালের হেপাজতে 
এক একজন বিপ্রববাদীকে নির্দিষ্ট কয় হাঁত জারগাঁর মধ্যে ছাঁডিয়া 
দেয়। কথা বলরি ভকুম নাই । উক্ত গুর্থা খুকরী খুলিয় হুকুমের 
সেবা করে। সুতরাং গর্ধার সঙ্গে নিত্য ঝগড়ী,লাগিয়াই থাকিত। 
এত কাছে থাকিয়াও কথা বলা চলিবে না, এই শাস্তি, গম্ভীর 
প্রভৃতির লোক ভিন্ন ত সকলে সা করিতে পারে না, তাঁই কথ 
বলিয়৷ ফেলে । 

নেতৃস্থানীয়ের! সাব্যস্ত করিয়া দিলেন, কথ! বলিও না ।-- 
তবে যদি একান্ত প্রয়োজন তয়, কথা কলিও---কিস্ত গুর্থা বা 


জেলের এক অধ্যায় ৫৯ 


সাহেবের সঙ্গে এ নিয়া তর্ক করিও নাঁ। এজন্য যে শাস্তি দেয়, 
দিবে। সেজন্ধ প্রস্তুত হইয়াই কথা বলিও। 

ফলে এই ফীড়ীইল :- প্রয়োজন হইলে (ব্যক্কিগত নভে 
সমষ্টিগত প্রয়োজনে ) কথা বল! হইত । গুর্থা হয়ত আসিয়া মানা 
করিত, ধমকাইত, নালিশ করিবার ভয় দেখাইত। আর নালিশ 
করিলেই শান্তি! কিন্ত বতক্ষণ প্রয়োজনীয় কাঁজ শেষ না হইত, 
ততক্ষণ বক আর ঝক কানে দিয়েছি তুলো” নীতি অবলম্বন করিয়া 
কথা 'চলিতই । অবশ্ঠা নিশ্রয়োজনেও যে কথা না চলিত, হাহা নয়, 
তবে সেটা নেতৃস্থানীয়েরা করিতেন না । অপরে অভ্যাসবশত 
করিয়া ফেলিতেন । গুর্ধখার হন্তে ধরা পড়িবার ভয় তাহাদের 
একটুও ছিল নাঁ। ভয় ছিল্ল, নেতাদের ৷ যাঁহাই হউক ছয় মাস 
পর্যান্থ কথা বল! বন্ধ ছিল! শেষে আমাদের ভগ্ন স্বাস্্যের কথ! 
চিন্না করিয়া হুকুম দেওয়া হইল; দুইজন করিয়া কথা বলিতে 
পাব,-তাহীও ব্যাবিষ্টারের যুক্তির প্রভাবে । 

সাধারণ কয়েদীরা কথা বলিতে পাবে, কিন্ধু বিপ্রববাদীর বেলায় 
কর্ভুপক্ষ মৌনব্রতের বাবস্থাই করিতেন। প্রত্যেক জেলে; এমন 
কি শেষকালে রাঁজবন্দী (50805 01:501761 ) ও অন্তুরীণের সময় 
পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিপ্লরবাঁদীদের যত গোলমাল হইয়াছে, 
তাহার 'অধিকাংশের মুল্লেই, এক দিকে এই কথা বন্ধ করিবার 
ও অপর দিকে কথা বলিবার চেষ্টা । 

জেলে চলাফেরা সম্বন্ধে নিয়ম জানান হইল,--(সে নিয়ম জেলের 
নহে, আমাদের নিজের ঘ্ুরের ) জেলে আসিয়া কিছু আশা করিও 


৬০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


না, চাহিও না, গ্রত্যাখ্যানও করিও না। সকলই সহা করিতে 
হইবে। যদি কোন অন্থণয় সহ করা একেবারেই অসম্ভব হয় তবে 
যাঁছা ইচ্ছা, ব্যক্তিগতভাবে করিও। কিন্তু অভিযোগ বা 
অভিযোগের প্রতিকারের দিকে ভরসা রাখিও না। তবে নল 
সহ্থ করা যায় কারণ “সইতে হবে” তাইত জেল !__ 


একাঁদশ পরিচ্ছেদ 
৪জল 
জেলের জীবন স্বভাবতই মংঘত। তাহার মাঁনে এই, জেলের 
নিয়মে তেমন 'অসংযমী হওয়ার সুবিধা নাই তবু মধ্যে মধ্যে 
কর্তৃপক্ষের বিচারে আমাদের 'অসংঘম নাঁকি প্রকাশিত হইয়া 
গড়িত। সে জন্ক হাঁত-কড়ি পা-বেড়ি প্রতৃতিও চলিতে লাগিল। 
একদিন কথাবাঁ্া লইয়াই গোলযোগ বাঁধিল। বেড়াইবার সময় 
কি একটা ব্যাপারে গুর্ধাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি চলিতেছিল। 
এমন সময় পরতাল্লিশজন আসামীর যে বেখানে ছিল একটি ইঙ্গিতে, 
কথাটিমান্ না বঙগিয়া নিজ নিজ সেলে গিয়া গন্তীর হইয়া বসিল। 
_ইছাই নাঁকি ভয়ানক ভয়ের কথা। সকলগুলি লৌক, একট! 
লোকের কথায় গর্থ সিপাহীদের সঙ্গে ঝগড়া পর্যান্ত না করিয়া 
ই্দিতমাত্রে বেড়ান বন্ধ করিয়া সেলে গিয়া ঢুকে! তাইত|-- 
অমনি ম্যাজিষ্রেটের কাছে গেল খবর। তিনি পত্রপাঁঠ আসি 
চাজির। তিনি সকলকে বাঠির করিয়া বেত দেওয়ার জারগাঁয 
নিলেন। সকলেই ভাবিল বেত মারা হইবে। মীর! হইলও বটে, 
তবে আঁগাঁদের অঙ্গে নহে-_-একটা নিজ্জীব বালিশের উপর। সাহ্বে 
ইঙ্গিতে বুঝাইলেন সাবধান, যদি দুষ্টামি কর, এই রকম করিয়া 


৬২ ংলায় বিপ্রববাঁদ , 


ব্তে মারা হইবে--সহিতে পারিবে না ।--বেতে মারার অধিকার 
যে বিচারাধীন (11091 191) অবস্থায়ও তাহাদের অক্ষুপ্ণই আছে, 
ইহা জেলকোড পড়িয়া ম্যাঁজিষ্রেট সাহেব আমাদের শিখাইলেন, 
কিন্তু হইলে কি হয়ঃ যে সংযম কোথাও শিখি নাই তাহা সাহেবদের 
ইচ্ছার ছুইদিনে শিখা যাইবে কেন? পারখানায় গেলে আর 
ধম রক্ষা ( সংযম মানেই এখানে বাকৃসধ্যম ) করা যাইত না। 
কাঁরণ ওন্থানেই পাশাপাশি বসিয়া “কথাবাতী” চলিত । সেই 
দুরগন্ধপূর্ণ নরকে বসিয়া থাকা কিন্ত সহজ নভে । যেমন “ধন্ত' আমর) 
তেমনি থন্' প্রভৃভক্ত গুর্খা। এ পায়খানার কাছে নাকে 
কাপড় দিয়া, খুকরী হাতে গুর্থা দাড়াইয়া থকিতঃ মুখে বলিত, 
“জলদি কর।” ভার! গুর্ধার কথার উত্তর ত 'আর পায়খানা 
বসিয়া দিতে পারে না, এ ধে শান্ত্রবিরদ্ধ কার্্য--তাই মুখ 
টিপিয়৷ হাসে । গুর্থা ত চটির লাল। দুই চার জন গুখা 
আবার এমনিই ছিল যেন জন্মের দিন হইতে চটিয়াই আছে-- 
জীবনে কখনও হাঁসে নাই ; চোখ লাল কবিয়াই আছে ধ্যান- 
ধারণা, জপ তপ প্রার্থনার মধ্যেও তাহারা বাধা দিতে আসিত । 
শুর্খাই ইংরাজের সব চাইতে বিশ্বাসা ভৃত্য । জেলে বিপ্লব- 
বাদাদের প্রতি ইহার! যেমন 'ন্ঞ্্ুয়াজনে গ্গ্রীতি” দেখাইয়াছে 
এমন আর কেহ দেখান নাই | 
যাহাই হউক এমন অবস্থায় ঢাকার মোকন্ম চলিল। থে 
দুঃখের মধ্যেও অনেকের ত্যাগ ও নিভীকতা দেখিয়াছি । কিন্তু 
কেহ কেহ? মুখে না বাঁললেও খালাম হইতে পাগলে থেন বাঁচে। 


ভেল ৬৩ 


আবার অনেককে দেখিয়াছি নিজে মুক্তি চাহে নাঃ নিজের জেল 
হউক, তবু যদি কোন উপায়ে বিশেষ কোন কন্মীর খালাস হইবার 
সন্তাবনা থাকে, তাহ। করিতে সর্বদাই প্রস্তত। 

ভোগ কগার ত সেখানে কিছুই নাই, তবু কেহ কেহ হয়ত 
তাহারই মধ্যে সামান্ত প্রয়োজনায় জিনিষটুকুই একটু আরামদীয়ক 
করিয়। লইয়াছে । আবার কেহ কেহ এ সামান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার 
মধ্য হইতেও অনেকথানিই বাদ দিয়া চলিয়াছেন--কারণ সংযম ও 
কঠোরতা পুরা মাআায় চাহ। অনেকেই জানিতেন, কঠোর শান্তি 
ইইবে। কেহ কেহ হয় ত হাল হ্যাড়য়াছলেন। অনেকেই শরীরটা 
বেশ সবল করিয়াহ রাখতে চাহিতেন--কারণ সুদীর্ঘ মেয়াদ 
থাটিভে, গম ভাঙ্গতে ঘানি টানতে শরীরই ত প্রধান সহায়। 
মনের অধস্থা তখনও সকলের বুঝা যার নাই, বুঝা সহজও নহে । 
মান্গষ নিজের মনের কথাও সকল সময় বুঝে না। 

বাহা হউক, সুথে ছুঃথে ঢাকা জেলের জেল'জীবন কাটিতে 
লাগিল। ও দিকে মামলী চলিল। তবে মামলার দিকে 
আসামীদের মধ্যে দুই জন বৃদ্ধ ও একজন নুকাব্ব ভিন্ন আর বড় 
কাহারো লক্ষ্য নাই । যাহা হইবার হইবে--ভাবটা যেন এই 
গোছেরই। কৌন্সেল মং 1ম. আর. দাস, শুশ বাবু উকিল 
প্রভীতি বখন হাাখ্মকে মামলা বুঝাইতে ব্যন্ত--তখন *ডকে" 
আসামীরা হত কুটির ময়দ। ছবানয়া গাথ আহেবের মুখ গাঁড়তে 
লাগিয়া গিয়াছে । যে সাহেবের মুখ যত বিশ্র তাহার মুখ গড়া হয় 
তত সহজে ও শাগ্র! মধ্যে মধ্যে হৈ চৈ ব্যাপারে, হাকিম বির 


৬৪ ংলায় বিপ্লববাদ 


হন। মুুব্বিরা বলেন চুপ চুপ ! একদিন কোর্টে মিঃ আপটন 
ও মিঃ গার্থের মুস্তি মুখ) একেবারে চমৎকার করিয়া গড়া হইল। 
শ্রীশ বাবু লইয়া গিয়া সাহেবদের দেখাইলেন ; সাহেবেরা একটু 
হাসিল বটে, কিন্তু মনে করিল তয়ত ঠাট্টা করিয়াছে! শ্রীশবানু 
আস্তে আস্তে বলিয়া গেলেন ওদের বেমন মুখ গড়িয়াছ তেমনি মিঃ 
দ্রাসেরও মুখ গড়িয়া দেও--তবেই ওরা কিছু মনে করিবে লা। 
চেষ্টাও হইল--কিন্তু শিল্পী বলিলেন, “ন্থুন্দর সুখ গড়িতে পাৰি 
না। কোথাও একটু বিশ্রা খত না থাকিলে লক্ষা ঠিক কবিকা 
গড়া যায় না!” এমনি ভাঁবে আদালতে দিন কাটিত ৷ 
্ ্ ক 

জেলে গিয়া কেহ কেহ বেশ ধ্যান-দারণা আর্ত করিলেন। 
ইহাদের মধ্যে ছুই একজন সত্যই পরে সংসার ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাস 
নিয়াছেন। অক্ষয়) ডাক নীম লোহা বা 17017 ত্যাগে। চর, 
মাধুধ্যে, সাধনায় জেলে থাকিতেই ভবিগ্যৎ ভীবনের আভাস দিলেন। 
সেই মৌন-ব্রতধারীকে অনেক বিরন্ু করা হইত, কিস্্ব মৌদীই শেনে 
রী ভইলেন, বিনুক্ত করা সন্ভব হইল না। তাহার ব্রত সিদ 
হইয়াছে, তিনি এখন সব্দভাগ--সাধু। 

পূর্ব্বেই বলিয়াছি, ধন্মের দেশ বললিয়াই হউক বা অন্ত কারণেই 
হক বিপ্রববাঁদীরা সাধারণত ক্গেলে গ্রিয়া একটু সাধন ভজন করিত। 
এ 'অবস্থায় যাহারা প্রাণথায়াম প্রভৃতির মাজা হঠাৎ চড়াউয়। দিলেন, 
তাহারা কেহ উপবুক্ত দীক্ষার 'মন্তাবে হইলেন অন্ুস্থ, কেহ বা বিপ্লব 
পণ ছাঁড়িলেন। সুদীর্ঘ কাল জেলে একটা প্রকোষ্ঠে সময় কাঁটাইতে 


জেল ৬৫ 


হইবে এই নিগিত্ত (মনে রাখিতে হইবে লেখাপড়। করিয়া সময় 
কাটাইবারও সম্ভাবনা ছিল না) এবং ভবিস্যৎ জীবনের গতি- 
গ্রকৃতি সম্বন্ধে কোনও প্রকার নিশ্চরতা না থাঁকাঁয় স্বভাবতই 
ধবকদের মধ্যেও ভগবদ্ভক্তি দেখা দিত, একটা! শরণাগতির ভাব 
আঁসিত 1 মানুষ যেখানে নিরুপায় শরণাগতি সেখানে সহজেই 
আসে । তাহার উপর সংসারের বন্ধন কাহারও বড় একটা ছিল 
না। সকলেই ভাঁবিত ধাঁক ভগবত চিন্তা করিয়াই জীবন কাটাইব, 
ছুঃখ কি ভগবত চিন্তার নস্ত অবসর পাইলাম! অবশ্য সুদীর্ঘ 
কাঁদাবাসের মধো তেমন নিষ্ঠার সভিত এই ভাবটাকে সকালই 
বরাবর বজায় রাখিতে পারেন নাই । ছুঃখ কষ্ট অনেককে পীড়িত 
করিয়াছে ; আবার অনেককে যে কিছুই করিতে পারে নাই তাভাও 
দেখিয়াছি । সেই জেল-দ্বীপাস্তরের মধ্যেও তাহাদের মুক্ত-জীবন 
একটুও শ্রান হয় নাই । "আগুনে পুড়িয়া পুড়িরা মৌণ। খাটি 
হইয়াছে, আরো উজ্জ্বল হইয়াছে ! 

বড়যন্ত্রের মামলায় প্রায়ই একজন এগ্রুভাঁর দীড়াঁয় সেই হয় 
সরকারের প্রধান 'অবলম্ছন। ঢাকার এই মামলায় সরকার কোন 
এপ্রভার পায় নাই । তবে প্রাণায়াম প্রভৃতি অশ্রদ্ধ উপায়ে সাধন 
করিয়া একজন নিকৃত মস্তিষ্ক হয়, সে-ই মৌকদ্দমা শেষ হইলে 
অসংলগ্ন কতকগুলি কথা বলিয়া ফেলে । তাহা অবশ্যই আদালতে 
গ্রাহথ হয় নাই। এক কারণ, তখন মৌকর্দমা শেষ হইয়াছে, 
দ্বিতীয় কারণ আত্মহতা! কৰ্ধিতে উদ্যত হওয়ায় জেল কর্তৃপক্ষ 
তাহাকে উন্মাদ বলিয়া স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন । 


৫ ডি 


দ্বাদশ পরিচ্ছেদ 


মামলায় ফল হইল ন। 


গবর্ণমেণ্ট দুইদিনেই দেখিলেন, ষড়বন্ত্র মামলা করিয়াও বিপ্রব- 
বাঁদীদের বিশেষ কিছুই করিতে পাঁরেন নাই । কয়েক জনের শাস্তি 
হইল বটে, কিন্তু দেশে বিপ্লবানুষ্ঠান চলিতেই লাগিল। ঢাকাব 
মোকর্দমার সময়েই ইন্ম্পেক্টরের উপর গুলি চলে, মুম্নিগঞ্জে বোমা 
ফাটে, বিক্রমপুরে কয়েকটা খুন হয়, অনেকগুলি অস্ত্রশস্ত্র ধরা পড়ে 
অনেকগুলি রাজনৈতিক ডাকাতি হয়। নেতাদের গ্রেপ্তারেও ঘে 
বিপলবানুষ্ঠান বন্ধ করা গেল না, ইচা সরকার সহজেই বুবিলেন। 

এত সব ধর-পাকড়ের পরেও বিপ্লববার্দীরা গুপ্ত সমিতি ত্যাগ 
করিতে পাঁরিল নাঁ। মোট কথ! বাংলায় তখন আবেদন নিবেদনে 
বাঁহাদের বিশ্বাস ছিল, তাহারা এই সমস্ত বিপ্রববাদীদের উপর কোন 
প্রভাবই বিস্তার করিতে পারেন নাই। তাহার! একই কালে 
মডারেট, এক্টামি্ট সকলকেই বাদ দিয়া চলিল। দেশের কাঞ্জ 
তাহারা শুধুই বিপ্লবের দিক দিয়া বিচার করিয়া, ধ্বংসের শ্বশানেই 
সৃষ্টির মঙ্গলঘট স্থাপনের জন ধ্যগ্র হইল। 'আবেদ্ন নিবেদন বা 
অপেক্ষা করিবার ধৈর্য তাহাদের একটুও ছিল না। তবে 
তাহাদের পথ কি, কোথায় যাইতেছ সে সন্ধদ্ধে নুষ্পষ্ট, ধাবুণী থে 


মামলায় ফল হইল না ৬৭ 


বিপ্লববাদীদের প্রথম হইতেই ছিল, তাহা বলা যাঁয় না । তাহা নানা 
অবস্থার উদ্ভব ও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবস্তিত হইয়াছে । 

বিপ্লববাদীদের উগ্র কর্মে ও ত্যাগে দেশে তখন এমনি একটা 
'আব্হাওয়ার সৃষ্টি করিল, যাহাতে আইনসঙ্গত বাঁজনৈতিক 
আন্দোলনকারীরা ও তাহাদের প্রচেষ্টা প্লান হইয়া গেল। 
সেদিকে আর কোন আঁকর্ষণ রহিল না। অন্তত ভাঁবপ্রবণ তরুণ 
বাংলার কাছে এ পথ যেমনি অকেজো তেমনি নিরর্থক বলিয়াঁই 
বিবেচিত হইল | বাশ্গাই হউক, দেশের অন্ত কোন পন্থীর সঙ্গে 
কোথাও একটু বিরোধ না করিয়া এবং যতটুকু সম্ভব প্রত্যেকের 
কাছ হইতে তাহাদের জ্ঞাতসারে বাঁ অজ্ঞাতসারে সাহায্য লইয়! 
বিপ্লববাদীরা তাহাদের পূর্বব পন্ঠাতেই যুক্ত রহিল, উহ! ত্যাগ 
করিল না। 

নেতার! জেলে গেলেন, কেহ কেহ সরিয়া পড়িলেন, কিন্তু দেশে 
এই ম্লোত বাড়িয়া চলিল। বাংলার যূবগণের আশা আকাজ্ষা 
ইচ্চ। প্রচেষ্টা, সবই বিপ্রবমূখী হইয়া পড়িতে লাগিল । কেমন করিয়া 
এই বিপ্লব সত্যই একদিন সম্ভব হইবে সে কথা সাধারণ সভ্য 
কিন্বা অনেক প্রধানের পক্ষেও কল্পনা করা হয়ত খুবই শক্ত ছিল। 
কিন্ত তবু এ বিপ্লবের নামে, গ্রুই জটিল, বন্ধুর, সীমাহীন পথেই 
সকলে পা ফেলিতে লাগিল) এত বাধ! সত্তেও নৃতন কম্মীর 
অভাব হইতেছিল না। নানা অযোগ্য লোক বেমন বাহির 
ইইতেছিল, যোগ্য লোকও তেমনি বাহির হইতেছিল। বড় বড় 
দলগতিরা সরিয়! গেলে* স্থলে স্থলে দলবুদ্ধি পাইতেই লাগিল: 


৬৮ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


সব শেষ হইল না। দলবুদ্ধি ভাল না হউক, কিন্ত এ প্র 
পথিক যে জুটিত; তাহাই লক্ষ্যের বিষয়। 

ইহারও একটা হেতু আছে । বাংলার বিপ্রধবাদ কোন বাক্তি- 
বিশেষকে আশ্রয় করিয়া গড়িয়া উঠে নাই । জাতির স্বতঃক্ফ, দু 
দেশাত্মবোধ নানা ভাবসংঘাতে রূপান্তরিত হইয়া বিপ্রবণমাকারে 
আত্মপ্রকাশ করিয়াছিল 1) কোন ব্যক্তিবিশেষকে কেন্তু কপি! 
যদি বাংলার এ জাগরণ সুচিত হইতঃ ভবে নেতাদের অবর্তমানে 

বা “অন্তদ্ধানে, তাহাতে স্বভাবতই ববনিকা পড়িত। কিন্তু 
রী কল্প সকল-নিবপেক্ছ ভইন্লাই উক্ত প্রেরণা, আপন 
অন্তরের মণিকোঠা হইতেই লাভ করিয়াছিল | মান্ুন বখন 
অন্তর দেবতার আদেশে কোন বস্ককে লাভ করিতে বাস্থ ভয়, 
তখন তাভার গ্োতকরূপে বাহিরের কোন "বাণী” কোন মহীপুরুষের 
“আদেশ” বা অপর কোন বিদ্বেষ ধর্তনান না থাকিলেও চলে। 
সহায় সন্বলহীন বিপ্রববাঁদীরা নিজেদের ভাবকে নিজেরাই কষ্ট 
করিয়াছে, নিজেরাই পুষ্ট করিয়াছে । কাভারো বিয়োগে, কাহানে! 
অভ্ভাবে তাহাদের পথ রদ্ধ করিতে পারে নাই | ভারতের হা 
সব জাঁগরণই নেতার অভাবে, একভন শ্রেষ্ট লোকের পসভাবে 
একেবারে অসহায়ভাবে নিঃশেন ভ্ভছাছে। ভারতের ইতিহানেঃ 
পাতায় পাতায় ব্যক্থিবিশেষ নেতার অক্ভুত করত আৰু উক্ত নেতাপ 
অভাঁবে এ নেতারই শিগ্তদের অদ্ভুত অবসাদের কথা প্রিপিবদ্র 
'আছে। একেছ আআ ভাবেই যেন মকলেন্রই অভাব হই] পড়ে । কিএ 
বাংলার বিপ্রববাঁদের অবস্থা ছিল ছসন্ঠ প্রকার। $বাণলার 


মামলায় ফল হইল না ৬৯ 


বুবজন এই আন্দোলনকে ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখে 
নাই। তাহারা সকলেই (ব্যক্তিবিশেষ নহে ) প্রাণ দিয়া ইহার 
সত্য মিথ্যা ভূল ভ্রীস্তি বাচাই করিয়াছে । নেতার আদেশে 
তাহারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিয়াছে বটে, কিন্তু নেতার আনন 
দেশের আনেক নীচেই রাখিয়াছিল। দেশ যেন তাহাদের সমগ্র 
সদয় দখল করিয়া বপিয়াছে, নেতার "আমন সেখানে দেশের 
উপবে জয়ী হইতে পারে নাই | বাংলার ধুবজন বিপ্রববাদের 
ভিভৰর দিয়া একটা নূতন ভাঁব দেশে আনিয়া দের--তাভ 
জনশক্তি প্রভাব, তাহা সাধারণতন্, বাক্তিতন্ত্র নহে। ব্যক্তির 
দেশসেবার মাপকাটিতে সেখানে নিত্য বিচার হইত। ১ 

নিজের জীবনে, সব্ধন্থ বিনিময়ে সত্যকে লাভ করিবার 
'মাকাজ্ঞা ও যোগ্যতা বিপ্রববার্দীদের মধ্যে ছুই একজনের নহে, 
অনেকেরই ছিল | স্ত্তরা"ণ তেমন সব ব্যক্তি আদর্শকে লাভ 
করিতে অপর কাহারও অপেক্ষা না করিয়া নিজের অন্তরের জোরেই 
একেবারে বে-পরোয়া হইয়া চলিতে ইতস্তত করিত না। 

গড়িয়া তোলার একটা গৌরব আছে,_--অন্কপরণ করার 
'্ঠে অগৌরব। একটায় মানুষকে মা্ষ করে, তাহার জীবনকে 
চল . যৌবনধর্খে তেজীয়ানৎ করে, অপরটি নীন্ুষকে পীড়িত 
করে,--স্ষ্টির আবেগের একাস্ত অভাব হেতু একটা পন্গুতা আসিয়া 
তাহার সত্যকার জীবনধন্মকে দীন হীন করিয়া দেয়। 

বাংলার সেই জাগরণ যেন বাঁডালীর নিজন্ব। তাহার 
ভুল ভ্রাত্তিঃ ভাল-মন্দ *মবই বাঙালীর গড়া। তাহাতে বাঙালীর 


৩ বাংলায় বিপ্লববাদ 


একটা প্রভুবুদ্ধিই কাধ্য করিয়াছে--কোন দাঁস-বুদ্ধি নতে। 
অন্ুকরণের দৈন্ধ নাই,__স্থজনের গৌরব আছে । 

এই সমস্ত নাঁনা কারণেই বাংলার বিপ্রব আয়োজন বাধা 
বিপত্তিতি, নেতার অভাবে থামে নাই। নিত্য নিত্য নব নব 
কন্মী আসিয়া কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছে) বরং গোঁড়াকার 
নেতাদের (পাঁইওনিয়ার ) অপেক্ষা পরবন্ভী কর্মীরা বিপন্তি 
ঠেলিয়াছে বেশী । একটা প্রেরণা যেন বাঙালী বিপ্লববাদীদের 
পথনির্দেশ করিয়া চলিরাছিল, নেতার আদেশের অভাবে 
তাই তাহারা অসহায় হইরা বনিয়া পড়ে নাই) ইহার ভূল- 
ভ্রান্তি দোষ-গুণ সবই তাহাদের একেবারে নিজস্ব বলিয়াই বাংলার 
কন্দীরা আত্মবিশ্বীসেও ভুঙ্জয় ভইয়া উঠিয়াছিল । বাংলার 
যুবকেরা এই প্রভু-নুদ্ধির ফলে কতকটা গোড়া ও একগুয়ে 
হয়ত হইয়াছিল, কিন্থ ইহার ফলেই থে তাহারা একটা ভীবন্ধ 
সঙ্ঘে পরিণত হইরাছিল তাভাতে সন্দে5 নাই । নালা বাদা-বিপদ্দি 
সব্বেও কল্মার পর কন্মী জুটিতেছিল। দেশের বুকের মানখান 
হইতে যেন কম্ম্ার! দেশের বাধীকে গ্রহণ করিতেছিল, দরাদ দিয়া 
যেন দেশের বুকের ব্যথা টে পাইতেছিল । পথই তাহাদের পথে 
টানিতেছিল-_পথপ্রদর্শক যেন অবান্তয | 


আয়োদশ পরিচ্ছেদ 
মতভেদ 


স্বদেশীর স্থত্রপাঁত হইতে বিপ্রব্বাদীদের সমিতির মধ্যে নানা 
শ্রেণীর লোক আমে । গোড়ায় যে সমস্ত সমিতি গড়িয়া উঠিয়াছিল; 
তাহাতে খাঁটি বিপ্লববাদী ছাড়া অন্ত লোকও ঢুকে । প্রথম অবস্থায় 
পদে পদে বিপদকে বরণ করিতে হইত না বরং একটা প্রতিপত্তি 
লাভের অবসর ছিল বলিয়া খুব সাধারণ শ্রেণীর লোকও দলে 
ঢুকিয়াছিল। “মধুরে বহিবে বায়ু ভেসে যাঁব রঙ্গে মনে করিয়াও 
অনেকে ইঙ্গাতে লিপু হইয়াছিল । পূর্ত .বলিয়াছি, গোড়ায় বাহবার 
একটুও অভাব ছিল না। তাহার উপর, একটা দল বাঁধিয়া 
চঙিতে পাবিলে যে গ্রতিপত্তিলাভ হয়, তাহার আকর্ষণেও 
এক শ্রেণীর লোক ইহাতে ঢুকে । ইহীরা সমিতির প্রকাশ্ ব্যাপার 
পর্যন্তই যে কেবল ক্গাস্ত ছিল তাহা নহে গুপ্ত বাঁপারেও কিছু 
কিছু লিপু হইয়াছিল । তবে সে গুপ্ত ব্যাপারের সত্যকার 
নির্যাতনের দিকটা তখনও আরম্ত হয় নাই বলিমা পরীক্ষা 
তাহাদের পরে হইয়াছে। যাহাই হউক এ সমস্ত ধর-পাকড় ও কঠোর 
মে্নাদ প্রভৃতির পর, বিপ্রববাদীদের কশ্মপন্থা একেবারেই উপ্টাইল 
এবং কম্মীদের যোগ্যতার মাঁপকাটি স্বভাবতই বদলাইতে লাগিল । 


৭২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


১৯১০ সাল হইতেই নাম যশ বা অন্প্রকারের কোন প্রতিপন্তি- 
লাভ অথবা কোন সুথ বা সুবিধার আকর্ষণ আর রহিল না; যাহা 
রহিল, তাহা! মোটেই লোভনীয় নহে। ধাহাঁরা বুঝিয়! শুনিয়া 
আসিলেন বা রহিলেন, তাহারা নির্যাতন, দুঃখ, নিন্দা, দারিদ্র্য 
প্রভৃতিকে বরণ করিলেন । অবশ্য বুঝে নাই, কেবল “সঙ্গে আছে; 
এমন লোকও কেহ না ছিল তাহা নহে, তবে পূর্ববকাঁর “সুবিধা -পন্ঠী” 
বাহবা-লোভী” বা প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তিকামীদের কোন স্তান 
সেখানে আত রহিল না, তাহারা আপনা হইতেই সরিয়া পড়িল। 
আর এক শ্রেণীর লোকও পরে সবিয়া পড়েন, উহাদের কথাই 
এখানে বলিব। 

৯১০ সালের পর হইন্ে বিপ্রববাদীদের মধ্যে কতকটা মতভেছের 
সৃষ্টি হইতে থাকে । আঁদশ লইয়া একটা ধুঝাপড়া চলিতে লাগিল 
পথ লইয়াও মতান্তর দেখা দিল। পূর্বববঙ্গে ও পশ্চিমবঙ্গে সর্বব্ঠ 
এই ভাব অল্লাধিক ছিল। খীহারা কিছু ভূগিয়াছেন, অঞচ 
আর ভূগিতে রাজী নচেন, তাহারা ছুর্ভোগ ভুগিবার দায় হইতে 
অব্যাহতি পাইতে এ পথ ছাড়িলেন। কেহ বা, এ পথে কিছুই 
হইবে না, এই বিশ্বাসে বিপ্রবপদ্থ' ছাড়িতে লাগিলেন । কেহ কে 
বলিলেন, স্ত্রীশিক্ষা ভিন্ন এদেশ উঠবে না, কারণ “না জাগিলে 
সব ভারত ললনা, এ ভারত আর জাগে না জাগে না 1? কেহ কেঃ 
বলিলেন, জাতিভেদ না৷ উঠিলে, কিছু হইবে না । কেহ বলিলেন, 
শিক্ষাই নাই, আঁমাঁদের ভাব বুৰিবে কে, শিক্ষাবি্তার ভিন্ন কিছু 
হইবে না ।--কেহ বলিলেন, এদেশ ধরে দেশ ধন্মা ভিন্ন এদেশ 


মতভেদ ৭৩ 


কিছু বুঝে নাঁ--ধর্মেইে এদেশ উদ্ধীর হইবে ।--এই রকমের নান! 
কথায় অনেকে সে সময়কার বিপ্রববাদীদের দল ছাড়িলেন। ছুই 
একজন ছাড়া; তীহারা সকলেই যে স্ত্বীশিক্জাঃ সমাজসংস্কার, 
শিক্ষাবিস্তার ও ধর্মচচ্চায় জীবন কাটাইতেছেন এরূপ বল! ঘায় 
না । তবে বিপ্রববাদীরা মনে করিত, তাঞ্ছারা ছাড়িয়া! বাইবে, 
ইহাই প্রধান কথা । 

বাহার স্ত্রীশিক্ষা১ সনাজসংস্কার করিবার কথা বলিলেন, তাহাদের 
সর্দে, মতের দিক দিয়া, যাহারা তখনও বিপ্রবানুষ্ঠান করিতে 
চাহে তাহাদের কোন মতবিরোধ ছিল না। কিন্তু যাহারা ধর্ম 
ভিন্ন কিছু হইবে না বলিলেন__ঠীহাদের সঙ্গেই বিপ্রববাদীদের 
সাক্ষাৎ সম্বন্ধে একটা মতবিরোধ দেখা দিল। কারণ তাহার! 
ধর্মের কথা, ভারতের আদর্শের কথা বলিয়াই ধিপ্রববাদীদের কর্থা- 
পন্থাকে আক্রমণ করিতেন। বিপ্রববাঁদীদের কম্মপ্রচেষ্টার পিছনে 
একটা উচ্চ আদশ ছিল । নানা বিরুদ্ধ মন্তব্যের মুখে তাহারা! নেই 
দাণনিক তত্ব আলোচনা করিয়া দলের কনম্মীদের টি কাইয়া 
রাখিত। আদর্শ যে তাহাদের অক্ষু৪ আছে, তাহা তাহারাও 
মাব্স্ত করিত। কিস্তু যাহারা ধনোর কথা বলিয়া বিপ্রবগন্থ৷ 
ছাড়িলেন তাহারা বিপ্লবকে আক্রমণ করিতে ধর্মের উচ্চতত্বের 
দোহাই দিয়াই এই পন্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করিতে লাগিলেন । 
মোট কথা মানুষ ভাল মন্দ যাহাই করুক নৈতিক যুক্তির 
অভাব ভয় না। যাহারা বিপ্রবগন্থা ছাড়িল তাহারা যেমন 
আধ্যাত্বিক দোহাই *দিত, যাহারা বিগ্লবপন্থায় যুক্ত হইয়া 


৭8 লায় বিপ্রাববাদ 


রহিল তাহাঁরাঁও ভিন্ন মতাঁবলম্বীদের বুক্তির অসারতা প্রতিপন্ন 
করিত । 

অবস্থা দীড়াইল এই,_রাঁজশক্তি ইহাদের পিষিয়া মারিতে 
সচেষ্ট) বাঁহিরে তাহার! ফ্লীড়াইতে পাবে না, এদিকে ঘরেও নহে। 
দেশবাসীর জ্ঞানের বাহিরে গিয়াই তাহাদের দীড়াইতে হইবে ।-_ 
কিন্তু এমনই সময়ে আবার তাহাদের পথকে ধাহান্থা এতদিন পথ 
ভাঁবিয়াছিল, তাহারাঁও বিপথ বলিয়া সরিয়া যাইতে লাগিল; 
কেহ নীরবে গেল, কেহ বিরুদ্ধতা করিতে করিতেই গেলেন । 

এদিকে দেশের কোথাও তাহাদের প্রভাব প্লতিপন্তি নাই; 
তাহাদের ছুঃখ কষ্টকে সহা্ভূতি বা প্রশংসার দৃষ্টিতে ঘরের বা 
বাহিরের মা বোন, বাপ ভাই কেই দেখিবার সুযোগ বা সময় পাঁন 
নাই । পেটে বিনি ধরিয়াছেন, মা, তিনি হয়ত কাদেন, তাহাও 
নীরবে; ছেলে যে কি করিয়াছে তাহা ত” তিনিও জানেন না। 
“ব্ড় গলায়? ছেলের ছুঃখের কথা ভ; তিনি বলিতে পারেন না । পাড়ার 
অমুকে অমুকে বলিভেছে ছেলে “ডাঁকাঁতি করিয়াছে | মায়ের 
সাস্বনারও কিছু নাই । এ কথাটা, ব্যথার মন লইয়া বুঝিতে 
চাঁছিলে বুঝিবে বিপ্লববাদীদের মায়ের ছুঃখও কেমন অসহনীয় 
মা জানেন ছেলে তাহার 'অনিন্দর্নীয় কিন্ত তাহাও নীরবে জানেন? 
নীরবে বুঝেন--বলিবাঁর নভে। কোন পরিবারের পুরুষেরা হয়ত 
মাকে সান্ত্বনা দেয়; ছেলের ভাঁলর দিকটা দেখায়; আবার অনেক 
পরিবারের পুরুষেরাও হয়ত মাকে ছেলের অন্তায়ের কথাই বলে, 
প্রশংসা একটুও নাই । মায়ের ব্যথা অবর্ণসীয় । এস্লে বিপ্লব- 


গতভেদ ৭৫ 


বাদীর ব্যথাও বুঝিতে হয় । বিপ্রববাঁদীর ছুঃসহ কারাঁবাসে, মায়ের 
সান! ব্যাপারেও সে নিশ্চিন্ত নহে । কারণ দেশবাসী গিয়া মাকে 
ত* বলিবে না যে১ছেলে তোমার দেশের জন্য দুঃখ সহিতেছে, 
তোমার আনন্দের দিন।* সে জানে, ছেলের দুঃখকে মায়ের 
গৌরবের বস্ত কেহ করিবে না। বরং থুনে” 'ডাঁকাত”, বলিয়া 
কেহ কেহ গ্রাম্য-শক্রতাঁও সাধন করিয়াছে, ব্যথা দিয়াছে । বিপ্লব- 
বাদীদের সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের মায়েরাও দুঃখ কম সহে নাই । তবে 
মনেক বিপ্লববাদীর জননী, ছেলের ছুঃখ-কষ্টকে নীরবেই গৌরবের 
বস্তু ভাবিয়াছেন। ছেলেকে ফিরিয়া পাইয়া ধরিয়া রাঁখিতেও 
চাহেন নাই, আবার বখন সে বিপ্রব্পথেই ঘাত্রা করিয়াছে, 
তখনও মা, যাত্রার মঙ্গল আশীর্ববাদই করিয়াছেন । অবশ্য তেমন 
শক্ত মায়ের সংখ্যা খুবই বেশী নহে। যাহাঁই হউক ঘরে বাহিরের 
এই অবস্থা লইয়া বিপ্লববাদীর! তখন নৃতন কর্মক্ষেত্রে নামিতেছে । 
বিপ্রববাদীর! তাহাদের দলকে খাঁড়া রাখিতে এক প্রকার বদ্ধ- 
পরিকরই হষ্ল। সশস্ত্র বিদ্রোহ, আজ হউক, কাল হউক করিতে 
হইবে, একথা বুঝিয়াই তাহারা দলকে অব্যাহত রাখিতে উদ্যত 
হইইল। এই সম্পর্কে অর্থের প্রয়োজন হইলে ডাকাতি করিয়াছে, 
প্রকাশের সম্ভাবনা এড়াইবাদ জন্ত খুন করিয়াছে । কিন্তু সেই 
প্রকাশ্ট বিপ্লবের দিন যে কৰে আসিবে তাহা তাহীরা! ঠিক জানিত 
শা। তবু একটা আশা তাহাদের ছিলই । কেমন করিয়া কি হইবে, 


ষে সময়কার কথ! বলিতেছি তখন এমনই ছিল দেশের অবশ্থী! । 


৭৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


নিদিষ্ট করিয়া না বলিতে পাঁরিলেও একটা কিছু যে তাহীরা করিবে, 
ইহাতে বিগ্রববাদীদের সন্দেহ ছিল না। কিন্ত সকলে এই পথে 
বিপ্রব সম্ভাবনা স্বীকার করিতেন না । সেই জন্থ ডাঁকাতি ও খুন 
প্রভৃতি তাঁহারা অনর্থক মনে করিতে লাগিলেন এবং স্বভাবতই 
কার্যাত কোন বিপ্রবচেষ্টা করেন নাই | ১৯১৪ সালে, বুদ্ধ আবিজ্ঞ 
হইবার পর যে ভাঘে. বাংলার সকল বিপ্রবদলই কাধ্যঙ্গেরে 
নামিয়াছিল, সে ভাবে বদি পূর্বব হইতেই কাধ্যক্গেতে নামি 
তবে অবস্থা যে আরও গুরুতর হইত তাহাতে সন্দেহ লাই । 
একথা বলিষা বিপ্রববাদীরাও শেষে আপশোষ কলিয়াছে । যাঁভাহ 
হউক এই মতভেদের সনয়, বাংলার কোন কোন দলে, বিপ্লবের 
প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিলেও, তখনকার কাব্য প্রণালীকে অনসব্ণ 
বা সমর্থন করিতে চাহে নাই । কিন্ মন্তশালন সমিতি পূর্ব পথেই 
চলিতে লাগিল। তবে ভাঙার নিজের কোন কোনি বিশিষ্ট কর্মাও 
মতভেদ হেত দল ছাড়িলেন এবং পরে তাভাবা বিপ্রবপন্থাকেই 
ছাঁড়িরা দিলেন । 

কিন্ত এই মতভেদ সন্জেও নিপ্রববাদীরা সকলে পথ ভ্যাগ কে 
নাই। শেষ পধ্যন্তও ভাঙার! নিজেদের মত মতই পথ করিয়া 
লইয়াছে, পাহাড় প্রমাণ বীধাবিদ্ব "অন্িক্রম করিয়াছে । আর 
বীহারা মত হিলাইভে পারেন নাই বলিনা দূঝে গেলেন--ভীহানা 
হয় মত পরিবর্তন করিয়া আবার ফিরিলেন নতুবা! একেবারেই দুদে 
সবিয়া গেলেন। ঘরের এই মতভেদ সঙন্ধেও বিপ্রববাদীরা ঘর 
খুছাইতেই লাগিল। বাংলার তরুণ সম্প্রদায় বিপ্রববাদীদের দিকেই 


মতাভেদ ৭৭ 


আকুষ্ট হল । ইচাঁর একটা প্রধান কারণ বিপ্লববাঁদীদের মুক্তি নহে, 
কিন্ত কন্ম প্রবণতা ও ত্যাগ । অপর পক্ষের তেমন কন্মপ্রবণতা 
ছিল না বলিয়াই দেশের যুবক, বাহার একটা কিছু করিতে চাহে, 
তাহাদের কথার আকুষ্ট হইত নাঁ। বিপ্রববাদীরাই দেশের যুবকদের 
চিন্ত 'আকুষ্ট করিয়া রাখিল। ক্রমে তাহাদের যুক্তি প্রভৃতি বাংলার 
যুবক সম্প্রদায়ের কাঁছে অপ্রতিহত ভয় উঠিল। বলিয়াছি ইহার 
একমাত্র কারণ তাহাদের একান্ত আন্তরিকতা ;-__ভূল ভ্রান্তি সত্বেও 
তাঁহাদের জীবন্ত সচল ভঙ্গী। সেই জীবন্ত চেষ্টী ছিল বলিয়াই 
দেশের লোক বিপ্রববাদীদের কন্মশক্তিতে বিশ্বাস হারায় নাই । 
বিপ্রববাদকে যুবকদের কাছে অপ্রতিহত করিতে তাহারাঁও 
চেষ্টার ক্রটি করে নাই । দেশের যাহা সম্পদ তাহা বিপ্লবধাদীরা 
নিজেদেরই মনে করিত । প্রত্যেক বস্তকেই তাহারা নিজের 
প্রয়োজনে খাটাইতে চেষ্টা করিত। কোন্‌ দিনকোন্‌ কথা, কোন্‌ 
গাঁথা কে কোন্‌ উদ্দেশ্তে লিপিবদ্ধ করিয়াছে কে জানে, তবে 
বিপ্লববাদারা সেই গাথাকেই নিজেদের প্রয়োজনে খাটাইয়াছে। 
বে কথায় তাহার মনে জোর বাঁধিবে, যে কথায় তাহার কার্ধা সমর্থন 
করিবে তাহা সে দেশ বিদেশের ধর্মগ্রন্থ, ইতিহাস, কাঁব্য হইতে গ্রহণ 
করিয়াছে । বিপ্রব অন্গষ্ঠানকে, তাহাদের প্রত্যেক কর্ণকে যুক্তিসহ 
করিতেও তাহারা ত্রুটি করে নাঁই-স যুক্তি বাহিরের কাহারও 
কাছে দিতে না হইলেও নিজেদের মধ্যে সর্বদাই দিতে হইত | 
রবীন্দ্রনাথের অনেক গ্রান বিপ্ববাদীরা তাহাদের কাজে 
লাগাইয়াছে। যখন দেশশ্ুদ্ধ লোক একটা পথে চলিতেছে, তখন 


৭৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


যদি কেহ লক্ষ লোকের সভায় গাহে--“যদি তোর ডাক শুনে কেউ 
না আসে, তবে একলা চল্রে।, তবে তাহা উপভোগ্য যতই হউক, 
ইহার সত্য সৌন্দফ্যটুকু ফুটিয়। উঠে না। কিস্ বিপ্লববাদী বন 
ছুই, চার জন বন্ধুর সঙ্গে কোনও নির্জনে বসিয়া নিজেকে সতাই 
একলা মনে করিয়া প্রাণের আবেগে গাহিত--গাহিতে শোনা 
গিয়াছে--'যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা 
চল্রেঃ তখন শ্রোতারা ভাবিত: কবি বুঝি এ সত্যকথা সাধনার 
পাইয়াছিলেন,_-আজ এক্ষেত্রে তাহা মূর্ত দেখিলাম । তাহার 
পর, কোথাও স্থান পার না, পরিচিত দ্বার রুদ্ধ? বন্ধু আজ বাষ্ট্রবিপ্রবে 
বা রাঁজদ্বারে পাড়াইতে প্রস্তুত নহে )বাারা বল ভরসা, যাহারা 
বাহুর শক্তি, বাহার! স্দ্দিনের দুর্দিনের বন্ধু, তাহারা আজ খুখ 
ফিরাইয়াছে, দেশবাসী হতাশার অন্ধকারে 'আলো ধরে না- এট 
ভবে হৃদয় পূর্ণ করিয়া বখন বিপ্রববাদী গাহিত-_- 


্ু “্ঘদি কেউ আলো না ধরে, 
ঝড় বাঁদলে আধার রাতে 
দুয়ার দেয় ঘরে, 
তবে ব্জানলে, আপন বুকের পাজর 
জালিয়ে নিয়ে একলা জল্রে। 
তখন বিপ্লববাদী নববলে বলীয়ান হইয়া উঠিত। তাহার সেই 
অশ্র্জল, শ্রোতার চোখেও ধারা বাইত | সেই ত্যাগ ও দুঃখের 
প্রভাবে শ্রোতা প্রভাবাছিত ভইত। সাভুসী কন্মী ও ত্যাগীর 


মতভেদ ৭৯ 


চোখের জল বড় ছুঃখের--সহ্াহ্ছভৃতিতে শ্রোতার হৃদয় নৃতন 
ভঙ্গীতে নাচিয়া উঠিত। 

কৰি যে উদদেস্টোই লিখুন বিপ্লববাদী তাহার খোঁজ রাখিত না। 
সে তাহার নিজ প্রয়োজনেই তাহা ব্যবহার করিত। 

বখন একে একে অনেকেই দল ছাঁড়িল, বিপ্রববাদীরা তখন 
গাহিত-- 

(১পযে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক 
আমি তোমায় ছাড়ব না ম11») 

এমন করিয়াই বিপ্রববাদীরা বল পাইয়াছে, ভরসা পাইয়াছে। 
বাহির হইতে কোন বল ক্হে দেয় নাই, তাই এমন করিয়াই সে 
কাব্য গাথা, সাহিত্য ধন্দ্ব হইতে নিজেদের সান্ত্বনা, সহায়, শক্তি 
গ্রহণ করিয়াছে । 

যখন তাহার কোনও কিছু বলিবাঁর সাধ্য নাই, কোথাও 
দাঁড়াইয়া নিজকে সমর্থন করিবার উপায় নাই তখন সে সাত্নান্বরূপে 
ভাবিয়াছে,-- 

“তোর! নেই বা কথা বল্লি, 
ঈাড়িয়ে হাটের মধািথানে 
নেই জাগালি পল্লী । 
না হয় চুপে চাপেই চল্লি |” 

সেই “চুপে চাপের পথেই বিপ্রববাদীরা চলিতে লাগিল, সহ- 
কম্মীদের বিচ্ছেদেও ভরস| ছাঁড়িল না । কবির কথাই মনে করিল, 
--আপন জনে ছাড়বে তোরে, তা ব'লে ভাবনা করা চল্বে না ।+ 


চতুর্দশ পরিচ্ছেদ 
সমাজ ও সাহিত্যে বিশেবস্থ 


প্রথম পরিচ্ছেদে আমরা বলিয়াছি বে ধর্ম, সমাজ, সাহিত্য 
প্রভৃতি বিপ্রববাদীদের কাছে একটা স্বতন্ত্ররপে দেখা দিয়াছিল। 
ঞেথানে আমর! সে সম্বন্ধে কিঞিৎ আলোচনা করিয়া পরের 
পরিচ্ছেদে বিপ্লববাদীদের কাধ্যাবলীর পরিচয় দিব। 

সকল দেশেই এমন কতগুলি লোক জন্মায় যাহারা দেশের 
ধুলিকণাকে সতাই সোণার কণা মনে করে। দেশের আকাশ 
বাতাস, চন্দ্র কুরধ্য, গ্রহ তাঁরা, _-দেশের বুক্ষ লতা, পশু পক্ষী, পাহাড় 
নদী তাহাদের প্রাণে আনন্দের ঢেউ তোলে ; দেশের প্রতি বস্ত বেন 
ইহাদের বুকের রক্ত। দেশের আচার ব্যবচার, বেশ ভূ» স্থাথ 
ইহাদের বড় ্সাদরের 'ও দরদের | দেশের কোনও জিনিষের উপরহ, 
তাহা যেমনই হউক, কোন অনাদর কোঁন অঙ্দ্ধা ইহারা সহিতে 
পারে না। যাহার পুল্য কাণাকডিও নহে তাকাও শুধু দেশের বন্ধ 
বলিয়াই অমূল্য--তাহার প্রতি অনাদর করিতে বুকে ব্যথা বান্ডে। 
এই প্রকৃতির লৌক আমাদের দেশেও ছিল । 

্ব্দেশা আন্দোলনের সুত্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তার 
উদ্বোধন ব্যাপারে স্বামী বিবেকানন্দের ভাব-প্রভাব যে অনেকথানি 


সমাজ ও সাহিত্যে বিশেষত্ব ৮১ 


ছিল ইহাতে সন্দেহ নাই। সেই নৰ জাতীয়তার প্রভাবে, জাতির 
আচারঃ ব্যবহার, সমাজ, ধন্ম সকলের উপরই একটা শ্রদ্ধার 
ভাব জাঁগির1 উঠে। 

ইংরাজী শিক্ষা, সভ্যতা ও স্বাধীনতার প্রভাবে পূর্বেব দেশের 
অনেক জিনিষকেই যাহার! ভাল চক্ষে দেখে নাই, এখন ন্যদেশীর 
প্রভীবে দেশের সকল জিনিষকেই তাহার! শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতে 
লাগিল। অবশ্ত সেই নব অনুরাগে বাড়াবাড়িও কিছু ছিল। 
এদিকে স্বদেশীর সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রচলিত ধর্মে শ্রদ্ধা করাও 
ঘবদেশধন্দ বলিয়াই গণ্য হইল । তাই আমরা দেখি, ধার 
হিন্দুপর্ম্মে তেমন বিশ্বাসী ছিলেন না তাহীরাও স্বদেশী আন্দোলনের 
পর হিন্দু বলিয়াই পরিচয় দিতে আরম্ত করিলেন। কেহ কেহ সত্যই 
আঁটার-ব্যবহারেও হিন্দু হইলেন; কেহ আবার সাধারণ হিন্দু 
হইতেও বেশী গোড়া হইলেন । এই ধন্মভাঁবের সঙ্গে যে অনেকটা 
স্বাদেশিকতা৷ জড়িত ছিল, ইহা বলাই বাহুল্য । “যে ধন্ম, আচার, 
বাবার আমার দেশের কোটি কোটি লোক স্বীকার করিয়া 
ধইয়াছে, আমিও তাহাকে স্বীকার করিব, ইহাই যেন তাহাদের 
ভাব। স্বদেশীযুগের অনেক নেতা জাতীয়তাকে ধন্মের সঙ্গে অভেছ্য 
করিয়া বুঝিলেন ও বুঝাইলেন। এই সমস্ত ভাবের প্রভাবে বিপ্লব- 
বাদাদের মধ্যেও কতকটা ধন্মভাব প্রবেশ করিয়াছিল। তবে 
বিপ্ববাদীদের ধন্মবোধের সঙ্গে দেশের প্রচলিত হিন্দুধর্মের বিস্তর 
তকাৎ ছিল। বিপ্রববাদীরা স্বাদেশিকতার খাতিরে যেমন কতকটা 
গোঁড়া ছিলেন তেমনি দেশের একান্ত হিতাকাজ্জী বলিয়া তাহারা 


৮২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


অনুদারতাকেও সর্বদাই বঙ্জন করিয়াছেন। দেশের হিতের জন্ত' 
তাহারা ব্যক্তিগত আভিজাত্য বা বংশের সংস্কার) ব্যক্তিগত 
সামাজিক স্ুখ-স্থবিধা, অনায়াসে বজ্জন করিয়া চলিয়াছেন। সেই 
জন্যই তাঁহাদের চালচলনের সঙ্জে একদিকে যেমন গোড়া হিন্দুর 
খাপ খাঁইত না, তেমনি ব্রাহ্মদমাজের সঙ্গেও খাপ খাইত না । বে 
বিপ্লববাদী মাথায় টাক রাখিয়াছেঃনিরামষভোজী, সে-ই 
আবার অবিচলিত চিত্তে, (ব্রাহ্মণ হইয়াও ) হিন্দুসমাজ বাহাদের 
অস্পৃশ্ত করিয়া রাখিয়াছে তাহাদের অন্ন গ্রহণ করিয়াছে । প্রয়োজন 
হইলে বে-কোনও জাতের যে-কোন রান্না খাহয়াছে, সেভন্ক 
আপশোধও করে নাই, প্রায়শ্চিন্তও করে নাই । অথচ মা এই, 
তাহারা হিন্দুমাজের বুকের উপরে এ সকল কাজ করিলেও হিন্দুরা 
তাহাদের বিরুদ্ধারণ তেমন করে নাই, বরং যুবকেরা সেই ভাবে 
কতকট প্রভাবাছিত হইয়াছে । ইহাদের একান্ত দেশগ্রীতিতে 
শের লোকের বিশ্বাস ছিল। দেশবাসা তাহাদের 'আপন ভন 
মনে করিত বলিয়াই তাহারা সমাজের প্রচলিত নিয়মকে অনেক 
সময়ে উপেক্ষা করিয়া চলিলেও তাহাদেন সর্দে দেশবাসীর বড় 
বিরোধ বাধে নাই। তাহার কারণ দেশের সমগ্র জিনিষের উপর 
তাহাদের 'অকুত্রিম ভালবাসাকে কেহই সনেহ করিত না। 
হিন্দুর ছুত্নাগ বা জাতিভেদ বিপ্রববার্দীদের কাছে আগল 
পাইত না। তবে সমাঁজসংস্কারের উদ্দেশ লইয়া বা সমাজকে, 
“অন্ধকার হইতে আলোকে” টানিয় 'আনিবার জন্ঠ তাহারা জাতি 
ভেদ বা ছুত্মাগ পরিহার করে নাই।, বিপ্লব-ভীবনের প্রয়োজনে 


সমাজ ও সাহিত্যে বিশেষত্ব ৮৩ 


ও দেশাত্বোধের স্বাভাবিক গতিতে বেখানে বাহা প্রয়োজন 
তাহারা করিয়া গিয়াছে । একান্ত ম্বাদেশিকতাঁর ফলে তাহারা 
যেমন গৌড়া ছিল, আবার ভাঁরতবর্ষকে দুনিয়ার সঙ্গে সমান তালে 
চলিবার যোগ্য করিয়া ভুলিতে তেমনি অসম্ভব রকম উদার ছিল । 
সেক্ষেত্রে কোনও শাস্ত্রের দোহাই, ধন্মের দোহাই তাহাদের 
বি্মাত্রও দমাইতে পারে নাই | 
মান্িষ বাহা মনে প্রাণে আকাজ্জা করে, তাহাকে নিরাপদ 
করিতে, পারিপার্থিক অবস্থাকে আকাজ্ষিত বস্তর অবিরোধী 
করিতে সে ব্যস্ত ভয় ধর্মুহি বল, সাহিত্যই বল, আর সমাজই 
বপ্রববাদীরাঁও তাহাদের আকাজ্িত বিপ্রবের রোঁধী 
বরিরাই তাভা বুঝিতে ও বুঝাইতে চাঁহিত। গীতা, চণ্ডী, রামায়ণ, 
মভীভারত বিপ্লববাঁদীরা একটু অন্ভাঁবেই বুঝিয়াছে। মহাভারতের 
আঁপন্বন্ম, মহষি বিশ্বামিতের ক্ষত্রিয় রীমকে আহ্বান, তাহাদের 
কাছে নুতন ধন্মের ইজিত দিত। রবীন্দ্রনাথের একটি গান 
'নাছেস'লেগেছে অমল ধবল পালে মন্দ মধুর হাওয়া! কবিকি 
উদ্দেস্তটে গানটি লিখিরাছেন কবি বলিতে পারেন, কিন্তু বিপ্রব- 
বাদীরা সেই গানের মধোও তাহাদের কথাই শুনিল ; অনেকে 
হয়ত শুনিয়া আশ্চর্য্য হইবেন,* কিন্ত কোন কৌন বিপ্লববাদীর মুখে 
ব্যাখ্যা শুনিয়াছি যে ববীন্দ্রনাথ গাঁনটি লিখিয়াছিলেন নবীন 
বাংলার এই নূতন পথের যাত্রাকে জক্ষ্য কারয়া। 
এমনটা দেশে আর হয় নাই, একেবারেই নুতন, তাই কা 
লিগিয়াছেন, «দেখি নাঁই কভু দেখি নাই এমন তরণী বাওয়া |? 


৮৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


তরুণ বাঁংলাঁর এই নব অভিযানে কবিও চঞ্চল হইয়া উঠ্িরাছেন। 
এ নব ভাব, কোথা হইতে কোন্‌ স্থুদূর সাগর পার হস্তে কে 
আনিল-_কবিরও ইচ্ছা যায়, কুল ছাড়িয়া এই নব অভিধানে 
যোগ দিতে ।-_ 


“কোন্‌ সাগরের পার হ'তে আনে 
কোন্‌ সদূরের ধন। 
ভেসে যেতে চায় মন, 

ফেলে ঘেতে চায় এই কিনারায় 
সব চাওয়া সব পাওয়া |” 


| তরুণ বাংলার উপর বড় বিপদ, রুদ্গু রাজশাক্তর গঞ্জন ও নিপীড়ন, 
_-বিপদ-মেঘ আঁসিরা সব ঢাকিয়া ফেলিয়াছে ; তবে ভরদা, 
তুরুণ বাংলা মরে..না, মধ্যে মধ্যে ভাহার জীবনীশক্তি প্রকাশ 
পাঁইতেছে।--- 


“পিছনে ঝবিছে ঝর নর জল 
“&র' গুর, দেয়া ডাকে, 
মুখে এসে পড়ে 'মরুণ কিরণ 
ছিন্ন মেঘের ফাঁকে |” / 
কবি আজ তাবিতেছেন, কোন্‌ বিধাতা তরুণ বাংলাকে 
কোন্‌ পথে লইয়া ঘাঁইবে, কোন্‌ স্থুরে আজ যন্ত্র বাধিয়া তাহাকে 
কোন নুতন স্থরে গান গাওয়াইবে? ॥ 


সমাজ ও সাহিত্যে বিশেষত্ব ৮৫ 


“ওগো কাগ্ডারী, কেগে! তুমি, কার 
হাঁসিকাম্নার ধন। 
ভেবে মরে মোর মন 
কোঁন্‌ সুরে আজ বাধিবে যন্ত 
কি মস্ত হবে গাওয়া 1৮ 
দেশের কাবা, সাহিত্য, সকলই তাহারা তাহাদের বিপ্লবের 
দিক হইতেই বুঝিতে চাঁহিত | ববীন্ত্রনাথ তাঁহার গাঁনের বিকৃত 
অর্থ দেখিয়া হয়ত হাসিবেন, কিন্তু বিপ্রববাঁদীরা তাহাদের প্রয়োজনে 
এমন করিয়াই অনেক জিনিষ বুবিয়াছে ।কেইবা এমন করিয়া 
না বুঝে ?--একই ধন্দুগ্রন্থ ভইতে বির্দ্ধবাদী উভয়েই উভয়ের 
যুক্তিই খণ্ডন করে না কি? 
বিবেকানন্দ, ভূদেব ও বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যসাধনীয় তাহার 

জাতীয়তার সন্ধান বিশেষ করিয়া পাইত। যে বিপ্লববাদী লেখা- 
পড়া তেয়ন জানে না সেও দেশের অনেকথানি ইতিহাস, দেশের 
অনেকখানি সাধনার কথা ও বিদেশের অনেক বিপ্লবের খবর 
রাঁখিত। বিপ্রববাদীদের চিন্তাধারার সহিত তাহারা সাহিত্য ও 
আলোচনার ভিতর দিয়া যুক্ত হইয়াছিল । এ সব বিষয়ে তাহাদের 
শিক্ষা সাধারণ শিক্ষিত লাক হইতে বেশী ছিল। তবে 
পল্পবগ্রাহিতা প্রভৃতি দৌষ যে ছিল না তাহা নহে। সাধারণ 
বিপ্লববাদীর পুস্তকসংগ্রহ-বাঁপারে সাধারণত দেশ বিদেশের 
ইতিভাস, বিপ্লববাদীদের জীবনী, বিপ্রব-সাহিত্যঃ জাতীয় 
ভাবোদ্দীপক গ্রন্থ, যে কোন যুদ্ধ-বিগ্রহের বিবরণী সংক্রান্ত পুস্তক, 


৮৬ বাংলায় বিপ্িববাদ 


কর্মী ও ত্যাগীদের জীবনী, প্রচুর ধর্মগ্রন্থ স্থান পাইত। একপাশে 
গীতা উপনিষৎ অপর পাঁশে রুষ-বিপ্রবের ইতিহাস !--উপন্যাস, 
গল্পের বই, কবিতাপুস্তক খুবই কম থাকিত। তবে যে উপন্যাসে 
দেশের জন্ত লড়াইয়ের কথা থাঁকিত তাঁভার কথা আলাদা । 
প্রেমকাহিনীমূলক উপন্তাস “আট” হিসাবে মলাবান হইলেও সাধারণ 
বিপ্লববাঁদীরা তাহার কোনি মূল্য দিত না । 

মান্তষ যথন স্বার্থত্যাগ করে, ব্যক্তিগত স্খ-্াচ্ছন্থ্য, 
ব্যক্তিগত লাঁভ-লোকসাঁন, 'প্রভাঁক- প্রতিপত্তি, নাম-বশ, ভয়-ভাবনা 
বখন মান্ধষ ত্যাগ করিতে পারে তখন সমাজ-বিষয়ে, ধন্ম-বিষয়ে 
ও রাষ্ট্রব্যাপারে তাঁর দিদ্ধান্ত অনেকটা অত্রীস্ত ইয়। নান্তধ 
অনেক সময় সত্য বে কি তা বুঝে,--সমাজের নিয়মপ্রণালী 
কেমন হওয়া সঙ্গত তাঁহাও বুঝে--কিন্ত স্বার্থ ও সংস্কারের খাঁতিবে 
যাহা বুঝে তাহা করে না।  ধর্মব্যাপাবরেও তাই জড়ায়ে 
'আছে বাধা ছাঁড়ায়ে যেতে চাই, ছাড়াতে গেলে ব্যথা বাজে ।? 
নির্মমভাবে সকল ছাড়িয়া একেবারে সর্ধ প্রকারে রিক্ত হইয়া 
তবে মানি সত্যকে পার। রাঁজনীতি নিয়া ধাহারা আলোচনা 
করেন, তীাহারাও এমন একটা জায়গায় আসেন--বখন সত্যকে 
অদূরে দ্েখিয়াও 'প্রভাব-প্রতিপন্তি, শধা-বিপত্ধি, নামবশ? শ্রথ- 
্বচ্ছন্দ্যকে একেবারে নির্দ্মমৃভাঁবে ছাড়ি! সত্যকে স্বীকার করিতে 
পাবেন না। কেহ নীরবে থাকেন, 'াবার স্তাহার কাছেই সকলকে 
ফিরাইয়া আনিতে চাঁছেন। সমাঁজেও কত লোক কত উদারতার 
কথা বলেন, কিন্তু তীহীরা'ও এমন একটা জায়গায় "পিয়া 


সমাজ ও সাহিত্যে বিশেষত ৮৭ 


পড়েন যখন, উদ্রার্তাঁকে সত্যকে মানিয়া নিলে পূর্বব অন্যন্ত 
অনেক স্ুখ-সুবিধা ছাড়িয়া অনেকখানি ছুঃখকে স্বীকার করিতে 
হয়। তাঁই সত্যকে ছোট করিরা খণ্ড করিয়া বুঝিতে ও বুঝাইতে 
চাঁচেন। তখন বুদ্ধি দিরা অন্তরের ফাঁকিকে ঢাকিয়া বাখিয়! 
বিবেককে তখনকার মন ধাঁনাচাপা দেন। ধর্ম-ব্যাপারেও তাই 
সত্যন্বরূপকে ভরস1! করিয়া অনেকেই বুঝিতে চাহেন না--কাঁরণ 
সেক্ষেত্রে অনেক পাওনা ছাঁড়িতে হয়-ছুঃখের অনেক দেনা 
মাথায় করিতে হয়। জড়ায়ে আছে বাধা” ছাঁড়ায়ে যেতে চাই 
ছাঁড়িতে গেলে বাথ! বাজে !” ব্যথা বাজে না কার ?--বে খাপখোলা 
তলোয়ার, তাঁর! বিপ্রববাঁদীদের মধ্যে এমনি ধারার খাঁপ-খোল! 
তলোকার কতটি ছিল বলিয়াই রাজনীতি ও সমাঁজ-ব্যাপারে 
অনকথখাঁনি সত্যকথা তাহারা বলিয়াছে ও বুঝিয়াছে। কোনও 
রকম স্বার্থের খাতিরে সত্যকে তাহারা খণ্ড করিয়া! দেখিতে বাঁধা 
। ইয় নাই! - 

_. "বঙ্ধিমচন্দ্রের সনাতন ধর্মের উদ্ধারের কথা গোড়ায় কোন 
কোন বিপ্লববাঁদীর মুখে শুনিয়াছি। সনাতন ধন্মরাজ্য স্থাপনের 
কথাও শুনা গিয়াছে । এমন কি স্বদেশী আন্দোলনের সময় অনেক 
গোঁড়া "ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এই সনাতন ধর্মনরাজ্য স্থাপনের কথায় 
এই বিপ্লবের সংবাঁদে উৎফুল্ল হইয়াছেন। সনাতন ধর্শের সঙ্গে গোটা 
ভারতের জাতীম্ঘতাকে কেমন করিয়া খাপ খাওয়ান যীয় বুঝি 
না। তবে এমনি ধারার কতকটা অস্পষ্ট জাতীয়তার কথা বিপ্রব- 
বাদীদের কাহার কাহার মুখে সময় সময় শুনা গিয়াছে। 


৮৮ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


চরিত্রটি নিশ্মিল রাথ! বিপ্লববাদীদের কাছে অলঙ্বনীয় কর্তব্য 
ছিল। কাহারও চরিব্রদৌষ প্রমাণিত হইলে বিগ্রবদলে সে স্থান 
পাইত না। এমন কি নৈতিক পতনের জন্ ধিপ্লববাদীর! তাহাদের 
দলের লৌকের উপর সাংঘাতিক শান্তিবিধান করিতেও পশ্চাপদ 
হয় নাই | “[1) 02170907% 19177, & 1650191101081) ও 
[00100616009 1015 001015065 26 951916010),5--5500 8 
01181865 ০01 1120)0191165,--5501007 00201010565 
[২6107 অর্থ_-১৯১৭ সালের জানুয়ারী মাসে সিরাজগঞ্জে 
একজন বিপ্রববাদীকে দুর্নীতির অপরাধে তাঁছা্র সহকন্মারা হত্যা 
করে।+--সিডিশন কমিটির রিপোর্ট | 


পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ 


কাজের পরিচয় 


অয়োদশ পরিচ্ছেদে বিপ্রববাদীদের মতভেদের কথা বলিয়াছি। 
অনেকে যে ছাড়িয়া গেল, সে সকল কথাও বলিয়াছি। যাহীরা 
রহিল তাহারা কর্মক্ষেত্রে দীড়াইল। ক্রমে গোঁপনতাঁর বুদ্ধিই 
পাইতে লাগিল । শুধু পুলিশ নহে, যাহার পুরাতন বন্ধু, কিন্তু 
ছাড়িয়া গিয়াছে--তাহাদের কাছ হইতেও বিপ্রববাদীরা সব গোঁপন 
কৰিয়াই চলিতে লাগিল। বিশেষ ব্যক্তির উপর বিশেষ ভার 
অপিত হইল । দায়িত্ব ও কর্তব্য ভাগ করিয়া দেওয়া হইল । 
যে জেলায় যে ভারপ্রাপ্ত সেই এ জেলার জন্ত দার়ী। অবশ্ঠ 
কোনও গুরুতর কাধ্য সর্ধপ্রধান কেন্দ্রের অনুমতি না হইলে 
চলিত না; যাহার যাহা ইচ্ছা করিবার উপায় নাই, মীমাংসা প্রধান 
কেন্দ্রেই হইত। কোন কোন দলে হয়ত একজন নেতা আছেন, 
তিনি উপযুক্ত সভ্যদের ডাকিয়া কর্তব্য মীমাংসা! করেন। আবার 
এমন দলও ছিল--যথা অন্রশীলন--যেখানে একজন কোন ব্যক্তি 
নেতৃত্ব করিত না । ১৯১০ সাল হইতে কোন ব্যক্তিবিশেষ সেখানে 
নেতা ছিলেন না । কোন কমিটিও সেখানে ছিল না। কিন্তু 
বিশিষ্ট কন্মরনদের মধ্যে এমনি একটা জমাট ভাঁব ছিল যে, কে নেতা! 


৯০ বাংলায় বিপ্লববাঁদ 


এ প্রশ্ন কখনও উঠে নাই--প্রতোকটা সমস্যা নিজেরা পরামর্শ 
করিয়া-_-ভোটের দ্বারা নহে-_মীমাঁংস! করিয়া ফেলিয়াছে। কম্মীদের 
যৌগ্যতাই সেখানে স্বভাবত নেউত্ব করিয়াছে--কোঁন ধরা নীধা 
নিয়ম সেখানে কাঁজ করে না । স্বার্থলেশহীন, নাম যশ আঁকাজ্ণ- 
হীন এই সমস্ত বিশিষ্ট কন্্ীদের কে যে কোন্‌ বিষয়ে যৌগাতর 
তাহা কোন নেতাঁর মীমাংসার উপর নির্ভর করিত না প্রত্যেকেই 
নিজের মনেই তাভা বুঝিতে পারিভ। পরস্পরের প্রতি সে বিশ্বাস 
ও ভালবাসা এমনি "অদ্ভুত ছিল যে, কোন দিন মতভেদও হয় 
নাই, প্রত্ৃত্বের কল্পনাও কাহারও ননে আসে নাই । কে বড়, 
কে ছোট, এ ভাব কশ্্রীদের মনেও স্কীন পায় নাই--সমস্ত 
কাঁজের ভার জন কয়েক বিশিঈ কন্মীর মধোই  স্বভাঁবত 
আসিয়াছিল; কবে কোন্‌ দিন কোন্‌ সভায় কোন্‌ ভোটেব 
জোরে ইহারা এই নেতৃত্বের বা গুরুতর দায়িত্বের ভাব প্রাঙ্গ 
হইয়াছিল-_কেহ জানে না। আথচ ডিসিপ্রিন ছিল বথেষ্ট । 


১৯১১ সালের কথা বলিতেছি । বিপ্রববাদীরা তাভাদের 
কার্য প্রণালীকে সুনিয়ন্ত্রিত করিতে চাহে । একদিনের কথা বলি। 
রাত্রি অধিক হইয়াছে । একট নিজ্জন মাঠে ছুটী লোক বসিয়া 
আছে। নিঃশব্দে আর একজন একটু এদিক ওদিক চাহিয়া আসিল । 
মিনিট পাচ সাভের মধ্যে প্রায় দশ জন লোঁক সেখানে আসিয়া 
ড় হঈল। সকলেই পরিচিত। বাহিরের লোকের প্রতি দৃষ্টি 


কাজের পরিচয় ৯১ 


রাখ্বার জন্য ছুই জন রহিল । ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা লইয়া আলোচনা 
চলিল। কাঁহাকে কোন্‌ ভার দিতে হইবে তাহাঁও নিদিষ্ট হইল । 
কোথায় কে বসিবে, আর কোথায় কাভার দ্বারা কোন্‌ সায়তা 
গিলিবে, তাহার আলোচনা চলিল। কে ঘর ছাড়িয়। আসিয়াছেঃ 
কাচাকে ঘর ছাঁড়ান বাঁ তাঁহারও আলোচনা হইল । কোন্‌ 
কোন্‌ কন্মীর দ্বারা কোন্‌ কোঁন কাঁজ হইতে পারে, কাহার কি 
ক্ষমতা, কাহার উপর কতখানি তাগের আশা করা যায়_-সকলই 
আলোচিত হইল । বাংলার কোন্‌ গ্রামের কোন্‌ স্কুলের কোঁন্‌ 
ছেলেটী কেমন পারার সে খবরও তাঁহারা লইইল। তর্ব-বিতর্ক নাউ, 
কলে সকলকে চিনে, বুঝে-_সকলের ত্যাগেই সকলের দৃঢ় বিশ্বাস, 
প্রতোকে প্রত্যেককে জানে ত্যাগী, নিভীক, আদর্শলাভে বদ্ধপরিকর 
-প্রার্থিত স্তর জন্ত যেকোন দুঃখ গ্রহণে সন্মত--যে-কোঁন 
কন্মে তৎপর । সকলেই সকলকে ভালবাসে । ভাই আত্ীয়- 
স্বজন কেহই তেগন প্রিন্ন নহে--এরা সকলেই পরস্পরের প্রিফ্লতম 
ঈদ, কাহাকেও কিছু অদেয় নাই-_একান্তই বন্ধু। কিন্থ তবু 
একটুও 'অস্বাভাবিক আকর্ষণ নাই । এত যে বন্ধু, এত যে প্রিয়, 
সেও বদি এ্রীপথ ছাড়ে, বা একটু চরিত্রে দাগ লাগে, একটু মোড, 
একটু স্বার্থের পৰিচয় মিলে তধে প্রিয়তমের উপর প্রীতি চলিয়া 
যায়, কোমল হৃদয়গুলি তথনই বজ্রের মত কঠোর হয। এক 
মুই বন্ধুকে ছাড়িয়া দেয়--কিন্ত তবু আপশোষ করে না, আশাহত 
ই না,---একাস্ত আত্মবিশ্বাসে আবার চলিতে থাকে। এমন 
ঘট বিশ্বাসী, কর্মী ত্যাগী কতকগুলি লোকই বিপ্লব-দলকে নানা 


৯২" বাংলায় বিপ্লববাদ 


বাঁধাবিদ্ব, বিকুদ্ধতাঁর হাত হইতে বীচাইয়া একেবারে শেষ সময় 
পর্যান্ত রক্ষা করিয়া আসিয়াছে । 

যাঁহাই হউক এমনি নিজ্জনে কন্মী-সমন্মিলনে কোথাও নূতন 
কন্মীকে প্রতিষ্ষতি করান হইত। সে প্রতিষ্ষতির মন্দ মাত্র 
আমরা লিপিবদ্ধ করিলাম ।-- 


সমিতি হইতে কখনও বিচ্ছিন্ন হইব না। চরিত্র নিশ্বলও পবিত্র 
রাখিব। যতদিন পব্যস্ত দেশ মুক্ত না হয়। তহদিন নুখভোগ হইঙে 
নিজেকে বঞ্চিত রাখিব। দেশের চন্য সর্বপ্রকারের ভাগ করিতে 
প্রস্তুত হইব । মাদকদ্রব্য সর্দমতোভাবে বল্ভন করিব । দেবতার মন্মুখে 
প্রতিজ্ঞা করিতেছি, কখনও বিশ্বীনপাতকত্ডা করিব না-্তাগ করিতে 
পশ্চাৎ্পদ হইব না। ঘ্ুণা, লঙ্জভা, ভয় ত্যাগ করিয়। সমিতির মঙ্গলের 
জন্য কাঁজ করিব 1- 


সর্ধন্র একই বূকমের প্রতিজ্ঞাপত্র ছিল না। প্রথম অবস্থায় 
প্রকাশ্যে ঘে প্রতিজ্ঞা করান হইত পরে সময় সময় তাহ হইতে 
ভিন্নতর প্রতিজ্ঞাও করান ভইয়াছে--তবে মুলত ভাব প্রায় 
একই । এই ভাবের প্রতিজ্ঞা করার সার্থকতা সম্বন্ধে বিপ্লব 
বাদীদের মধ্যেও ভিন্ন মত বন্ঠমান ছিল। কেহ কেহ প্রতিষ্ঞা 
গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা শ্বীকাঁর করিতেন না। আবার ফেহ কেহ 
প্রতিজ্ঞা একান্ত প্রয়োজনীয় ব্যাপার মনে করিতেন । বস্ছিমান্ত্র 
আনন্দমমঠে থে জমকাঁল প্রতিজ্ঞা নমুনা দেখাইঘ়াছেন, বিপ্র 
বাদীরাও ঘে প্রতিজ্ঞাবব্যাপারে তাঙ্তারই কতকটা অন্তকরণ 
করিয়াছিল, ইহাতে সন্দেহ নাউ । 


কাঁজের পরিচয় ৯৩ 


এখানে একটা কথ! বল! প্রয়োজন । তাহা এই--গোড়ায় 
বিপ্লববাদীদের চেষ্টাকে ঠিক বিপ্রবপ্রচেষ্টা ( £5৮০1561017) বলা 
বায না। তখন একটা ভাব ছিল, 290 130৮ 0০0 £62051 
016 00521110617 10019055119. অর্থাৎ “যে প্রকাঁরেই হউক 
গবর্ণমেণ্ট অসম্ভব করিয়া তুলিতে হইবে।” একদল লোক যেমন 
বয়কট প্রভৃতি দ্বারা সে চেষ্টা করিত, তেমনি বিপ্লববাদীরা দেশে 
অবাঁজকতা স্্টি দ্বারা সে চেষ্টা করিত। এই সমস্ত ভাঁব 
হইতেই লাটসাহেবের ট্রেণ উড়ান ও বিশ্্ট রাজকর্মুচারীর জীবনের 
উপর ষড়যন্ত্র চলিত। একটা ভীতিসঞ্চারও যেমন উদ্দেশ্য ছিল, 
দেশবাসীর মধ্যে রাজশক্তিকে উপেক্ষার প্রবৃত্তি আনাঁও তেমনই 
অন্থতম উদ্দেশ্য ছিল। কোথাও বা অপর কোন বিশেষ উদ্দেশ্ত 
থাকিত। বাছাই হউক, এ ভাব স্থারী হইল না। যাহার! দেশকে 
মুক্ত করিবে বলিয়া ঘর ছাড়িয়াছে, তাহারা কেবল মানুষ মারিয়া 
বা সেই চেষ্টায় থুরিয়া ত আনন্দ পায় না। তাহাদের উদ্দেস্ঠসিদ্ধির 
পক্ষে ইহা যে মোটেই সহায়ক নহে তাহা ছুই দিনেই তাহারা 
বধিল। একজনকে মারিলে দশজন সেখানে যাইবে। এ পন্থায় 
তাহাদের অভীষ্টলাভ হইবে না, ইহা বুঝিতে তাহাদের বিলম্ব হয় 
নাই। তবু কোথাও কৌঁথাও বাহিরে এ সমস্ত 09773015052107 
চলিয়াছে এই জন্য যে বিপ্লববাদীদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে যেন সাধারণ 
দেশবাসীর সন্দেহ না জন্মে। কেবল অরাজকতা সৃষ্টি দ্বারা যে 
সফলকাম হওয়া যাইবে না, নিপ্লববাদীর। একথা বুঝিয়া আরও 
কতকটা দায়িত্বের দিক হইতে বিপ্রব-কথ ভাবিতে আরম্ত করিল । 


৯৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


এই পথের বিষ্বন্বরূপ যদি কেছ দীড়ার তবেই তাহাকে সরাইভে 
হইবে, নতুবা! নহে-_ইহাই তাহাদের শেষ সিদ্ধান্ত । কিন্ত প্রবল, 
সঙ্ঘবদ্ধ রাঁজশক্তির প্রতিবন্ধকতাঁয় বিপ্রববাদীরা কোনও একটা 
নির্দিষ্ট পন্থা ধরিয়া বরাবর চলিতে পারে নাই--নান! অবস্থায় পড়িরা 
তাহা পরিবর্তন করিতে বাধ্য ভইয়াছে। তবে তাহাদের এই 
পথের বিদ্বু দূর করিতেই বিপ্রববাদীরা প্রার সমস্ত শক্তি ব্যয় 
করিয়াছে । আম্মরক্ষার জন্ত একটা অনুষ্ঠান করিয়া এমন ভাবেই 
জীবনকে সঙ্কটাপন্ন করিয়াছে যে সে আত্মরক্ষা আরও জটিল ও 
আরও গুঞ্তর হইয়াছে । এমনি আম্মবক্ষার পর আত্মরক্া 
করিরাই খুনের জন্ত ডাকাতি 'ও ডাকাতির জন্য খুন করিতে 
হইয়াছে । ঘাঁহাহ হউক “মান্মরক্ষার ব্যাপারেও হিসাব নিকাঁশের 
ব্যবস্থা হইল। অর্থাৎ বিশেধ প্রয়োজন না হইলে, এ সমঞ্ড 
ব্যাপারে হাত ন! দেওয়াই সাব্যস্ত হইল । 

এই সময় হইতে 8221:01)8১7]) অরাজকতা ছাড়িয়া বিপ্লব 
বাদীর! খাটা বিপ্রববাদী হইয়া পড়িয়াছিল। কেমন করির। 
বিপ্রবানষ্ঠান দ্বার! রাজশক্তির পরিবন্তন ঘটাইতে পারিবে গে 
সমস্ত বিষয়ে, কেবল "আলোচনা নহে, কার্যাত চেষ্টা চলিতে 
লাগিল । বিপ্রববাদীরা যে সমগ্ত এঅন্ত্রশন্্র সংগ্রহ করিয়াছিল; 
তাহাতে একটা অব্বাঙ্গকতা দেশে 'জানা ধায় মাত্র, কিন্তু তাঠা 
বে প্রবল প্রতাপাদ্িত সুসংবদ্ধ পিটিশ বাশক্ডির কাছে ছেল্গে' 
খেলা--তাহা তাহারা বুৰ্গিয়াছিল। তাহাদের ভরসা এক দেখার 
সৈন্য আর বিদেশের সাহায্য । তখনও বুদ: বাধিয়া উঠে নাই । 


কাজের পরিচয় ৯৫ 


সুতরাং বিদেশের সাহাধ্য অর্থাৎ জাশ্মেমির সাহায্য যেমন শেষে, 
হঠাঁৎ উপস্থিত হইয়াছিল তেমন তখন হর নাই। “বে বিদেশে 
কিছু করিবার চেষ্টা তখন হইতেই বাঁজালী বিপ্লবীদের মনে ছিল। 
বিদেশে বাংলার বিপ্রবদলের লোক প্রেরিত হইতেছিল। অব্য 
ইতিপূর্বেবও বিদেশে ভারতীয় বিপ্রববাদীরা ছিল। কিন্তু তাহার 
দেশের সঙ্গে বুক্ত না থাকার ফলে এবং বিদেশে স্বাধীন আবহাওয়ার 
মধ্যে থাকায় দেশের প্ররূত অবস্থা কিছু বুঝিত না । বাহাই 
হউক, ভারতের যে সকল জাতি হইতে প্রধানত দেণীয়, সৈন্য 
সংগৃহীত হয় তাহাদের দিকে বাংলার বিপ্লববাদীদের দৃষ্টি গেল। এই 
দেশায় সৈন্তদের মধ্যে ধিপ্রববাদীরা কতটা কাঁজ করিয়াছিল তাহা 
পরে জানা যাইবে। ১৯১৪ সালে দেশায় সৈন্য ও বিদেশী সাহায্য 
তাহারা কি ভাবে লাভ করে তাহা বথাস্থানে আমরা বলিব। 
এখানে শুধু এই কথা মনে রাঁখতে হইবে যে, বিপ্লবর্বীদীরা এখন 
হইতেই 0সদিকে নজর রাখিল। আর নিজেরা দলের প্রভাব 
বৃদ্ধি করিতে 176175 1001069 2130 2111010100াশশামাচিষঃ টাকা 
ও হাতিরার সংগ্রহে মন দিল। তাহাদের উদ্দেশ্ত ছিল, তাহাদের 
দলের 06070775200 ছারা বা বাহিরের কাধ্য দ্বারা দেশের 
লোকের মন এমন করিয়া তোলা যে, যদি প্রয়োজন হয়, বিপ্লবের 
মুখে তাহারা যেন দ্লীড়াইতে পারে। বিপ্লববাদীরা এই বিশ্বাসও 
করিত যে, সে সময় অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় করিয়া হাতে দিতে পারিলে 
অনেক সাধারণ লোকও বিপ্লবে যোগ দিবে । তবে বিপ্লবকে 
আস্তে আন্তে গড়িয়া! ভুলিতে যে কাঁধ্যকুশলতাঁ, ত্যাগ ও তিলে 


৯৬ "বাংলায় বিপ্লববাদ 


তিলে দুঃখভোগের দরকারু, 'ভাহা কতটি লোকের থাক চাই 
-বিপ্লববাদীর! সাধারণত তেমন লোক সংগ্রহেই মন দিয়াছিল; 
তেমন দল গড়িতে যে অর্থের প্রয়োজন, তেমন অর্থ, বে-ভাবেই হউক 
সংগ্রহ করিতেছিল। সেই পথে বাহাঁরা অন্তরায় হইত, তাভীদের 
নির্মমভাবে সরাইয়া দিয়াছে । 


স্বগায়া তরলা স্থপ্ণরা বন্দর 
শ্মতি সম্মানার্থ 
পুস্তক সংগ্রহ 
বঙ্গ*র সাহিত্য পরিহৎ 
জক্দিচুন্থ নাখ বন্ু। 


ষোড়শ পরিচ্ছেদ 
গোপন ও অধ্যাত জীবন 


১৯১১ সাল হইতে ১৯১৪ সাল পধ্যন্ত বিপ্রববাদীরা দলবুদ্ধিঃ অর্থ- 
সংগ্রহ ও বথাসম্তব অস্ত্রসংগ্রহ করিয়া! গিয়াছে । ভাকাতি ও খুনের 
ব্যাপারেও ক্রমেই বিপ্লববাদীদের সাহসিকতা প্রকাশ পাইতেছিল। 
পুলিশের চক্ষু এড়াঁইক্া কাজ করিতে হইত বলিয়া এই সময়টায় 
অনেক বিপ্রববাদীই ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া পড়িতেছিল। যে 
আজই মাত্র জেল খাটিয়া মুক্ত হইল সেও অমনি বাহির হইয়াই 
আত্মগোপন করিয়া চলিতে লাগিল । 

ধর-বাড়ীর মার! অনেকেরই ছিল না। কোন দিকের কোন 
হিসাবই ইহারা রাখিতে চাহিত না । জেল খাটিরা বাহির হইয়াছে__ 
বাড়ী ঘরে, বন্ধু বান্ধব মা বাঁপের কাছে ছুই দিন থাকা! খুবই 
স্বাভাবিক--কিন্তু ইহারা ছিল কতকটা হৃষ্টিছাড়া । একটা দৃষ্টান্ত 
দিব। ছুই জন বিপ্লববাদী কয় বংসর জেল খাঁটিয়। আজ বাহির 
হইল। জেলের ফটক খুলিয়া গেল । তাহারা বাহির হইয়া একটু 
এদিক ওদিক চাহিয়া সোঁজা হাটিতে লাগল । বলা বাহুল্য, কোন 
বন্ধ-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন, বা জনসাধারণ সেথানে উপস্থিত ছিল ন]। 


ছইজনে গন্তব্য স্থান সহবন্বেৎআলোচনা করিতে করিতে চলিল। 
শ্‌ 


৯৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


“কোথায় যাবে হে?” 

“যাব কোথায় ? হ-- বাবুর বাসায় যাব না, জায়গা দেবে 
না। বি--দের মেসেও যাব না, অনর্থক ছেলেগুলো “দাগী+ হবে|” 

“তা, একবার কোথাও উঠে, খোঁজ-থবরটা নিতে হবে ত। 
চল স--দের বাসায় যাওয়া যাক) সেখানে গেলেই খোজ-খবঃ 
কিছু পাওয়া বাবে আর ওথানে পুলিশের তেমন ভয়ও নাই 1৮-- 
তাহাই হইল । 


রং ০ ঞঁ 

সহরের কোন এক বাঁটির এক প্রকোষ্ঠে এই ছুইজন জেল-দুন্ধ 
বিপ্রববাদী আরও দুই তিন জন্‌ বিপ্রববাদীর সঙ্গে আলাখ 
করিতেছে । ইতিমধ্যেই তাহাদের ভবিশ্ততের কাঁজ ঠিক হইরা 
গেল। ইহার মধ্যে একজন আর বাড়ী যাইতে চাহে না। 
সে বলিল, “আমি বাড়ী গেলে স্থুবিধে হবে না, বাড়ীরলোক বড় 
অস্থির করবে, বিয়ের চাপও ভয়ত দেবে । কোথাও যেতেও দেবে 
না। আর পুলিশও চোখে চোখে রাখবে । আমার ইচ্ছা এখান 
থেকেই গা-টাকা দিইঃ এই কিন্তু অবসর । কারণ, আজও 
দেখলাম পুলিশ পেছনে লাগে নাই | ভেবেছে, বাড়ী ত 
যাবেই সেখান থেকে খোঁজ নেওয়া আরস্ত করা যাঁবে। আব 
দেশের বা অবস্থা হয়েছে, তাতে প্রকান্তে থেকে কোনও কাজ কর 
ত” এক রকম অসম্ভবই |” 

বন্ধুরা বলিলেন--না, একবার বাড়ী যাও। (বুড়া মা থে 
আছেন, তাহা ইঙ্গিতে বল! হইল |) &*' 


গোপন ও অখ্যাত জীবন ৯৯ 


সগ্য জেল-মুক্ত ব্যাক্তি হায় বলিলঃ “আচ্ছা! মার সঙ্গে দেখা 
এক সমর হবে পরে তাহাই ঠিক হহল। অপর ব্যক্তি 
আপাতত বাড়ীতেই গেল। প্রকাশ্তে থাকিয়াই গুপ্ত পন্থার 
পথিকদের সঙ্গী হইয়া রহিল । 

যে সময়কার কথ! বলিতেছি তখন বিপ্রববাদীদের মধ্যে এ রকম 
বাড়ী ঘর ছাড়িয়া একেবারে ভিন্ন নামে চলাফেরা করিয়া অনেকে 
থাকিত। যাহারা পুলিশের পরিচিত তাহারা ও যাহারা কোন 
মামলার ৪05০9267 ( ফেরারী ) তাহারাঁও আত্মগোপন করিত। 
আবার বিশেষভাবে কাজের স্থৃবিধা হইবে বলিরা একেবারে পুলিশের 
নজরে পড়ে নাই, এমন নূতন লোককেও ঘর হইতে বাহির কর! 
হইইভ। পূর্বেই বলিয়াছি তখন বিপ্লববাদ একেবারেই গুপ্ত ধারায় 
চলিয়াছিল। জুতরাং এ সম্ন্ত *অচিভ্িত+ ( 9701081:50 ) 
লে:কই কাঁজের হইত বেগা। কারণ দাঁগীদের বেশী বাহিরে আসিতে 
২ইইলে বিপদের সম্ভাবনা ; ইহাদের পক্ষে সে সম্ভাবনা কম। প্রকৃত- 
পক্ষে এই থর-ছাঁড়া লৌকগুলিই ছিল বিপ্লববাদীজ্দর কম্মী-_ 
আর যাহারা ঘরে, জানা শুন! ভাবে থাঁকিত, তাহাতা ছিল সহীয়। 
বিপ্রবধাদীরা সাধারণের প্রশংসা চাহিত না বলিয়া নিন্দাকেঞ গ্রাহথ 
করে নাই। গোপমতাকেই আকড়াইয়া রহিয়াছে । 

কিন্ত বিপ্লববাদীদের মধ্যে ভাকাতি করা লইয়া সংশয় জাগি 
উঠিল। দেশের অর্থ এমন করিয়া কাঁড়িয়া লওয়া যে অন্তায়, 
ঘোরতর অন্ঠায় এ বোধ কোথাও কোথাও দেখা দিল। এ 
বড় দুঃখ! এ বড় আ্জ্পবাদ ! সর্বস্ব পণ করিয়া এত ছুঃখ, 


১০০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


নির্যাতন মাথায় করিয়৷ শেষে এই ঘৃণিত কাজ! পরের ধন জোর 
করিরা! গ্রহণ ! অন্তরাঝ্সা একেবারে সম্কুচিত হয় যে! মান্ষষ ডাকাত 
বলে! না হয়ঃ জোর স্বদেশী ডাকাতি বলিবে। সে যে আরও 
দুঃখ । এমনই একটা সংশন্ন কোথাও কোথাও দেখা দিল । এ 
সমশ্যার মামাংসার বাদানুবাদ প্রভৃতি চলিল। কেহ এই দো 
দরশীইয়াই বিপ্রবপন্থা ছাডিতে উদ্যত হইল ৷ বাহারা ইাকে 
তখনও লমর্থন করিতেছিল, তাহাদের মুস্কিল কম নহে । বিপ্রব- 
বাদীদের মধ্যে ত্যাথ্ী ছেলের অভাব ছিল না_-নীতির ক, 
তাহাদের বড় বেণা বিচলিত করিত। সুতরাং শ্রী পথের পুথিকের। 
নানা বুক্তি-তর্কে ভাহার্দের শীতিজ্ঞানকে তুষ্ট কৰিতে লাঁগিল- 
নানা নৃতন নীতি “পুরাত্বনঃ নীতি হইতেই সংগৃহীত ভইল 1 সেই 
সমশ্যার মুখে তাহাদের বুক্তিততকের ধারাগুলি কম রহস্তজনক 
নহে ;--তাহাঁও আমরা বুঝিতে চেষ্টা করিব । 

ধাহারা বেশ ভাল লোক, দেশের সেবা করিতে চাঙেন বা. 
করেন-__তীহারাও চাহেন দেশবাসী কাগজে-পত্রে, সভা-সমিত্তিতে 
প্রকান্ে ঠাঙাদের প্রশংসা করুক । অন্তত প্রশংসা যে করিতেছে 
এই কথা জানিতে পাবিলে তাহারা আনন্দ পান, কর্মে তাহাদের 
স্কুত্তি আসে। মীন্চষের ইভা স্বভাব । বিপ্লববাদীরা যে পথে 
যাত্রা সুরু করিয়াছে, তাহাঁতে কেহ প্রশংসা! করিতে পারে না, 
অন্তত প্রকান্্যে সে সম্ভাবনা একেবারেই নাই, অথচ এই লোক 
গুলির মধ্যেও এমন চরিত্র ছিল ঘাহণ, বস্থতই প্রশংসার । বিধ্লঘ- 
বাদের ধাহারা ছিলেন কর্তা তাহাদের সকল সময়ই খেয়াল থাঁকিত 


গোপন ও অখ্যাত জীবন ১০৬ 


বাহাতে তাহাদের নৃতন কন্মীর! কেহ প্রশংসার লোভে লুন্ধ না হয়-_ 
কারণ তাহা হইলে, তাহারা প্রকাশ্েই দেশের অন্তান্ত জনহিতকর 
অনুষ্ঠানে আত্মনিয়োগ করিবে, বিপ্লবের দুর্গম» নিষ্ঠুর নিজ্জন 
গুপ্ত ধারায় আসিবে না। 

এ সম্বন্ধে একটা উদাহরণ দিলেই বুঝা বাঁইবে। সেবার বখন 
বদ্ধমীনে বন্তা হয় ভখন বাংলার যুবকগণ সেখানে দলবদ্ধ হইয়াই 
গিয়াছিল। বিঞ্লুববাদীদের বিভিন্ন দল হইতে সেখানে অনেকেই 
গিযাছিল। আর সেখানকার সে মন্সষ্ভোচিত কন্মের কৃতিত্ব 
ইহাদের কম ছিল না। সেখানে বিপ্রববাঁদীদের সঙ্গে ভাহাদের 
অন্গগত ছেলেরাও ( ইহারাই তাভাদের ভবিম্ততের আশা ) 
গিয়াছিল । ভাভাদের কষ্টসহিষণতা, দৃটত, সংঘবন্ধভাব প্রভৃতি 
দেখিয়া শুধু দেশের লোক নহে স্বরং লাট সাহেব পর্যন্ত কন্মীদের 
ধ্বাদ দিয়াছিলেন | এই ধন্যবাদ, এবং সংবাদপত্রে নানা গ্রশংসাবাদ 
বখন্‌ চলিতে লাগিল তখন কোনও একজন বিশিষ্ট বিপ্লববাদী 
বলিলেন--ছেলেগুলিকে বন্থাস্থিল হইতে লইরা আইস। কারণ, 
যোগী যেমন ্রশ্বধ্য লাভ করিয়াই ধশ্বধ্যে আটকাইয়া যায়, 
শুদ্ধ ভগবানকে পায় না--এ সমস্ত কন্মীরাও এই প্রশংসা ও 
বাহবারপ তরশ্বধ্যেই আটকাইয়! যাইবে-_বাহাতে এমনই দেশব্যাপী 
প্রণংসা আছে তেমন কাজেই লাগিয়া থাঁকিতে চাহিবে--তাহাতেই 
আকুষ্ট হইবে-- ইহার উপ্টী পথে যাইতে চাহিবে নাঁ। ভাবিকে, 
এ চমৎকার কাঁজ। কতকটা অজ্ঞাতসাঁরে এই প্রশংসার লোভেই 
ভাল ভাল কর্্ীও এই সমন্ত কম্মেই গ্গিপ্ত থাকিতে চাহিবে। 


১০২ বাংলায় বিগ্রববাদ 


আমাদের অখ্যাত, অজ্ঞাত বর্তমানে নিন্দিত গুপু ধারায় ইভান 
আসিতে চাহিবে না। কিন্তু অধ্যাতি, অজ্ঞাত ভাবের সঙ্গে 
আমাদের অভ্যন্ত হইতে হইবে_-এ সগস্ত শ্বর্যের মধ্যে মার 
ছেলেদের পাঠান ভাল নহে । ভবিষ্যতে খুব বিশিষ্ট ছুই চার জন 
বিপ্রববাদী এ সমস্ত কাজে যাইতে পারে-কিন্ধ সাধারণ ছেলোদের 
ওদিকে, এ প্রলোভনের মধ্যে নেওয়া ঠিক নহে--ইভাি সাবাস 
হইল | 

এ পন্থায় প্রশংসা নাই-নিন্দাই পাইতে হইবে, প্রকাশ নাই 
গোঁপনেই আত্মপ্রলাদ লাভ করিতে হইবে-ইহা জানিয়াই, 
ছেলেরাও বাহাতে এই গুপ্ত-ধারায়ই অভ্যস্ত হয়, প্রকাশের কোন 
আকর্ষণে আকুষ্ট না হয়__সে জন্য এমনই সব বুক্তির কথা ছেলেদেন 
শুনাইতে হইত ও সন্তর্কতা "অবলম্বন করিতে হইত | ডাকাতি 
প্রভৃতি ব্যাপারেও কেমন করিয়া লন্তর্কতা অবলন্গন করা হইত 
তাহাও দেখিতে হইবে । 


সপ্তদশ পরিচ্ছেদ 


উট রহতিরারেতও 


ডাকাতির কথা 


পূর্বে বলিয়াছি বিধববাদীদের মধ্যে ডাকাতি করা লইয়া! একট! 
দংশয় জাগিয়াছিল। সাঁধাঁরণ লোকও সীধারণ নীতিজ্ঞানের দিক 
হইতে সহজেই বুঝে পরস্বাপহরণ দ্য ৷ সমাজে যাহারা চুরি-ডাকাতি 
করে, তাহার! বে হীনচরিত্রের লোক, এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা । কিন্ত 
বাংলার বিপ্রববাদীরাও সেই নিন্দনীয় পথে পা দিল! কন্মীদের 
মধ্যে, কাহারও নিজ অন্তর হইতে, কাহারও বা বাহিরের নিনা- 
চ্ঠা খনিয়! এই গল্থার উপরে একটা সংশয় আসিয়া দেখ! দিল । 
ঘাহাধা সত্যই দেশের হিত করিতেই বাহির হইয়াছে, তাহারা 
_স্বদেশবাসীর অর্থ জোরপূর্বক লুঠন করিবে, একথা অনেকেরই 
অপছন্দ হইতে লাগিল । 

এই সময়েই কেহ কেহ ধন্মান্দোলনে যোগ দিতে প্রবৃত্ত হইলেন। 
কতকটা৷ বিপ্লববাদ ছাঁড়িবার ইচ্ছায়, আর কতকটা বিপ্রববাদীদের 
ডাকাতি গ্রভৃতিতে দৌষাবোপ করিয়া তাহারা দলছাড়া হইলেন। 
বলা বানুলা ধাহার৷ তদানীন্তন দল ছাড়া হইলেন, তাহারাও 
নিজেদের দলবৃদ্ধি করিতে, ডাকাঁতি প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রচার নি 
করিলেন, সে প্রচার স্ববন্ঠ গ্রকাশ্থে নহে। 


১০৪ ংলায় বিষ্লাববাদ 


কিন্তু যাহারা তখনও বিপ্রববাদকে ধরিয়াই রহিল, তাহার! 
তাহাদের বিপ্লব-সমিতিকে খাড়া বাখিতেঃ অন্ঠায় জানিয়াও, 
ডাকাতি প্রভৃতি ত্যাগ করিতে পারিল না। তাহাদের সেই 
সময়কার মানসিক অবস্থা ও যুক্তিগুলি আমরা একটু আলোচন! 
করিতেছি । 

এখানে বলিয়া রাখি, যাহারা ডাকাতি প্রভৃতি ছাঁড়িলেন, 
তাহারা কাধ্যত বিপ্লবপন্থাকেই এক রকম ত্যাগ করিয়াছিলেন। 
স্থতরাং বাহাদের মনে সংশয় উঠিত, তাহাদের বিপ্রব্বাঁদীরা সহজে 
একথা বুঝাইতে লাগিল বে, বিপ্লবদল বা 1২০০1010770) 
[8:05 খাড়া রাখিতে হইলে এ সমস্ত এখন ত্যাগ করিলে চ্সিবে 
না। “দেখিতেছ ত, যাহারা এ সমস্ত কাধ্যের দোষ দেখাইয়া 
'আমাদের ছাঁড়িয়াছে, তাহারা কাধ্যত বিপ্লীবপন্থাকেই ছাড়িয়াছে; 
যদি কাজ করিতে না চাঁও, সে আলাদা কথা, কিন্তু কাঁজ করিতে 
চাহিলে, বল ত অর্থলাভের আর কোনও পথ আছে কি ?-- 
এই প্রকার নানা ভাবের মুক্তি প্রদর্শিত হইত। কিন্ত বিপ্লব 
বাদাদের কাছে 'আবর-একটা নস্ত সমস্যা দেখা দিল, তাহ! 
দেশবাসীর বিরাঁগ। ডাকাতির উপর দেশবাসীর 'অগন্থষ্টি 
বিপ্রব্বাদীরা লক্ষ্য করিল। বিপ্লবের পক্ষে সে অসস্থষ্টি নিশ্চিতই 
মারাত্মক । অবশ্য বিপ্লববাদীরা নিজেরাই বলিয়াছে ও বুৰিয়াছে 
বে, এ সনব্ত টাঁকা তাহাদের জমিতে পারে নাই, মৌকদমার 
খরচ যোগাইতে ও কেরারীদের বন্দ! এবং “অরগ্যানিজেসন 
প্রভৃতিতে ব্যয় হটয়াছে। অন্ত ভাবেও টাকা নই হইয়াছে। 


ডাকাতির কথা ১০৫ 


বিশেষ করিয়া শেষের দিক দিরা নষ্ট হইয়াছে, কারণ তখন শৃঙ্খলা 
ছিল না-তহবিল-রক্ষার যোগ্য লোকেরও অভাব হইয়াছিল। 
বিপ্লব অনুষ্ঠানের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, তাহা অন্ত দিক 
হইতে লাভ করিবার চেষ্টা চলিল। সে কথা বথাস্থানে উঠিবে। 
বিপ্লববাদীরা এই ব্যাপারে যে সমস্ত যুক্তি দিত এবং সে যুক্তিতে যে 
সমস্ত কম্মী বিশ্বাস করিয়া কাজে অগ্রসর হইত-_তাহাঁতে বুঝা যাবে, 
এই কাজটা যতই দৃষণীয় হউক বাঁগারা ইহার অনুষ্ঠান করিয়াছে, 
তাহাদের মধ্য কত বড় একটা ত্যাগের ভাব বর্তমান ছিল । 
“ক নামক একজন বিশিষ্ট বিপ্রববাদী «“খ* নামক একজন 
কন্মীকে বুক্তি দিতেছেন। *“ধ” ধনীর সন্তান, কলেজের ছাত্র । 
“ক? ইহাকে কোন একটি ডাকাতিতে পাঠাইতে চাহেন। ডাকাতি 
করার জন্ক তাহার তেমন প্রয়োজন ছিল নাঃ অর্থাৎ সে না হইলেও 
চলিত কিন্তু তাহাঁর আজ ডাক পড়িয়াছে, ডাকাতি যে খারাঁপ, 
তাঁঙার এই সংস্কারটি ভাঙ্গিয়া দিবার জন্তু | 
. “খ" বিপ্লবানুষ্ঠটানের অপর যে-কোন ভার গ্রহণ করিতে সম্মত 
অর্থাৎ অস্ত্বশস্ত্র সংগ্রহ আনা-নেওয়া রাখা, এমন কি প্রয়োজন হইলে 
গুন করিতেও সে পশ্চাৎপদ নহে ! কিন্ত ডাকাতিতে সে নারাজ । 
ণ” তাহাকে বুঝাঁইলেন যে “খ এ কাজ তাহার নিজের জন্থ 
করিতেছে না । আর ইহাও তাহাকে জানাউয়া দিলেন যে, সে 
যে ডাকাতিতে নারাজ তাহার কারণ আর কিছুই নহে শুধু 
তাহার অভিমান । সে এখনও সর্বন্ব ত্যাগ করিতে পারে নাই 
শাম বশের আকাজ্জা ওহার এখনও আছে। অন্ত কোন কাজ 


১৩৬ ংলায় বিপ্রববাদ 


করিয়! ধৃত হইলে দেশবাসী বলিবে, দেশের জন্য কাঁজ করিয়াছে । 
আর ডাকাতি করিয়া ধরা পড়িলে অনেকে হয়ত বলিবে-- 
“াঁকাতি, কেহ হয়ত বিশ্বাস করিবে যে সে অর্থের লোছেই 
ডাঁকাঁতি করিয়াছে; প্রতিবাদ করারও সাঁধা নাই ।--তাহার পব 
বলিলেনঃ--কিন্ত ইহা! স্তির জানিওঃ যে-কশ্্ী নিঃস্বার্থ এবং 
নিষ্ষামভাঁবে নিন্দীচচ্চা ও ডাঁকাতির গ্রানির পশবরা মাথার 
লইবে, সেই আদর্শ কল্্ী। দেশের কাঁজ করিলেও দেশবাসী 
তাহা না জানিয়া হীন চক্ষেই হয়ত তহাকে দেখিবে-কিস্ত ইচা 
সত্বেও বে পিছপাঁও ভইবে না-তাচার শক্তি অনেক বেরা, 
তাহার ভাগই যথার্থ ত্যাগ 1, 

পু হাতেই যুক্তি শেষ হইত না, পাপ-পুণোর প্রশ্নও উঠিত। 
পূর্ব্বেই বলিয়াছি, বিগ্রববাদীদের মধো ত্যাগী, চরিত্রবান, স্তবাং 
স্বভীবত কতকটা ধন্মভাঁবাপন্ন ঘুবক গাঁকিত | তাঁভাদের ধন্মজ্ঞানে 
যেখানে বাধিত সেইখানে বিশিষ্ট বর্ীরা যুক্তি প্রভৃতি দাতা 
তাঁহাদের ধন্মভাঁবকে তুষ্ট রাণিতেন | ফলে তাহাদের ধন্মবোধটীও 
বিপ্লবের অবিরোদীই হইত-_সাধারণ নানষের ধর্ধজ্ঞান, নীতিজ্ঞানের 
সঙ্গে তাহার সামগ্রস্য ছিল না। 

এ” এখনও ভাঁকাতি করাটাকে ধরদান্ত করিতে পাঁরিতেছে না' 
'আজন্মের সংস্কারে বাধিতেছে । তবে “ক? বিশিষ্ট কর্মী সর্বতাগ 
চরিত্রবান, দ্রঃখ কষ্টকেই সানন্দে বরণ করিয়া নিয়াছেন- 
কোনও প্রকার ভোগবাসনা যে কাহার নাই ইহাসে সঙ্গে স্চ 
থাকিয়া নিহ্য প্রত্যক্ষ করিয়াছে; সুতক্খং ভাতার যুক্তির মাথা 


ডাকাতির কথা ১০৭ 


তাঁহার চরিত্রটি প্রভাব বিস্তার করিয়। যুক্তিটাঁকে ক্রমেই 
অপ্রতিহ্ত করিয়া তুলিতে লাগিল | ব্যাপার দীড়াঁয় এই, 
বাহাকে দেখি আমার অপেক্ষা চবিজ্রে, ত্যাগে উন্নত, তিনি যখন 
কিছু একটা করিতে থাকেন, 'আঁর বলেন ইভা কর! কর্তবা, তখন 
আমি যর্দি সে কাঁজটি করিতে না পারি, বা আমার সংস্কারে 
আটকায় তবে, স্বতই মনে ভয়) দৌষ বুঝি আমারই, আমিই 
বুঝি তেমন শক্তিশালী নতি ! ্‌ 
পাপ-পুণ্য সুতরাং স্বর্সনরকের কথা উঠিবামীত্র ক” 'খ+কে 
ভক্তমালের একটি উপাঁখাঁন শুনাইতে লাগিলেন ।--জান ত, 
শ্রীরুষ্ধের সেবার জন্য তেমন যে ভক্ত, সে সানন্দে চুরি করিয়া 
ঠাকুরের সেবার উপকরণ সংগ্রহ করিয়াছিল । ভগবাঁনের জন্গ যদি 
ধম্মই ত্যাগ করিতে না পাঁর, তবে তাঁগ করিলে কি? দেশসেবা 
যে ভগবৎসেবা 1 এবার “খ'এর চিত্ত নরম হইতে লাগিল । “ক? 
বিশিষ্ট কন্মী, তীভার জলন্ত বিশ্বীসের কাছে “খ? নিজেকে যেন স্থির 
রাখিতে পারিতেছে না । ভাঁরপর “ক? আবও বলিতে লাগিলেন, 
ভান, 'এক তক্ত বখনই শ্রীরুষ্ণকে ভোগ নিবেদন করিতেন, তখনই 
পূর্বে তা খাইয়! দিতেন। একজন বিবেচক বাক্তি বলিল, ও কি 
করিতেছ, ঠাকুরের ভোগ, বাহীর উপর শ্বাস ফেলিতে নাই, দৃষ্টিও 
দিতে নাই, সেই পবিত্র বস্তু তুমি আগে খাইয়া উচ্ছিষ্ট করিতেছ, 
তোমার যে নরকেও স্থান হইবে না।,_উক্তটি উত্তর করিল, 
আহা, তবু আমার ঠাকুর ত ভাপ জিনিষ খাইলেন, আমি নরক 
র্গ চাহি না, আমি গ্চাই আনার ঠীঁকুয়ের সেবা । আমি না 


১৩৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


খাইলে, কেমন করিয়া জানিব--বরি ঠাকুরের দুখে খারাপ ভোগ 
যায় | আমাকে নরকে কি করিবে, ঠাকুরের ভোগ হইলেই হইল |, 
ইহার পর আর কথা চলে না! “খরও চলিল না--এ পথে ত 
ছিলই, এই বুক্তিই সার করিল,--এই বিশ্বাসেই এ পন্থায় পা দিল। 
সত্যই ভাবিল “তাই ত আমার অহঙ্কারহ ত আমায় বাধা দিতেছে ।, 
বিশিষ্ট কর্মারা এই ভাবের যুক্ত দিতেন, অনেকের চরিত্রও তেমন 
নিক্ষামই ছিল । আর কল্পীরাও এত বড় একটা অন্যায় নিন্দা ও 
পাপকে এমন কবিরাই গ্রহণ করিয়াছে । সুতরাং এ মহা অন্যান 
বা ভুলের মধ্যেও উহাদের বে একটা নাম-ধশভীন ত্যাগের ভাব 
ছিল, ইহা না মানিয়া উপায় নাই । ভবে এখানে সাথে সাথে আও 
একটা কথা জানিতে হহবে। থে বহমের ছেলের। এ সমস্ত যু, 
শুনিত তাহাদের বরলই ভাব-প্রৰণভার বয়সঃ সুতরাং ধন্মের এ 
সমস্ত উচ্চার্পের কথা শুনিয়া আর এ সদস্ত সাহসিকতার বন্দ 
বলিয়া এ ব্যাপারে সহজেই মাতি। উঠিত | পরান্ষ। করিয়া দৌথবার 
বয়স বা শক্তি 'নেকের ছিল না । ইার বিপক্ষে যে সমন্ত ঘুদ্তি 
আছে, এ উচ্গৃ্দের কথা সাধকের কোন্‌ সময় বে প্রযুজ্য, সাবার 
কন্মীর নধ্যে সে সময়টা উপশ্থিত হইয়াছিল কি নাঃ ভাঠ। 
অনেকেই ভাবে নাই) ভাবে নাই বলিয়া এদিকে অনেক প্রুডি। 
এমন কি ব্যভিচারও শেষে ঘটিয়াছে! বেন গোশী-প্রেদে 
একান্তিক অভাবে মািষ কানকেই সেবা করে, ইহাদের মধো কেই 
কে তেদনই পাঁপপুণ্যত্যাগদূপ বড় বড় কথা আওড়াহয়া 
নিজের মধ্যে বে স্বার্থলিগ্া ছিল তাহার চবিতার্থতা করিয়াঞে । 


ডাকাতির কথা! ১০৯ 


এমনও জানা গিয়াছে, স্বার্থসিদ্ধির জন্যই বিগ্লবপন্থা ছাঁড়িয়াও, 
শেষে দুই চার জন ডাকাতি করিয়াছে; বলা বাহুল্য, প্রথম 
ডাকাঁতি করিবার ভরসা ঘখন তাহারা পাইয়াছিল তখন খুব 
বড় নীতি ও তত্ব কথাই আঁওড়াইরাঁছে ; আঁর পরে যখন স্বার্থের 
জন্য করিয়াছে, তখন যদিও বিবেকে বাধিত তবু নিজের মনে 
বা সঙ্গীদের কাছে, পূর্ববশ্রুত ' তন্বকণা আওড়াইবাঁর কোন বাধা 
হয় নাই । 

তবে বিপ্লববাদীরা ইহার 'অপরু দিকটা তখনই দেখিতেছিল । 
মেজন্য বিশিষ্ট কন্মীদের বলিতে শুনা বাইত, «এ সমস্ত ডাকাতি 
প্রভৃতি তাহীরাই করিতে অধিকারী অর্থাৎ তাহাঁদেরই নৈতিক 
অবনতি ঘটিবে না যাহারা সব্ধন্থ ত্যাগ করিধ়াছেঃ নিজের সবই 
আগে দিয়াছে ।, পরীক্ষার জন্য কোন কোন কন্মীকে বলাও হইত, 
“ভুমি, তোমাদের বাড়ী হইতে ডাকাতি করিয়া আনিতে পার 
কিনা? যেনা পাবরেসে ইহার অধিকারী নহে”-আবাঁর ইহাঁও 
বগা হইত, “ঞ্পথে আমর! একটি স্বত্রের উপর ধীড়াইয়া আছি । 
সু্টুকু ছিন্ন হইয়! গেলে একেবারে পাভালপুরীতে পড়িয়া বাইব ! 
বপি ছিন্ন নাহয়, স্ত্ররূপ নীতি অব্যাহত থাকে-_ঠিক দীড়াইয়া 
থাকিব” ইত্যাদি ইত্যাদি । মোট কথা, এ সমস্ত কথা সত্য সত 
বিশ্বাস করির! 'অনেকে এ সমস্ত কাজ করিয়াছে-_-স্বার্থের নামগন্ধও 
তাহাতে ছিল না। নেই জঙ্কই বিপ্লববাদীদের যুক্তির ধার! ও 
মনের দিকটা দেখান হইল । ডাকাতি অন্যায় নিশ্চয়, সম্থন 
একেবারেই অসম্ভব) তক্কৰ বাহাবা পরস্বাপহরণ করিয়াছে ও যাহারা 


১১০ ংলায় বিপ্লববাদ 


দেশের নিন্দার হইয়াছে, তাহাদের মনটী না জানা থাঁকিলে, 
তাহাদের উপর একটু অবিচার করা হইবে না কি? 
রং ষ ্ 
বাংলায় বিপ্লববাদের সুত্রপাত হওয়ার কয়দিন পর হইতেই 
ডাকাতি অনুষ্ঠিত হইতেছিল। ১৯০৬ হইতে ১৯১৭ সাল পধা 
কখনও প্রবলভাবে কখনও বা মন্দগগতিতে ইহা আম্মপ্রকা* 
করিয়াছে কিন্ত বন্ধ হয় নাই। সাধারণত স্থলপথে ও জলপথেই 
ডাকাতি অন্সঠিত হইভ | তবে ১৯১৫ খুষ্টাবে মোটর অংধঘোগে 
কলিকাতার গার্ডেনরিচ ও বেলিয়াঘাটা প্রভৃতি স্থানে ঘে ডাকাতি 
অনুগ্িত হয় তাহা! একটা নূতন অধ্যান্ন। 
স ঁ র্ঁ 
বিপ্রববাদীদের অনুষ্ঠিত অনেক ডাকাতিতেই আশ্চধ্য রকম 
সুশৃঙ্খলা ও কৌশল প্রকাশ পাইয়াছে। ১৯০৬ সাল হইতে 
১৯১৭ পালের অন্রষ্ঠিত ডাঁকাতিগুলি বিশ্লেষণ করিলে তাহাদের 
কষ্টসহিষুতা, নিয়মান্ুবপ্তিতা, ক্ষিপ্রকারিত!) নিভীকতা, লো শুন 
মনোবুন্তি প্রভৃতি সত্প্রবৃত্তির পরিচয়ও পাওয়া যায় । এই ব্যাগাবে 
থে নির্পুনি নিডুরতা। ও কোমল মনোবৃত্তি একই সঙ্গে প্রকাশ 
পাইয়াছে, তাহা বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য | 
রা গু ষ 
ডাকাতি করার পর বিপ্রববাদীরা সকলেরই গাত্রতল়া 
লইভ |. বহু লোক একজ্র হইয়া ডাকাতি করিত। নুহ 
লোকও হয় ত সময় সময় থাকিত। ক্ুতলাং একেবারে বিধায় 


ডাকাতির কথা ১১১ 


করিয়া বা শৈথিল্য করিয়া বসিয়া থাকিত না । কড়াক্রান্তি হিসাব 
না করিলে শৈথিল্য হইতে ক্রমে অর্থ আত্মসাংও কেহ করিতে 
পারে। প্রত্যেককে পরীক্ষা করিবার অবসরও হয় ত পূর্বে পাওরা 
যায় নাই। তাই ডাকাতি করিতে গিয়! বিপ্রববাদীরা সতর্কতা 
অবলম্বন করিতে ত্রুটি করে নাই। ডাকাতি যাহারা করিতে বাইত 
তাহার! সকলেই অর্থসংগ্রহ করিত না, সেজন্য নিদিষ্ট লোক 
থাঁকিত। ডাকাতি হইয়! গিরাছে। অর্থ একত্র কর! হইয়াছে । 
যে সেদিনকাঁর নেতা সেই প্রথম একজনকে ডাঁকিরা তাহার 
গাত্রতলাম করিতে বলিল। তল্লাম হইল। পরে প্রত্যেকের গান্ 
তল্লাস করিয়া দেখা গেল, কাহারও কাছে কোন অর্থ নাই। 
এই ভাবে তল্লাম লওয়ার দস্তর হইরাছিল। নিয়ম বলিয়াই 
সকলে ইহা মানিত। সাধারণ লোকের কু-প্রবৃত্তি স্থুযোগ পাইলে 
বৃদ্ধি পায়, এই কথা মনে রাখিয়া বিপ্রববাদীরা সাবধান হইত । 

সং ৫ 

বিপ্লববাদীরা স্ত্রীলোকদের গায়ে কণনও হাত দেয় নাই। 
একবার একস্থানে ডাকাতি হইতেছে । অর্থসংগ্রহ চলিতেছে । যে 
বাড়াতে ডাকাতি হইতেছিল সেই বাড়ীর একজন স্ত্রীলোকের গলায় 
একছড়া হার ছিল। একজন রমণীটিকে দেখিয়া হাঁর ছড়া লইতে 
যেই হাত বাঁড়াইয়াছে অমনই তাহার গণ্ডদেশে এক প্রচণ্ড চড় 
পড়িল। এ আঘাতে বিপ্রববাদী ঘুরিয়া পড়িয়া গেল । যে বিপ্লববাদী 
তাহীকে চড় মারিয়াছিল, সে পিস্তল উঠাইয়া বলিল, “খুন 
কৰে ফেলব, তোমাকে হার কেড়ে নিতে কে বলেছে? এ 


১১২ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


লোকটার এর প্রবৃত্তি দেখিয়া বিপ্লববাঁদীরা তাহাকে হেয় মনে 
করিতে লাগিল। শাসন ত চলিলই। তাহার উপরে সতর্ক দৃষ্টি 
রাখিবাঁর আদেশ হইল । বে তাহাকে পাঠাইয়াছে, তাহার কৈফিয়ং 
চাওয়া হইল । 
্ % 

এক স্থানে ডাকাতির শন্ুষ্ঠান হইতেছে | বাড়ীর বাঁচিরে 
গ্রামের লোক জড় হইয়াছে, ভিতরে বে যাহার নির্দিষ্ট কাজে 
নিযুক্ত রহিয়াছে । সময় অধিক নাই, অল্ল সময়ের মধ্যেই সমস্ত 
কাজ সারিতে ভইবে। 

অগণিত অর্থের সন্ধান সেখানে মিলিয়াছে । বিশিষ্ট কর্মীরা 
ভাবিতেছে, আর এ সমস্ত কাঁজ করিবার প্রয়োজন ভইবে না। 
কিন্তু হঠাৎ গুড়ম্‌ করিয়! আওয়াজ ভইল। কিসের একটা মাঘাত 
লাগিয়া জনৈক বিপ্রববাদীর হাতের পিস্তল ছুটিয়া গেল,--আাব 
তাহা আঘাত করিয়া বসিল অপর বিপ্রৰবাদীকে । আঘাত 
সাংঘাতিক । অর্থ সব হাতে মাসিয়াছে ; কিন্ত ধাভার ভাতে 
সেদিনকার এ অভানের ভার তিনি প্রমাদ গণিলেন । ভজন 
রক্ত পড়িতেছে ! আহত ব্যক্তিকে বহন করিয়া এতদূর লইয়া 
যাওয়া এক নস্ত সমস্যা । এ 'অগণিত টাকা) আর এ মানিন। 
কেমন করিয়া! রক্ষা করা যা? আহত বিপ্রববাঁদী দুঢ়কঞ্ে বলিল, 
--এক মুহ্্ভও দেরী ক'ব না। এত র্থসংগ্রহ করতে অনেক 
বেগ পেতে হবে-আমার মাথাটা কেটে নিয়ে ঘাঁও-শীঘ্র কর 
যাহা করার কম সেকেগডেই ঠিক করিতে হইবে । আহত বিপ্লব 


ডাকাতির কথা ১১৩ 


বাদী অবিচলিত চিত্তে পুনঃ পুনঃ বলিতে লাগিল-_“ভাঁববাঁর 
সময় নেই-_টাঁকাগুলোই নিয়ে বাও--তবে চেহাঁরা দেখলে চিনতে 
পারবে--মাথাটা কেটে ফেল ।, কিন্তু মীমাংসার ভার ধাহার 
মাথায় ছিল, তিনি কাঁজ বন্ধ করিবার বাঁশী বাঁজাইলেন। 
সকলেই হাতি গুটাইল। বে টাকার তোড়া ধরিয়াছিল, সে 
ছাঁড়িয়! উঠিল। আদেশ হইল টাকা নয়, মানুষ ;--কাধে 
তোল ।” ব্যান্ডেজ করিয়া নিঃশব্দে আহত বিপ্রববাঁদীকে বহন 
করিয়া সকলে চলিল। অর্থের কথা কেহ ভাবিল না। রাস্তায় 
নানা বাঁধাবিদ্ব অতিক্রম করিয়া আসিয়া সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত, 
স্নিপুণ গোপনতাঁর মধ্যে অনুষ্ঠিত হইল। যন্ত্রবং অর্থসংগ্রহ 
করিতে যাহারা ছুঁটিয়াছিল তাহারা ধশ্ববংই একটা ইঙ্গিতে 
অর্থসংগ্রহ ত্যাগ করিয়া ছুটিল। বিগ্লববাদীদের দ্বারা অনুষ্ঠিত 
অনেক ডাঁকাঁতিতেই সুশৃঙ্খল! প্রকাশ পাইয়াছে। এ সমস্ত 
ডাকাতির মধ্যে যে একটা ক্ষীণ ক্ষাক্রভাঁব লুক্কায়িত ছিল 
তাহাতেও অনেক যুবককে আকুষ্ট করিয়াছে । জাতির মধ্যে একটা 
ুপ্তপ্রীয় ক্ষাভ্রভাব ছিল। যে শ্রেণীর মধ্যে এই ভাব গ্রচুর থাকে, 
তাহারা! সব সময় খুব বুদ্ধিজীবী নাঁও হইতে পারে। তাহাদের 
পরিচালকদের বিদ্ধাবুদ্ধিতে নির্ভর করিয়া তাহারা, নেতার আদেশে 
'এক পায়ে খাঁড়া, হইতেই কৃতিত্ব দেখাইয়াছিল। ডাকাতিতে 
যে দলবদ্ধ হইয়া যাত্রা করিতে হইত, সুদীর্ঘপথ অতিক্রম করিতে 
একজনের নেতৃত্বাধীনে একটা বিপদের মুখে ঝাঁপাইয়া পড়িতে 
হইত, আদেশমতই পরিগীলিত হইতে হইত--এ সমস্ত ব্যাপার, 


৮ 


১১৪ ংলায় বিল্লববাদ 


যুবকদের এই ভীষণ পথের সহযাত্রী হইতে উৎসাহিত করিয়াছে। 
ইহা নিছক প্রয়োজনীয় ব্যাপার হিসাবেই কেবল নহে, ইহার 
মধ্যে যে একটা রোমান্সের ভাঁব ছিল তাহাঁও ইহাদের কতককে 
আকুষ্ট করিয়াছে ; অবশ্ প্রয়োজন বোধ ত একটা ছিলই । 
ঁ গং ক 

১৯০৮ সালের বার্হা ডাঁকাতিতেই সর্বপ্রথম বিপ্লববাদীদের 
ডাকাতির বিশেষত্ব ফুটিয়া উঠে। সে ডাঁকাতির সংবাদে বাংলা- 
দেশের যুবকদের বিপ্লবমুখী মনকে আনন্দমঠের ডাকাতির রঙে 
রঙাইয়। তোলে । অতগুলি লোক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ইয়া 
স্দীর্ঘ পথ নৌকায় অতিক্রম করিয়া! আসিল । তাহাদের অঙ্গসরণ- 
কারী অসংখ্য গ্রামবাসীর ও পুলিশ প্রহরীদের সমস্ত চেষ্টা বার্থ 
করিয়া শত মাইল জলপথ অতিক্রম করিয়া কোথায় কে লুকাইল 
কেহই জানিতে পারিল ন! বটে, কিন্তু সাধারণ লোককে কল্পনার 
অবসর তাহাতে যথেষ্ট দিয়া গেল। তাহারা রঙ চড়াইয়া অদ্ভুত 
কৌশলের কথা প্রকাশ করিতে লাগিল। বুদ্ধিমান লোকেরাও 
অসম্ভব কাধ্যকুশলতার বাহবা দিতে লাগিলেন। তরুণ যুবকেরা 
এ সমস্ত রহস্যাঁবৃত বলিয়া এই অজানাকে জাঁনিবার প্রলোভনেই 
প্রলু্ধ হইল। ইহার! ডাকাঁতিকে “ডাকাতি”র হছর্নাম হইতে 
ভিন্ন করিয়া বিপ্লবের সঙ্গেই যুক্ত করিয়া দেখিল। ইহীতে কষ্ট 
সহিষুতাঁও যথেষ্ট অভ্যাস করিতে হইয়ীছে। জলপণে, স্থলপথে 
সর্বন্ধই সেই কষ্টসহিষুতাঁর পরিচয় পাঁওয়া গিয়াছে । 


ডাকাতির কথা ১১৫ 


নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নদীর তীরে, নির্দি 
নখ্যক লোক আসিয়৷ নীরবে নৌকায় উঠিল । মাঝিমাল্লা সবই 
ঠিক। নৌক। চলিল--একদিন নহে, দুইদিন নহে» ৭1৮১০ দিন 
অশকিয়া বাঁকিয়া নদী হইতে খালে আবার খাল হইতে 
ঘুরিয়া নদীতে পড়িতে লাগিল। স্থানে স্থানে পূর্বব নির্ধারণ 
মত দুই চার জন নৌকায় উঠিতে লাগিল । এমনই করিয়া কখনও 
সোজা, কথনও বক্রগতিতে অবিশ্রীন্তভাবে মাঝি নৌকা বাহিয়া 
চলিল। বলা বাহুল্য; মাঝিমাললারা সকলেই বিপ্রববাদী। 
ইহাদের আকৃতি প্রকৃতি কথার ভঙ্গী মাঝিমাল্লানদেরই মত। 
জীবনে যে তামাক খায় নাঃ সেও নোকার মাঝি হইয়া সাধারণ 
মাঝিদের মতই তামাক খাওয়ার নিপুণ অভিনর করিতেছে । স্থানে 
স্থানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর মাঝিমাল্লারাই দিতেছে । উত্তরদাতা 
ও প্রশ্নক্তা পূর্ধবাহ্ছেই নিদিষ্ট হইরা আছে। বলা বাহুল্য বিপ্লব- 
বাদীদের মধ্যেই কয়জন আরোহী হইয়া বসিয়াছে। নদীতে জল- 
পুলিশ রহিয়াছে মোড়ে মোড়ে নৌকায় তাহাদের আড্ডা । এখানে 
মেখানে পুলিশের লঞ্চ নিয়ত ঘুরিয়া ঘুরিয়া পরিদর্শন করিতেছে। 
মোড়ে মোড়ে নৌকার তল্লান হইতেছে । নৌকায় স্ত্রীলোক 
থাকিলেও রেহাই নাই। তারপর কোন নৌকা মোড়ে না আসিয়া 
অপর দিক দিয়া াইতেছে দেখিলে তাহা থামান হইত, তল্লাস 
করা হইত, নাঁম ধাঁম লেখা হইত । এই সমস্ত বিদ্ব অতিক্রম করিয়া 
অনত্রশসত্র সমেত, আট দশ দিনে ( কথন তীহা হইতেও বেণী) এ 
_শীকাপথেই গন্তব্য স্থলে গিয়া পৌছিত। বিপ্লববাদীরা অনেকে 


১১৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


নৌকাঁপরিচালনায় সুদক্ষ মাঝির মতই ছিল। অবশ্য ই 
রীতিমত অভ্যাস করিতে হইয়াছে । আর সাধারণ বিপ্লববাদী 
সকলেই রৌদ্র-বুষ্টি স্য করিতে অভ্যস্ত ছিল । অনেক সময় গন্বা 
স্কানে নানা বিদ্ববিপত্তির মধ্যেই নির্দিষ্ট সময়ে পৌছিতে হইবে, 
তাঁই তীরবেগে নৌকাঁচাঁলনা করিতে হইত, সময়ের অভাবে খাওয়ার 
হুকুমও মিলিত না । অনেকের বর্ণ রোদ্র-ুষ্টি ও সেই পরিশ্রমে 
একেবারে কাল বিবর্ণ হইয়া যাইত । দেখিলে মনে হইত অন্য 
বুঝি কোন “স্থান বিশেষের” মাঝি । কিন্তু বাধা দিত এক বস! 
অনেকেই যুবক, কাজেই একটা "অস্বাভাবিক ব্যাপার মনে হইত | 
সেই দিকেও সাবধানতার ক্রটি ছিল না । ঘাহাই হউক; ডাক্ষান্ত 
করিতে বাওয়ার মুখে বরং কষ্ট ছিল কম, কিন্ত ফিরিবাঁর দথে কট 
সহিতে হইত অধিক। কারণ তখন একদিকে বাঁইত অর্থ, একদিকে 
যাই অস্ত্র, আর নদীপথে যাইত বিপ্রববাঁদীরা । বলা বাল 
ডাকাতি করার পৰ, চারিদিকে সতর্ক জল-পুলিশ ও স্থল-পুলিগ 
থাকিত। ভাহাঁদের দৃষ্টি এড়াইয়! অর্থ, অন্ত্রশস্ত্র ও মান্য নর্িদ 
নিদিষ্ট স্থানে আনিতে অনেক কৌশল, অনেক শৃঙ্খলার প্রয়োজন 
হইত | ঘড়ির কাটা ধরিয়া কাক করার মত কাজ না করিলে, 
প্রত্যেকের নির্দিষ্ট কাজ সে না করিলে, ধর! পড়িবার সগ্ভাবনা 
খুবই ছিল । 

একবার স্থলপথের এক ডাকাতির পর বিশিষ্ট একজন বিপ্লববাদী 
ধৃত হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনাকে এড়াইবার জন্য হঠাৎ গনি 
ফিরাইয়া দেয়। ছুই পয়সার ছোঁঞজাঁভাজা পকেটে কেলির 


ডাকাতির কথ ১১৭ 


৮ মাইল ছুর্গম পথ অতিক্রম করিয়া এক বন্ধুর বাড়ীতে, বাত্রি- 
শেষে উপস্থিত হইয়া নীরবে বহিবণটিতে এক ভূত্যের পাশে শয়ন 
করিয়। থাকে । ভূত্য প্রভাতে নিদ্রামগ্ ভদ্রলৌোককে দেখিয়া 
অবাক। এ আবার কে? গোলমাল হইতে বন্ধুর মা আসিয়া 
দেখেন শ্রামান_ | জীানা-শুনা খুবই ছিল। কোথা হইতে 
আসিয়াছে না জানিলেও বুঝিলেন, বহু দূর হইতে কোনও একটা 
ব্যাপার উপলক্ষেই আসিয়াছে | বিপ্লববাদীদের মাঁবোনেরা 
( সকলেই অবশ্য নহে) গোপন-ব্যাপারে অভ্ন্ত হইয়! গিয়াছিলেন। 
বাত্রি দ্িগ্রহরে গিয়া উপস্থিত হইলেও জিজ্ঞাসা করিতেন না, 
কোথা হইতে আসিলে?” পুজ্রাধিক ম্বেহে খাওয়াইয়৷ দাওয়াইয়া 
শুধু বন্্ই করিতেন) কিন্ক কোথা হইতে কেন আসিতেছে, কোথায় 
কবে যাইবে, ইহা জিজ্ঞাসা করিতেন না। জানিতেন, অদ্ভুত 
অস্বাভাবিকই ইহাদের জীবন। কি কবিতেছে ইহারা, তাহা হয় ত 
কাহারও কাহারও মা জীনিতেন, অনেকেই জানিতেন না ;--তবে 
এটুকু জানিতেন দেশের জন্ই ইহার! সব কিছু করিতেছে ! 
মা ডাকিলেন, "এস, ভিতরে এস) 'অম্নি করে শোয়? 
পাগল, একবার ডাঁকনি কেন?” বিপ্লববাদী হাসিয়া বাঁলিল, 
'একটু জল গরম করুন|” জল গরম হইলে পায়ে একটু সেঁক 
দেওয়া হইল-_মাঁয়ের দেওয়া তাতও জুটিল। কয়েক ঘণ্টা বিশ্রামের 
পর্ন আবার বস্তায় বাহির হইতে হইল। 

একজন বিশিষ্ট বাঁডীলী বলিয়াছিলেন, বিপ্রববার্দীরা “৩৩ 
71561) €0 08০91695--কথাটা সত্য । বড় বড় ব্যারিষ্টারের 


১১৮ বাংলায় বিপ্লববাঁদ 


ফি যৌগাইতে তাহাদের অনেক বেগ পাইতে হইক়াছে। শেষ 
দ্বিক দিয়! তাহারা আর অর্থব্যয় করিয়। জমকাল মোকদ্দম 


করিতে চাহে নাই--করেও নাই। 


অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ 
খুন 


বিপ্লববার্দীরা ১৯১৪ সালের শেষ ভাগ হইতে কি ভাবে অন্ত্-শস্ত্ 
ও সৈন্বসংগ্রহ করিয়া বিপ্লব ঘটাইবাঁর চেষ্টা করে তাহা বলিবার 
পূর্বে আমরা তাহাদের ডাকাতির কথা কিছু বলিলাম। এবার 
খুনের কথাও কিছু বলিব । 

বিপ্লববাদীদের যাহারা ক্ষতি করিয়াছে, তাঁহাদের পেছন 
তাহারা সহজে ছাড়ে নাই। ১৯০৮ সালের জের ১৯১৩-১৪ 
সাল পধ্যন্ত গড়াঈয়াছে । কোন কোন পুলিশ কর্মচারী বলিয়াছেন, 
এই দলের খাতায় নাম উঠিলে, একদিন না একদিন চিত্রগুপ্তের 
খাতায় আর একটি অঙ্ক বসাইয়া দিবে। ব্যক্তিগত গ্রতিহিংসা- 
বৃত্তি চরিভার্থ করিতে না হউক, সমষ্টিগত হিসাবে এই সমস্ত 
খুনের মধ্যে কতকটা প্রতিহিংসা চরিতার্থের ভাব যে ছিল না 
--একথা জোর করিয়া বল। যাঁয় না। যে সমস্ত লোক 
বিপ্লববাদীদের অনেক্ষ ক্ষতি করিয়াছে, যাহারা বিপ্রববাদীদের 
মতে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে, তাহাদের শাস্তি দিবার একটা 
প্রবৃত্তি বিপ্লববাদীদের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা দিত। আত্মরক্ষার 
অন্তও বটে, ইহারা বাচিয়! না থাকিলে আর ক্ষতি করিতে পারিবে 


১২০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


না, এই জন্যও বটে, আবার কঠোর শাস্তি দিয়া একটা আতঙ্ক 
সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্টেও বটে, বিপ্লববাদীরা এ কার্যে হস্তক্ষেপ 
করিরাছে | ব্যক্তিগত হিসাবে কোন বিপ্লববাদী কোন শক্রর 
উপরে এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করিতে পারে নাই। দলের হিসাবে 
গ্রাহ্থ না হইলে ব্যক্তির কথা উঠান সম্ভব ছিল না। “আমাকে 
অমুক পুলিশ কর্মচারী কষ্ট দিয়াছে সুতরাং একটা কিছু করিতে 
হইবে? একথা বলাঁর প্রবৃত্তি বা সাধ্য ছিল না। চ১6:5072] 
ব্যাপারটাকে দলে কেহ টানিয়৷ আনিত না'। 

শিক্ষা দেওয়ার ভাব হইতে অনেক সময় তাহার! এই কাধ্যে 
অগ্রসর হইয়াছে । এত ক্ষতি করিয়! সরিয়! গেল, বিপ্রববাদীরা 
কিছু করিতে পারিল না_-এই ভাবটা দেশে প্রচারিত না হয়, 
বিপ্লববাদীদের সেদিকে তীব্র দৃষ্টি থাকিত। তাহারা বুঝিয়াছিল; 
একদল দেশবাসীকে দেশাতআবৌধের কথায় দলে রাখিতে হইবে 
অন্ত একদল লোককে, ভয় দেখাইয়া দলের বিরুদ্ধে যাঁহাঁতে না 
যায় সে ব্যবস্থা করিতে হইবে। একদল যে সরক্কারের সহায়তা 
করিবেই তাহা তাহারা জানিত, তবে এই রকম ভয়ানক শাস্তির 
ব্যবস্থায় অনেকে ইচ্ছা থাকিলেও১ সরকারের সাহায্য করিবে না 
--ইহাঁ তাহারা মনে করিত। তাহাঁদের এই প্রচেষ্টায় সরকার 
লোক পাঁন নাই, তাহা নহে, তবে অনেক ক্ষেত্রে সরকারকে 
অনেক বেগ পাইতে হইয়াছে । সাধারণ লোক সরকারকে যেমন 
ঘাঁটাইতে চাহে নাই, বিপ্রববাদীদেরও তেমনই ঘাঁটাইতে চাহে 
নাই। কারণ জাতিহিসাবে আমরা কৃতকটা ভীরু--স্থৃতরাং 


খুন ১২১ 


যেদিক হইতেই হউক, ভয়ের কারণ থাকিলে, আমরা ভাল- 
মানুষের মত টুপ করিয়া থাকি। দলের ক্ষতি করিয়াও কেহ বুক 
ফুলাইয়া বেড়াইতেছে--ইহ! যেন বিপ্রববাদীরা তাহাদের কলঙ্ক 
বলিয়াই মনে করিত। তাই দেখা যায়, এই বিষয়ে তাহারা 
দলের গণ্ডী ছাড়িয়া গিয়াছে । কোন এক ব্যক্তি ভিন্ন একটি 
দলের প্রভূত ক্ষতি করিয়াছে অথচ তাহার কিছুই এখনও হইল 
না, ইহার প্রতিকারের জন্তই অপর দল সেই ব্যক্তিকে নিঃশেষ 
করিতে অগ্রসর হইয়াছে । আট বছর পূর্বে যে ব্যক্তি ক্ষতি 
করিয়াছিল, ঘে এখন আর বিশেষ কোনও ক্ষতি করে না, 
তাহারও নিস্তার নাই, তাহারও শান্তি দিতে হইবে, কারণ, 
তাহা হইলেই সাধারণ লোঁক বিরুদ্ধে যাইতে ভর পাইবে, ইহাই 
ছিল তাহাদের ভাব। বিপ্লববাদীদের এই ব্যবস্থায়, পরিণামে 
একটা অরাজকতা স্ৃষ্ট্রিরই সহীয়তা করিয়াছিল, কিন্ত সরকারের 
লোকের অভাব হয় নাই,বিপ্রববাদীরা সেকথা নিশ্চিতই 
বুবিয়াছিল। বাষ্ট্রশক্তিকে পরিবন্তিত করিবার পক্ষে ইহা যে 
মোটেই কাধ্যকরী নহে তাঁহ! বুঝিতে তাহাদের দেরী হয় নাই। 

বিপ্রববাদীরা ব্যক্তিগত শ্বাথকে কোন সময়ে প্রশ্রয় দেয় নাই । 
দলের মধ্যে কাহারও সেদিকে ঝোঁক থাকিলে, তাহার প্রতি 
তীব্র দৃষ্টি রাখ হইত। কিন্তু তাহারা সাধারণত ক্ষমাধন্থী 
রশিষ্ঠ বা অহিংদ প্রেমাবতার কোন অতিমান্ষের মন্ত্রশিষ্ত বা ভক্ত 
ছিল না? প্রতিহিংসার ভাব তাহাদের মধ্যে জগতের সাধারণ 
লোকের মতই ছিল । & 


১২২ বাংলায় বিপ্লিববাদ . 


এই শীৌস্তি' দেওয়া স্বন্ধে একটা কথা এখানে বলা প্রয়োজন । 
বলা বাহুল্য, এই যে খুন, ইহীকেই বিপ্রববাদীরা মনে করিত, 
তাহারা শত্রর উপর শীস্তিবিধান করিতেছে । সময় সময় 
এই প্রশ্ন উঠিয়াছে,_যাঁহারা দলের ক্ষতি করে তাঁহাঁদের 
সকলের অপরাঁধই সমনি নহে, কিন্তু তাহাদের উপরও এই একই 
ব্যবস্থা কেন? বিপ্লববাদীদের ক্ষতির দিকটা বিবেচনা! করিলে, 
মিঃ গর্ডন হয়ত কোনই ক্ষতি করে নাই । কিন্ত তাহার সম্বন্ধে 
এই ব্যবস্থা হয় কেন? পুলিশ কর্চারী বা অপর কোঁন 
বাক্তিও এই হিসাবে কম বেনী ক্ষতি করিয়াছে । কিন্ত ব্যবস্থা 
এ এক । এই ব্যবস্থাকে কোন কোন হক্ষদর্শী বিগ্রববাঁদী নিজেদের 
অক্ষমতা ও দুর্বলতা মনে করিয়াছে । জীবনে না মারিয়া ক্ষতির 
অন্পাতে অন্য ব্যবস্থা যে তাহারা করিতে পারে নাই, তাহও 
বিপ্রববাদীরা তলাইর! দেখিয়াছে | থে বুকম স্ুসম্বদ্ধ বিরাট 
শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান থাকিলে, ছে'ট বড় নানা প্রকার ব্যবস্থা 
করা বায়, তাহ! বিপ্রববাদীদের ছিল না। তাঁহাদের পক্ষে শত্রুকে 
মাবিয়া ফেল! সোজা, কিন্ত দুই ঘা মারিয়! ছাড়িয়া দেওয়া ভয়ের 
কারণ। 

১৯০৮-০৯ সালে যে ব্যক্তি কোন এক মাঁমলীয় পুলিশের 
সাহাধ্য করিয়াছিল, তাহাকে মারিয়া ফেলিবার ইচ্ছা বিপ্লববাদীদের 
১৯১৪ সাল পধ্যস্তও সমভাঁবেই ছিল। এতদিন পুলিশের নানা 
সাহীধ্যে সে ব্যক্তি কতকটা নির্ভয়ে ছিল। সেযাহাঁদের ক্ষতি 
করিয়াছে তাহারা প্রায় সকলেই এখন জেলে, কেহ বা পরলোকে 


খুন ১২৩ 


_-তাঁহাকে ঠিক চিনিবাঁর লোঁকও হয়ত বেনী নাই | স্ুতবাঁং 
উক্ত ব্যক্তি কতকটা নিশ্চিন্ত ; কিন্ত বিপ্লববাঁদীরা নিশ্চিন্ত নহে 
_-টট্টগ্রামে তাহার সন্ধান পাইয়াছে। তাহাকে মারিয়া ফেলিয়া 
আর একটা দৃষ্টান্ত দেখাইতে বিপ্লববাঁদীদের প্রচেষ্টা চলিল। 
5911602 00128001055 [২60০: হইতে উদ্ধৃত করিতেছি £-_ 
[06270001091 17 01016050105 85 9650150 17 075 
[00010 50590 005 51০00 55006 10 95 
১505০016৫01 01115 100010096192 00 জা 00062 ০01 079 
(০1110102] 1755501520100 19502000760 2৯00150110০ 
101101 95021900 00010572170 85 11) 501001925০1 
65 ৮1001101720 10521) 2 (02055 2৮072108008. ০০025- 
01150 ০৪$০.৮__অর্থাৎ চট্টগ্রামে প্রকাশ্য রাঁজপথেই হত্যা 
করা হয়। যাহাকে হতা। কর! হয়, সে পুলিশে সংবাদ দেয় বলিয়া 
বিপ্রববাদীদের সন্দেহ উদ্রেক করে। এই মুত ব্যক্তির জঙ্গের 
অপর জন অল্ের জন্য মৃত্যু এড়ায়--এই ব্যক্তি ঢাঁকা ফ্ড্যনত্ 
মামলায় সরকার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়াছিল।--১৯১৪ সালে এই 
চেষ্টা হয় । 

অন্যত্র 39010017 (01007010655 152074 আছে--. 
10৫900 95061170210506 3ি952াছ 01750061155 ৪5 
000106750 17 75 9691 1916 11) 01080 98511617 
7) 0810066.5 অর্থাৎ ১৯১৬ জালে ডেপুটি স্থপারিশ্টেপ্ডেপ্ট 
বসন্ত চাটাজ্জীকে কতিক্লাতায় দিনে দুপুরে হত্যা করা হয়। 


১২৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


পুলিশের এই সুযোগ্য কর্মচারীকে বিপ্লববাদীর৷ ১৯১৬ সালে 
পিস্তলের গুলিতে খুন করিয়াছে । কিন্ত এই তাহাদের প্রথম চেষ্টা 
নহে। রামদাঁস গোড়ায় বিপ্রববাদী ছিল, পরে বসন্ত বাবুব 
সহায়তা কৰিরা বিপ্রবদলের ধ্বংসকাধ্যে লিপ্ত হয়। ১৯১৪ সালের 
জুলাই মাসে তাহাকে ঢাকায় জনাকীর্ণ স্থানে মারিয়া! ফেলা হয়। 
বসন্ত বাবু সেখানে ছিলেন-_সে বাত্রা তিনি রক্ষা পান। এই 
বৎসরই নভেম্বর মাসে বিপ্রববাদীরা বোমা পিস্তলে স্থসজ্ডিহ 
হইয়া ব্সন্ত বাবুর বাড়ী আক্রমণ করে। বসন্ত বাবুর বৈঠকখানায় 
নিয়মিত পুলিশ কর্মচারীরা একত্র হইতেন। সে আক্রমণের 
কলেও বসন্ত বাবুর নিজের কিছু হয় নাই, তিনি সে বাত্রাও রক্ষা 
পাইয়াছিলেন । 

১৯১৩-১৪ সাল হইতেই বিপ্লববাঁদীদের কন প্রচেষ্টা উগ্রতব হইয়া 
উঠিতেছিল। সে কন্মনপ্রচেষ্টা যেমন ছুঃসাহসিক তেমনই ভয়ঙ্াৰ 
ছিল। এই একটা ঘটনা ১০৫60 00100)16৩ 1২91১070৭ 
ভাষায় দিতেছি £--1997176 1013 615 16৬০91900081108 
00100177050 00517 50051055107 1001525560 0679015- 
7৬০ 001109 0020075 ৮006 10019061600, 07 070 2৮610111 
0£ 961. 296) 268 00175000910 17581119905 10010 2১ 
51700 0990 ৮ 056 ৮0070 1380158115 0 079 698৩ 
0 0721900 17 09115060026) 0810065 -5০০ ৮12 
[77075 17680 0:077505019 55 259855179660 006 


1010016060৩ 61)101759 1)15 29581621055 01991019210 


খুন ১২৫ 


170 016 0:00) 10 81165510285 002.06 2110 200 65106209 
৮125 600০0910115 [0105 00195150 00006 1780 50০- 
066090 11) 06001761700 9501 ছাতা 2165০018610 2৮া 
52০0101) 900. 1615 01621 0090 0065 1020 556 00:00) 
17100 21700901069 0 00017100০৮6 01005 ৪৮ 

ইহার মন £--১৯১৩ সালে বিপ্লবীদের কার্য্য অত্যন্ত ভীষণভাবে 
চলিতে থাকে । ছুই জন পুলিশ কর্মচারীকে হত্যা করা হয়। হেড, 
কনষ্টেবল হরিপদ দেবকে তিন জন বাঁঙালী যুবক কলিকাতা 
কলেজ স্কৌয়ারের জনাঁকীর্ণ স্থানে ২৯এ সেপ্ম্বর সন্ধ্যায় গুলি 
করিয়া মারে এবং হত্যাকারীর! জন্তার মধো মিশিয়! ঘায়। 
এই সম্পর্কে কোন পাত্তাই পাওয়া যায় না কাহাঁকেও গ্রেপ্তারও 
কর! হয় না। মৃত পুলিশ কর্মচারীটি বিপ্লবীদের এক দলের 
সঙ্ষে পরিচিত হইতে পারিরাছিল-_বিপ্লবীরা ইহা টের পাইয়াই 
যে.তাহাকে মারিয়া! ফেলে ইহাঁতে সন্দেহ নাই ।-- 

এই ঘটনারই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাঁর অপর প্রান্তে *....** 
& [09101102010 17090170525 0110৮] 710 0১৩ 11009 ০1 
115136০0017) 0080 017 01780101001 27 000700- 
51081) 0 ঢা ৮29 1150917051511150- 2005 
115806011 180 091 ৪ 010177100100 01527 2081251 
05105002 92170102607 01705 01 09109008 
০0181917805 0856 ৪10 0167:5 $5 170 00006 0756 005 


১০১10 0:0901)৮ 28০৪০115৫52) 


১২৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


অর্থাৎ পুলিশ ইন্সপেক্টর বঙ্িমচন্ত্র চৌধুরীর ময়মনসিংহের 
বাসায় একটি পিকৃরিক এসিড. বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। ফলে 
ইন্স্পেক্টর তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হন। এই পুলিশ কন্মচারীটি 
টাকা সমিতির বিরুদ্ধে ঢাক! ফড়বন্ত্র মামলার সময়ে বিশেষভাবে 
কাধ্য করিয়াছিলেন। এই সমিতিই যে তাহার মৃত্যু ঘটাইয়াছে 
ইহাতে সন্দেহ নাই 1 

ইন্সপেক্টর সুরেশচন্জর মুখাজ্জির মৃত্যু সম্বন্ধে 5931001. (50৫). 
20105 লিখিয়াছেন-- 

এর 11 (৮9110751115 ১05০০ 11151960001 ১০151) 
007217072 10৮০1159) ৮19 020 0005) 17090106927 
210500977011765 20791010150 2 006 5065 2104 219001501)60 
0 21765010110) 51092) 109 2১ 0160 2৮05 010 271000156 
22758 176 1050500075455 1011160. 

ইছার মন্ম-_কর্ণওয়ালিস্‌ স্বীটে পুলিশ ইন্সপেক্টর সুরেশচন্ 
মুখার্জি একজন ফেরারী বিপ্লবীকে দেখিতে পাইয়া যেই তাহাকে 
গ্রেপ্তার করিতে অগ্রসর হয়--অমনি উক্ত এনাকিষ্ট তাহাকে লক্ষ্য 
করিয়া গুলি ছোড়ে--ইন্‌স্পেক্টর মৃত্যমুখে পতিত হয়।--- 

সি. আই. ভি, কর্মচারী মবুসথদন ভট্টাচার্য্কেও মেডিক্যাল 
কলেজের গেটের সামনে বুলোকের সমক্ষে মারিয়! ফেলা হয়। এইরূপ 
অনেক দুঃসাহসিক খুন একপ্রকার প্রকাশ্তেই অনুষ্ঠিত হইয়াছে । 

অপরদিকে বাংলারই এক প্রান্ত সীমায় সিভিলিয়ান মিঃ গঙনের 
উদ্দেশ্যে বোমা ও পিশ্তলে সুসজ্জিত হইয়া ধূমঃ গর্ডনেরই বাগানে 


খুন ১২৭ 


বিপ্লববাদীরা উপস্থিত হইয়াছিল । মিঃ গর্ডনের আধু ছিল -বাঁচিয়া 
গেলেন। কিন্ত এই ব্যাপারে বিপ্রবাদীদেরই একজন মৃত্যুকে আলিঙ্গন 
করিল। কেমন করিয়া! (বসিতে কি উঠিতে ) বোমা হঠাৎ ফাটিয়া 
গেল। মিঃ গর্ডনের বাড়ীতেই একজনের শবদেহ পড়িয়া! রহিল। 
তাহার পকেটের ছুইটি গুলি-ভরা৷ পিস্তলই পুলিশের হস্তগত হইল। 

অরুণাঁচল আশ্রমের হাঙ্গামায় মিঃ গর্ডন সংঘুক্ত ছিলেন। 
বিপ্লববাদীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে তাহার কোনও বিরোধ ছিল 
না। তবে বিপ্লববাদীরা এমনই ধারার আরও দুই একটা কাজে 
হস্তক্ষেপ করিয়াছিল । মুখ্য উদ্দেশ্ত ছিল, দেশের লোকের 
সহানুভূতি লাভ করা। 

এইখানে একটা কথা; অপ্রাসঙ্গিক হইলেও বলিয়৷ রাখি। 
বিপ্লববাদীর! তাহাদের শত্রু মনে করিয়া--যাহার। তাহাদের ক্ষতি 
করিয়াছে, অত্যাচার করিয়াছে,--যাহাদের একেবারে মারিয়া 
ফেলিতে চাহিয়াছে তাহাদের মধ্যে ইংরাজও ছিল, দেশীয় লোকও 
ছিল। কিন্তু ইংরাজের বেলায় কোন প্রচেষ্টাই সফল হয় নাই। 
আশ্ধ্য রকমে তাহারা বাঁচিয়াই গিয়াছে। দেশীয় অনেকেই 
মারা গিয়াছে । এক ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ এলেনের গায়ে গুলি ঠিক 
লাগিয়াছিল-_কিস্তু তিনিও বীচিয়া গিয়াছেন। মজফরপুৰে 
যাহাকে মারিতে ইচ্ছা ছিল দে ত মরিলই না, মরিল এমন ছুইটি 
রাণী, যাঁর জন্ত ঘ বিপ্লববাদীরাও কেবল দুঃখই করিয়াছে। 
মিঃ গর্ডনকে একবাঁর দিলেটে, একবার বাংলার বাহিরে মারার 
চেষ্টা হয়, কিন্তু সফল্ল হয়'সীই। সিলেটে, বিপ্লববাদীরাই আশ্চ্য 


১২৮ বাংলায় বিপ্লববাঁদ 


রকমে প্রাণ দিয়াছে । সেখাঁনে সেদিনে আরও কে একজন জবরদস্ত 
সাহেব নিমন্ত্রিত হইয়া আসিবেন কথ! ছিল। তারপর ছোট লাট, 
ব্ড় লাট প্রভৃতির উপর্ণ যে চেষ্টা হয় তাঁহাঁও এই রকমেই বিফল 
হইয়াছে । এ রকম আরও কয় ক্ষেতে প্রচেষ্টা ব্যর্থ ভইয়াছে। 
বিপ্রববাদীরা এজন্য দুঃখপ্রকাশ করিয়াছে । যাহাদের কোন 
প্রকারের কুসংস্কার ছিলঃ তাহারা এমনও বলিয়াছে--ভগবান বেন 
চোঁখে আঙুল দিয়া দেখহিতেছেন, সাহেবদের দোঁষ নাই। 
নতুবা এমন করিয়া সব ওলট-পাঁলট হইয়া যাঁয় কেন? 

যাহাই হউক, বাংলার বিপ্রববাদীদের অরগ্যানিজেসনও এ 
সময়ে অনেকট! বিস্তার লাভ করিয়াছিল । বাঁংলাঁর নানাঁদিকে 
দলের শক্তিবুদ্ধির চে্ট! চলিল | অস্ত্র অভ্যাপের প্রয়োজন ভ ওয়ায 
সেদিকেরও সুবন্দোবস্ত হইল । 

520161017 00177107106 লিখিয়াছেন :--74*70076 209170001, 
01075 52101011700 (০ 1821775 (132102012 270 0021001) 
1) [71111010091 20105 1005 0215990019107 
25110010121 ৮0060165509017621151915095 001 009 
(01010618106 07 00৩ 16৮০9106010219 01521015700, 
0179 17910051509? 00৩ ১2020100560 00 1)1700150 
5)00079 17 01056 81105, অর্থাৎ সমিতির লোকেরা পার্বতা 
ব্লিপুরায় বেলোনিয়া এবং উদয়পুরে দুইটি কৃষিক্ষৈত্র করিয়াছিন। 
ফার্ম বাহত কুবিঙ্ষে্রই ছিল কিন্তু আদতে বিপ্রববাঁদীরা এখানে 
'অন্ত্রচালনা শিক্ষা করিত । 


খুন ১২৯ 


বাংলার বাহিরেও বাংলার বিপ্রববাঁদীরা কর্মক্গেতজ বিস্তার 
করিয়াছিল। ভারতের এক প্রীস্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত 
বিগ্লববাদীরা সংঘবদ্ধ হইয়াছিল। বোমা তৈরীর বিশেষ বিশেষ 
প্রণালী আছে । বিশেষ একটা প্রণালী অনুসরণ করিয়া বাংলার 
কোনও এক স্থানে যে ধরণের বোমা তৈরী হইত-_-তাহা প্র স্থানের 
সহিত সম্পর্করহিত হইয়া অন্যত্র তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা তেমন ছিল 
না। গবর্ণমেণ্টের বিশেষজ্ঞদের মতে মোটের উপর তিন প্রকার 
বোমা এদেশে ব্যবহৃত হইয়াছে । যে বোমার নমুনা! রাজাবাঁজারে 
মিলিয়াছে, সেই বিশেষ প্রণাীলীর বোমাই আরও কয়েক 
স্থানে দৃষ্ট হইয়াছে । এই একই প্রকারের বিশিষ্টতাবুক্ত 
বোমা লাহোরে দৃষ্ট হইয়াছে, দিল্লীতে বড়লাটের উপর 
এবং সিলেটে মিঃ গর্ডনের বাঁগাঁনে ফাটিয়াছে। ময়মনসিংহে ও 
মেদিনীপুরে, সর্দার সেখ সমিরের বাগান-বাড়ীতে এই একই 
রকমের বোমা ফাটিয়াছে। পুনাতে এবং আলিপুরের বাগাঁনেও 
একই বকমের বোমার 10110019 পাওয়া গিয়াছিল। বাংলার 
বিপ্রববাদীরা যে উত্তর ভাঁরতের বিপ্লববাদীদের সঙ্গে যুক্ত ছিল 
তাহা এই বোমার আদান-প্রদান ব্যাপারেও সম্যক বুঝা যায়। 
তাহার পর বিপ্লবসজ্ৰের বিস্তৃতি লক্ষ্য করিলেও ইহা! বুঝিতে বিলম্ব 
ই না। 5০$01017) 00120916659 বিপ্রববাদীদের 010211198.- 
৪০০এর ব্যাপকতা সম্বন্ধে যাঁহা বলিয়াছেন তাহাই আমরা এখানে 
সংক্ষেপে উদ্ধৃত করিতেছি :--ণ0 20056709609 50[00992৫ 


টথ 0১৩ 5৪11909 1021015210175 2176 17609558711 
৯ 


১৩০ ংলায় বিপ্লিববাদ 


5102]1, 2105 102008, £8100051127 58101612700. 06 000155 
10101) ৮5 0211 005 /55% 13217581206. টব 010800 
1217698] 102101995 616. ৮1061) 2%:617050 210 ০0৮6 
1201060 62০1 01176775 5711091%- 32105 102০08. ১217010 
95 07:0001)080 005 51801601100 0)9:100956 700017 
[0]:01 00656 9550012010175,101765 65075060590 05 
1১০0 210150১ 621) 11 07616 1020 00961) 00 0000575৮০৪৫ 
1)9%5 00151168050 2 09110 08170615  অর্থাৎ-সবগুলি 
সমিভিই যে ছোটি ছিল তাহা মনে করা ভুল। টাকা অন্তুণীলন 
সমিতি এবং পশ্চিম বর্গ ও উত্তর বঙ্গের দল বলিয়া যে সমিতিকে 
বলা হয়, তাহা একে অপরের সীমা অতিক্রম করিয়া বিশ্তৃ 
হইয়াছিল। বিপ্লবী সমিতির মধ্যে ঢাক! সমিতি বরাবরই খুব 
প্রভাবশীলী ছিল। যদি অপর কোন দল না-ও থাঁকিত+ এই 
একটা দলের অগ্ডিত্বই বিপজ্জনক বলিয়া গণ্য হইতে পারিত। 
১৯১০ খুষ্টাব্ষে এই সমিতি অত্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করিতে থাকে। 
5901607 00170001666 এ জঙ্ন্ধে বলিতেছেন] এল 
75215 £ 9:58 10511 ০৮৩: 81] 13617691270 5306000 
15 00019110175 0 00১67 0:0৮17065- 1110 165 0710015৫ 
0০07 929. 0950 ০001090% 11) [0150719100) 00৫ 
[080০8১ 1৮ 925 20056 100) 101051]087 2) (106 
10010755500 00000050108 10 05 90001045996 40 


নিতো 09০0, 13012701075 110$0775550 19 001074 


খুন ১৩১ 


0016 01) 01১9 5080)-5951 09905106 732102] ৮6 9170 
10 0)5000275 /011805 1 55805 1310275 005 050150, 
0115 017160 ৮10৮170659 002 06708] 0109৮170055 2170 
2 9০929. অর্থাৎ পরবন্তী সময়ে এই ঢাকা অনুশীলন সমিতি 
সমগ্র বাংলায় বিস্তৃত হয় এবং কাধ্যক্ষেত্র অপর প্রদেশে বিস্তার 
করে। ময়মনসিংহে ও ঢাকায় এই সমিতি খুব জমাট ছিল। 
উত্তর-পশ্চিমে দিনাজপুর হইতে দক্ষিণ-পূর্বে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এবং 
উত্তরপূর্ব কুচবিহার হইতে দক্ষিণ-পশ্চিমে মেদিনীপুর পর্যযস্ত 
ইহার কা্ধ্যক্ষেত্র বিস্তৃত হইয়াছিল । বাংলার বাহিরে এই দলের 
লোক আসাম, বিহার, পাঞ্জাব, যুক্তপ্রদেশঃ মধ্যপ্রদেশ ও পুনায় 
কাষ্য করিতেছিল। 

এই ত গেল এক ঢাকার দলের বিস্তৃতির কথা। ইহা ছাড়া, 
পশ্চিম বঙ্গের ও কলিকাতাঁর দল ছিল, মাদারীপুরের দল, 
বরিশালের দল, উত্তর বঙ্গের দল, ময়মনসিংহের দল ত ছিলই। 
গুত্যেক দলই কর্মক্ষেত্র বুদ্ধি করিতেছিল। ছুই একটী দল 
(থা মাদারীপুর ) মূল ঢাঁকার দল হইতেই বিচ্ছিন্ন হইয়া পরে 
বিস্তৃতি লাভ করে। বাংলার চন্দননগরের দলের সঙ্গে ঢাকার 
দল (অনুশীলন । সম্পূর্ণরূপে যুক্ত হইয়া গিয়াছিল-_বথাস্থানে 
নাংলার বিপ্রববাদীদের সঙ্ঘের ব্যাপকতার কথ! বলা হইবে। 

অনেক সময় বিপ্রববাদীদের প্যাম্কলেট একই নির্দিষ্ট দিনে 
গ্রামের গ্রান্তভূমি হইতে আরম্ভ করিয়া পার্জাবের প্রান্তদেশ 
পযন্ত বিতরিত হইত । বলা বাহুল্য, গভণমেন্ট এই বিস্তৃত সংবনদ্ধ 


১৩২ বাংলায় বিগ্লববাদ 


০017065 সঙ্ঘ দেখিয়া! ইহার প্রতিকারের স্ুবন্দোবন্তও সহ 
সঙ্গেই করিতেছিলেন ৷ সরকারী অনেক পুলিশ কর্মচারী এদিবে 
কৃতিত্ব দেখাইয়াছেন | শত্রু মনে করিলেও তরী কৃতিত্বের জর 
বিপ্লববাদীর! তাঁহাদের বাহবা দিয়ান্ছে। 

খুন সম্পর্কে মার একটা কথা বলা দরকার । বিপ্রববাদীদে, 
জঙ্গী বিভাগ ( ড1016706 [1)60211070176) হইতে লোব 
নির্বাচিত ভইয়া কোনও লোককে খুন করিতে হয়ত নদ 
হইল। কিন্তু খুন করিবার হুকুম লইতে হইত পরিচালক 
বিভাগ হইতে। পরিচালকের! হুকুম দিয়াই সরিয়া থাকিত-- 
যাহাতে ধরা না পড়ে। কারণ পরিচালকেরা ধরা পড়িলে দলে 
ক্ষতি হইত বেশী। পরলোঁকগৃত বসন্তকুমার চটোপাধ্যায়। 
খুন-ব্যাঁপারে সিডিশন্‌ কমিটি রিপোর্টে লিখিতেছেন যে, পাচ জন 
ব্যক্তি মসাঁর পিশ্ল ও রিভলভাঁরে সুসজ্জিত হইয়া “......16৫ 
05676011751 01 076 ড1210709 [0002100600 0৮160 
০01 17911 25501. 00 07617 ৮100100 01100 076 01025 91 
61656 01108015015 170) 10 80001071100 ৮101 016 
10195 0106 500190) 11010 01017561555 0019016 
0৮6 20021 00221719510 06015 01106) 1] 01001 017 


006 5০০16 00101) 1700 06 ০11010150 05 7617 076১ 


উনবিংশ পরিচ্ছেদ 
বিপ্লববাদীর পরিচয় 


ভাঁগাবশেই হউক বা যে কারণেই হউক বাংলায় রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন 
যাহা হইয়াছে তাহা বিপ্লবের ফলে; ক্রমবিকাশের স্বাভাবিক 
প্রয়োজনের খাতিরে নহে। তাই দেখি, তাহার রা্ীয় পরিবর্তনের 
প্রয়াসের সঙ্গেও সমগ্র বাঁডালী জাতির তেমন কোন পরিবর্তন 
ঘটে নাই। বাঙালীর দুঃখ বাড়িয়াই চলিয়াছে | পলাশী- 
প্রাঙ্গণে বাঙালী যে স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়া আঁসিল-_তাহা 
ইংরাজের শৌধ্যবীর্যের ফলে নহে। বাঁগালীজাতিকে ইংরাজজাতি 
ঠিক যুদ্ধ করিয়া পরাজিত করে নাই। বাংলার ভিতরকাঁর 
ুর্বলতাই বল, বা দুষ্ট শক্তিই বল, বিপ্লব ঘটাইয়! রাষ্ট্রশক্তির 
পরিবর্তন ঘটাইয়াছিল। সমগ্র বাংলার অবস্থা তখন অতি 
পৌঁচনীয়। প্রজাকুল নিঃস্ব অজ্ঞ। ধনীর বিলাসী, অত্যাচারী, 
আত্মকলহে রত। বাংলার রাষ্র ও সমাজে বিশৃঙ্খলা, দুখ 
দৈন্ত বাঙালীর অসহৃ হইয়াছে। তাই বাঙালীর রাষ্ট্রশক্তিকে 
বাঁডালী অভিসম্পাত করিয়াই যেন চূর্ণ করিরা দিল। কিন্ত 
ক্রমোন্নতির গ্রতাবে মে পরিবর্তন সাধিত হয় নাই বলিয়া বাঙালী 
জাতিহিসাবে, তাহাতে বড় হইতে পারে নাই। তাহার 


১৩৪ ংলায় বিপ্লিববাদ 


অর্থসমস্তা, সমাঁজসমন্া, স্বাস্থ্যসমন্তা, অন্নসমস্তা জটিল হইয়াতি 
দেখা দিয়াছে । 

তাঁর পর ইংরাজ তাহার শিক্ষা ও সত্যতার বেসাতি লইয়৷ 
আঁসিল। বাংলা সেই শিক্ষা ও সভ্যতাকে ক্রমবিকাশের প্রয়োজনে 
গ্রহণ করে নাই। কতকটা সামাজিক বিপ্রবের পথেই তাহা 
গ্রহণ করিয়াছে । জীর্ণ, প্রাণহীন সমীজকে চূর্ণ করিয়াই সেদিকে 
বাংলা ঝুকিয়া পড়িয়াছে। সেই শিক্ষা ও সভ্যতারই ফলস্বরূপ 
বর্তমীন নব্য বাঙালীর কৃষ্টি। সেই শিক্ষা ও সভ্যতার যতখানি 
বিষ উদরস্থ করিতে বাঁডাঁলী বাধা, তাহা দে করিয়াছে । 'অবশ্ন 
সে শিক্ষা-সভাতার গুণও কতকটা সে লাভ করিয়াছে । কিন্তু 
তাহাতে বাঁগালী জাতিহিসাবে শক্তিশালী হন্ম নাই। শিক্ষা 
বিষয়ে যথেষ্ট কৃতিত্ব বাঙালী দেখাইলেও তাহার অন্নসম্যা 
স্বাস্থাসমন্যাঃ সমাজসমস্যা ও ভীষণ দারিদ্র্য একটুও কমে 
নাই, কেবল বাড়িয়াই চলিয়াছে । অথচ শিক্ষালাভ করার ফলে 
বাঁডালীর অস্বস্তি অনেকথানিই বাঁড়িয়াছে । বাংলার নেত 
বল আর কর্মাই বল জাতিকে দ্বীরে ধীরে গড়িয়া তুলিয়া অর্থে 
সামর্যে স্বাস্থ্যে শক্তিশালী করিবে, তেমন মর্জি কাহারও বড় 
হয় নাই। একট! ব্রাষীয় দ্রুত পরিবর্তন 'আকাজ্কা সকলেই 
করিয়াছে । নিজেদের কচি অনুযায়ী, সেই দ্রুত পরিবর্তন, 
মধ্পন্থীরা একভাবে চাহিয়াছেন, উগ্রপন্থীরা একভাবে চাহিয়াছেন: 
আবার বাংলার বিপ্রববাদীরা 'আর-একভাবে চাহিরাছে। 


ঈঁ এ যা 


বিপ্লিববাদীর পরিচয় ১৩৫ 


বাংলার বিপ্লববাদীরা তাহাদের কৃর্শক্তি শুধু বাঁংলায়ই 
আবদ্ধ রাখে নাই। বাংলার বাঁহিরেও তাহাঁদের দৃষ্টি পড়িয়াছিল। 
তাহাদের শাখ! যুক্তপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতিতেও বিস্তৃতিলাঁভ 
করিয়াছিল, একথা বলিয়াছি। 

১৯১৪ খৃষ্টাব্দে বাংলার বিপ্রববাদীরা! নৃতন ভাবে কর্মক্ষেত্রে 
অবতীর্ণ হয়। বাংলার বিভিন্ন দিকে ছোট বড় বিভিন্ন সমিতি 
কাজ করিতেছিল। স্বদেশী আন্দোলন হইতে আরম্ত করিয়া 
১৯১৪ সাল পর্যন্ত সমস্ত সমিতিই সমান কাধ্যক্ষমত! দেখায় নাই | 
বিচ্ছিন্ন ভইয়াছিল বলিয়াই, অনেকে তেমন স্থযোগ করিয়াঁও উঠিতে 
পাঁরে নাই । কিন্তু ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে যখন ইংরাজের সঙ্গে জান্মাণীর 
মুদ্ধ বাধিয়া গেল তখন বাংলার অধিকাংশ সমিতিই সম্মিলিত 
হইয়া কার্যক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইল। স্থানে স্থানে বিগ্রববাদীদের 
শলা-পরামশশ চলিল,-- “এবার বড় স্থযোগ আসিয়াছে, এ স্থযোগ 
ছাঁড়িব না । ইংরাঁজকে বড় কায়দায় পাওয়া গিয়াছে; এখন না 
হইলে আর হইবে না।, কেহ কেহ এমন আপশোষও করিলেন, 
থিদি পূর্বব হইতে চেষ্টা করিতাম, তবে এ অবসরে নিশ্চিতই অভীষ্ট 
সিদ্ধ হইত।” এমন একটা সুযোগ এত শীপ্র আসিবে, একথা 
যদি নিশ্চিত জানা থাঁকিত, আর বাংলার বিপ্রববাদীদের সকল 
সমিতিগুলিই যদি সম্মিলিত হইয়া সমানভাবে সেজন্য গোঁড়া 
হইতে প্রস্তত হইতে থাকিত, তবে অবস্থা সঙ্গীন হইয়াই যে উঠিত 
ইহাতে সন্দেহ নাই। ১৯১৫ সালে বিপ্রবচেষ্টা প্রশমিত করিতে 
ভারত গবর্ণমেপ্টের বেশী বেগ পাইতে হয় নাই, কিন্তু চারিদিকে 


১৩৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


অবস্থা যাহা দ্দীড়াইয়াছিল, যে-ভাবে অল্লসংখ্াক সৈন্যের হস্তে 
গভর্ণমেণ্টকে তখন নির্ভর করিয়া থাকিতে হইয়াছিল, ইংরাঁজ 
সৈম্ন যে-ভাবে ভারতের বাহিরে চলিয়! গিয়াছিল, ভারতের 
সাধারণ লোকের মনোভাব যে-ভাবে পরিবর্তিত হইয়া যাইতেছিল, 
স্থুলবশতই হউক বা যে কারণেই হউক ইংরাজের শক্তি-সামথ্য 
বিষয়ে ভারতবাসীর মনোভাব যেভাবে বদলাইয়া গিয়াছিল, 
তাহাতে একথা মনে করা! অসঙ্গত নহে, বে বিপ্নববাঁদীদের চেষ্টা 
আরও পূর্ধে আরম্ভ হইলে, ভারতের বিপ্লববাদীদের দমন কণ 
সহজসাধ্য হইত না। ইহার জন্য ইংরাজকে অনেকখানি বেগ 
পাইতে হইত। 

বাহাই হউক, বাংলার বিপ্রববাদীরা সকলেই ১৯১৪ সাল 
হইতে নবোৎসাহে কার্ধ্ক্ষেত্রে নামিয়া পড়িল। বন্দুক পিস্তল 
সংগ্রহের প্রবল চেষ্টা চলিতে লাগিল । অর্থসংগ্রহের নানা চেষ্টা 
চলিতে লাগিল । এই সময়ে রডা (০৭৭) কোম্পানীর পঞ্চাশটি 
মসাঁর পিস্তল কলিকাতার বিপ্লববাদীদের চেষ্টায় বিপ্রববাদীরা 
করারত্ত করে। বিপ্লববাদীরা তখন যে-সমন্ত কাজ করিত, তাহার 
পক্ষে এই পঞ্চাশটি পিস্তল কম নহে। কিন্তু পিস্তলগুলি সবই 
বিপ্লববাদীরা লুকাইয়া রাখিতে পারিল না। কার্ডুজ অনেকগুলিই 
পুলিশ অল্পদিনের মধ্যে হস্তগত করিয়া ফেলিলঃ পিস্তলও ধর 
পড়িতে লাগিল। 

রডাঁর বন্দুক চুন্নির সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের কাজও খুব বাড়িয়া 
গেল। বিপ্রববাদীরা ইতিপূর্েই যে রকম বেরোয়! ভাবে তাভাদের 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৩৭ 


অস্তিত্ব প্রমাণ করিয়া চলিয়াছিল, তাহাতে এই রকম পঞ্চাশটা 
পিস্তল যদ্দি এক সঙ্গে পায় তবে যে একটা শক্ত গোলমাল বাধাইয়া' 
তুলিতে তাহাদের বেশীক্ষণ লাঁগিবে না, তাহা! পুলিশ বুবিল। 
ধর-পাঁকড়ের ধুম লাগিয়া গেল। কলিকাতাঁয় আমরাও এমনই 
সময়ে ধৃত হইলাম । গভীর রাত্রিতে কাহাকেও না জাগাইয়াই 
পুলিশ বাড়ীতে প্রবেশ করিল। সাহেবদের কথা কানে ঘাইতেই 
নিদ্রা ভাঙ্গিল। সেখানে সন্্যাসী বা সাধু ওরক্ষে শিশির কুমার 
গুহের সঙ্গে গ্রেপ্তার হইলাম। এই ঘটনা ১৯১৪ সালের শেষ 
ভাঁগে ঘটে। 

সাধু গৈরিক বসন পরিহিত, মস্তকে উফ্ধীষ। সাঁধুর কোমরে 
দড়ি দেখিয়া রাস্তার একজন লোঁক বলিল, “শালা সাধু চোর।, 
সাধু এবং আমি এক সঙ্গেই হাঁটিয়া বাইতেছিলাম, সাধু এঁ উক্তি 
শুনিয়া আমাকে ঠেলিয়া বলিলেন, “ছিলাম ভাকাত হলাম চোর, 
মান আর থাকে না।” লাঁলবাজারে গিয়া আর সাধুসঙ্গ 
মিলিল না, সাধু রহিলেন এক ঘরে, আমি আর এক ঘরে। রডার 
ব্যাপারেও কয়েকটি গ্রেপ্তার হইয়া! ওখানে আসিয়াছেন ও 
আসিতেছেন। রাত্রিতে আমার ঘরে ( ঘরে আমি এক। ছিলাম ) 
একটি শিক্ষিত মাঁড়োয়ারী যুবক আসিলেন। তিনি কতক্ষণ 
পরে আলাপ আরম্ভ করিলেন। তিনি যে “ন্বদেশী হাঙ্গামায় 
আপিয়াছেন, তাহীই আমাকে বুঝাইতে বাস্ত হইলেন, কিন্ত 
আমি বিশ্বাস করিতে পাব্গিলাম না। মাঁড়োয়ারী বিপ্লববাদী 
ইইয়াছে, একথ! সহজে স্বিশ্বাস করা গেল নাঁ। শেষে জানিলাম, 


১৩৮ ংলায় বিপ্লিববাদ 


“্রডা-কেসে” তাহাকে জন্দেহে গ্রেপ্তার করিয়াছে । নির্দোষী 
বেচারী এটনী হইবার চেষ্টা করিতেছিল,-_মুক্ত হইয়াছে । 

আমাদের বিপ্লববাদীদের হাঁজতবাসে বা! জেলবাঁসে বাপ মা) 
বা ভাই বন্ধু কেহ বড় একটা খাবার দিয়া যাইত না, ইহাই দস্তর। 
মাড়োয়ারীর বাপ মস্ত ধনী মেলাই খাবার দিয়া গেলেন, 
সাহেব ব্যারিষ্টার নিযুক্ত করিলেন। পরের দিন বৈকালে 
মাঁড়ৌয়ারী ঘুবক ম্যাঁজিষ্টরেটের কাছ হইতে বখন ফিরিয়া আসেন, 
তখন এক মেম-সাহেব নাকি রাস্তায় ভীভাঁকে চোর মনে করিয়া 
সঙ্গী সার্ষ্েপটকে কি বলিয়া প্রশ্ন করিয়াছিল । শিক্ষিত ধনী 
মাড়োয়ারী যুবক তাহাতে সত্যই বড় মনঃক্ষু্ হইয়াছিলেন। 
আসিয়া একেবারে কাদ-কীদ হইয়া বলিলেন”--€কি লজ্জা দেখুন, 
আমাকে চোর বলিল! মুখে ছুঃখপ্রকাশ করিয়া মনে মনে 
বিপ্লববাদীরা বে সমস্ত বিশেষণে দেশবাসী ও পুলিশ কর্তক 
বিশেষিত হইয়াছে, তাহা স্মরণ করিলাম, আঁর নিজের মনে নিজে 
বলিলাম, “লোকের কথায় কিবা আসে যায়” । 

_ লালবাজারে ছুই দিন ছিলাম । খাওয়ার সময় খাইতে 
গিয়া দেখিঃ সেখানে গুধু সাধুই নহে, পরিচিত আরও কয়েকটি 
গ্রেপ্তার হইয়। আসিয়াছে । অনেক দিনের ফেরারী একজনও 
সেই সঙ্গে। ভ্রাতা শ্রীমান -কেও দেখিলাম, গ্রেপ্তার হইয়া 
আসিয়াছে । বুঝিলাম, “কেহ না রহিবে বংশে দিতে বাতি । 
কালের হাত পড়িয়াছে, নতুবা শুধু পুলিশের চেষ্টায় এতদিনের 
9105097905 ধরা পড়ে না। € 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৩৯ 


এই ধর-পাঁকড়ের ব্যাপার ক্রমেই বাঁড়িতে লাঁগিল। যাহারা 
ঘরছাড়া লোক তাহাদেরও নিষ্কৃতি নাই-_অচেনা যাহারা 
তাহারাও চেনা হইতে লাগিল। কেন, ইহার কারণ আছে। 
এই ঘর-ছাড়াদের মধ্যে মামলার ফেরারী আসামীও ছিল, আর 
বাড়ী ঘর ছাড়িয়া একেবারে নূতন নাম গ্রহণ করিয়া কাঁজ 
করিবার লোকও জুটিয়াছিল বিস্তর । ১৯১০ সাঁলের পরে বাড়ী 
ঘরে থাকিয়। কজি করা এক প্রকার "অসম্ভব হইয়৷ উঠিয়াছিল। 
বিপ্রববাদীদের অনেকের পিছনে ১৯১৩-১৪ সালে দশ বাঁর জন 
পর্যন্ত গুধচর লাগিয়া থাকিত। দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টাই তাহার 
ছায়ার ম্যায় অন্থুসরণ করিত । তবু বিপ্লববাদীরা গুগুচরদের 
ফীকি দিয়াই সময় সময় অনৃশ্ হইয়াছে । গুপ্তচর চাকরী বজায় 
রাখিতে যা-হোক্‌ একট! রিপো দিয়া কর্তব্য শেষ করিয়াছে । 

এত অন্থমরণ করিলে কাঁজ করা অসম্ভব, স্থতরাং ইহার! 
খুব বেশী কাজ করিতে পারিত না। কিন্তু যাহারা ঘর-ছাড! 
তাহারা অনেকটা নিরাপদ। যে ছুই চার জন পুলিশ কর্মচারী 
তানাদের চিনিত, তাহাদের চোখ এড়াইয়৷ চলিতে পারিলেই 
ইইল। অনেকে ১৯০৭ সাঁল হইতে আত্মগোপন করিয়া ১৯১৪ 
সাঁল পর্যন্ত পুলিশের দৃষ্টি সমভাবেই এড়াইয়! চলিয়াছে। অথচ 
বাংলার প্রত্যেক জেলায়, সবডিভিসনে, অসংখ্য গ্রামে, ইন্ছা 
নিয়ত যাতায়াত করিয়াছে ইহাদের কাহারও নামে হয়ত পুরস্কার 
ঘোষিত আছে। ষ্টেশনে ্টেশনে, নদীর মুখে মুখে তখন সন্দেহ 
২ইলেই তল্লাস করা হইত, . এ সমস্ত ঘর-ছাড়া৷ লোকেরা এই 


১৪০ ংলায় বিপ্লববাদ 


বিপদের মধ্য দিয়াই যাতায়াত করিয়াছে ; সঙ্গে আবাঁর অনেক 
সময় অস্ত্রশস্ত্রও থাকিত। মোট কথা; এ সমস্ত ঘর-ছাড়া 
বিপ্রববাদীদের--যাহাদের প্রত্যেকেই তখন ভিন্ন নাম গ্রহণ 
করিয়াছে, যাহাদের প্রত্যেককেই পুলিশ ধরিতে চাহে, বাহাদের 
অনেককে আবার পুলিশ নামে মাত্র জানে কিন্তু আকৃতিতে 
চিনে না--ধরা পুলিশের পক্ষে এক প্রকাঁর অসম্ভব হইত, বদি 
না! এই ঘর-ছাড়া লোকদের ঘরের লোকেই তাহাদের ধরাই 
দিত | বিপ্লববাদীদের তুলব্্রান্তি সন্বেও তাভাদের এই 
গোঁপনতার মধ্যে, এই পলাতক জীবনের মধ্যে যে দুঃখ ক 
নিষ্টা ও ত্যাঁগ রহিয়াছে, তাহা বোধ হয় অনেকেই শ্বীকাব 
করিবেন । বিপ্রববাদীর একদল এমনই ছুঃখ কষ্টের মধো দলের 
শক্তিবৃ্ধিব চেষ্টা করিত,--কিন্ত১ তাহাদের পাশে আবার 
তাহাদেরই লোক দাঁড়াইয়া, দুঃখ কষ্টের হাত এড়াইতে, বা অন্ত 
কোনও প্রলোভনে তাহাদের পুলিশের হাতে ধরাইয়া দিয়াছে। 
১৯১৫-১৬ সালের পর হইতে দূলের বীধুনি কতকটা কমিয়া ঘাঁয়। 
তখন কেহ কেন মনে করে, বিপ্লবের এই শেষ হইল | সব 
গিয়াছে, আর কেন, পুলিশের ভাত এড়াইতে, জেল হইতে বাঁচিতে। 
সব বলিয়া দিই | প্রধানত এই সমস্ত কারণে আর পুলিশের 
চেষ্টাও কতকটা, ফেরারীরাও ধর! পড়িতে লাগিল । অচেনা 
যাহারা তাহাঁরাও চেনা হইল । 

যাহা হউক, ১৯১৪ সালের শেষ ভাগের কথাই বলি। 
তখন ধর-পাকড় খুব আরম্ত হইয়াছে* কিন্তু চাঁলকেরা অনেকে 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৪১ 


তখনও ধর! পড়েন নাই । এদিকে হ চা বাধিয়। গিয়াছে, পুলিশের 
দৃষ্টি খরতর হইয়াছে। 

একদিকে আশ! আকাঁঙ্ষা, একদিকে নূতন নূতন বিপদ, 
আর একদিকে নব নব দায়িত্বপূর্ণ কাজে হাত দেওয়া, এ সমস্ত 
চিন্ত। তখন বিপ্রববাদীদের মধ্যে দেখা দ্রিল। 

কলিকাতায় এখন যেখানে মহিল! উদ্যান, সেখানে নান৷ 
কেন্দ্র হইতে বিপ্লববাদীরা আসিয়া কর্তব্য নির্ধারণের জন্য নির্দিষ্ট 
সময়ে একত্র হইয়াছে, আরও ছুই চার জনের আসিবার কথা । 
ইহার মধ্যে আট দশ বছরের ফেরারীও আছে। অনেককে ধরিবার 
জন্ক পুলিশের কর্তারা ব্যাকুল হইয়াছেন । সেদিন পুলিশেরই 
ন্তপ্রভাত। তাহার কার্ণ, পুলিশের কাধ্যকুশলতা নহে; তাহার 
কারণ বিপ্লববাদীদেরই কাহারও বিশ্বাধাতকত! | পুলিশ ঠিক 
থবর গাইয়াছে। তাহারা সদলবলে, সমস্তটা পার্ক ঘিরিয়! ফেলিল। 
কোনও প্রকারে বিপ্রধবাদীরা না পলাইতে পারে, সে আট-ঘাঁট 
বাধিরাই আসিল। পার্কে ঢুকিতেই বিপ্লববাদীরা বুঝিতে পাধিল। 
কতক্ষণ ধবস্তাঁধবস্তি হইল। হাঁত খালি, সুতরাং কেবল হাঁতাহাতিই 
চলিপ। কেহ কেহ রেলিং ডিঙ্গীইয়া বাম্তায় বাহির হইয়া পড়িল, 
অসংখ্য পুলিশ কর্মচারী পূর্ধ্ব হইতেই সজ্জিত ছিল। শ্রীমান 
বা--পলাইয়া পাঁশি বাগানের মোড়ে আসিয়। পড়িয়াছে। সেখান 
হইতে সে দেখিল, জনৈক বিপ্রববাদীকে পুলিশ প্রহার করিতেছে। 
শীমানের পলায়ন কর! হইল না, ফিরিয়া দীড়াইল-_-“মরিতে হয় 
ত সকলে মরিব, একলা! *্বীচিব না। পুলিশ কর্মচারীরা অগ্রসর 


১৪২ বাংলায় বিপ্লববাঁদ 


হইল। শ্রীমান দুই জনের গল! ছুই হাঁতে টিপিয়া ধরিয়াছে-- 
এমন সময় জনকয়েক সাহেব কর্মচারী আসিয়! পৌঁছিল। লোম্যান 
সাহেব প্রভৃতি নামজাদা সি. আই. ডভি”র কর্তারাঁও সেদিনকার 
এই মস্ত শীকারকাধ্যে আত্মনিয়োগ করিয়াছিলেন। চারিদিক 
হইতে শ্রীমানকে যখন চাপিয়া ধরিয়া হাতখান! ভাঙ্গিয়া ফেলার 
যোগাড় করিয়াছে তখন শ্রীমান অগত্যা একটা জ্ঞুবুৎসুর কৌশলে 
লোম্যান সাহেবের দক্ষিণ হস্তখানি কিঞিৎ ভাঙ্গিয়া দিল | 

শুধু এই গ্রেপ্তারই নহে, ইহার ছুই চার দিনের মধ্যেই আর 
একজন বিপ্রববাদীকে রাস্তায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বঙ্গ 
রোগে ভূগিতেছিলেন । এক সন্্যাসীর ব্যবস্থামতে রোজ গঙ্গা্নান 
করিতেন । সেখান হইতে ফিরিবার সময় তাঁহাকে গঙ্গার ঘাটে 
ধরা হয়। ঘরের খুব জানা-শুনা লৌকে ধরাইয়া না দিলে দে 
ইহাকে ধরা সহজ হইত না, ইভা বলা বাহুল্য । ১৯০৬ যাঁলে 
একবার ইনি ধৃত হন, পরে ফেরারী হইয়া থাকেন । তাঁহার পৰ 
১৯১২ সালে হেড কনষ্টেবল রৃতিলাল রায়ের খুন সম্পকে ধৃত 
হন। সেবারেও আইনের ফাঁকে খালাস হইয়া গেলেন। পরে 
পুলিশ যখন অন্য ব্যাপারে তাহাকে আটকাইবার মতলবে বাড়ীতে 
উপস্থিত হইল; তখন তিনি বাঁড়ী ছাঁড়িয়। আবার রাস্তায় বাচ্ধি 
হইয়! পড়িয়াছেন । পুলিশ ভাবিয়াছিল দুইটা দিন অবস্থাই বাড়ীতে 
থাকিবে। কিন্তু যখন অগ্ুসন্ধান হইল তখন দেখা গেল তিণি 
অদৃশ্য তইয়াছেন। যাহাই হুউক, ইহাকে ১৯১৪ সালের শেষ 
ভাগে পুলিশ ধরিয়া ফেলে। ইহাকে চিনিতে পারার মত পুলিশ 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৪৩ 


কর্মচারী তখন বাংলায় বড় ছিল না। দলের লোকের মধ্যেও 
থুব বিশিষ্ট ব্যক্তি ভিন্ন তাহার প্রকৃত নাম কেহ জানিত না। 
ঘরের লোকের অঙ্গুলি সঙ্কেতেই পুলিশ তাহাকে হাতের মধ্যে 
পাইল। ধৃত হইয়াছিলেন যক্ষা অবস্থায় । আমরা জানিরাছি, 
তিনি জেলে থাকিতে তাহার যন! সারিয়া গিয়াছে । জেলের আদর 
যত্ব কি এত বেশ যে তাহার যক্মা ভাল হইল? তাহা নহে। 
বাহিরে এই বক্ষ লইয়াই যে অনিয়ম, যে পরিশ্রম করিতেন, 
রৌদ্র বৃষ্টি সমানভাবে মাথায় করিতেন, তাহা জেলে বাওয়ায় বন্ধ 
হইল। জেলের কঠোরতা, সেলে আটক, প্রভৃতি দুঃখ হইতেও 
ইহারা বাহিরে থাকিতে বেণী ছুঃখ কষ্ট ভোগ করিতেন। সেই 
স্বেচ্ছায় দুঃখভোঁগ, সেই ছুঃথখভোগের নিষ্ঠা, যাহারা দেখিয়াছে-_- 
তাহারা জানে, ইহারা সাধারণ মানুষ নহেন। ইহাদের শুধু খুনী 
বল, শুধু ডাকাত বল, অমানুষ বল, যাহা ইচ্ছা বল”_কিন্ত ইহার! 
সীধারণ মানুষ নহেন। ইহাদের জীবন উন্নত কি না তাহা জানি না, 
তবে অপাধারণ। আর কাহারও বিবরণ দিব না সংগ্রহ করাও 
অসম্তব। আমর! এই একজনের কথাই সীমান্তি কিছু বলিব। 
সঃ ০ 

নারদ ভক্তিস্ত্রে আছে, ভক্তি নিজেই ফলম্বরূুপা | এই 
প্রেম-তক্তি মানুষকে আত্মারাম করে। মানুষ ইহার আস্বাদন 
পাইলে, “অমৃতো! ভবতি, তৃপ্তো ভবতিঃ | 

ভগব্থপ্রেমে মান্গষ আনন্দ অগ্কুভব করে-_মাহষ শ্রেষ্ঠ হয়, 
মাহৰ “অম্বতে! ভবতি, চকস্ত দেশপ্রেমে মাছুষ তেমন আনন্দ 


১৪৪ বাংলায় বিল্লববাদ 


অনুভব করে কি, মানুষ শ্রেষ্ট হয় কি, অযৃত হয় কি? প্রেম 
যাহাকে আশ্রয় করিয়াই গড়িয়া উঠুক, তাহার গতি-প্রকৃতি কি 
একই ধারার? একজন মান্ষকে আশ্রয় করিয়া অথবা একটি 
শালগ্রামশীলা বা এ রকম একটা কোন বস্তুকে আশ্রয় করিয়া যদি 
মানুষের প্রেম গড়িয়া উঠিতে পারে, তাহাতে করিয়াই যদি মান্য 
মানুষ হইতে পারে, শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিতে পারে, তবে দেশকে 
আশ্রয় করিয়া তাহা! সম্ভব কি? 

বিপ্রববাদী দেশকে ভাঁলব্যসে শুনি ; শুনি দেশের প্রতি তাহার 
প্রেম অনন্যসাঁধারণ, দেশের জন্য সে সর্বস্ব বিলাইয়৷ দিতে উদ্যত । 
এই একনিষ্ঠায় ভাহাঁর জীবন উন্নত হইয়াছে কি? ধন্ধাজীবন 
লাভ করিলে মান্ষ উন্নত হয়। সে উন্নতি আমধ্পা বুঝি--তাহার 
ত্যাগে, চরিত্রমাধুধ্যে, নিষ্ঠায়, ভক্তিতে, স্থৈরয্ে । দেশসেবা যদি 
ধর্মঃ আর সেই দেশসেবা যদি খাঁটি হয় তবে মানুষ কেমনটি 
হইবে? আমরা পুর্বে বলিয়াছি যে জনৈক বিপ্রববাদীকে ( ধরুন 
তাহার নাম অনন্তকুমার ) পুলিশ রান্তায় গ্রেপ্তার করে। তিনি 
তখন বক্ারোগে ভুগিতেছিলেন। অনন্তকুমারকে আমরা 
সমালোচকের দৃষ্টি নিয়া লঙ্গ্য করিয়াছি। শুধু এই পরীক্ষা 
লইবাঁর জন্য যে, ইহার! মানুষ হিসাবে কতটা উন্নত হইয়াছেন, 
দেখিব। ইহাদের জীবনী কেহ লিখিবে না, আমাদেরও লিখিবার 
উপায় নাই--কাঁরণ কোন অবস্থায়ই লিখিবার অন্থমতি মিলিবে 
না। সেই বিরক্তি আশঙ্ক। করিয়াই তাহার প্রকৃত নাম দেওয়ার 
ভরস! হইল না। 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৪৫ 


অনন্তকুমার ঘর বাড়ী ছাড়িয়া আসিয়াছেন। কুদিনে ছুর্দিনে 
তিনি অবিচলিত। যাঁহাঁকে লক্ষ্য করিয়। তিনি বাহির হইয়াছেন-_ 
সেদিকে একৈক লক্ষ্য । তীহাকে স্থদিনেও যেমন নীরবে, 
অবিচলিত চিত্তে, নিরলস ভাবে কর্ম করিতে দেখিয়াছি, 
ছুর্দিনেও তেমনই দেখিয়াছি । ইহার ভরসা যে কোথায় বুঝিতাম 
না। কৃতকাধ্য হইলেও উৎফুল্ল নহেন, অকৃতকার্ধ্য হইলেও অবসাঁদগ্রস্থ 
নহেন। কি একটা আনন্দ যেন বুকের মধ্যে জমিয়া আছে! 
গীতায় আছে, কম্মেই অধিকার, ফলে নহে। সেকথা আমরা 
যাহারা বলি, সংস্কৃত শ্লোক 'অনর্গল বলিয়া যাই--সেই আমরা 
বিফল হইলে ভগ্রমনোরথ জনিত ছুঃখ যথেষ্ট ভোৌগ করি! কিন্তু 
অনস্তকুমারকে গীতার ক্পোক আওড়াইতে শুনি নাই, কিন্তু গীতার 
এ বাণী তাহার মধ্যে সার্থক হইয়াছে, দেখিয়াছি । 

দলের অর্থ যেন তীহার কাছে বুকের রক্ত হইতেও মুল্যবান । 
অথব্যয় সম্বন্ধে এত কৃপণতা, কৃপণ ভিন্ন কেহ করিতে পারে না । 
সহমত সহন্্র টাক হাতে আপিয়াছে কিন্তু নিজে, যে হোঁটেলে 
খরচ কম, সেখানেই আহারের বন্দোবস্ত করিয়াছেন । যে সমক্নকার 
কথা বলিতেছি তখন ছাত্রদের মেসে সাধারণত এক বেলার 
খোরাক খরচা ছিল তিন আনা । হোটেলে ছিল ছুই আনা। 
অনন্তকুমার খুব না ঠেকিলে, তিন আনা! ব্যয় করিয়া মেসে 
থাইতেন ন1। তাঁহার গায়ে দেখিয়াছি একটা শক্ত কোট । সেই 
একটা কোটই তিনি শীত ও গ্রীষ্মে সমভাবে গায়ে দিতেন। ময়লা 
হইলে নিজে কাটিয়া! লইতেন। সেই কোটেরও গায়ে তালি 


০ 


১৪৬ _. বাংলায় বিপ্লববাদ 


দেখিয়াছি। অত্যধিক পরিশ্রম করিলে মন্িষ এক-আধটু জলখাবার 
খায়। কিন্তু তাহাকে দুই বেলা ভাত খাওয়া ছাড়া আর কিছু খাইতে 
আমরা দেখি নাই। ভবানীপুর হইতে কলিকাত! প্রায়ই হাঁটিয়া 
আসিয়াছেন, মোটর ত স্বপ্রের অতীত, ট্রামেও চড়েন নাই । একবার 
মনে আছে দারুণ গ্রীষ্মে অনেকটা রাস্তা! হাঁটিয়া পার্কের ভিতরে 
আসিয়া একটা ছায়ায় বসিয়াছেন, মুখে ক্লান্তির চিহ্ন সুপরিস্কুট। 
বলিলাম চলুন এ সরবতের দোঁকানে।” পয়সা তিনি যে বায় 
করিবেন না. তাহা জানিতাম। বলিলাম, "পয়সা আমার সঙ্গে আছে, 
চলুন 1” অনন্তকুমার হাসিয়া বলিলেন, “সরবত ছেলেমান্ুষে খার-_ 
আর খায়--যারা নবাব সওকত্জঙ্গ । ভোগ-বিমুখ অনস্তকুম!রকে 
কথনও ত্যাগের বন্ৃতা দিতে শুনি নাই। কিন্কু তীহাঁর সমগ্র 
জীবনটা, জীবনের প্রত্যেকটি খুটিনাটি ব্যাপার ছিল এই ত্যাগ- 
নিষ্ঠায় মণ্ডিত। অথচ কোথাও কোনও আড়ম্বর নাই, কোনও 
অভিনয় নাই ! তিনি কতটা ত্যাগ করিয়া বাইতেছেন তাহা বুঝিবার 
সাধ্য কি? একদিনের দুদিনের পরিচয়ে, কথাবাত্ীয় একটুও পরিচয় 
পাওয়া যাইবে ন|। বলিয়াছি, অনস্তকুমারকে বিশেষভাবে 
সমালেচিকের দৃষ্টি নিয়া লক্ষ্য করিয়াছিলাম--তাই কতকটা 
জানিয়াছি। একবার তাহাকে একটা বাসায় থাকিবার জন্ কয়েকটা 
টাকা! দেওয়৷ হয়--সে টাকা খুবই সামান্য, তাহাতে কোন রকমে 
কায়ক্রেশে চলিতে পারে। কিন্ত আমর! আশ্চর্য হইয়| গেলাম--ভিনি 
এঁ সামান্ট টাকা হইতেও টাঁক! বাঁচাইয়! অন্ত একটি বিপ্নববাদীর 
প্রয়োজনীয় খরচ জুটাইয়াছেন। সহক্কে মেকথা জানা যায় নাই, 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৪৭ 


অনেক দিন পরে তবে সেকথা বাহির হইয়াছে । “তৃণাদপি 
সুনীচেন হরোরপি সহিষ্ণণা। 'অমানিনা মানদেন কীর্তনীয়ঃ সদ! 
হরিঃ।” গৌর-ভক্তদের এই লক্ষণ অনন্তকুমারের মধ্যে যোল- 
আনা দেখিয়াছি । কোন চেষ্টা নাই, অভিনয় নাই, কথা নাই, 
আডড়ম্বর নাই--এ যেন তাহার স্বভাব্ধর্ম্নে পরিণত হইয়াছে । তিনি 
বেন সবার চাইতেই ছোট ) হিমীলয় ও ধরণীর মতই বেন তিনি 
সহিষ--ভকন নাই, ভাবনা নাই, রাগও নাই। অথচ বে পথে পা 
দিাছেন তাহাতে ভয়, ভাবনা ও রাগের কারণ যথেষ্টই আছে । 

কিন্ত প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে ছাঁড়িবে কেন? শরীরের 
উপর এত বড় অত্যাচার, অনিয়ম সহিল না। কাসি দেখা 
দিল। বলা বাহুল্য অনন্তকুমারের কোন 7020102] ৪6912081106 
আসিল নাঁ। একটু একটু কাঁসি বৈত” নয়? কত লোকেই ত” 
কত কাসে! সেই কাসি লইয্লাই অনাহার, অনিদ্রা, পরিশ্রম 
সাধারণ মানষের কল্পনাতীত। 

অনন্তকুমার ফেরারী । পুলিশের নজর এড়াইয়াই তিনি 
চলেন। তবে বহুদিন হইয়া! গিয়াছে এখন অনেকট। নিরাঁপদ। অল্প 
সময়ে বেশী কাজ করা ঘাঁয় বলিয়া আজকালকার কংগ্রেসকন্মীরা 
নোটর ব্যবহার করেন, অনন্তকুমারের এই স্থ-বুদ্ধি তখন জন্মায় 
নাই। যাহা হউক অনন্তকুমার পায়ে হাটিয়াই, সেই কাসি 
বুকে লুকাইয়া দিনের পর দিন কাজ করিয়া যাইতে লাগিলেন। 
যখন হাটার কাজ থাকে না তখন বাসায় বসিয়া ভাঙ্গ। 
রিভলভারটী বাহির করেক্প। কাঁসি বাড়িয়া উঠিল, হাপাঁনির 


১৪৮ ংলায় বিপ্রাববাদ 


অবস্থা । ক্রমেই বন্ধুবান্ধবদের কাছে ধরা পড়িতে লাঁগিল। 
শরীর যে দুর্বল হইতেছে তাঁহাও আর লুকাঁন সম্ভব নহে। 
অনুরোধে, তিরঙ্কারে। শেষে ডাক্তারের কাঁছে গেলেন । যে ডাক্তারের 
সঙ্গে পরিচয় ছিল অর্থাৎ টাঁকা লাগিবে না, সেখানেই গ্রেলেন। 
বন্ধুবান্ধবেরাও নানা কাঁজে থাকে । সব সময় এ নিয়া পীড়াগীড়িও 
করিতে পারে না। সকলের আহার-বিহারেও নিশ্চয়তা নাই। 
যাঁক ভাঁক্তার একটা মিকৃশ্চার দিলেন । দৈনিক চার বার ওুষধ 
খাইতে হইবে। সপ্তাহখানেক মাত্র উষধ খাইয়া একদিন 
ডাক্তারের কাছে গিয়া অনন্তকুমাঁর বাঁললেন, “ডাক্তার বাবু, এমন 
একটা ওষুদ দিন, য|” জল দিয়ে খেতে ন1 হয়, গ্লাসেরও দরকার 
না তয়।, ডাক্তার বুবিলেন, বুঝিয়া একটা পেটেণ্ট ট্যাবলেট 
দিলেন। অনন্তকুমারের স্থবিধা হইল ; ষধ খাওয়ার জন্ত আর 
তাহা বাসায় আসার প্রয়োজন নাউ । রাস্তায় হটিয়াই টাাঁবলেট 
সুখে ফেলা বাঁয়। জলের কল ত রাস্তায়ই আছে। একদিন 
বলিলাম, “ওষুদ থে খাঁন না, মারা যাবেন ত শেষে !? অনন্তকুমার 
অমনি হাসিয়া বলিলেন, “5, মরা গাছের ফল কিনা, একটু 
সর্দিকাঁসি হ'লেই মারা যায আর কি? আর, ওষুদ ত ণিরম 
মৃতই থাই”--বলিয়া পকেট হইতে ট্যাবলেটের শিশি বাহির 
করিয়। দেখাইলেন । অবাক হইলাম । বলিলাম, “ডাক্তার বলে 
নাই £55 নিতে? অনস্তকুমার বলিলেন, 'ডাঁক্তীররা ত 
কতই বলে, না বললে কি ওদের বাবসা চলে! হাপানি 
ক্রমেই বাঁড়িল, কাঁসির সঙ্গে রক্তও দেখা দিল | বন্ধু-বান্ধবেরা 


বিপ্লীববাদীর পরিচয় ১৪৯ 


ঠিক করিলেন, তীঁহাকে মরিতে দেওয়া হইবে না, জোর করিয়া 
চিকিৎসা চালাইতে হইবে । বিপ্রববাদীদের হুকুম হইল,-_তাহার 
হাটাহাঁটি বন্ধ করিতে হইবে, ঁষধ খাইতে হইবে, ল- বাবুর 
তত্বাবধানে তাহাকে থাকিতে হইবে। শিশুকে মানুষ যে রকম 
শাসন করে অনন্তকুমারের উপর তেমনই শাসন চলিত। 
অনন্তকুমারের জন্য ছুগ্ধের বন্দোবস্ত হইল। ওষধ পথ্য কতকটা! 
নিয়মিত হইল, শুশ্রবার জন্ত লোক নিধুভ্, হইল। অনন্তকুমার 
নিরুপায় হইয়া বলিলেন,-_-£কেবল অপব্যয় 1” 

কলিকাতায় রোগের কিছুই হইল না, ডাক্তার বায়ু পরিবর্তন 
করিতে বলিলেন। হাঁওড়ায় গাড়ীতে ওঠা গেল-_-বলা বাহুল্য, 
থার্ড ক্লাসে। গাড়ীতেই দুইবার ফিট উঠে। একটু একটু 
চোখ বুজিয়৷ থাকেন; কিন্তু বিন্দুমাতরও হা-হতাঁশ নাই। চেঞ্জ 
গিয়া গষধধ পথ্যের যথা সম্ভব স্ুুবন্দোবস্ত হইল। অনন্তকুমার 
বলিলেন, “আপনারা যে কি করিতেছেন, 9:221775807 টাকার 
অভাবে 50007 করিতেছে, নষ্ট হইতেছে, এখানে আমার জন্য এত 
ব্যর। 9£9771580100এর শ্বাথের দিক দিয়া এট! অন্থায় !? কিন্ত 
ল-- বাবু এ বিষয়ে শক্ত । অনস্তকুমারকে খোলাখুলিই বলিলেন; 
'আপনার এ বিষয়ে কোন মতামত দিবার প্রয়োজন নাই । ল-- 
বাবু চলিয়া! আসিলেন। যাঁহারা রহিল তাহারা কতকটা ছেলে- 
মান্নষ, তাহাদিগকে অনন্তকুমীর বলিলেন, “সমুদ্র পারে অমনি 
মানুষ ভাল হয়, অত দুধের দরকার নাই"__ছুধের পরিমাণ কমিল 
এদকে কোন চেষ্টাই সফঈ হইল না, রোগ বাড়িতেই লাগিল। 


১৫০ ংলায় বিপ্লববাদ 


যক্মার পরিণামে তিনি ক্রমেই দুর্বল হইতে লাগিলেন। কাঁসির 
ফিট যখন উঠিত তখন সেই নীরব-কন্তীর দিকে চাহিয়া থাঁকা 
বস্ততই শক্ত হইত। ফিট থামিলেই একটু হাসিয়া ফেলিতেন। 
যেন কিছুই হয় নাই। 

আবার কলিকাতায় আনা হইল, চিকিৎসার চেষ্টা চলিল। 
এখানে অনন্তকুমারকে তিলে তিলে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি+_- 
দেখিয়। মনে হইয়াছে এই সমাহিত জীবন, এই স্থৈ্য-- এই 
অমান্তষিক সহিষ্ণুতা, এই ত্যাগ--কোথা হইতে আসিল ? কোনও 
দিন সাধন-ভজন করিতে দেখি নাই । কিন্ত নিষ্ষাম কর্মের ভিতর 
দিয়া যে অনন্তকুমাঁর স্বভাবতই এই অনাড়ঙ্থর জীবন লাভ 
করিয়াছিলেন উহাতে সন্দেহ কি? 

মান্নষ অনেক দিন রোগে ভুগিলে খিটখিটে হয়; আজ 
রান্নাটা খারাপ হইয়াছে, “খাইতে পারি না,-সময়মত পথ্যটা না 
পাইলে রোগী বিরক্তও ত হয়। কিন্তু এই থে নিদারুণ ব্যাধি, 
অসহনীয় হাঁপানি ও কাপির যন্ত্রণা, তবু কিন্তু অনস্তকুমার পাথরের 
মত অবিচলিত। একদিনও শুনি নাই, এট! খাইতে ইচ্ছা করে 
বা করে না) একদিনও বলেন নাই, ক্ষুধা পাইয়াছে, খাইতে দাঁও। 
বাড়ীঘর নহে--ঠাকুর চাঁকরও নাই। অনভ্যন্ত বিপ্লববাদী কেহ 
রাম্মা করিতেছে-_ডালের সঙ্গে জল মিশে নাই, কোন দিন হয়ত 
থুবই বিলম্ব হইয়া গেল। কিন্তু রোগীর বিরক্তি নাই--এদিকে 
যেন তাহার খেয়ালই নাই। একদিন অত্যন্ত দেরী হুইয়! গিয়াছে। 
প্রায় একটা বাজে। অনস্তকুমার থারইঁতে বসিবেন? কিন্তু কেমন 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৫১ 


করিল্পা সেদিন ভাঁতি গুলি সব নষ্ট হইয়া গেল। আঁবাঁর ভাতি 
বসিল। সেবারত যুবক দুঃখ করিয়া বলিল, বড় দেরী হইয়া গেল। 
-__অনস্তকুমাঁরের কিন্তু একটুও বিরক্তি নাই, চাঁঞ্চল্য নাই । তিনি 
যে রক্তমাংসের মাজ্ষ, তাহার যে ক্ষুধা আছে, তৃষ্ণ আছে, তাহার 
পরিচয় পীওয়া যাইত না। অনন্তকুমার হাসিয়াই রহস্য করিয়া 
বলিলেন, “র'ীধতে সয় বাঁড়তে সয় না! আর এক ঘণ্টায় সব হবে, 
তোমার বুঝি খুব খিদে লেগেছে?” যুবক আর বলিবে কি?- 
কেবল চরিয্রমাধুর্যে আকষ্ট হয়। মানুষের রোগ হইলে, কেহ যদি 
বাতাস করে, মাথায় হাত বুলায়, ভাল লাগে। অনন্তকুমারের 
সেই ব্যসনও ছিল না । অনবরত কাসি; কাসির পর, রক্ত 
একটু পড়িল। সেই ফিটের পরে ভয়ানক ক্লাত্তও হইতেন ; কিন্তু 
একদিনও বলেন নাই, একটু বাতাস কর। এই যে ফিট 
৷ উঠিতেছে, তবু একথা কখনও বলেন নাই, আমার কাছে 
একজন থাক। বরং কোন কাজ থাঁকিলে বলিয়াছেন, “আমার 
ক্রাছে থাকার কি দরকার, ওকেই তব ও-কাজে পাঠান যায়। 
কদিন অনন্তকুমীর, যে যুবকটি বান্না করে তাহাকে কৌঁথায় 
ঠাঠাইয় তাহার একটি ছোট বাক্স আনাইয়াছেন, তাহাতে ছোট- 
ধূট কয়েকটি যন্ত্র থাঁকিত। দুপুরে যখন কেহই থাকিত ন! তথন 
অস্তকুমার যে পিস্তলটী মেরামত করিলে কাজ চলে, তাহাই 
মোম করিতে লাগিয়া যাঁইতেন। অনস্তকুমার জাঁনিতেন যে, 
ল- বাবু প্রভৃতি এই দুর্বল শরীরে তীহার এ কাঁজে বাঁধা দিবেন, 
টি করিতে দিবেন না। তাঁই ছেলেটাকে বলিয়৷ এ সমস্ত 


১৫২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


লুকাইয়৷ আঁনাইয়াছেন, দুপুরটা এই কাঁজ করিয়াই কাট+ন। 
একদিন ধরা পড়িলেন। আর একদিন আমর! আসিতেছি, দেখি 
আমহাষ্ট স্্রাটে একটা গাছের কাছে অনন্তকুমার বুকে হাত দিয়া 
বসিয়া আছেন। দেখিয়া শঙ্কিত হইলাম, ব্যাপার কি? জেরা করিয়া! 
জানা গেল--আজ পার্কে একজন বিপ্লববাদীর আসার কথা ছিল, 
তাহাকে বাসায় নেওয়ার উপায় নাই, অন্য কাহারও দ্বারা কাজটা 
হইবে না,তাই অনন্তকুমার সন্ধ্যায় একা হীঁটিয়া পার্কে আঁসিয়াছেন। 
বাসা হইতে একেবারে সবটা আসিতে পারেন না, ক্লান্ত হইয়া 
পড়েন। পার্ক হইতে ফিরিবার সময় ( তখন রাত্রি) কাঁসির 
ফিট উঠিয়াছে, আর চলিতে 'পারেন না-_-তাই, গাছতলায় বুকে 
হাত দিয়া বসিয়! পড়িয়াছেন। গ্রালাগালি করা হইল, ল-_ বীবু 
বলিলেন, “আপনাকে নিয়া আর উপাঁর নাই । একেবারে ছেলে- 
মানুষ !”-অনন্তকুমার আস্তে আপ্তে বলিলেন, “আপনারাও ছেলে- 
মানষ- এতে কি রোগ সারে? রোগ অমনি সারে ।-আর 
একদিনকার কথা বলি। একজন বাড়ী-ঘর ছাড়া ফেরারীর মা 
ছেলেকে কিছু টাঁকা পাঠাইয়া দিয়াছেন । মা জানেন যে ছেলের 
খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট। তাই টাকা দিয়া বলিয়াছেন «এ টাঁক' 
আমার নিজের, একদিন একটু ভাঁল করিরা খাওয়া-দাওয়া করিও ' 

উক্ত ফেরারী বিপ্লববাদী কলিকাতায় থিয়েটার দেখে নাই। 
সেদিন কি কথায় ঠিক হইল-_মা থে টাঁকা দিয়াছেন তাহা হইত 
কয়েক টাঁকা ব্যয় করিয়া থিয়েটার দেখা হইবে--আরও তিনান 
বাইবে। বাঁওয়া হইল। অনস্তকুমীর সে খ্ুবর পরের দিন পাঁনা- 


বিপ্লববাদীর পরিচয় ১৫৩ 


ছিলেন। অনন্তকুমারের কাছে যাইতেই বলিলেন, “কি, বাবুদের 
থিয়েটার দেখা আরম্ত হয়েছে ? কতকটা কৈফিয়তের মত আমরা 
বলিলাম, “-- বাবুর মায়ের দেওয়া টাক হইতেই ব্যয় করিয়াছি ।, 
অনন্তকুমার তেমনি ভাঁবেই বলিলেন, “মায়ের দেওয়া টাক! হলেই 
তা অপব্যয় করা! যাঁয় না। মায়ের দেওয়া টাকা! আরও অন্যভাবে 
ব্যয়করা ষেত।, এই একৈকনিষ্ঠ বীর ভক্তের কাছে সকলেই 
সেদিন লজ্জিত হইয়াছিলাম। 

এমনই যখন তাহার শরীরের অবস্থা তখন কলিকাতায় ও 
ঢাকীয়। ১৯১৪ সালের শেষভাগে, গ্রধান প্রধান বিপ্রববাদীরা ধৃত 
হইয়াছেন। অনস্তকুমীর & শরীর নিয়াই থাটিতে আরন্ত করিলেন । 
ছেলেগুলিকে ভরস! দিতে লাঁগিলেন। গুরুতর কাঁজে হাতি দিতে 
অগ্রসর হইলেন । এমনই অবস্থায় একদিন গঙ্গার ঘাটে পুলিশ 
তাহাকে ধরিয়া ফেলিল। 
. অনন্তকুমাধ্ধ কেমন ধারার মাষ+ আমরা বলিতে চাহি না-_ 
তবে যে সাধনায় মানুষ সমাহিত হয়, আত্মস্থ হয়, আত্মীরাঁম হয়ঃ 
তপ্ত হয়ঃ যাহার সন্ধান পাইলে মান্ধষের ভোগের স্পৃহা থাকে 
ন» রাঁগ দ্বেষ থাকে না, লোভ নিঃশেষ হইয়া যায়, সে সাধন! 
ইত তাহার ছিল। তবে কখন কোনও সাধনা করিতে তাহাকে 
দেখি নাই। তাঁহাকে দেশের লোকে ডাঁকাঁত বলিয়! জানে, 
বড় জৌর, বিপ্রববাঁদী বলিয়াই জানে। 

বিপ্রববাদীর পন্থা নিয়া তর্ক উঠিবে, কিন্তু বিপ্লববাঁদীর খাঁটা 
দেশপ্রেম যে তাহাকে মানুষ হিসাবে কি করিয়াছে, তাহা বুঝিলেই 


১৫৪ ংলায় বিগ্রববাদ 


বুঝিবঃ ভগবংপ্রেম, দেশপ্রেম কোনটাই সোজা নহে, তখন ভক্তেরই 
খাঁটি কথা মনে হইবে-- 
“ীরিতি গীরিতি সব জন কহে, 
গীরিতি মুখের কথা ?, 
আদর্শে প্রেমাম্পদে কতথানি নিষ্ঠা থাকিলে, এই গীরিভি 
সম্ভব হয়, কতখানি আত্মবিস্জনে এই প্রীতির পরিচয় মিলে, 
আমরা জানি না--সে গ্রীতি আমাদের নাই ! 


বিংশ পরিচ্ছেদ 
আগুনের খেল? 


১৯১৪ সালের শেষ ভাগ হইতেই বাংলার বিপ্লববাঁদীর৷ আশু সশস্ত্র 
বিদ্রোহের কল্পনা করিয়া নৃতন শক্তিতে কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়। 
যন্ধ তখন বাঁধিয়া উঠিয়াছে। বিপ্রববাদীরা সত্যই নানা আশায় 
উৎফুল্ল হইয়া উঠিল । চারিদ্দিকেই বিপ্রবের যোগাড়বন্ত্র চলিতে 
লাগিল। বিভিন্ন দলের একত্র হইয়া কাঁজ করিবার প্রস্তাব উঠিল । 
পরলোকগত বতীন্দ্রনাথ মুখাজ্জীর নেতৃত্বাধীনে অনুশীলন ব্যতীত 
( চন্দননগর ও কাশীর দল অন্ুনীলনের সঙ্গে পূর্ব হইতেই যুক্ত 
. ছিল এখনও যুক্তই রহিল ) বাংলার অন্যান্ত খগ্ডশক্তি তখনকার 
মত সম্মিলিত হইল। বাঙালীর স্বভাঁবেই হউক বা যে জন্তই 
হউক, সমগ্র বাংলার বিপ্লববাঁদীরা এক হইতে পাঁরে নাই । ও 
যাহ। হউক বিপ্রববাদীরা আর এক পা অগ্রসর হইয়া গেল। 
একটা! কিছু করিতে পারিবে, এই ভরসাঁয় তাহারা এখন কতকটা 
প্রতিদবন্িতীয় ঈ্ীড়াইতে উদ্যত হইল। ধরিতে আসিলে শুধু ধরাই দ্দিত 
না, স্থানে স্থানে এক-আধটুকু খগ্ডযুদ্ধের অভিনয়ও হইতে লাগিল। 
এদিকে বজবজে কোঁমাগাটা মারুর যাত্রীরা নামিয়া দাঙ্গা- 
হী্দামা করিল। পাঞ্জাধেও এ সময় অশান্তির শিখা জল্‌ জল্‌ 


১৫৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


করিয়৷ উঠিতেছিল । সমগ্র ভাঁরতব্যাপী বিদ্রোহ ঘোষণার চেষ্টা 
চলিল। বিদেশস্থ বিপ্রববাদীরাঁও সজ্জিত হইতে লাগিল । ইংরাঁজ 
এখন নানাদিকে ব্যতিব্যস্ত । ভারতের সৈম্ভবল অনেক কমিয়াছে 
এখন একটা চেষ্টা করিতেই হইবে। বিপ্লববাদীরা স্থুঘোগের 
অপেক্ষায় রহিল। বিদেশ হইতে অস্ত্রশস্ত্র আমদাঁনীর চেষ্টা চলিল। 
বিদেশস্থ বিপ্লববাদীরা কেহ কেহ ভারতের দিকে রওনা হইল । 
জাম্মীণীর জাহাজ অস্ত্র বহন করিয়া বঙ্গাপসাঁগরের মুখে পৌছায়! 
দিবে বন্দোবস্ত হইল । বাংলার বিপ্রববাদী যতীন্দ্রনাথের সহকর্মী 
নরেন ভট্টাচার্য (মার্টিন) ভারতের বাহিরে আপিয়৷ জান্মীণীর 
সহায়তা গ্রহণ করিতে লাঁগিলেন। অস্ত্র বোঝাই জাহাজ গ্রহণ 
করিবার স্থান নিদ্দি্ট হইল। বিএ্রববাদীরা নৌকা লইয়া গ্রস্থত 
থাকিল। নিন্দিষ্ট 1145 জাহাজ আসিল না। শ্যামরাজ্যের 
জান্মীণ কন্সাল খবর পাঠাইলেন, অস্ত্র ও টাঁকা ভিন্ন নোকায় 
রায়মঙ্গলের দিকে আসিতেছে । ১৯১৫ সালের জুন মাস হইতে 
আগষ্ট মাসের মধ্যে [761951101এর কাছ হইতে কলিকাতার 
বিপ্রববাদীদের কাছে ৪৩১০০*২ টাঁকাঁর মণিঅর্ডার আসে-_কি 
হরি এণ্ড সন্স্‌ (17917) & 5075) এর হাতে ৩৩১০০০৭ টাক! 
পৌছিবার পর সরকার তাহা টের পনি। 

পূর্বেই নির্দিষ্ট হইয়াছিল, অস্ত্রগুলি তিন ভাগ করিয়া হা'তরা 
(সন্দিপ), বালেশ্বর ও কলিকাতায় গ্রহণ করা হইবে । কিন্তু সব 
চেষ্টাই ব্যর্থ হইল । ১৯১৫ সালের জুলাই মাঁসে গবর্ণমেণ্ট সমস্ত 
খবরই পাইলেন-_হৃতরাং প্রতিকারের ঝঠবস্থাও সঙ্গে সঙ্গেই হইল। 


আগুনের খেলা ১৫৭ 


77257 জাহাজ হইতে কোনও প্রকারে নরেন ওরফে মার্টিন 
আমেরিকায় পলাইয়া গেলেন। সেখানে যুক্ত রাষ্ট্রের গবর্ণমেণ্ট 
তাহাকে ধৃত করিলেন ! হাতিয়াতে যে জাহাজে অস্ত্র লইয় 
আসার কথা ছিল, তাহার জন্তও একজন বাঙালীর দরকার । 
সেজন্য একজন প্রেরিতও হইল । সে অতি কষ্টে সাংহাই গিয়া 
পৌছিল বটে, কিন্তু সেইথানেই গ্রেপ্তার হইল। এই জার্মাণ 
ষড়যন্ত্র সম্পর্কেই গোর়াতে (00৪ ) ছুইভন বাঙালী ধৃত হয়। 
তন্মধ্যে ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় পুনা জেলে ১৯১৬ সালের 
জানুয়ারী মাসে আত্মহত্যা করে। 

১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বালেশ্বরে পুলিশের নজর পড়ে । 
সেখানে তল্লাস চলিল । [01015:98] 12100007140এ তল্লাস 
করিয়া পুলিশ আশে পাশে খোঁজ আরন্ত করিল। ফলে ময়ুরভঞ্জ 
রাজ্যের সানিধ্যে জঙ্গলের মধ্যে পাঁচজন বাঙালী বিপ্লববাদীর সাক্ষাৎ 
মিলিল। তাহাদের ধরা কিন্তু খুবই সহজ হয় নাই। ম্যাজিষ্ট্রেট 
তাহাদের ধরিতে সদলবলে অগ্রসর হইলেন। অনুসরণকারীদের 
হাত এড়াইবার উপাঁয় নাই দেখিয়া! বিপ্রববাদীরা কয়জনই ঈন্্ 
কুখিয়া ফ্াড়াইল। একটি খণডযুদ্ধ হইয়া গেল। 

১০$61017.  00120710665  লিখিতেছেন-40055 1050 
[11190 0179 51117561200 ০910960 207011097 800 
50103500910 660 01900. 2) 26501720810 1010) 
৮৫5 150 05 (0৩ 10891902601 1351955010, 3182 19901 


90015 208) 185 টা 2 ড৪11700%17 165010600815 


১৫৮ ংলায় বিগ্ববাদ 


01710910175 9 1২97 525 10000 10 009 1$11505 ৮1711 
01207 00505116620 21710901061 15৮01100029 
%/519 00110 ৮০০10001901 01650. 0 1015 ৬/0130১ 
৪:09% 99 18667 ০00727১0005 216 2150 
০৪0000190 

ইহার পর হইতে বিধববাঁদীদের ধরিতে গেলে, তাহারা ও 
গুলি চালাইয়াছে। অনেকে পিস্তল লইরা প্রস্তুত হইয়াই থাঁকিত। 
ঢাকার কল্তাবাজারে একটি খগুযুদ্ধ হইল! ধরা না দ্ির়া, 
ঘতক্ষণ সাধ্য গুলি চালাইয়া পরে পুলিশের গুলিতেই প্রাণ 
ত্যাগ করিল। শালকিয়ায়ও গোলাগুলি চলিয়াছিল» বসিয়া ধরা 
দেয় নাই। স্থানে স্থানে এই প্রকারে পুলিশ ও বিপ্লববাদীরা 
জখন হুইতে লাঁগিল। ফেরারীকে পলাইতে দেখিলে, পুলিশ গুলি 
করিতে কন্থুর করিত না । 

শেব দিক দিয়া বিপ্লববাদীরা, থে রকম স্বল্প সংখ্যায় লোক ও 
ছুই চারটা! পিস্তল লইয়! পুলিশের সঙ্গে লড়িয়াছে, গুলির 'আাঘাত 
াহস।ছেঃ মরিয়াছে, মারিয়াছে তাহাতে মনে হয় দেশে যথে? 
অস্ত্রশস্ত্র থাকিলে, তাহারা যে গরিলা বুদ্ধের অভিনয় করিত 
তাহা কি সাহসের দিক দিয়া, কি কৌশলের দিক দিয়া কণ 
বিপজ্জনক হইত না। 

যাহা! হউক, জান্মাণীর সাহায্যে বিপ্লবের চেষ্টা ব্যর্থ হইল। 
ইহার কর মাস পূর্বেই অন্য ভাবেও্বিপ্নববাদীরা ভাঁরতব্যাপী 
বিদ্রোহ ঘোষণার চেষ্টা করিয়াছিল। * বিপ্লববাদীদের ছুই পথ 


আগুনের খেলা ১৫৯ 


ছিল, এক বিদেশের সাহায্যে, আর এক দেশীয় সৈন্যদের হাতি 
করিয়া সশস্ত্র বিদ্রোহ করা । দেশীয় সৈম্তের মধ্যেও চেষ্টা চলিল। 
চন্দননগরের রাঁসবিহারী বন্থু পাঞ্জাবে কাজ করিতেছিলেন। 
অনুশীলন সমিতি চন্দননগরের দল তথ রাসবিহারীর সঙ্গে পূর্ব্রেই 
'যুদ্ত ছিল। ১৯১৫ সালের প্রথম ভাগেই সৈন্য বিগড়াইবার কাজে 
ইহারা মন দ্িল। বাঁঙালী যুবক সে উদ্দেশ্টে নানি! স্থানে প্রেরিত 
হইল। উত্তর ভারতে নান! স্থানে ইহার! কাজ করিতে লাগিল । 
এদিকে আমেরিকা হইতে মহারাষ্থ্ীয় যুবক পিংলে ভারতে আসিল। 
রাসবিহারীর সঙ্গে মিলিতে তাহার বিলম্ব হইল না। পিংলে 
জাঁনাইল যে, চাঁর হাজার শিখ আমেরিক হইতে বিদ্রোহের জন্য 
ভারতে আসিয়াছে । বিশ সহম্্র সেখানে প্রস্তুত হইয়া আছে, 
ভারতে বিদ্রোহ ঘোষণা হইলেই তাহারা আসিবে। 

সশস্ত্র বিদ্রোহের দিন, ১৯১৫ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী 
নি্িই হইল। সৈন্য হাত কবিবার কাজ তখনকার মত 
 ইাসিল হইল। দেশীয় শিখ সৈম্ত অনেকেই ্রদ্দিন বিপ্লবে যোগ 
দিতে সম্মত হইল। কেল্লায় কেল্লায় ঘুরিয়া ঘুরিয়!৫৪তাদেন” 
বুঝাইল। বাঙালী যুবকেরা, মহারাষ্্ীয় পিংলে প্রভৃতি ও পাঞ্জাবের 
বিপ্লববাদীরা সৈন্যদলে সঙ্গোপনে কাজ করিতে লাঁগিল। দিন 
ক্ষণের সংবাদ শুনিয়া বাংলার বিপ্লবদলের যুবকেরা উৎসাহিত 
হইয়। উঠিল। একদিকে সৈন্টেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করিবে, আর 
এক দিকে ছোট-থাট ট্রেজানু্টিহইতে টাকা ও রাইফেল, বাঁডালীর 
ছেলেরা লুটিয়৷ লইবে সান্যুস্ত হইল। বাংলার স্থানে স্থানে দেই 


১৬০ বাংলায় ধিপ্লববাদ 


সম্ভীবিত দিনের উদ্দেশ্যে পোষাকও তৈরী হইয়া! গেল। কিন্তু 
লাহোর হইতে নির্দিষ্ট একুশে তারিখ পরিবর্তন করিতে বলা 
হইল। কারণ এ তারিখ সরকার টের পাইয়াছেন বলিয়া 
তাহাদের সন্দেহ ছিল। সুতরাং তারিখ বদলাইল। কিন্ত 
ইতিমধ্যে সরকারও . অনেক খবর পাইলেন | চ2) [10017 
0৪%2175র মধ্যে মিরাটের কেল্লায় এক বাক্স বোৌম! সমেত পিংলে 
ধৃত তইল। বাঁক্সে যে দশটি বোমা ছিল, সরকারের মতে 
তাঁভাই ০5801217660 20110711865 1517 21155100600 1 
পিংলে ফাসিকাষ্চে প্রাণত্যাঁগ করিল। বিগ্রববাদীদের একজন 
সহাঁরকের বিশ্বীসঘাতকতীায় সে আয়োজন শুপু পণ্ডই হইল 
না, অনেক সৈম্ত ও অনেক বিপ্রববাদী গ্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হইল । 
পাঁঞজারের বহু শিখ সৈম্ত ধৃত হইল । এই প্রচেষ্টা গোড়ীয় পণ না 
হইলে, ইংরাঁজ সরকারকে যে বেশ একটু বেগ পাইতে হইত ইহাতে 
সন্দেহ নাই । শেষ পধ্যন্ত বিপ্রববাদীরা! জয়ী হইত না নিশ্চয়, 
তবে এ ব্যাপারে একটা খগডপ্রলয় হয়ত দেশে হইত । ভগবান বাহা 
ধরেই । তীহার ইচ্ছার এই ব্যর্থতার মধ্যে দ্েশবাঁপী অনেক 
শিক্ষা পাইয়াছে। আর ইংরাঁজ সরকারকে হয়ত এই কথাটা 
বিশেষ করিয়! ভাঁবিতে .হইয়াছে যে, যে দৈন্ের ভরসা তাহারা 
অনেকখানি করেন-_তাহাঁদের “প্বিগড়াইয়া' দেওয়া খুব অসম্ভব 
নহে। ঘাহাঁরা লাট ও জঙগীলাটের কাঁবে থাকিতে আইনত 
বাধ্য তাহার! নিঃস্ব বিগ্রববার্দীদের কথা, সাময়িক ভাবে হইলেও 
গুনে কেন? র্‌ 


আগুনের খেলা ১৬৬ 


রাঁসবিহীরী শেষ আশা নিশ্শুল হইলে দেশত্যাগ করিয়া 
যান। 5০0101) 00001016055 লিখিতেছেন-_-ঢ৪912 13615911 
166 005 ০০205 51667 5 ডা8110061515৬ ৬7 ৪ 15৬7 
0115 73608155 015010165 2 02101702510 006 ০001755 
0 %/10101 15 1700100650 0020 01090106৮25 20109 00 
550106 1061157 200 ৮001912000০ 0201: 001 ০ 
2815, 215৮ 66১ 0৮৮০9150090 ০0176107015 
01521712200 270 01500006070 520101085 11280015 
00011775 1015 20561706. 0106এ 032 16905151011) ০? 
58017012270 25500195101) 1025655 250155 31115. 
13200) 0£ 175950%13020215 2 56051217 2550019065 01 
১০ 708000, £0051277. 520016 00956 0906 20109215 
1) 18016 0০০0৮ 051977217 €০ 40221 ট015511595& 
86002112956 ৪9117520007,” রাঁসবিহারী কাশীর 
শচীন ও অনুশীলনের গিরিজা বাবুর হাতে তখনকার 
অর্পণ ক্রিয়া জাপান চলিয়! যাঁম। পুলিশ বহু করিয়াও 
তাহাকে ধরিতে পারে নাই। 

১৯১৪-১৫ সালের ছুই রকম চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। বিপ্রববাঁদীব! 
ইহার পরেও ১৯১৭ সাল পধ্যস্ত দল পুষ্ট করিতে ও রক্ষা 
করিতে চেষ্টা করিয়াছে। সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্টা তথন আর 
ছিল না। যাহারা ফেরারী হইয়াছিল, তাহারা বনে জঙ্গলে, 


এখানে সেখানে ঘুৰিয়া ক্কিরিতে লাগিল। তাহাদের রক্ষার জন্ত 
টি) 


১৬২ ংলায় বিপ্লববাদ 


অবশিষ্ট বিপ্রববাঁ, 1 তখনও চেষ্টা চ।লাইতে লাগিল। তাহাদের 
সংগৃহীত অর্থ ও নানা সহায়তা ছিল বলিয়াই সরকারের চেষ্টাকে 
ব্যর্থ করিয়াও ফেরারীরা অনেক কাল আত্মগোপন করিতে সক্ষম 
ইয়াছিল। 


বিরতি চ্ষ্ণ 


51101) 50 খত 05 1719 8511 
25 ৮0৮৭0 1055601155, 217252 তাত 
[ও হা কেেত, 80190 এত য় 5515 
হাত ৭৩ এমনে ০07510111যখ' 17004. 
ঠা হও, 


০ 143 


একবিংশ পরিচ্ছেদ 
বৈদেশিক অংশ 


বাংলার বিপ্ববাদীদের কর্মগ্রচেষ্টার একটা অংশ আমাদের বেশে 
গোপনই আছে; অবশ্য সে অংশের সকলখাঁনি কথাই ভারত- 
গবর্ণমেন্ট জানেন। বিদেশের সেই চেষ্টার পরিচয় সংক্ষেপে দিলাম। 

মাণিকতলা বোমীর মামলার চাঁর বহ্সর মধ্যেই অর্থাৎ৯১০ 
সালেই বাংলার বিপ্ববাদীরা বিশেষরূপে ভাবিতে লাগিল ফুরামার 
দ্বারা আর ঘাহা হউক না| কেন দেশকে সম্পূর্ণরূপে দের 
কবল হইতে মুক্ত কর! সম্ভবপর হইবে না। ন্বাবীনতা লাভ করিতে 
হইলে তাহার জন্ত লোকবল ও বর্তমান যুদ্ধের উপকরণ বিশেষ 
দরকার। তাহারা আরও ভাবিল যে এই সমন্তের জন্ত টাকার 
দরকার। বদিও টাকা ডাকাতি দ্বারা সংগৃহীত হই কিন্ত 
তাহা সামান্ঠ । অধিকন্ত এই ডাকাতি প্রভৃতির জন্য ধিপ্লববাদীদের 
উপর দেশের লোকের একটা! বিজাতীয় স্বণা ফুটিয়া উঠিতেছিল। 
তাহারা! বেশ বুঝিয়াছিল যে দেশবামীর সহিত তাহাদের এই 
বিচ্ছেদে ” ।নতার প্রধান অন্তরীয়। এট /র কারণে তাহার 
ইংরাঁজব্,রাধী বিদেশীয় অন্ান্তা জাতির নিকট হইতে সাহাধ্য 
পাওয়া সম্ভবপর কিনা ত্ঁহার জন্য সচেষ্ট হয়। 


১৬৪ বাংলায় বিপ্লবৰবাদ 


জনকয় বিপ্লববাঁদী বিপ্লবের জন্য টাঁকা, যুদ্ধের উপকরণ 
এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা লাঁভের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন 
করেন। তন্মধ্যে স্বরেন্্রনাথ কর ও অবনী মুখার্জি প্রস্ততি 
ছিলেন। ইহাই বিপ্রবসংগ্রামে এক নূতন (ডিপ্লোম্যাটিক ) যুগের 
সুচনা করিল । অবশ্য ইহাদের আগে মাঁভাম কামা, তাঁরকনাথ 
দাস প্রভৃতি ভারতের স্বাধীনতার কথা চারিদিকে প্রচাঁর 
করিতেছিলেন কিন্তু তাহারা ভাঁরতের স্বাধীনতার সহিত 
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেধরূপে স্থাপন করিবার চেষ্টা করেন নাই। 

“জগতের জাঁতিসমূহের মধ্যে ভাঁরতেরও একটা স্থান ও কণ্টব্য 
আছে । তাই তাহার স্বাধীনতা অপন্ধত হওয়ায় জাগতিক 
ব্যাপারের উন্নতির পক্ষে সে বিদ্বন্বক্ূপ হইয়া ফীড়াইয়াছে 1৮ এই 
কথাটা বুঝাইতে, বিদেশের স্বার্থবুদ্ধিকে জাগ্রত করিতে বিপ্লববাদীরা 
চেষ্টা করিল। 

আমেরিকায় পৌছিরা শ্রীধুক্ত করের ঘুখ্য কর্তবা হইল 
তথাকার জনসাধারণের মধ ভারতের কথা প্রচার এবং গগদর, 
সমিতি্ষশ্গহিত 'হাতে হেভেড়ে কাঁজ করা। বিগত মভাবুদ্দের সময় 
বখন প্রেসিডেন্ট উইল্‌্সন “চোদ দফা সর্ডভের সৃষ্টি করেন সেই 
সময় এই “করই তাহার মধ্যে ভারতের স্বাধীনতার দাবীর উল্লেথ 
করিবার জন্য প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করিয়! লিখিয়াছিলেন। তাহার 
চেষ্টায়ই “গদর সমিতি ভারতে বিপ্রবসাঁধনের জন্ত তিন লক্ষেরও 
অধিক টাকা এবং বু লোক পাঠাইতে পারিয়াছিল। অপর 
দিকে ১৯১১ খুষ্টান্দে মরকোতে অশান্তির আগুন (20944 


বৈদেশিক অংশ ১৬৫ 


বাপার ) লক্ষ্য করিয়) এবং জান্মীণীর সহিত ইংরাঁজ ও ফরাসীর 
যুদ্ধের যথেষ্ট সম্ভাবনা! আছে মনে করিয়! অবনী মুখার্জি বিদ্যার্থীরূপে 
বালিনে চলিয়া বান--উদ্দেশ্য ভারতে বিপ্রবের জন্য এই ঘটনীচক্রের 
সুযোগ গ্রহণ। তথায় উপস্থিত হইয়। তিনি জার্্মাণীর বয়াল 
হাউসের তদানীন্তন 0072.070611810 00016 ড০০ ৬০৫০র 
সহিত পরিচিত হন এবং জান্মীণ গবর্ণমে্টের উপর প্রভাব 
বিস্তার করিয়। ভারতীয় বিপ্রববাদীদের জন্ত অর্থ ও অন্তান্ 
উপৃকরণ সংগ্রহের জন্য সচেষ্ট হন। কিন্তু ইনম্পিরিয়ালিজ্মের 
প্রকৃতি--তা সে জার্মাণ, ফরাসী, ইংরাজ, মাঁকিণ জাপান যে 
কোঁন জাঁতিরই হউক না কেন, চাঁর অন্য ইনম্পিরিয়াপিজমকে 
বিতাড়িত করিয়! নিজের প্রতিষ্ঠা । কোন পতিত জাতির স্বাধীনতার 
সংগ্রামে তাহার! মাথা ঘামাইতে চাঁয় না। সুতরাং এক্ষেত্রে ভারতে 
জান্মীণীর অধিকার বিস্তারের কোন সম্ভাবনা নাই জানিয়। 
জান্মীণ গবর্ণমেন্ট মুখীজ্জীর কথায় কর্ণপাত করিলেন না। 
আঁধকন্ত যে জার্মানী ইংরাঁজের ভয়ানক শত্ররূপেই পরিচিত সে 
মুখার্জীকে বিজ্রপ করিতেও ছাড়িল না এবং খ্্রবশেষে তাহাকে 
দেশ হইতে বহিষ্কার করিয়া! দিল। এইরূপে বাংলার বিপ্লববাদের 
ডিপ্রোম্যাটিক* যুগের প্রথম অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিল। 

তার পর আসিল ১৯১৪ খুষ্টাব্বের ইউরোপীয় মহাঁসমর। 
ইহার প্রারস্তভাগে কতিপয় বাঙালী বিপ্লববাদী স্বামী বিবেকানন্দের 
কনিষ্ঠ সহোদর, বুগান্তরের প্রথম সম্পাদক শ্রীযুক্ত ভূপেন্্রনাথ 
দত্তের নেতৃত্বাধীনে বাঁলিনে ছিলেন। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রীয় মুক্তির 


১৬৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


জন্য ভূপেন্্রনীথ, অবনী প্রভৃতি বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়ত। 
উপলব্ধি করিয়া যুদ্ধ ঘোষিত হইবার সঙ্গে সঙ্গেই জার্ীণ 
গবর্ণমেণ্টের দ্বারস্থ হইলেন। কিন্তু জান্মীণ গবর্ণমেন্টের দৃঢ় 
বিশ্বাস এ যুদ্ধে পশ্চিম সীমান্তে তাহাদের জয় অবশ্রান্তাবী 
এবং তাহার ফলে ভারতবর্ষ ইংরাজের কবল মুক্ত ভইয়! 
তাহাদের হাতে আসিয়া পড়িবে! এই বিশ্বাসের বশবর্তী ভইঘা 
এবারেও বিপ্রববাঁদীদের প্রস্তাব তাহাঁরা উপেক্ষা করেন। কিন্ত 
“মার্ণেশ্র পরাজয় ছুদদর্ষ জান্নাণ যোদ্ধগণের চোখে জ্ঞানাগ্তন? 
পরাইয়া দ্িল। কেন্দ্রীকত ব্রিটিশ শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করিবার জন্ক 
এইবার তীহারা বঙ্গীয় বিপ্লববাদীদিগকে ডাকিয়া পাঁঠীইলেন এবং 
সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্য তাহাদিগকে সব্বপ্রকার সম্থায়তা করিবেন 
বলিয়! প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইলেন । কিন্তু গ্রচুর 'মর্থ দ্বার! সাহায্য করা 
সন্থেও নানা কারণে, ও জান্মীণীর "আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার 
অভাবে সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হইল এবং আন্দোলন পর্্যস্ক ধ্বংস 
হইয়া গেল। এখানে আর একটা কথ! বলি; জান্মীণীর সাভাধা 
গ্রহণ ব্যাপারে স্ধল বিপ্রববাদী সায় দেয় নাই। অনেকে নবীন- 
চন্দ্রের উক্তি স্মরণ করিয়াছে--“মাটি কাটি লভি কোহিনুর শেষে 
জার্খাণী কি ভারতবর্ষ ছাড়িয়া ধাইবে। কিন্ধ সে সংখ্যা নগণ্য ! 
জান্দীণ গব্ণমেণ্টের সাহাধ্য করিবার প্রস্তাবে যে আন্দোলনের 
সষ্টি হইল ভূপেন্্রনাথ ও তাহার সহকন্মীদের প্রচেষ্টায় তাহা পু 
বাংলার ব! বাঙালীর আন্দোলন রহিল নাঁঁ-তাহা সমগ্র ভারতের 
জন্যই হইল। রাজা মহেন্তরপ্রতাঁপ; বরকতুল্লা, বীরেন্্র চট্টোপাধ্যায়, 


বৈদেশিক অংশ ১৬৭ 


ডাক্তার মন্হুরঃ হরদয়াঁল প্রভৃতি শ্বনামখ্যাত বিপ্লববাঁদীদ্দিগকে 
একভ্র করিয়া সুচারুরূপে কাধ্যপরিচাঁলন উদ্দেশে একটী কার্য্যকরী 
সভা গঠিত হইল | বালিনস্থিত ভার্তীয় ছাত্রগণের মধ্য হইতে 
কর্মী সংগৃহীত হইতে লাগিল এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে ভাঁরতবাসী- 
মাত্রকেই উত্তেজিত করিবার জন্য যথোপযুক্ত অর্থসহ তাহাদিগকে 
দুনিয়ার সকল মুন্তুকেই পাঠান হইল। তাহাঁদের মধ্যে কতক 
১৯১৫ সালের জানুয়ারীতে ভারতে পৌছিলেন। এই জাতীয় 
দূতদিগের মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম আদিলেন তিনি বাঁসবিহারীর 
সহিত দেখা করিলেন । রাসবিহ্বারীর সঙ্গে অন্নুণীলন ও শিখ 
সৈম্, শিখ বিপ্লববাদী প্রভৃতি বিপুল জনবল ছিল; বিপ্লবকে 
প্রকট করিবার জন্ত প্রাণে তখন তাহার অর্থ ও অস্ত্র- 
শস্ত্ের তীব্র আকাঙ্ষা। অন্ত দিকে স্বরণীয় বতীন্ত্রনাথ প্রভৃতিও 
সুসজ্জিত ৃ 

এদিকে দেশীয় সৈন্তদের সহায়তায়, বাংলার বিপ্লববাদীরা 
পিংললে প্রভৃতির সহযোগে যে বিদ্রোহের চেষ্টা করিয়াছিল--ভাহা 
১৯১৫ সালের প্রথম ভাগেই পণ্ড হয়। সম উত্তর ভারতৈর 
সেনাবারিকে বিপ্লবকথ! ছড়াইয়। পড়িয়াছিল। লাহোরের ধব- 
পাকড়ের পর সৈম্ধদের মধ্যে একটা ভয়ের সঞ্চার হয়। 
বিপ্লববাদীদের কৃতকাধ্যতা সম্বন্ধে তখন তাহাদের নৈরাস্থয 
আসিয়াছে । বহু শিখ সৈগ্ঠ প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হইল। তখন 
আর সৈম্কদের মধ্যে তেমন কোন সুবিধা কর যাঁইবে না, মনে 
করিয়! রাসবিহারী এঁ সময় জাপান গমন করেন। 


১৬৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


রাসবিহারী ১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে ভারতের উপকূল 
পরিত্যাগ করেন। অবশ্য বিপ্লববাদীরা তখনও ভরসা! একেবারে ছাড়ে 
নাই। বিদেশের দিকে সকলে তাঁকাইয়া রহিল। ছুইমাঁস অতীত 
হইয়াছে, রাসবিহারীর কোন খবর আসিল না । তিনি নিরাপদে 
পৌছিয়াছেন এই সামান্য খবরটুকু ধাহারা৷ জানিলেন, অপ্রকাঁশ 
রাখিলেন। সমিতি অধৈর্ধ্য হইরা অবনীকে আহ্বান করিলেন 
এবং ব্যাপার কি জানিবাঁর জন্ তাঁহাকে অনুসন্ধানে পাঠাইলেন। 
তিনি জাপানে পৌছিয়! বাঁসবিহারী ও ভগবান সিং প্রভৃতির 
সঙ্গে মিলিত হইরা বিপ্রবাযোজনে ব্যাপৃত হইলেন। স্থির হইল 
অস্ত্রশস্্পূর্ণ তিনখানি জাহাজ ও কতিপয় জাম্মীণ 15:06 
ভাঁরতে প্রোরত হইবে । এই নিদ্ধারণ অনুসারে 7142472%, 
7127 5. এবং অপর একখানি জাহাজ যুদ্ধসম্তারপূর্ণ হইয়া 
ভারতে বিপ্নবাগ্সি প্রজ্জলিত করিবার জন্য আমেরিক! হইতে যাত্রা 
করিল । এই সংবাদ লইয়] ভারতে লোক চলিয়া গেল। সংবাদ 
পাইবাঁমাত্র বৈদেশিক ব্যাপারে অনভিজ্ঞ ভারতীয় বিপ্লববাদীগণ 
বুবিযা বসিলেন তাহাদের সোণার স্বপন এবার বাঞ্ছিত বাস্তবে 
পরিণত হইবে--এই চিন্তায় তাহাদের মাথা যেন গুলাইয়া গেল। 
তাঁহারা যথা! তথা নির্ধিচারে কর্মীসংগ্রহ করিতে লাগিলেন। 
এইভাবে এ আন্দোলনে প্রবেশ করিল একদল অর্থলিগ্,লোক। 
ব্যাঙ্ককের উকীল কুমুদনাথ মুখাঞ্জি এরই ভাবে এই দলে আসিরা 
পড়ে। শুধু টাঁকাঁর খাতিরেই জাহাজ সম্বন্ধীয় কয়েকটি খবর 
সে ভারতে পৌছাইয়! দিতে স্বীকৃত হয়খ। ভারতে পৌছিয়া 


বৈদেশিক অংশ ১৬৯ 


যতীন্দ্রনাথের সহকন্ম্ী নরেন্দ্র ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ 
হয়। যতীন্দ্রনাথ কিন্ত কুমুদনাথ কর্তৃক আনীত সাঁমান্ত খবনে 
তৃপ্ত হইতে পারিলেন ন। অধিকন্ত টাকা আসিতে দেরী 
হইতেছে দেখিক্সা তিনি নরেন্দ্রকে জাঁভার পাঠাইয়। দিলেন। 
নরেন্রনাথ তথায় পৌছিয়া জান্মানীর তদানীন্তন অর্থসচিবের 
ভ্রাতা [0০15110এর সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি নরেন্দ্রকে 
রাসবিহারীর পঞ্চাশ হাজার গিল্ডাস' ( পঁয়বট্টি হাজার টাকা ) 
দেন। সে সময়ে রাপবিহারী সাংহাইএ। নরেন টাঁকা ও 
জাহাজ পৌছিবার তাঁবিখের সংবাদ লইয়া বাংলায় ফিরিয়া 
আদিলেন। বতীন্দ্রনাথ প্রভৃতি যুন্ধোপকরণ গ্রহণের বন্দোবস্ত 
করিলেন-__একথা পূর্বেও বলিয়াছি । কিন্ত এ আয়োজনের সংবাদ 
প্রকীশ হইস্সা পড়ীয় বিপ্রববাঁদীদিগকে কাঁ্যগ্রণীলী বদলাইতে 
হইল এবং সে সংবাদ লইয়! নরেন্দ্র পুনরায় জীভায় গেলেন। 
পূর্বেবোক্ত কুমুদনীথের সঙ্গে নরেন্রের বিরোধই ১৯৯৬ সালের 
সব্বধ্বংসের কারণ । নরেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় যাত্রার জাভা আসার 
পর কুমুদনাথের সঙ্গে টাঁকা পয়সা লইয়া কলহ শুয় । এবং 
এইজন্যই কুমুদনাথ পিঙ্গাপুরে গিয়া যুদ্ধের উপকরণপূর্ণ জাহাজের 
থবর সহ অন্ঠান্ত সকল কথা ইংরাঁজকে বলিয়া দেয় গুপ্ত 
মংবাদ সব বাহির হইয়া পড়ায় ব্রিটিশ সিংহ জাতার ক্ষুত্র ডাচ, 
গব্ণমেন্টের উপর এমন চাপ দিলেন যে তাহার ফলে তথায় 
জীম্মীণ ষড়যন্ত্র অসম্ভব হইয়া উঠিল। নরেন্দ্র নানা অছিলায় 
প্রথমে চীনদেশে চলিয়া ছালেন। তারপর আমেরিকায় গিয়া 


১৭০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


মেক্সিকোর বাসিন্দা হইলেন। এইরূপে বঙ্গীয় বিপ্লববাঁদীদের বুদ্ধ- 
সংক্রান্ত কর্মপ্রচেষ্টার একট! দিকের অবসান হইল । 
কিন্তু আবারও চেষ্টা চলিল। রাসবিহারীর অনুসন্ধানে অবনী 
টৌকিওতে গিয়] তাহার সহিত সাক্ষীৎ করেন । তা ছাড়া ম্যানিলা 
(191118 ) হইতে পলায়িত “গদর” সমিতির পাঁঞ্রাবী নেতা ভগবান 
সিংএর সহিতও দেখা হইল । সাঁবরওয়াল প্রভৃতির স্কায় আরও 
কয়েকজন পাঞ্জাবী ও বাঁডালী বিপ্লবের জন্য কুতসঙ্ছল্প হইয়া এই 
সময় তথায় অবস্থান করিতেছিলেন। জাপানে পৌছিয়! অবনী 
রাসবিহারীর নেতৃত্বাধীনে সকলকে সংঘবদ্ধ করিলেন এবং চীন 
দেশস্থিত জাম্মীণদিগকে জানাইলেন যে তীহারা তাহাদের সঙ্গে 
মিলিত হইতে ইচ্ছুক । এই সংবাদ পাইয়া পিকিনের জান্দাণ 
গ্রাঙ্গানাডার তাঁহার কতিপয় সহকক্্ী ও [2৯2০7 লইয়া এক 
ভোজ-সভার আয়োজন করিলেন এবং জাপানে অবনী, রাঁদবিহারী 
ও ভগবান সিংকে নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইলেন । ভগবান সিং 
ও রাসবিহারীর পক্ষে তখন চীনভ্রমণ নিরাপদ নছে, কারণ. 
অ্রত্য ইংরাঁজ কর্তৃপক্ষ সন্ধান পাইবামাত্র ইহাদিগকে গ্রেপ্তার 
কবিতেন--ঠাজ। 071601121 ক্ষমতাদ্ধারা তাহার। ইচ্ছাঁমাত্রেই 
গ্রেরূপ গ্রেপ্তার করিতে পারিতেন। তজ্জন্য এবং চেষ্টা করিয়াও 
যদি ঠিক সময় পৌছিতে না পারেন এই আশঙ্কায় তাহারা জনৈক 
ভারতীয়কে পূর্বেই তাহাদের প্রতিনিধিরূপে উক্ত ভোজ-মভাঁয 
প্রেরণ করেন। পিকিনে ইহারা কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইবার 
পূর্বেই জাঁপাঁন হইতে অবনী ও ভগবাঁন*সিং সহ রাসবিহারী সাংহাই 


বৈদেশিক অংশ ১৭১ 


পৌছিলেন এবং তত্রত্য জার্খাণ কন্দাল কর্তৃক অভ্যর্থিত হইলেন । 
ইহার পরেই এক কন্ফারেন্স আঁহুত হইল । এবং তাহাতে উপস্থিত 
থাঁকিলেন রাঁসবিহারী প্রভৃতি ভারতীয় বিপ্রববাদী, একাধিক জার্মীণ 
রাঁজদৃত (81792559001) ও কতিপয় [১০৫ এবং এই সভাঁতেই 
অন্্পূর্ণ জাহাজের ও অর্থসমস্যাঁর মীমাংসা হইল | কিন্তু বোঁধনেই 
বিসঙ্জনের বাঁজনাঁও ঘাঁজিরা উঠিল--অবনী ভারতবর্ষে ফিরিবার 
পথে, সিঙ্গাপুরে তাহার মারাত্মক নোট বুক সহ ধরা পড়িলেন। 

অস্ত্রপূর্ণ যুদ্ধ জাহাজ বাংলার দিকে আমিতেছিল তাহা পূর্বে 
বলিয়াছি, হাতিয়া, কলিকাতা ও বালেশ্বরে তাহা গ্রহণ করিবার 
আয়োজন হইয়াছিল; তাহাঁও বলিয়াছি, কিন্তু তিনখান! জাহাজ 
গেল কোথায়? ব্যাপার হইয়াছিল এই £-- 

যে তিনথাঁনি অন্ত্পূর্ণ জাহাজের ভারতের দিকে আসিবার 
কথ! ছিল তাহাঁর মধ্যে যেখানি সত্যই এ পথে আসিতেছিল, ইংরাজ 
'জ্ুজার বু, 10, 5. 0৮%:921/ আন্দামানের নিকট সেখানি 
ডুবাইয়া দিল। অপর ছুইখানি অর্থাৎ 1 5. ও 71420এর , 
কত্তীর৷ মতলব আঁটিয়া সুমাত্রা জাভা প্রভৃতির দর্ষ্ষণস্থ দক্ষিণ 
সমুদ্রের দ্বীপে গিয়া অস্ত্রশস্ত্র মেক্সিকোর প্রসিদ্ধ বোম্েটিয়া ভিলার 
শিকট বিক্রন্প করিয়া টাক! পয়সা পকেটস্থ করিলেন। তারপর 
১৯১৬ খৃষ্টান্বে 17611011০ জাহাজ ছুইখানিকে আমেরিকাঁন্‌ 
ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রয় করিয়া ফেলিলেন। স্বাধীনতা লাভের 
চেষ্টায় ভারত ও জান্মীণীর মধ্যে যে সম্বন্ধে কৃষ্টি হইয়াছিল, 
এইরূপেই তাহা নিঃশেষ হইল। এই সম্পর্কে জান্মীণীর 


১৭২ ংলায় বিপ্লববাদ 


ইম্পিরিয়ালিষ্ট গবর্ণমেণ্ট নাকি তিন মিলিয়ান ডলারেরও অনিক 
(প্রায় এক কোটা টাঁকা) ব্যয় করিয়াছেন । ইহা অবিকৃত সতা 
যে এই টাকার কিয়দংশ কয়েকজন স্বার্থপর ভারতীয় তথাকথিত 
বিপ্লববাদী আত্মসাঁ করিয়াছে, কিন্তু খুব বেশীর ভাগটাই 
[76105710১ 7২5০৭০ 265: গুভৃতি যে সব জাম্মীণ এ সম্পর্কে 
আসির়াছিল তাহাদের সিন্ধুকেই ফিরিয়া গিয়াছে । 

এই জশস্ত্র বিপ্রবগ্রয়াস ব্যর্থ হইলেও বাংলার বিপ্রববাদীরা 
ইহ হইতে এই শিক্ষালাভ করিয়াছে যে সমাজের উপর আর্থেৰ 
প্রভাব কতদূর; আর বিদেশের কে কেমন স্ুহ্ধদ | তাহাদের 
নিকট ইহা৷ এখন সুস্পষ্ট থে, জগতের জাতিসমূহ এমন কতকগুলি 
ভাবে বিভক্ত বে পরম্পর বিবদমান দুইটি জাতির মধ্যেও, প্রথম 
জাতির শ্রেণীবিশেষের নিকট হইতে, দ্বিতীয় জাতির অনুরূপ শ্রেণীর 
বিরুদ্ধে কোন সুযোগ অববিধা লাভের চেষ্টা মূর্খতা মাত্র । উদাহরণ 
ত্ব্ূপ বল! যাইতে পারে জান্মীণী ও উংরাজ পরস্পরের বিরুদ্ধে 
লড়িতেছিল যথীসর্ধবঙ্গ পণ করিয়া কিন্তু লক্ষ্য উভয়েরই এক-- 
সে লক্ষ্য জগতের উপর 110190715]190এর প্রভাব বিস্তার! 
নুতরাং বুদ্ধক্ষেত্রে ইংরাজের কেন্দ্রীরুত শক্তিকে কতকাংশে দুর্ধণ 
করিবার উদ্দেশ্টেই জাম্মাণী ভারতে বিপ্লব ঘটাইতে চাহিয়াছিল। 
ভারতের স্বাধীনত। কখনই তাহার কান্য ছিল না, স্বাথহ 
তাহাকে একাধ্যে উৎসাহিত করিয়াছিল । 

এই ভাব একই লময়ে বিদেশস্থ বু বঙ্গীয় বিপ্লববাদীর প্রাণ 
উদ্দিত হওয়ায়) তাহারা উদিক হইতে মন সরাইয়! লয় । 


বৈদেশিক অংশ ১৭৩ 


অনেকে বিদেশের 12555 070%175170র দিকে আরুষ্ট হয়। 
এই সমস্ত কারণেই হউক বা ধে কারণেই হউক, বিদেশস্থ বাংলার 
বিপ্লববাদীদদের কেহ কেহ রুবিয়ার সোভিয়েট দলে যৌগ দেয়। কেহ 
কেহ সেখানে বিবাহ করিয়াছেন__মাঁনবেন্্র ওরফে নরেন্দ্র মার্টিন 
ইংবাজ কন্তকে ( বর্তমান নাম শান্তি দেবী ) বিবাহ করিয়াছেন । 
অবনী এক রুষীর রম্ণীকে বিবাহ করিয়াছেন। সিঙ্গাপুর কেল্লার 
বন্দীনিবাঁস হইতে পলায়ন করিয়া অবনী জাভাঁয় আত্মগোপন 
করিয়া অবস্থান করিতেছিলেন। সোভিয়েট ভাঁব্রে ভাবুক হইয়া 
তাভা কার্যে পরিণত করিবার জন্। অবনী জীভ! পরিত্যাগের সন্কল্প 
করেন। বিশেষত জাভা গবর্ণমেন্ট তীহার অবস্থানের কথা 
জানিতে পারিয়। এরপ বাবস্থা করিতেছিলেন যে আর তথায় থাঁকা 
তাঁর পক্ষে অসম্ভব হইয়! উঠিয়াছিল । পলারনের কোন উপায় 
না পাইয়া ইউরোপ যাত্রী জনৈক ধনবান বাক্কির ভূতারূপে তিনি 
মস্কো চলিয়া যান। তিনি পূর্ব হইতে আগত নরেন ও অন্যান্ত 
কয়েক জন বিপ্রববাদীর সঙ্গে তথায় মিলিত হন। অবনী এবং 
নরেন্দ্র কতিপয় আন্তঙ্জীতিক কংগ্রেসে ভারতীয় প্রতিনিধিরূপে 
গৃহীত হইয়াছিলেন। তথাকার অত্যাচারিত জািসমূহ অবশ্ঠ 
নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্যই অর্থ ও অন্ান্ত উপকরণ দিয়া 
ভারতীয়দের সাঁহাধ্য করিতে স্বীকৃত হয়। 

বাংলার বিপ্রব্বাদীদের কেহ কেহ এই ভাঁবে বিদেশে থাকিয়া 
বোলশেভিক রুষিয়ার ভাবে ভাবুক হইয়া পছ্ধিয়াছেন। 


& রঃ ৬ 


১৭৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


এদিকে ভারতে ১৯১৫ সালের ফ্রেব্রুয়ারীতে বিদ্রোহ গ্রচেষ্টা বাথ 
হইবার পর এ বৎসরই মার্চ মাসে ভাঁরতরক্ষা আইন বিধিবর 
হয়। [170901060 আরম্ভ হইল। এই সময়েই বন্ায় (রেস্্নে) 
বিভ্রাট বাঁধে- সেখানকার যড়ঘন্ত্রও প্রকাশ হইয়! পড়ে । 


দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ 
বিষ্টীবের শেষ শিখ 


১৯১৬ খুষ্টাব্বেও বাংলার এবং বাংলার বাহিরে বিপ্রববাদীর! 
পুরা উদ্ধমেই কাজ চালাইতেছিল। তখন সকলেই ফেরারী। 
সর্বদ! প্রস্তুত হইয়াই থাকিত। বে কোন মুহুর্তে ধরা পড়িবার 
মন্তাবন! জাঁনিয়াই চলিতে লাগিল। দলে দলে 1050 হইতে 
লাগিল। কিন্তু তখনকার বাহার পরিচালক, তাহার৷ তখনও 
ধৃত হয় নাই। খুন, জখম: ডাকাতি চলিতেই লাগিল। এই 
সময়েই অর্থাৎ ১৯১৬ খৃষ্টানদের শেষভাগে ডেপুটি সুপারিষ্টেণ্ডণ্ট 
বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর দিন কয় মধ্যে ধর-পাঁকড় ভীষণ- 
ভাবে আরম্ভ হইল। পুটি, রুই কাতিল! কেহই বাদ গেল না 
ঘরে ঘরে গ্রেপ্তার চলিল। ভারতরক্ষা আইনের সঙ্গে ৯৮১৮ 
সালের রেগুলেশন যোগ করা হইল। বীহারা পুর্বেব 10007 
ছিলেন তাহাদের অধিকাংশই 90909 [150761 হইয়া জেলে, 
আদিলেন। আর দলে দলে নৃতন গ্রেপ্তার হইয়া 177৩1) হইতে 
লীগিল। সেই ধর-পাঁকড়ের মুখে বিপ্লবাদীদের দুঃখ কষ্টের 
কথা ভুক্তভোগী ভিন্ন কেহ বুঝিবে না--স্থৃতরাং সেকথা 
থাকুক । 


১৭৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


এই রকম বেড়াজাল ফেলার ফলে, সরকার রুতকাঁধ্য 
হইলেন। ১৯১৭ সাল হইতে বিপ্রবদল এক প্রকার ভাঙ্গিয়া যার। 
ভাঙ্গা হাঁটে এখাঁনে সেখাঁনে ছুই চার জন কেবল বিপ্লববাদীদের 
অস্তিত্ব প্রমাণ করিতে লাগিল। বসস্ত বাবুর খুন ব্যাপারে 
যাহারা লিপ্ত ছিল' তাহাদের সকলেই ধরা পড়ে। 5০৫107 
00271710656 1২০০: আছে--এই খুনের উদ্যোক্তারা খুনের 
কয় দিন পরেই ধরা! পড়ে । তাহাদের মধ্যে ছুই জন বর্তমান পেট 
প্রিজনার। আর একজন (নলিনী কান্ত ঘোষ) ধৃত হইয়াছিল 
কিন্ত দলন্া! হইতে পলাইয়! যায় ॥ পরে ১৯১৮ সালের জানুয়ারীতে 
পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই করিয়া পুত হয়। চাঁর জনকে রাজবন্দী 
করা হইয়াছে--পঞ্চম ব্যক্তিকে দলন্দায় আটক রাখা হয়, সে 
ওখান হইতেই পলাইয়! যায়; সম্প্রতি (161১০: লেখার সময়, 
১৯১৮ সালে ) সেও গ্রেপ্তার হইয়াছে 1৮ 

এই ভাবে বিপ্রববাদীদের প্রায় সকলেই ধুত হইল । কেহ 
1170601 হইল, কেহ কেহ ই্রেট প্রিজনার হইল; কাহারও বা 
কারাদণ্ড হইল--বাঁকি জন কয় ফেবারী হইয়াই রহিল। এই 
ফেরারী অবস্থার তাহাদের পলারনপটুত্ব খুবই প্রকাশ পাইয়াছে। 

এই পলায়ন ব্যাপারটা যে ভীরুতার জন্য অন্ুষ্ঠিত হইত তাহা 
নহে। ধরা দিবে নাঁ_ইহাই ছিল তাহাদের কথা। কিন্ত 
যেখানে ধর! পড়িবার যৌল আনা সম্তাবনা--যেখানে মৃত ভিন 
অন্ত উপায় নাঁই--সেথানে যাঁওয়ার কথা হইলে অনেক সম্মই 
দেখা যাঁইত--“আগে কেবা প্রাণ করিবেক দান তাঁরি লাগি 


বিপ্লবের শেষ শিখা ১৭৭ 


কাঁড়াকাড়ি” পড়িয়াছে। ভয়কে এড়াইবার জন্ত পলায়ন নহে, 
পলাইয়াছে, আত্মগোপন করিয়াছে অন্য কারণে । নিশ্চিত 
বিপদের মুখে অনেকেই যাঁইতে চাহিত। 

অধিকাংশ ফেরারী বিপ্লববাদীই রাস্তাঘাটে পুলিশের চক্ষে ধূলি 
দিয়া চলাফেরা করিয়াছে । তাহাদের সম্বল দেখা যাইত, একটা 
ছাতা । বার মাস ছাতা হাতে আছেই। ছাতা কোন সমর মাথার 
উপরে রৌদ্র নিবারণ করিত হঠাঁ আবার আবরণও হইত । 
ডাঁন দিকে হয়ত সি. আঁই, ডি. কর্মচারী কেহ আঁছে, অমনই 
ছাতা ডান দিকে একটু হেলিয়া গেল--মেদিক হইতে মুখ 
দেখা সম্ভব রহিল না। 

দলন্দায় বিপ্রববাদীদের অনেককে রাখিয়াছে। দিন বাত 
পাহীরা। সেখান হইতেও বিপ্রববাদীরা দুইবার পলাইয়াছে। 
ধরিবার জন্য কত আয়োজন, কিন্তু সহজে তাহাদের ধরা যাঁয় নাই। 
ধরা না দেওয়ার জন্য তাহাদের অনেক ছুঃথ কষ্ট ভোগ করিতে 
হইয়াছে। এখানে ছুই এক জনের পলাতিক জীবনের বিষয় কিছু 
জানিলেই, বুঝা যাঁইবে--শেষের দিককার আত্মগোর্গান কেমন 
ধারায় চলিয়াছিল। 

মুশিদাবাদের নলিনী বাগচীকে ভাগলপুরে কলেজে পড়িতে 
পাঠান হইল, বিহার প্রদেশে বিপ্লববাদ গ্রচার করিতে । কয়দিন 
পরে এই বাঁডালীর দ্দিকে পুলিশের নজর পড়িল । নলিনী পড়া 
ছাড়িয়া ফেরারী হইল। নলিনী 'জলপানি” পাওয়া! ভাল ছেলে। 
বিহারে একেবারে খাঁটি বিহারী সাজিয়া বলিল। মাথায় টিকি, 

১২ 


১৭৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


মালকোচ! মারা মোটা ধুতি, বিহারী জামা, মুখে অনর্গল বিহারী 
বুলি। বিহারের জেলায় জেলায় স্কুল কলেজে বিহারী হইয়াই 
ঘুরিতে লাগিল--কিছুদিন পরে বিহারী পুলিশের দৃষ্টি পড়িল। 
বল। বাহুল্য, নলিনীকে এবার বাড়ালী নলিনী নহে, বিহারী 
বুবক বলিয়াই সন্দেহ হইল। বাধ্য হইয়া বিহার ছাঁড়িতে হইল, 
নলিনী বাংলায় আসিল! ডিক্রগড় হইয়া গৌহাটিতে গেল। 
১৯১৭ সালের কথা । বাংলায় তথন ভাঙ্গা হাঁট--ধ্র-পাকড় 
থানাতল্লাস, 17157205520 গুলি । অবশিষ্ বিপ্রববাদীর প্রধানরা 
বুঝিলেন-_বাঁংলায় থাক! নিরাপদ নহে। তখন আসামেই ভান 
ভাল কন্মীদের 95০: 10:০০, রূপে বাথা সাব্যস্ত হইল। 
নলিনীকেও গোহাটিতে রাখা হইল । 

একদিন বাত্রিশেষে বন্দুক পিস্তলের গুড়ম গুড়ন শবে 
গৌহাটির জনসাধারণের নিদ্রা ছুটিল। গৌহাটিতে হৈটে। 
সকলে বলাবাল করিতে লাঁগিল--আঠার জন বি. এ১ এন এ 
পাশ করা বাবু বোম! পিস্তলসহ একট! বাঁসায় বাম করিতেছিণ। 
গৌহাটির «০5০৮৪ পুলিশ তাহাদের আক্রমণ করে। উ্া 
পক্ষে গুলি চলিয়াছে, খুনোথুনি হইতেছে ।--ক্ষুদ্র সহর বদ 
পিস্তলের শব্দ অনেকে শুনিতে পাইল । গৌহাঁটির এ বাসার, নলিশী 
বাগচী, নলিনী ঘোষ ও আরও কয়েক জন বিশিষ্ট ফেরারী বা 
করিতেছিল। কলিকাতার পুলিশ কোন ধৃত বিপ্লববাদীর কাছেই 
গৌহাটির সংবাদ পাইয়া ১৯১৭ সালের ৯ই জাগয়ারীতে এ বা 
ঘেরাও করিগ্বা ফেলে । অবশ্য ধ্িপ্লববাদীর| সাধারণত নার 


বিপ্লবের শেষ শিখ! ১৭৯ 


তেল দিয়া সুখনিদ্রা যাইত না । এ ভাবে অবস্থান সময়ে রিভলভার 
বিছানীর নীচে রাঁধিয়৷ একজন সতর্ক প্রহরী জানালার ধারে 
বসাইয়৷ সকলে ঘুমাইত। ছুই ঘণ্টা পর পর পাহারা বদলি 
হইত। বিপ্লববাদদীদের কাছে ইহাই ছিল যেন দুর্গ । পুলিশ 
দেখিয়াই সকলকে জাগাঁন হইল । কিন্ত চুপি চুপি। কর্তব্যও 
স্থির হইল। রিভলভার ও পিস্তল হাঁতে লইয়া সবাই বাহিরে 
আসিল। আসিয়াই পুলিশের উপর গুলি ছু'ড়িতে লাগিল। 
প্রথমটায় পুলিশ এই হঠাৎ আক্রমণে হতভম্ব হইয়া পড়িল । তাহারা 
ছত্রভঙ্গ হইতেই বিপ্রববাদীর! অবসর বুঝিয়া পাহাড়ের দিকে পলাইয়! 
গেল। কিন্তু বৈকাল বেলায় অসংখ্য পুলিশ রাইফেল ও বন্দুকে 
সুসজ্জিত হইয়া পাহাড়টা ঘেরাও করিয়া ফেলিল। তখন উভয় 
পক্ষেই গুলি চলিল | ফলে অনেকেই আহত হইয়া ধৃত হইল। দুইজন 
পলাইয়! গেল। তন্মধ্যে একজন এই নলিনী। তাহার! ছয় দিন 
পরে পাহাড় পার হইয়া লামডিং ষ্টেশনে আসিয়া পৌছিল। সে 
বাওয়া কি সোজা? অনাহারে অনিদ্রায় দিনের পর দিন চড়াই, 
উৎরাই হাঁটিয়া চলিতে হইয়াছিল। সর্ধবদা পুলিশেখ্খ ভয়, কখনও 
গাছে উঠিয়া। কখনও বা পাহাড়ের সর্ধোচ্চ স্থানে উঠিয়া, পাথরে 
শুইয়৷ রাত কাটাইয়াছে। অবিশ্রাম দ্রুতগতিতে চড়াই উত্রাই 
চলিতে চলিতে হাঁত পায়ের তলদেশ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয়া! যায়। শুধু 
কি এই চলারই বিপদ? এক রকম পাহাড়ে আঠালো! পোকা 
তাহাদের মাথার ও পিঠে লাগিয়া ষায়-_তাহা অনেক কষ্টেও টাঁনিয়| 
উঠান যায় নাই। এইঈপোকার আক্রমণ জনিত বিষ-বেদনায় 


১৮০ বাংলায় বিশ্লববাদ 


জর্জরিত হইয়া ইহার! অবসাদগ্রস্ত হইয়া পড়ে। পাহাঁড়েই প্রাণ 
বিয়োগ হইবার উপক্রম হইল । ঘাহ! হউক মরণের সঙ্গে লড়াই 
করিয়া তাহার আসাম পুলিশের হাত এড়াইল। গৌহাটা হইতে 
নলিনী বিহারে গেল। কিন্ত সেখানে থাকা নিরাপদ নয় দেখিন। 
বাংলায় আমিল। হাওড়া ষ্টেশনে নামিয়া নলিনী দেখিল কেহই 
তাহাকে নিতে আসে নাই। কোথায় বিপ্রববাদীরা আত্মগোপন 
করিয়া আছে কে জানে? নলিনী প্রমাদ গণিল। সঙ্গে একটী 
বিভলভার | কোথায় যাইবে? এক পক্ষাধিক কাঁল অনিদ্রা, অনিয়দ 
ও অনাহারে শরীর অবসন্ন | বিষাক্ত পার্ধতা পোকা তখনও মাথার, 
দেহে লাগিয়াই আছে। হাওড়াতেই প্রবল জরে আক্রান্ত হইল। 
নিরুপায় হইয়া অগতির গতি গড়ের মাঠের এক গাছতলায় শ্তইয় 
পড়িল | দিন রাত্রি মুতবৎ পড়িয়া রহিল। পরের দিন দৈব 
ঘটনায়ই যেন এক পরিচিত বিপ্লববাদীর চোখে নলিনী পড়ি 
গেল। বিপ্রববাদী তাহাকে তুলিয়া ধরিল। নলিনীর সব্ধবাে 
“বসন্ত! বিপ্লববাদীরা। সব প্রায় ধরা পড়িয়াছে। কলিকাতার 
অবস্থা শোচনীন্ন | টাকা পয়সা কাহারও হাতে নাই । ছুই চাব 
জন বাহাঁরা ছিল, তাহারাই ভখনও ক্ষাণ আশায় এদিক ওদিক 
ঘুরিতেছে। 

কলিকাতায় এক ক্ষুদ্র কুঠরিতে নলিনীকে রাখ! হইল । বসঞ্চে 
চোঁথ দুখ ঢাকিয়। গেল, জিহবা অচল । অর্থাভাবে, বিনা 
চিকিৎসায় রহিল । পথ্য ঘোল। তিন দিন কথা বন্ধ। এ 
বাসায় মাত্র একজন বিপ্লববার্দী আঁয্গোগন করিয়া আছে 


বিপ্লবের শেষ শিখা ১৮১ 


, মৃতদেহ সৎকারের লোকও জুটিবে না। ১৯১৮ সালে বিপ্রব- 
বাদীদের অবস্থা এমনই ধারার শোচনীর । নলিনী এ বসন্তেও 
মরিল না। ভাল হইয়া আবার পূর্ধ বে (ঢাকায়) অবশিষ্ট 
নির্বাণোম্বুখ বিপ্লববাদীদের ভাঁর লইয়া বসিল। নলিনীর সঙ্গে 
তারিণী মছ্ুমদার রহিল । ১৯১৮ সালের ১৫ই জুন ভোরে নলিনীর 
বাঁসা পুলিশ ঘিরিয়া ফেলিল। দুইজনই পিস্তল লইয়া বাহির 
ভইল। গুলি চলিল। পুলিশও খুন জখম হইল। তারিণীর 
গায়ে বিস্তর গুলি লাগায় তাহার মুতদেহ ওখানেই পড়িয়া 
রহিল। নলিনী গুলি খাইাঁও বাহির হইবার চেষ্টা করিল। 
কিন্ত বন্দুকের গুলিতে সে মাটিতে পড়িরা যাওয়ায় পুলিশ আসিয়া! 
তাহাকে ধরিয়৷ ফেলিল। হাসপাতালে তাহার শেষ নিঃশ্বাসের 
সঙ্গে বিপ্রবাগ্ির শেষ শিখাঁও নির্বাপিত হইল। 


বিপ্লববাদী অবনী মুখার্জি সিঙ্গাপুরে তাহার মারাত্মক নোট” 
বুক সমেত গ্রেপ্তার হইয়া! সিঙ্গাপুর কেল্লার বন্দীনিবাসে অবস্থান 
করিতেছিলেন। কোর্টমার্শেলে তাহার মৃত্যুর হুকুম হইয়াছে! 
বেচারা কিন্তু মরিতে নারাজ! বীচিতে চাহেন। কেমন করিয়! 
পালান বায়! সেই অজ্ঞাত বন্ধুবান্ধবহীন দেশে কে তীহাকে সাহাধ্য 
কবিবে। কিন্তু সাহাষ্য মিলিল। অবনী কেল্লায় নানা চেষ্টা 
চালাইলেন, কেল্লার বন্দীলীলার বিদেশী কম্মচারীর কিজানি কেন 
₹পা হইল। অবনীকে কেল্লার বাহির করিয়া দিবে স্থির হইল। 


১৮২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


কিন্ত তাহার পর সমুদ্র পাঁর হইবেন কেমন করিয়া? কেমন করি! 
অন্ত দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করিবেন? কড়াকড়ি পাহাঁরা--উপকূল 
হইতে যাইতে ও নাঁমিতে প্রহরীর দৃষ্টির মধ্য দিয়াই যাতে তয়। 
অবনী জনকয় জাঁপাঁনীর সঙ্গে নৌকায় আসিয়া জলকেলির অভিনয় 
করিতে করিতে অপর কুলে আসিয়া পৌছিলেন। কখনও নোকা 
হইতে লাকাইয়া জলে পড়িতে লাগিলেন, কখনও পারে উঠিতে 
লাগিলেন । অবনী উপকূলে রহিয়া গেলেন । নৌকায় জাপানী 
বসিয় রহিল--দীড় টানা আরন্ত হইল। প্রহরীরা ভাঁবিল, কল 
থেলিয়া৷ সকলেই চলিয়া! গেল। অবনী এইভাবে নিঙ্গীপুর কেন্লা 
হইতে মৃত্যুকে ফাকি দিয়! পলাইলেন। কিন্তু তাহার পর ঘাইবেন 
কোথায় ? সর্বত্র ধরা পড়িবার 'আাশঙ্কা । 'আাকুতি, কথাবার্তা সবই 
ধেন ধরাইয়! দিতে চাহে | অগত্যা অবনী সমুদ্রের উপকূল ধরিয়া 
ইাঁটিতে আরন্ত করিলেন। ভয়ঙ্কর শ্বাপদ-সম্কুল জঙ্গলেল মধা দিয়াই 
হাঁটিতে লাগিলেন । কোথায় যাইতেছেন, জানেন না । সেই অজ্ঞাত 
দ্েশ--উপরে আকাশ, একদিকে অনন্ত অমুদ্র' অন্য দিকে গন 
বন। আহার মিদ্রা নাই । কিন্তু হঠাৎ 'এ সমুদ্রেরই তীর থে সিরা 
একখানা নৌকা যাইতেছে দেখা গেল। তিনি নৌকার দাপির 
দিকে 'অগ্রসর হইলেন । মাখিও তাহার কথা বুঝে নাঃ তিনিও 
মাঝির কথা বুঝেন না। একপক্ষে তাহার ভালই হইল, তিনি 
যে কে গ্তাহা জানিবার আকাক্ষা হইলেও মাঝি কিছু জাশিতে 
পারিল না। তাহার কাছে সামান্য যে অর্থ ছিলঃ মাঝিকে 
দিলেন। মাঝি এঁ দ্রকেরই এক দ্বীপবাঁসী। তাহাকে নৌকায় 


বিপ্লবের শেষ শিখ। ১৮৩ 


তুলিয়! লইল--কিছু খাও দিল । 'অবনী সুমা ্বীগে আসিলেন। 
নুমাত্রীয় দিন কয় বিশ্রাম করিয়! জাঁভায় চলিয়া গেলেন । সেখানে 
ধূত হইবাঁর ভয়ে, ভূত্য হইয়া এক ভদ্রলোকের সঙ্গে ইউরোপে 
মন্কো সহরে পলাইয় যান। 


পরিশিষ্ট 
আন্দোলনের প্রথম পর্যায় 


গুপ্তসমিতির মধ্যে কয়েকটা দোষ দেখা ঘায়। "অভিজ্ঞতা হইতেই 
অবশ্য একথা বলিতেছি । 

ভীরুতার প্রশ্রয়ও ইহাতে আছে । একটা দৃষ্টান্ত দিব। ধরা 
ঘাকি, জনৈক বিপ্রববার্দী কোন ষ্টেশনে গিয়াছে । সেখানে মে 
দেখিল একজন কর্মচারী কোনও দরিদ্র দেশীয় লোককে অপমান 
ও লাঞ্ধনা করিতেছে । বিপ্রববাদী দেখিয়া 'অন্তুরে বেদনা 
পাইল। কিছ্কু অগ্রনর ভইরা অত্যাচারীকে বাধা দেওয়া এবং 
তাহার ফলে; একটা মারামারি বা বিপদকে বরণ করা--এনব 
কিছুই করিল নাঁ। কিন্তু মনে মনে ঠিক করিল, বেটাকে শান্তি 
দিতে হইবে। স্নেই শান্তি বে গুপ্ত প্রণালীমতেই দিতে হইবে 
ইহাতে সন্দেহ নাই। অবশ্ট অত্যাচার মাত্রেই সব সনয় বাধ! 
দিতে বাওয়! সকল বিপ্রববাদীর পক্ষেই বিপ্লবের দিক দিয়! সঙ্গত 
হয় ত” নহে । যে এত করিয়া আন্মগৌপন করিয়া আছে, তাহার 
হঠাৎ সাময়িক একটা আবেগে চালিত হইয়া একটা হাঙ্গামা না 
বাধানই ভাল। তেমন প্রকাশ হইবার ফলে বিপ্লবকাধ্যে 
অনেক ক্ষতি হইবার সন্তাবনা। অনেকে এ সমস্ত ছোট-খাট 


আন্দোলনের প্রথম পধ্যায় ১৮৫ 


ব্যাপারে লিপ্ত হইয়া দলের কোনও বিদ্ব এইজন্য ঘটাইতে চাহে 
নাই। তাহাতে অভীষ্টলীভে বাঁধা পড়িবার সম্ভীবনা । কিন্ত 
এ ভাবে কর্তব্য বুঝিয়াও প্রকাশ্রে প্রতিবাদ করিতে ঘাহারা চাহে 
নাই--তাহাঁরা সকলেই সমান সাহসা, বীর, ত্যাগী হর ত ছিল 
না। এমনও হর ত” কেহ থাকিত যাহার ভিতরে একটু ছুর্বলতা 
লুকাইয়া আছে। কিন্ত সেও যখন প্রকাশ্টে কিছু করিতে না 
চাহিয়া গুপ্ত ভাবেই করিতে চাহে তখন তাহাতে তাহার 
দুর্বলতা প্রশ্রয় পায়। অনেক সময় সে বুঝেই না যে, আত্ম- 
প্রঞঞ্চনা করিতেছে । হয় ত* যে কাজটা ভয়েই করে না, তাহাও 
বিপ্রববাদের থাতিরেই করিতেছে না, ইহাই মনে করে। সব 
কাঁজই গুপ্ত ভাবে করিতে করিতে প্রকান্যে কিছু করার অভ্যাসও 
চলিয়া বায় । অথচ প্রকান্তে তেমন কাজ করার মধ্যে একটা 
সাহসিকতা আছে । প্রকাস্তে একট! অন্তায়কে প্রতিবাদ করিবার 
অভ্যাস কোন কোন বিপ্রববাদীর চলিয়া ঘায়। অবশ্য যাহারা 
এ সমস্ত ছূর্বলতাঁর অতীত-_-অর্থাৎ যাহাদের মধ্যে তীরুতা ক্ষুদ্র 
্বা্থ প্রভৃতির নাম গন্ধও ছিল না--তাহাঁদের এই »গুপ্ত ব্যাপারে 
কোন ক্ষতি করে নাই। কিন্তু অপর বাহারা গুপ্ত সমিতির 
আবহাওয়ার বা তাহার দৌহাই দিয়া, প্রকাশ্টে কোন বিরোধ 
করিতে চাহে নাই-_কিন্ত গুপ্ত ভাবে খুব শক্ত বিপজ্জনক কাজেও 
হাত দিয়াছে, তাহাদের মধ্যে হয় ত” একটা দুর্ববলতী, অনেক সময় 
নুকাইয়া থাকিত। 


গং র্‌ সং 


১৮৬ বাংলায় বিপ্লববাদ 


বিপ্লববাদীদের গুপ্ত সমিতির কর্মপদ্ধতিতে এ সমস্ত দলে সময় 
সময় অনেক অযোগা, মূর্খ লৌকও নেতৃত্ব করিতে পাবে। তাহার 
অজ্ঞতা, মূর্থত। প্রভৃতি ধরিবাঁর উপায় এ ব্যাপারে সময় সময 
থাকে না।। সাধারণের সমালোচনার মুখে না পড়িলে, মাষের 
বিষ্যা, বুদ্ধি, যোগ্যতা প্রভৃতি ব্যাপারের যাচাই সব সময় হয় না।' 

বিপ্লববাদীদের একটা ৮1০15700 জঙ্গী বিভাগ ছিল। এর 
বিভাগই সাধারণত খুন, ডাকাতি প্রভৃতি করিয়াছে । এ বিভাগে 
বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ লোকই যে কেবল কুতিত্ব দেখাইয়াছে তাহা 
নহে, বিদ্যাবৃদ্ধিহীন, উচ্চ আঁদর্শহীন কেহ কেহ কথনও হয় ত” খুব 
কৃতিত্ব দেখাইয়াছে । বিপ্রববাদাদেরও শেষকালে এমন একটা 
সময় আসিল-বথন এই খুন জখম, ডাঁকাঁতিতেই জোর পড়িল 
বেণী। এদিকে যে যোগ্য তাহার আদর খুব। সুতরাং সে-ই 
কম্মীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আসন পাইতে থাকিল। এমন কি পুরাতন 
অভিজ্ঞ নেতাদের "অবর্তমানে ইচ্বারাই প্রধান হইয়া উঠিল। 
পূর্বের নেতারা হয় ত+ ইহাদের দ্বারা এই সমন্ত কাজই করাইয়াছেন; 
'কিন্ত দল পরিচালন ব্যাপারে ইহাদের কোন ভাঁতই থাকিত না। 
তাহারা ইহাদের যোগ্যতা সবই জাঁনিতেন। কিন্তু তাহাদের 
অবর্তমানে নুতন ছেলেদের কাছে ইহারাই হইত প্রধান । নৃতন 
ছেলেদের ইহারাই পরিচালনা করিত। তাহার! ইহাদের দ্বারা 
পরিচালিত হইত, কিন্তু ইহাদের বিদ্যা, বুদ্ধি+ বিচক্ষণতার পরিচয় 
কিছুই পাইত না, বুঝিতও না। শুপ্ত বাপারে অনেক কথা 
জানিবারও উপায় নাই । কোন সমস্যার কথা উঠিলে "তোমাদের 


আন্দোলনের প্রথম পধ্যায ১৮৭ 


ও-কথা জানিবার প্রয়োজন নাই+--বলিয়াই ছেলেদের দাঁবাইয়া 
দেওয়া অসম্ভব হইত না। ছেলেরা প্রথম প্রথম ভাবিত, 
জাঁনিবার হয় তঃ প্রয়োজন নাঁই। অথবা কেন ভাঁবিত, যখন 
বলিতেছেন না তখন কি জানি, এক বহস্ত আছে। অবশ্য 
এ রকম অযোগ্য কেই কেহ শেষের দ্রিক দিয়াই কর্তৃত্ব কবিয়াছে। 
তবে তাহাদের প্রভাব 'অতি অল্প সময়েই নষ্ট হইয়াছে । অযোগোর 
হাতে গুরুতর ব্যাপারের ভার পড়িলে যেমন নাঁনা দিকে ব্যভিচাঁর 
ঘটে, এ বেলাঁও তাহাই ঘটিয়াছে। 

শেষ অবস্থায় এমন একট! সময় আসিল, যখন খুব সাহসিকতার 
কাজ দেখাইতে পাঁরিলেই কর্তৃত্বের ভাঁর আসিরা পড়িত। 
ভাবপ্রচার, দল গঠন ও বিস্তৃতি সম্পর্কে বে বিদ্যা, বুদ্ধি, বিচন্ষণতা 
ও ধৈধোর প্রয়োজন, এ সমস্ত খুন ডাকাঁতির ব্যাপারে তেমন 
না হইলেও হয়। মৃত্যু যেখানে, সেখানে ঝণাপাইয়া পড়িতেছে, 
নানা বিপজ্জনক কাজে হাত দ্দিতেছে,_স্থৃতরাঁং শেষের এ 
ভাঙ্গা হাটে-_-যখন সকলেই মরিয়া হইয়া উঠিয়াছে, মরণ আর 
মারণ ইহাই প্রধান কথা--তখন এমনই কেহ, কেহ নেতৃত্ব 
করিয়াছে; তাহাদের মধ্য বিপ্রববাদীদের সেই দার্শনিক অন্থুভূতি, 
নৈতিক চেতনা, দায়িত্ববোধ ছিল না_ছিল কেবল সাহসিকতা । 
শুধু মাহসিকতায় পশ্তত্বকে বড় করিয়া! ভুলিতে পাঁরে--কিন্তু 
মীশ্তষের সাহসিকতার পরেও কিছু আছে। এই শ্রেণীরই অতি 
বড় সাহদিক এক কম্মী শেষকাঁলে তাহার স্বার্থ বা কতৃত্ব 
শাঘবের ভয়ে-_একজন যুধককে হত্যা করে। লক্ষৌএর বাগানে 


১৮৮ ংলাঁয় বিপ্লুববাঁদ 


১৯১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে তাহার শেষ নিঃশ্বাস পড়িয়াছিল-- ভা 
কোন্‌ ভ্রান্তিকে অভিসম্পাৎ করিয়াছে, কে জানে? 
নঁ রগ রং 
বাংলার রমণী এই বিপ্লবদলে হাতে হাতে তেমন যোগ দেন 
নাই। তেমন চেষ্টাও চলে নাই। তবে সহান্ভৃতিসম্পন্ন কেঃ 
না ছিলেন এমন নহে । বীরভূমের দুকুরীবালা দেবীর অস্ত্র আইন 
সাঁজা হয়। তিনি জেল ভোগ করেন। 
্ ্ 6 
বাংলার বিপ্লবধাদীদের পুলিশে অত্যাচার করিরাছে বলির 
অনেক কথা অনেক স্থানে উঠ্িয়াছে । অবশ্য ছোট-খাঁটি 'অবশ্যন্াবা 
লাঞ্ছনা ধর্তব্য নতে। তবে ১৯১৬ সালের শেষভাগে ভীষণ 
অত্যাচারের কথা দেশে প্রচারিত হয়। 

১৯১৬ সালের শেষভাগে হাতিয়া দ্বীপ হইতে রওনা হা 
কলিকাতা দলন্দার় 'আমিতেছি। ১৮১৮ খৃষ্টানদের তিন আইন 
মতে রাজবন্দা হইলাম। সন্দ্বীপ হইতে ভূতপূর্ব্ব মুনসেক, অবিনাধ 
চক্রবন্তী মহাশয়ও আদিলেন। একজে নোয়াখালীর থানার আসিয়া 
উপস্থিত হইলাম । সেখানে কতটি যুবক দেখিলাম। তাহারা গন 
117517707976এর হুকুম পাইয়াছে । দপন্দীয় মাসখানেক ছিন। 
আমাদের দলন্দায় নিতেছে, শুনিয়া বলিল, ণান দেখবেন 
ব্যাপার !» তাহাদের কাছে শুনিলাম, “কনফেশন+ করাইবার 
জন্য সেখানে ও কীড স্ত্বাটে ভীষণ অত্যাচার করা হহতেছে। 
অত্যাচারের প্রকৃতিও তাঁহারা বলিল। কেহ শোনা কথা লিগ, 


আন্দোলনের প্রথম পধ্যায় ১৮৯ 


কেহ বলিল, স্ুক্তভোগী । আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করিলাম । 
গোরালন্দে মারে উঠিয়াছি, অবিনাশ বাবুও আছেন। বলাবপি 
করিলাম । কি রকম অত্যাচার হইতে পারে, কল্পনাও করিলাম । 
দলন্দীয় গেলাম, ভাঁবিলাম, এইবার সুরু হইবে। -. বিপ্রববাদীদের 
কাহাকেও দেখিলাম না। একজন (সেন) সেখানে হা] 
ছিলেন। তিনি খুব স্বার্ীনভাবে ঘোরা ফেরা করিলেন, 
দেখিলাম । সাহেবদের সঙ্গে বেশ খাঁতির। তিনি জানাইলেন, 
কেকে নাকি মাঁর খাইয়া প্রথম কিছু বলে নাই, কিন্তু শেষে 
সব বলিয়াছিল। বুঝিলামঃ তিনি অনেক জানেন। তিনিও 
বলিলেন, আপনাদের হয়ত অন্যত্র লইয়া গিয়া সব জিজ্ঞাসা 
করিবে। একটা অত্যাচার যে অদূরে অবস্থান করিতেছে, তাহা 
কল্পনা করিয়া আমরা নানাভাবে তাহী “উপভোগ করিতে 
লাগিলাম। কিন্তু রাত্রিতে সিপাহীরা আসিয়! অবিনাশ বাবুকে 
ও আমাকে মেদিনীপুর লইয়া গেল। মার-ধর-_কিছু খাইলাম 
শা। জেলে আসিলাম।, পরে নূতন নূতন অনেকেই 'আসিতে 
নাগিলেন--অনেকের মুখেই নিদারুণ অত্যাচারের কাহিনী 
শুনিলাম। কেহ দরখান্ত করিয়াও গবর্ণমেণ্টকে জানাইলেন। 

রবক্ত অরুণচন্ত্র গুহ মেদিনীপুর হইতে বাংলা গবর্ণমেন্টের 
কাছে দরখাস্ত পাঠীয়। দরখান্তে অন্যান্স কথার মধ্যে এই 
কথাগুলিও লেখা থাকে :-... 


পঠ 


2, 91086 5০0 00100]6 )৩000105৮ সা 5956:915 
(9700৩0 01) 1015 2১৮10 1110 7৭ 5005 8, 03. 7১০11০ 


১৯০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


০0806 25 2) 600০6 10 10101) 159 12000 0595 519901]১ 2 
1015 01900) 210৫0020105 85 2006 5507% 0110% 10 1200 
115 51509552170 ৫655 ৮৮160. 0০ ৮993 02৮52 চ2১ ও) 
1075 51১01১, 

35 গজ 9৪ 091001)19 171010007121150 দাও5 00600 00 
06 150 51006610110 02706 [১ 00 22350 101 1010 
৮:01)001 10617700506 1066010 3% 01)50 0০৮ 200৫ 


80061 7018021 9101211012 510 9120৮211012, 


চা 


বু. এ]: ০৭001700016 20)01000211150 102000109১৩ 
9৮6 02555 24150079517) 2 51000410080951000 দা0108& 
৬10 0 9706100 ১2 00010109700 811 ১০5 06 11810 
€১১0101012, 

5. *10১20 9০৪71000916 12600151156 ভাছে5 &156)) 2০ 
17) 101১0998855 ৮৮110) ঘি) 4055108915 909091015 2200 0 
00275121555 015) 1150) 01 1076 1501540980009 2৭ 
1৫5 090 8156 1105 2১ 61506 01 ৮1১১০) 1৮০1055200৩, 
12 07131159105 00056 14:075%5,, 

গ 


ইহার মোটামুটি বাংলা 


(২) গ্গাবেদনকীরীকে কীড় ছ্রাটের স্পেশাল ভ্রাঞ্চ,। পুলিশ 
আাফিলে নেওয়ার সময় সে ভীষণভাবে প্রহত হয়, ফলে মে কাপড়ে 
অগত্যাগ করিয়া ফেলে । তাহাকে দোকান হইতে গ্রেপ্তার করিয়। নেওয়া 
সময় আতা ও পরিচ্ছদ লইতে দেওয়া হয় নাধ। 


আন্দোলনের প্রথম পধ্যায় ১৯১ 


(৩) আবেদনকারীকে ২২শে জুলাই পথ্যস্ত (.৮ই জুলাই ধৃত হয়) 
কোন আদালতে উপস্থিত ন! করিয়া কীড, ্রাটে রাখ! হয়। সেখানে 
নে অনাহার ও পাশবিক অত্যাচারের মধ্যে দিন কাটায়। 

(5) আবেদনকারী প্রথম পাঁচ দিন ২৪ ঘণ্টাই দীড়াইয়া থাকিতে 
বাধ্য হয়। এক মুহুর্তের জন্যও তখন ঘুমাইতে পারে নাই। সে 
অবস্থায়ও অমানুষিক অত্যাচার চলিতে থাকে । 

(৫) আবেদনকারীকে এই ময় যে খাগ্ধ দেওয়া হইত তাহ 
অখান্ধ। আর তাহা পরিমাণে প্রয়োজনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। 
তাহার ফলে সে চৌদ্দ দিনে ১২1১৩ পাউও ওজনে কমিয়৷ যায়। 


১৯১৮ সালের আগষ্টের “মডার্ণ রিভিউ'এ এই কথাগুলি আছে £-- 

+ঠ11% 1251 01)01)07) 016061560 2 ০000১ 2৪ [১6010192 
51)001006৭ 10 1118 5০51167৩১0৮ 9৮61 70170767)0781 
10 ০98280111১5 0:১৩ 10851) 01)510015 ০0211070957 ৮ ১199 
17501591230 12) [81517010 007000280 020 1 091512125 
11580191005 01 17014911916 05০1095 201550100£ মা 
1062,১0001)0, 050 6000 07) 15 ৯৮00] 59100 ৪ 
07150250] 0005 095051065 %700 051১0৩29800 03৩ 50) 
১ 8001 1005 এ9৬ট 

510) 08. 01) 51] 099 0 1১900 5 0) 2 | সা5 58212) 
(567) 10 0১0 9100 2 1১0 ১0001, 20626 05৪ ০0082 
(0£0176 মিড ৫9১ ) 2০০০: 090 106 101900১2] ০06 2 
96067 11১ 1201101১007) 09১1800৩০21] 2100 00০30 


০০ 3756 10 005 812171170.110501 02061200901 1010 


১৯২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


0 0 1)91705) 21301067 11620, 200 17৩ 0910611 £) 

00062 00508105 00555602005 170560015 220 0 

১1611) 2৮68 00100005001 01 01105 82160 ৮10 50001 

22007050200 00015016211 ০৮০65: 179 0900, 70707 

006 86001 [06 মঠ [0 0511 2৭ 010 006 5110 2200 60 156 

ঠ ৮0517, ৮] 0065৩ 025 1 25000 2119600010৮ 

[00৬ 1)20 22৫01 02152 0 3 10077065097 0000. 0110 

0021 0905 06 0৮০5885 

৯৮6 00101 00 16101)61 (0015 1)6001018 ঘোঃন 16চ0000 

1110 ৮10210১1705, [10 ৮5 001) 1015-10-00 1101760 

(101 1715 15566119705 %৮11] 01911100196 012060 1)৫1,)9 

00170) 200. 00055 217 019617 ০0000% 19196 08040- 

্রমুক্ত যোৌগেশচন্জ চাঁটাজ্জির দরখাস্তের উত্তরে গবর্ণদেন্ট 
জানান বে তাহার অভিযোগ সর্বরেব মিথা। 

বাতা হউক, মিষেম্‌ এনি বেদাণ্ট দুইখানা পত্র পান । তাাতে 
অনেকের উপর আঅভ্যাচার করার কথা লেখা থাকে। দিদেস্‌ 
বেসাণ্ট মেই পত্রের উপরে নিভর করিয়া ভারত গবর্ণমেণ্টকে ইছার 
সত্যাঁতা অন্রসঙ্গীন করিতে অনুরোধ করেন। ফলে একটা 
তদন্ত কমিটী বসে। মিসেদ্‌ বেসাণ্টের দ্বিতীয় পত্রে এগার জনের 
নাম ছিল । কমিটা তাহাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এই এগার 
ছনের নাম কুতুবদিয়ার ডেটে্টরাই যে পাঠাইয়াছিল তাহাতে 
সন্দেহ নাই। কমিটি তদস্তে সি, আই. ডি.র প্রধান প্রধান 
কর্মচারীদের সাক্ষ্যও গ্রহণ করেন। 1180, টা, 50901501) 


আন্দোলনের প্রথম পধ্যায় ১৯৩ 


11০০:5 এবং 31৮. 73. 0. 210০ এই তদন্ত কমিটীর মেম্বার 
ছিলেন। কলিকাতা রাইটায়্‌স্‌ বিল্ডিংএ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় 
পূর্ব্বোক্ত আবেদনকা রী'অকুণও সাক্ষ্য দেয়। 

বঙ্গীয় সিভিল বাইটুস্‌ কষিটির সেক্রেটারী বেঙ্গল গবর্ণমেপ্টকে 
উক্ত কমিটির রিপোর্ট চাহিয়া এক পত্র লেখেন । গবর্ণমেণ্ট পক্ষ 
হইতে ১৯১৮ সালের ১১ই জুলাই পত্রের উত্তর দেওয়া হয়---7078 
১11০1) 00161017501 006 150016.-.5 10 705170900০0 
[01011550855 81152099৩91 59100010155650 0 075 
10155 পরিপোর্টের যে অংশ গবর্ণমেণ্ট প্রকাশ করা সঙ্গত মনে 
করিয়াছেন তাহা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে 1 ১৯১৮ সালের 
৪ঠা জুলাই “ইংলিশম্যানে? মাননীয় ট্রিভেন্সান মুর ও স্যর বি. সি. 
মিত্রের রিপোর্ট বাঁহির ভয় । রিপোঁটে দেখা যায়, এগাঁর জনের মধো 
চার জন সাক্ষা দিতে আসিয়া বলেন, তীহারা কমিটির কাছে 
কোন সাক্ষ্য দিবেন না। ছুইজন সাক্ষা দিতে গিয়া বলেন, 
তাহাদের পক্ষে যে অভিযোগ বর্ণনা করা হটরাছে--তাহা মিথ্যা । 
একজন সামান্ধ অতাচারের কথা বলেনঃ কমিটি তাহা বিশ্বাস 
করেন নাই। কিন্তু অবশিষ্ট চার জন, ক্ষেত্রমোহন সিংহ, 
আশুতোষ কাহিলী, অরুণ ও অনন্ত কমিটির কাছে অত্যাচারের 
কথা ধলে (28806651916 0৯ ১০170 0৮2595 ০6 [1- 
06811701081 0070৮15 8317751 05 ১0605] 13718130125, 
কিন্তু কমিটি বিশেষ ভাবে তনন্ত করিয়া দ্েখিয়াছেন যে অভিযোগ 
একেবারে ভিত্তিহীন | (917৮0 00815564 01765৩ ০0780৩13 

১৩ 


১৯৪ ংলায় বিপ্লববাদ 


0 0129 11)6511155005 73121001) 2170 006 01081565 ৪1 
50107)6 16150) ৮10 00651559010 0750 5 215 521050560 
07876 0065 715 0016 01700997050.) 

এই রকম নানাবিধ অত্যাচারের কাহিনী দেশে প্রচারিত হয়! 
দরখাম্তও যাঁয়। উত্তরও আসে, তদস্তও বসে। কেহ যদ্দি সত্যই 
অত্যাচারিত হইয়া থাকে, ঞছ জানে সত্য কি, আর কেহ বাদ 
সত্যই অত্যাচার করিয়া থাকে সেও জানে সত্য কি; আর 
জানেন একজন, তিনি সবই জানেন, তিনি সর্বতোচন্ষু স্কারাধীশ 
ভগবান 1 সাক্ষা ও তদন্ত সেখানে নিপ্রয়োজন ।--কিন্ত এই 
অত্যাচারের কাহিনী এতই প্রচাকিত হইয়!ছে--অত্যাচারিতগণ 
ক্বীয় নিগ্রহের কাহিনী এমন স্প্টভাবেই ব্যক্ত করিয়াছেন থে? 
বিগ্লববাদী ও দেশবাসী ইহা সত্য বলিয়াই বিশ্বাস করিয়াছে । 


পরিশিষ্ট 


০ 


আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় 


১৯১৮ সালের পরে বাংলার বিপ্রববাদীদের আর বড় একটা 
অস্তিত্ব প্রকাশ পায় নাই। কন্দ্ী অনেকেই ধৃত, দণ্ডিত; 
অনেকেই অস্তরীণে আবদ্ধ, অনেকে গ্রেট প্রিজনার,। অনেকে 
খণুযুদ্ধে মৃত--অবশ্বা এর পরও জন কয় ফেরারী ছিলেন। 
তাচারাঃ যথ! অমরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, যাছুগোপাল মুখোপাধ্যায়, 
অতুলচন্দ্র ঘোষ প্রভৃতি চন্দননগরের শ্রীযুক্ত মতিলাল রায়কে মধ্যস্থ 
করিয়া সি. আই, ডি. বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে সর্ত সাবাস্ত করিয়া 
১৪২৯ সালে আত্মগকাশ করেন। 

' ১৯২০ সালে রিফর্ম এ্যাক্টের সঙ্গে সম্রাটের ঘোষণাবাণী 
প্রচারিত হয়। তাহারই ফলে অনেক অস্ত্ররীণ ও রাঁজবন্দী মুক্ত 
১ন। মুক্ত রাজবন্দীদের নানাভাবে সাহাধা করিবার জনক ধাহার! 
তথন চেষ্টা করিয়াছিলেন তন্মধ্যে স্বর্গীয় দেশবন্ধু দাশ, মিঃ বি. সি, 
্যাটাজ্জী, মিঃ আই. বি. সেন, কুমার কফ দত, ওয়াই. এম. সি. 
এর ভারতীয় বিভাগের মিঃ আর, ও. রাহার নাম বিশেষভাবে 
উল্লেখযোগা। ঁ 


১৯৬ ংলায় ধিপ্লববাদ 


ইহার পরই কলিকাতা স্পেশাল কংগ্রেসে মহাআ গান্ধীর 
অসহযোগ মন্ত্র প্রথম ঘোষিত হয়। অসহযোগ-খেলাফৎ সমগ্র 
ভারতের রাজনীতিক আন্দোলনে নূতন প্রাণ সঞ্চারিত কৰে। 
বহিমুখীন খিলাকৎ "আন্দোলনের অধযৌক্তিকতা বাংলার বই 
রাজনীতিক, চিন্তাশীল ব্যক্তি ও বিশেষভাঁবে বহু বিপ্রববাদী ব 
স্কানে বলিয়াছেন । অসহযোগ আন্দোলনের সবখানি তব বাংলার 
বিপ্রববাদীরা গ্রহণ করিতে না! পারিলেও এই 'আন্দোলনেন মনো 
যে স্বারদেশিকতা ছিল, এবং এই আন্দোলনের মধ্যে জনগণের 
সঙ্গে যে সহযোগাতার ভাব ছিল তাভাতেনঈ অনেক বিপ্রববাদ) 
'আকুষই্ট হন, এবং নব উদ্যমে নাগপুব কংগ্রেসের পরে তাতে 
বোগ দেন | 

বিপ্রব আন্দোলন সম্পকিত নর-ত্যা, ডাঁধাতি প্রগতি 
কোন কন্ম মার বাংলায় "অনেক দিন প্রকাশ পায় গাই । কিছ 
কলিকাতা শাখারিটোলা পোষ্ট মাষ্টারের ঠত্যাকাঞ্ডে বরেন ঘোষ 
ধৃত হইলে (১৯৯২ ), পুরাঁতিন পদ্ধতিক্রমে একদল লোকের কক্ধ- 
'চেষ্টার কথা প্রকাশ পায়। সন্যোষ মিত্র প্রভৃতি ই অম্পর্কে ধৃত হরঃ 
ছিভীয় মালিপুর যড়বন্ত্র মামলা চলে, কিন্তু মামলা টিকে না। 
মাণিকতলার বোনা আবিদ্ধতে হয়ঃ যশোঁদা ও অবনী দণ্ডিত 
ভয়। যশোদা দঞ্মায় মারা বায় । 

ভার পর মিঃ টেগার্টকে ভতা! করিতে গিয়া ভূলে মি ডে 
মানক একজন উপ্লাজকে ভত্যা করায় গোপীনাথ সাহা ঘি 
হয়, এবং নিজে স্বীকার করে যে, সে গিঃ &9কে ভুলে হতা। কা 


আন্দোলনের দ্বিতীয় পধ্যায় ১৯৭ 


ফেলিয়াছে বলিয়া! দুঃখিত, সে মিঃ" টেগাঁটকেই হত্যা করিতে 
চাহিয়াছিল। এই স্বীকারোক্তির ফলে গোপীনাথের ফাসি হয়। 

১৯২৩ সালে দিল্লীর স্পেশাল কংগ্রেস শেষ হইলেই বাংলার 
মুক্ত ভূতপূর্বব জন কর বিপ্লববাদীকে পুলিশ রেগুলেশন আইনে 
ধৃত করে। তাভারা বাহির হইয়া অপবাঁধজনক কোঁন কাধ্য 
করিয়াছেন বলিয়৷ দেশের কেহ মনে করে না। পাছে কিছু 
করেন, এই অতি সাবধানতাঁয়ই াহাদের পুলিশের কর্তীরা ধরিয়া 
'আটক করে। ইহার এক বছর পরে বাংলার আরও কয়েকটি 
মুক্ত রাজবন্দীকে পুনরায় আটক করা হর। নতন লোককেও 
আটক করা হয়। তন্মধ্যে তদানীন্তন কলিকাতা করপোরেশনের 
চীফ, একজিকিউটিত, অফিসার স্বভাফচন্ত্র বস্থও ছিলেন। 

এই অভিস্ান্স ও তিন আইনে যদিও এবার অনেক ভূততপূর্বব 
রাজবন্দীকেই আটক কর! হইয়াছিল, ( দেশেও এই অন্যায় ধর- 
পাকড়ের জবরদস্তার জন্য যথেষ্ট আন্দোলন হয়) তবু ইহা সত্য যে 
তি অনেকেই অশাস্তিকর কিছু করেন নাই। কেহ করিয়াছেন, 
এমন কোন প্রমাণই গব্ণমেপ্ট দিতে পারেন নাই » 

তারপর দেখা দিল কাকোরী ট্রেন ডাকাতি ।-_দক্ষিণেশ্বর ও 
শোঁভাবাজারে বোমা আবিষ্কার । দগ্ষিণেশ্বর বোমার মামলায় 
ধাহাদের সাজা হইয়াছিল, তাহারাই আলিপুর জেলে সি. আই. 1 
বিভাগের উচ্চ পদস্থ কন্মচারী ভূপেন্দ্রনাথ নিউজ 


*তা করেঃ বং ফলেঃগ্রমোদরঞ্জন ও অনম্তহরি চরম দণ্ড 
দণ্ডিত তয়। 


১৯৮ লায় বিশ্লববাদ 


কাঁকোরী ট্রেন ডাকাতির সম্পর্কে আর একটি বজডবন্্ 
মামলার স্ত্রপাত হয়। পূর্বে কাশী যড়যন্থ মামলায় দণ্ডিত 
শচীন্্রনাথ সান্তাল কলিকাতাঁয়ই ধৃত হন। এবং সম্রাটের বিকল 
বুদ্ধো্যমের ষড়যন্ত্রের মামলার আসামী হন। এই মামলা সম্পর্ক 
পয়তালিশ জনকে গ্রেপ্তার করে। এবং দেড় শত বাড়ী খানাতিল্লাস 
হয়। কাঁকোরী ষড়যন্ত্র মামলার স্থান বদিও উত্তর ভারত, এবং 
বড়বন্থে বদিও নুক্ত-প্রদেশের অ-বাঙালী জন কয় ছিলেন তর 
মামলায় প্রকাশ পাউয়াছে যে, এ বিপ্রব-যড়মন্ত্রের প্রাণ-স্বক্ূপ 
ছিলেন বাঙালী ঘোঁগেশচন্ছ চ্াযাটাজ্জী এবং শটীক্্র সাল্নাল 
প্রভৃতিই | 

এই মামলায় শাস্তি অত্যন্ত কঠোর হইয়াছে বলিয়া সাবাকণের 
বিশ্বাস । উতিপূর্ববে কোন যড়মন্ত্র মামলায়ই এত কঠোর সাজা হদ 
নাই। দণ্ডিত আাদানীদের আদর্শ ও বন্দাপস্থী সম্পর্কে কিছু 
না বলিয়াও তাহাদের কশ্মফল। ভাহাদের কম্মের শভাশ্বভ। দঃ? 
, কষ্ট তীহারা যে শেষ পর্যন্ত একনি দুঢ়তাঁয় 'অবিচলিত ভাবে এর 
করিয়া লইতে “পারিম্বাছেন ইহাও বাংলার বিপ্রব আন্দোলনের 
মার একটা দিক। এই মামলায় রাজেন্দ্র লাহিডার ফাসী চয়। 
গ্রেপ্তারের সময় সে এম, এ. পড়িত, বয়স ২১1২২ হইবে । 

সাঁজাহানপুরের পণ্ডিত রাঁমপ্রসাদের ফাঁমী হয়। আসফৰ 
উল্লারও (সাঁজাহানপুব নিবাসী) ফাঁসী হয়। আসফল্ক উল্লা জাতিতে 
পাঠান ছিললেন। বিপ্লব আন্দোলনে (োরতীয় মুসপগমানের এ 
প্রথম ফাসী। 


আন্দোলনের দ্বিতীয় পধ্যায় ১৯৯ 


ঠাকুর রোশন সিংহেরও ফাঁসী হয়। অসহযোগ আন্দোলনের 
সময় তাঁহার প্রথম সাজা হয়। প্রকাশ জেলে তিনি বিপ্রবীদের 
কাছে বিপ্রবাদর্শে অন্তপ্রাণিত হইয়া এই আন্দোলনে যোঁগ দেন। 
তীহা'র বাড়ী বেরেলিতে। 

ফোগেশচন্ত্র চট্টোপাধ্যায়, শচীন্দ্রনাঁথ সান্নাল, গোবিন্দচন্্র কর, 
মুকুন্দীলাল গপ%, শচীন্দ্রনাথ বক্মী, বাবজ্জীবন দ্বীপাস্তরবাসের 
হুকুম পাঁন। মন্মথ গুপ্ত ১৪ বছব, স্থুরেশচন্ত্র ভষ্টাচাধ্য ১০ বছর, 
বিষুশরণ দুর্রিদ্‌ ১০ বছর, রামকুষণ ক্ষেত্রী ১০ বছর, রাজকুমার 
সিংহ ১০ বছর এবং আরও কয়েকজন সাজ! পান। কাকোরী 
মামলার পর; দেওঘর ষড়যন্ত্র মামলা হয়। দেওঘর ষড়যন্ত্র মামলায় 
সরকার ভাঁরতব্যাপী বিরাট ষড়যন্ত্রে অভিযোগ আনেন; কলে 
এলাহাবাদের শৈলেশ চক্রবপ্রী প্রভৃতি দশ জনের কারীদণ্ড হয় । 

বাংলার বিপ্লব আন্দোলনের ধারা বাংলায় ও বাংলার বাহিরে 
পুনরায় এই ভাবে স্থানে স্থানে আত্মপ্রকাশ করিলেও,-_বাঁংলার 
বহু মুক্ত বিপ্লবপন্থীই কংগ্রেস প্রভৃতি প্রকাশ্য আন্দোলনে যোগদান 
করিয়াছেন । 


পরিশিষ্ট 


বড়যন্ত্র মামল। 


এখানে সমগ্র বাংলায় বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন দলে উল্লেখযোগা 
থে সমস্ত ঘটন! ঘটিয়া গিয়াছে, যে সমস্ত মাঘলা হইয়াছে তাহা 
সংক্ষিপ্ বর্ণনা লিপিবদ্ধ হইতেছে । বাংলায় বিপ্রব আন্দোলনের 
স্ত্রপাত হয় ১৯০৪ সাল হ্রইতে বারীন্দ্রপ্রমুখ যুগান্তর দলের 
ব্যক্তিদের দ্বারা ! এর সময় (১৯০৫) ব্ঙ্গবিভাগের আনোলনও 
আর্ত হয়, একথা বলা হইয়াছে । এই যুগান্তর দলের কল্মারাই 
১৯০৮ সালে মুরারীপুকুর বাগানবাড়ীতে ধুতি হন। বারীন্ত্র স্বীয় 
জবানবন্দীতে বলিগ্াছেন যে, ১৯০৭ হইতে ১৯০৮ সাল পথ্ন্ত 
চৌদ্দ পনের জন ত্যাগী যুবক তিনি সংগ্রহ করিয়াছিলেন এবং তিনি 
এবং উপেন্দ্র গ্রভৃতি তাহাদের ধর্ম ও বাঙনীতি শিক্ষা দিতেন 
ভবিষ্যৎ বিপ্রবের আয়োজনের জন্য তীহারা কেবল প্রপ্চত 
হইতেছিলেন। দে জন্য সামান্ত ন্ত্র শক্ত্রই মাত্র তাহারা সংগ্রহ 
করিয়াছিলেন । বারীন্দ্র বলেন “আমি এগারটি পিশুলঃ চারিটি 
বন্দুক, একটি কামান সংগ্রহ করিয়াছিলাম” | উল্লামকর দর্ত বোমা 
তৈরী নিজেই শিখিয়াছিলেন, ভেমচন্ত্র দাস নিজ সম্পত্তির অং 
বিক্রয় করিয়া! প্যারীতে গিয়া বোমা তৈরী শিখিয়া আসেন এব 


ষড়যন্ত্র মামল। ২০১ 


উভয়ে বোম। তৈরী কার্যে লিপ্ত হন - একথা বাঁরীন্দ্রের জবাঁনবন্দীতে 
প্রকাশ । এই মামলার আসামী নরেন গৌসাই এপ্রভার ভ্ইয়া 
যে জবানবন্দী দেয় তাহাতে বাংলার বনু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জড়ায়। 

আলিপুর বড়যন্ত্র মামল।। ১৯০৮ সালে এই মামলা 
আরম্ভ হয়। বাংলায় রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধোগ্ভমের মামলা এই প্রথম । 
বার জনের সাজা হয়। এই দলের মুখপত্র যুগান্তর বাংলায় বিপ্লব 
প্রচার করিত। মুরারীপুকুরে বোমা পাওয়া বায়, রাজা নবরুষ্ণ 
বাটে বোমা আবিক্কত হয়--এখানে ভেমচন্ত্র দাস বোম! প্রস্তত 
করিত। অন্থান্থ স্থলেও অস্ত শস্ত্র রাখা হইত। দেওঘরের "শাল 
লজে”ও বিপ্রবীদের আড্ডা ছিল1* প্রধান বিচারপতি রায়ে 
বলেন, এ দলে শিক্ষিত ও প্রবল ধর্মবিশ্বাসী লোকদের লওয়া 
হইত। (প্ুতো। 9 ০৫0০8007১91 ৯৮:90 75111985 
০017৮10010179%, ) 

ওঁ ষড়যন্ত্রে যদিও বহু লোক লিপু হয় নাই, তবু নান! দিক দিয়া 
এই ফড়্যস্ত্র মামলাটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করিয়াছে । ইহাই 
প্রথম মামলা । যড়যন্ত্রকারীরা! যথেষ্ট উদ্ভম নিভীকতা, কৌশলবুদ্ধি 
দেখাইয়াছেন। ম্যাজিষ্ট্রেট এই মাঁমলায় আটত্রিশ জনকে সেশনে 
সোপর্দ করেন। বারীন্দর, হেমচন্্র, উপেন্ত্র, উল্লাসকর, অবিনাশ, 
হযীকেশ কাঞ্জিলাল, বীরেন্দ্র ঘোষ, নরেন্্র লাল বক্পী. বিভা 
সন্নকার, সধীর সরকার, ইন্দুভূষণ রায়, (আগামানে আত্মহত্যা 
করে) প্রভৃতির এই মামলায় সাজা হয়। মজফরপুর হত্যাকাণ্ড এই 
ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়ান হয়। 


২০২ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা । ১৯১০ সালে ননীগুপী, যতীন্ধ- 
নাথ মুখার্জী প্রভৃতি ৪৬ জনকে ১২১ ক ( রাজার বিরুদ্ধে বুদ্ধের 
ষড়ম্ত্র) ধারায় 'অভিধুত্ত করা হয়। ৪৬ জনের মধ্যে সাত জনের 
বিরুদ্ধে মামল1 চলে না। ফড়যন্ত্রের স্থান শিবপুর (হাওড়া ' এবং 
ব্রিটিশ ভারতের অন্তা্ি অংশ । আসামীদের কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ 
দলে বিভক্ত করা হয় যথা £- (১) শিবপুর দল (২) কুষ্চি দল 
(৩) খিদিরপুর দল (৪) টিংড়িপোতা দল (৫) মঙ্জিলপু' 
(৬) হলুদবাড়ী (৭) কুষ্ণনগর (৮) নাটোর (৯) ঝাউগাছ 
(১০) যুগান্তর.( ১৯) ছাত্র ভাগ্ডার (১২) রাজসাঁহী (রামপুর 
বৌয়ালিয়ার দল )। এই যভডযন্ত্র মাল] টিকে না। বিচারকগ* 
রায়ে বলেন, যদিও বিভিন্ন দল নানা অপরাধজনক কাধ্য করিষীছে 
নিশ্চিত তবু বিভিন্ন দলকে এই একটি ধড়যন্ত্রের মধ্যে আনা বান 
শা। শপু এই কারণেই এই আইনের ফাকেই বহু আসামাকে 
ষড়যন্ত্রের মামলায় খালাস দেওয়া হয়। কেবল 'মানামীদের নে 
রয় জনকে সাজা দেওয়া হয়, ভাহার! হলুর্দবাড়ী ডাকাতিতে 
লিপ্ট ছিল। , 

উপরোক্ত বিভিন্ন ঠ10900) হইতে রারতা, নেত্রা, হলুদবা 
প্রভৃতি বন ডাকাতি হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ । 

খুলন। বড়যন্ত্র মামলা। খুলনা জেলার নাংলা ডাকাতির 
পরে পুলিশের তদন্তের ফলে এই যড়মনত্র প্রকাশ হইয়া গড়ে। 
বিধুভৃষণ দে প্রভৃতি ধৃত হয়। এগার সনের হাইকোর্টের বিচারে 
রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধোষ্যমের অপরাধে না হয়। এই মামলা সম্পর্ক 


বড়যন্ত্র মামলা ২০৩ 


জোরাবাগান ও আহিরীটোলায় খানাতল্লাস করিয়া “মুক্তি কোন্‌ 
পথে প্রভৃতি বহু রাঁজদ্রোহমূলক কাঁগজ পত্র পুলিশ তম্তগত 
করে। অস্ত্র শত্ত্র আমদানীর কথাও প্রকাশ ভয়। 

ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা । ১৯১০ সালে সাতিচল্লিশ জনের 
নামে রাজার বিরদ্ধে যুদ্ধোছ্যমের মামলা মানা হয়| তন্মধ্যে চুয়াল্লিশ 
জনকে দায়রায় সোপর্দ করা হয়। এক বছরের উপরে মামলা! 
চলে, ১৯১২ সালে আগষ্ট মাসে মেশন জজ ছত্রিশ জনকে 
দ্বীপান্তর ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। হাইকোর্টে আঁপীল করা 
হয়, ফলে চৌদ্দ জনের সাজ! হাঁস হয়, বাকি বাইশ জন 
খালাস পায়। 

এই মামলা ঢাকা অন্শীলন সমিতির উপরেই চলে । এই 
সমিতির 'প্রতিজ্ঞাপত্র” মাদ্চ ও অস্ত অংশ “পরিদর্শকের কর্তব্য, 
'সম্পাঁদকের কর্তব্য” প্রভৃতি আলোচনা করিয়া বিচারপতি মুখাজ্জী 
( স্বর্গীয় আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ) বলেন ঘে সমিতি তাহাদের 
-77200৩0 ১৪০১৮৮ রক্ষী করার জঙ্ক, নেতার আদেশ 
নির্বিচারে মানার জন্ক বিশেষ ব্যবস্থা করিয়াছিল্‌। প্রতিজ্ঞাপত্রের 
প্রথম অংশ অতি সাধারণ । শেষাংশে মন্ত্রগুপ্তির দিকে অত্স্ত জোর 
দেওয়া হইয়াছে । সমিতির সেই “[010080550 86০12৮ লইয়! 
যাহাতে সমিতির সভ্যগণও পরস্পর আলাপ না করে, সমিতি হইতে 
যাহাতে কেহ বিচ্ছিন্ন হইতে না পারে সেদিকে পরিচালকের, নেতার 
বিশেষ দৃষ্টি ছিল। *পল্লিদর্শকের কর্তৃব্যেপর মধ্যে গ্রাম্য সংবাদ 
সংগ্রহের (৬111955 150955 ) উপদেশ ছিল; গ্রামের রাস্তাঘাট 


২০৪ ংলায় বিপ্লববাদ 


নদনদী ইত্যাদির অবস্থান সংবাদ এবং অন্যান্থ সংবাদ, যথা লোক 
সংখ্য তাহাদের বিভাগ তাঁহীদের মতিগতি গ্রামে ব্যবসায় বাণিজ্য 
মেলা ইত্যাদির সংবাদ পরিদর্শককে সংগ্রহ করিতে হইত। 
স্থানীয় মানচিত্র তৈরী করিতে হইত। 

এই মামলার সরকার পক্ষের বু লোক সাক্ষ্যদ্দান করিলেও 
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্ধার| অনুষ্ঠিত অপরাধের যোগাযোগ তেমন 
প্রমাণিত হয় নাই; এবং উপরোক্ত কাগজ পত্র না পাইলে 
হাইকোর্টের বিচারে বৃদ্ধোগ্মের ষড়বন্ত্র গ্রমাণ করা হয়ত শক্ত 
ভইত | ভাইকোট সিদ্ধান্ত করেন £--সমিতির সভ্যদের নিয়ন্ত্রনের 
জন্ধ নিয়মাবলী ছিল । এই সকল নিয়মাবলী হইতে প্রমাণিত 
হইতেছে যে সমিতি তাভার মন্ধ্রগুপ্থি "[077701004 500191” 
রঙ্গণার জন্ত বিশেষ ব্যবস্থা করিয়াছিল; এই জন্তা সম্যনদের 
মধ্যেও 'মনাবশ্বাক আলোচনা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল; তাহারা 
আত্মীয় ও বন্ধুর কাছেও পরিচালকের বিনা অনুমতিতে পত্র 
লিখিতে পারি না) এবং বাহির হইতে পত্র আসলেও, 
পরিচালককে দেখাইতে হইত, পত্র লিখিলেও দেখাইতে হইত, 
এসব ঠিক ঠিক অন্ুক্থত হইতেছে কিনা তাহা দেখাও সমিতির 
বিশিষ্ট সদশ্যদের আন্যতম কর্ধবা ছিল; সদশ্যদের আত্মীয় 
স্বজন হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্প হইতে হইত | কোন সদগ্তের কোন 
নর্থ আদিলে ( আত্মায় স্বজন কর্তৃক প্রেরিভ) তাহা সমিতির 
সাধারণ অর্থ বলিয়া গণ্য হইত। 


ষড়যন্ত্র মামলা ২০৫ 


হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত করেন-_ 

(১) সমিতি গোঁপনতা৷ অত্যন্ত কড়া ভাবে রক্ষা করিত 
(19910051% 2091090. 58016 ৯ মন্ত্রগুপ্তি প্রকাঁশ না হয় এ 
নিমিত্ত সর্ববিধ উপার অবলম্বন করিত। মন্ত্রগ্ুপ্তিটি এমন যে 
তাহা! নিজেদের মধ্যেও আলোচ্য নহে । 

(২) সদস্তেরা মন্্রগুপ্তির প্রতিশ্রুতি ব্রত" গ্রহণ করিত এবং 
কতকটা সামরিক নিয়মান্নবপ্তিতাঁয় জীবন যাঁপন করিত | 

৩) ঢাঁক সমিতি ছিল কেন্দ্র, তাহার "অধীনে এই ধরণের 
মার আর শাখা সমিতিগুলি কাজ করিত 

(৪) সদনাদের নপগ যাহারা "অন্ধরঙ্গ” হইত, তাহাদের 
কালী মুদ্তির সম্মুথে অত্যন্ত কঠোর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিতে 
হইত | 

(৫) কোন বাহিরের লোক প্রতিশ্রতি গ্রহণ না করিয়া 
যদি সমিতিতে ঢুকি তবে সে যে সকল কথা জানিয়াছিল 
ভাতা নষ্ট করা হইত। ( ১75 (70515315৮85 00 106 
01650057005 ) 

(৬) সমগ্র বাংলাব্যাপী সমিতির ক্ষেত্র বিস্কৃত করাই 
ছিল উদ্দেশ্ত। প্রতোকটি গ্রাম নগবের যাবতীয় সংবাদ সংগৃহীত 
ইইত, মানচিত্রে ভৌগোলিক অবস্থান লিপিবন্ধ হইত। 

(৭) পুলিনবিহারী দীসের "সুস্পষ্ট উদ ছিল একটি 
17807284172 27 271৮০ স্থাপন এবং 1নজে তাহার নেতা হওয়া । 

(৮) নেতার উপর র্ববিধ পূর্ণকতৃত্বস্তন্ত ছিল। 


২০৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


(৯) এই সমিতির অনেক সরস্তই ব্রিটিশ গবর্ণমেণ্টের উপর 
বিদবি্ ছিল। 

(১০) বাহিরের লাঠি ছোঁড়। ড্রিল কুস্তি প্রভৃতি খেলার পৰে 
সভ্যগণ পরিদর্শকের কর্তব্যে উল্লিখিত গুপ্ত” ব্যাপার লইয়। ভিতরে 
ভিতরে আলোচনা করিত । এই সমিতি একটা খিপব সমিতি । 

বরিশাল বড়যন্ত্র মামল।। ১৯১৩ সালে নরেক্রমোষ্ঠন 
সেন রমেশ্নন্ত্র আচাধ্য প্রভৃতি চুয়াললিশ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধোগ্যমের 
অভিধোগে শমন জারী করা হয়। তন্মধ্যে সাহত্ধিশ জনকে 
গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। বজনাকাস্ত দাস ও গিরীন্দ্র দাস সরকারী 
সাক্ষী হয়। গিরীন্দ্রের পিতা এাভিশন্যাল ম্যাজিপ্রেট । সাত 
জনকে জেলা ম্যাজিষ্রেট ও ছুই জনকে সেশন জজ খালান ফেন। 
ধার জন, রমেশ ও ফেলু বায় প্রভ্তি সকল দায়িত্ব গ্রহণ করিয়া 
'অভিবোগ স্বীকার করে এবং 'অবশিষ্টদের বিরুদ্ধে সরকার মামলা 
তুলিয়া লন। এই মাদ্লায় সরকারের সহিত আসামীদের সন্তু হর 
সেই সর্তান্যায়ী বার ছন অপরাধ স্বাকার করে। ফলে অবাঁশষ্টের 
বিরুদ্ধে সরকার মামলা তুলিয়া লন এবং সত্তীন্গযায়ী বাহার 
দোষ স্বীকার করে তাহাদেরও সত্তীনুধায়ী নিদ্দিষ্টকাঁল জেলবাসের 
পরহ মুক্তি দেওয়া হয়। মামলার রায়ে বলা হয়-- 

(১) 'আসামীর। সকলেই অল্পবয়স্ক ( ১৯--২৯)। 

(২) তাহারা বস্ত্র অপরের আদেশে চলিয়াছে। সেই 
পরিচালকদের গ্রেফতার কর! সম্ভব হয় নাই। এবং তাহাদের 
পরিচয়ও পুলিশ জানে না। 


ষড়যন্ত্র মামলা ২০৭ 


(৩) বার বছর যাবত এই আন্দোলন চলিয়াছে। 

(৪) 1015016 01221580017 50109105এ ছাত্রদের 
মধ্যে কিভাবে কাজ করিতে হইবে, এবং অন্তান্ত ক্ষেত্রে কিভাবে 
কাঁজ করিতে হইবে তাহার নির্দেশ ছিল । 

(৫) জ্ুম্নবয়ঙ্ক যুবক ও ছাত্রহ এই আন্দোলনের পরিচালক | 
বরিশালে এই দলের নেতা রমেশ আচার্যের বয়স মাত্র একুশ বছর। 

বরিশাল বড়বন্ত্রের দ্বিতীয় পর্য্যায়। পুর্ব মামলায় 
বাহারা ফেরারী ছিল, তাহাদের বিভিন্ন স্থানে ও সময়ে ধৃত করা 
হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে (১) মদনমোহন ভৌমিক ওরফে মদনচন্ 
ভৌমিক ওরফে কুলদাপ্রসাদ রায় (২) ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবন্তী 
ওরফে কালীধর চক্রবর্তী ওরফে বিরজাকান্ত চক্রবন্তী ওরফে মহারাজ 
(৩) খগেন্জ চৌধুরী ওরফে স্থরেশ চক্রবর্তী (৪ . প্রতুলচগ্জ গাঙ্গুলী 
(৫) রমেশ চন্দ্র চৌধুরী ওরফে রমেশ চন্দ্র দত্ত ওরফে পরিতোষ 
ধৃত হয়। ষড়যন্ত্র মামলাগন সাজা হয়। সাবান্ত হয়ঃ বরিশাল সমিতি 
টাকা সমিতিরই অঙ্গ । এই সংঘের প্রধান আড্ডা সোনারক্গ 
জাতীয় বিদ্যালয় । শিক্ষকগণ ও ছাত্রগণ সমিতির কাধ্য করার 
উদ্ধেস্তেই ওখানে থাকিত। বরিশাল মামলার *কর্ম, ০৬৩৫৫ 
৪০১ বলিয়! নিম্নের ঘটনা! বিচারে সাব্যস্ত হয় ১-_ 

ইলদিয়৷ হাট ডাঁকাঁতি--কলাগীও-_দাদপুর-_পণ্ডিতসর_- 
গীওদিয়া ডাকাতি--স্থুকইর ডাঁকাতি-_গোলকপুর বন্দুকচূরী-- 
-কাওয়াকুরী ডাকাতি-_-বিরঙ্গল ভাকাতি-_পাঁনান ডাকাতি-_ 
সারদাচক্রব্তী হত্যা-_কুমির্ঠী ডাকাতি-_লাজলবন্দ ডাকাতি 


২০৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


রূতিলাল হত্যা, বরিশাল ইন্স্পেক্টর হত্যা, বীজকুমার নাঃ 
( ময়মনসিং ইন্স্পেক্টর ) হত্যা, মৌলবী বাঁজার বৌমাবিস্ফোর 
সোনারঙ্গ হত্যা রাউতভোগহত্যা প্রভৃতিও এই মামলার ০৮৩) 
8০0 ইহ! এপ্রভার প্রিরনাথ আচার্যের বর্ণনায় প্রকাশ পায়। 

রাজাবাজার বোমার মামল।। মৌলবী বাজার বোমা 
বিভ্রাটের পরে সিলেটের ডেপুটি কমিশনারের পরোয়ানা বলে 
কলিকাতা পুলিশ রাজাবাজার আপার সারকুলার কোডের একটি 
বাটি খানাতল্লাস করিয়া মমুত হাজরা ওরফে শশাঙ্ক ভাঁজরা প্রভৃতি 
চার জনকে গ্রেফ ভার করে। পরে আরো ছুই জন ধুভ ভ। 
সেখানে বোমা তৈরীর সাজ সরঞ্জাম পাওয়া যায় । এই বোদা 
ধরণ ড্যালহাউসি স্কোয়ার, মেদিনীপুর ( এপ্রভাবের বাটিতে 
(১৯০৯) ফেলা হয় )১ দিল্লী (যাহা বড়লাটের উপর ফেলা হয়), 
মৌলহী বাজান, লাচোর (১৯১৩ ), মরমনসিংঙ্য (১৯১৩) এবং 
ভদ্রেশ্বরের (১৯১৩) বোধারই মতন বলিয়া বিচাঁরকগণন সিদ্ধান্ত 
করেন 1 শশাঙ্ ওরফে অমুত হাঁজরার ঘরে এই বোম! পাওয়া বায় 
বলিয়া বিচারকগণ মনে করেন বে সে বিপ্লব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । অন্ধ 
আসামীদের বড়বন্ত্রে লিপু করা যাঁয় না । শশান্কের কঠোর শা 
হয়। হারা অন্তণীলনেরই লোক বলিয়া মামলায় সাব্যস্ত হয়। 

ফরিদপুর মামল।। ফরিদপুর ( মাদারীপুর ) বড়ণঃ 
মামলায় পুর্ণচন্ত্র দাস প্রভৃতি অনেকে গ্রেফতার ভন কিছু 
পুলিশ শেষ পর্য্যস্ত নালা চালায় না, ছয় মাস চালাইয়। সরকার 
পক্ষ সাক্ষা প্রমাঁণের অন্ভাব হেতু মামা তুলিয়। লয়। সরকার 


ষড়যন্্ মামলা ২০৯ 


পক্ষের কৌন্সলী মিঃ এন্‌ গুপ্ত বলেন, সাক্ষীর! ভয়ে সাক্ষ্য দিতে 
চাহে না; সুতরাং মামলা চালান অসম্ভব বলিয়া সরকার মামল! 
তুলিয়া লইলেন। এই সম্পর্কে সাক্ষীকে ভীতিপ্রদর্শন করার 
অভিযোগে বামনচন্জ্র চক্রবর্তীর সাজা হয়। 

বে কয়েকটি প্রধান প্রধান ষড়যন্ত্র মূলক মামলার বিব্র্ণ 
সরকারী বিবরণীতে লিপিবদ্ধ হইয়াছে, তাহাই মাজ এখানে 
দেওয়া হইল ; ইহা ছড়া বহু মামলা! হইয়াছে । কোথাও আসামীদের 
সাজা হইয়াছে কোথাও তাহারা খালাস হইয়াছে। দ্বিতীয় 
আলিপুর মামলা, শাখথারি টোলার মামলা, কাঁকোঁরী, দেওঘর 
দক্ষিণেশ্বর শোঁভাবাজার, স্ুকিয়াস্রট বোমার কারখানা সম্পকিত 
মামলার বিবরণের কোন রিপোর্ট প্রকাশিত না হওয়ায় লিপিবদ্ধ 
কর! সম্ভব হইঙ্স না । 

বাংলাদেশে বিপ্লব আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ আরম্ভ হয় ১৯০৬ 
সাল হইতে । অবশ্ঠ বারীন্ত্র প্রভৃতির উদ্যোগে ১৯০২--০৩ সাল 
হইতেই বিপ্লব আন্দোলন সম্পকিত গুপ্ত সমিতির সুত্রপাঁত হইয়াছিল। 

প্রথম প্রথম বিপ্লবীদের জঙ্গী বিভাগের ( ৬9127০০ ) কার্য 
তেমন সাফল্য লাভ করে নাই; সাফল্য লাভে বিপ্লবীদের মধ্যে 
তেমন দৃঢ় সংকল্পও যেন তখন জাগে নাই। সত্যই ১৯০৬ 
সালে রংপুরে বিপ্রবীর! ডাকাতি করিতে গিয়া, এর গ্রামে একজন 
দারোগা আছে, ইহা! জানিয়াই চলিয়া আসে । কিন্ত ইহার পর 
ক্রমেই বিপ্লবীদের জঙ্গী বিড্লীগের কার্যে অধিকতর দৃঢ় সংকল্প, 
সাহস, কৌশল লক্ষিত হয় । 


১৪ 


ইঃ বাংলায় 'বিপ্লিববাদ 


নিয়ে আমরা ১৯০৬ সাল হইতে ১৯১৮ সাল পধ্যন্ত সমগ্র 
বাংলার বিভিন্ন বিপ্রবদলের অনুষ্ঠিত ঘটনাবলীর উল্লেখ করিতেছি। 

১৯০৬ সাল। রংপুরের মহিপুর গ্রামে এবং ঢাকা জেলো৷ শেখর 
নগর গ্রামে ডাকাতির চেষ্টা হয়, কৃতকাধ্য হয় না। 

১৯০৭ সাল। '্মক্টোবরে এবং ৬ই ডিসেম্বরে যুগান্তর দলের দ্বার 
বাংলার পাটের ট্রেণ উড়াইয়! দিবার চেষ্টা হয়। এবং বে ট্রেণে 
লাটস্াহেব ছিলেন নারায়ণগড়ের কাছে তাহা সতাই বোমা 
বিস্ফোরণে লাইনচ্যুত হয়। অবশ লাটসাহেবের কিছু $য় নাই। 
এই ঘটনায় বাংলার পুলিশ জনকয় নির্দোধী কুলিকে ধারিয়া সাজা 
দের, এবং হতভাঁগ্যদের দেষ না করিলেও+ দোষ স্বীকাদ করিয়া 
সাঁজা গ্রহণে বাধ্য করে । পরে বিপ্রবীদের স্বাকারোন্তিতে সফল 
রহস্য চে হয়| | 

১৯০৭ সাল । নিতাইগঞ্জে (নারায়ণগঞ্জ ) একজন লেকিকে 
(কুলী) ছোরা মারিয়া টাক! ছিনাইয়া লওয়ার চেষ্টা হয়। কয়েক 
সহজ টাকা লইয়া কুলি যাইতেছিল। টাকা ছিট্কাইয়া পাড়া 
মাওয়ায় বিপ্লবীদের হাতে আসে নাই । ফরাসী চন্দননগঞ্জে গাড়া 
উল্টাইবার ব্যর্থ চেষ্টা হয়। মেদিনীপুর নারায়ণগড়েও তেদান বাথ 
চেষ্টা হয়। ২৩এ ডিসেম্বরে ঢাকার খ্যাজিষ্ট্রেট মিঃ এলেনের উপর 
গোয়ালন্দে গুলি নিক্ষিপ্ত হয়। আঘাত গুরুভর হইলেও তিণি 


বন্দ পান। 
১৯০৮ সাল। হাওড়া জেলার হ্রনপাড়ায় (থানা শিখ? রর. 


ডাকাতি হয়। ফরাসী চন্দননগরে ভথাকার মেয়রেপ বাটতে 


ষড়যন্ত্র মামল। ২১১ 


বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। মেয়র আহত হন নাই। ৩০এ এপ্রিল 
বিহীরের মজঃফরপুরে বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। ফলে মিসেস ও 
মিস্‌ কেনেডি মি্হত হন, অপর এক ব্যক্তি আহত হয়। এই 
বৌমা নিক্ষেপের অপরাধে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়। প্রফুল্ল চাঁকী 
ধৃত হওয়ার মুখেই পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করে। 

এই ১৯০৮ সালেই ( ২রা মে) প্রথম আলিপুর ষড়ঘন্ত্র মামল! 
আরম্ভ হয়। ১৯১০ সালে মামলা শেষ হয়। ১৯১০ সালের ১লা 
ফেব্রুয়ারী আপীলের শেষ রায় বাহির হয় । তিন জনের সাত বৎসরঃ 
এবং চার জনের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর, চার জনের সাত বৎসর, এবং 
তিন জনের পাঁচ বৎসর সাজা হয়। 

১৫ই মে কলিকাতা গ্রে স্ত্রীটে বোম! বিস্ফোরণ ঘটে । তাহাতে 
চার জন লোক জথম হয়। এ সালের জুন হইতে ডিসেম্বরের মধ্যে 
কলিকাতা নিকটব্তী কাঁকিনাড়া, শ্যামনগর, সোদপুর প্রভৃতি 
ষ্টেশনে গাড়ীতে বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। মারাত্মক কিছু হয় নাই। 
একজন ইউরোপীয় ভদ্রলোক গুরুতররূপে জখম হইয়াছিলেন। 

২বা জুন ঢাঁকা জেলার বাসাতে ভীষণ ডাকাতি হয়। 
রাজনীতিক ডাকাতির মধ্যে ইহাই সর্বপ্রথম বড় ডাকাতি। এই 
ডাকাতিতে চার জন নিহত হয়। বহু জখম হয়। গ্রামবাসী ও 
পুলিশ সমবেত হইয়া বন্দুক লইয়া বিপ্লবীদের আক্রমণ করে। 
একজন বিপ্লবীও নিহত হয়। ২৫৭৮৩৭২ পাওয়া যায়। 

১৪ই আগষ্ট টাকা সাটি্্পাড়া নৌকা! চুরি হয় তিন জনের 
জৈল হয়। ময়মনসিংহ বাজিতপুরে ১৭০০২ ডাকাতি হয় এক 


২১২ বাংলায় বিপ্লীববাদ 


জনের দেড় বংসর ও এক জনের এক বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড 
হয়। 

১লা সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলে আলিপুর যড়বন্্র মামলার 
এগ্রুভার নরেন গৌঁসাই যখন সব কথা বলিয়া দিতেছিল, মেই 
সময়ে ষড়যন্ত্র মামলার অন্ত ছুই জন আসামী কানাইদত্ত ও সতোন্তর 
বন্ধ তাহাকে জেল হাসপাতালে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে। 
কানাই ও সত্যেন্দ্রের ফাসি হয়। 

১৬ই সেপ্টেম্বর হুগলী জেলার বিঘাঁতিতে ( ভদ্বেশ্বর থানায়) 
৫৩৬২ ডাকাতি হয়। এক জনের ছয় বৎসর, ছুই জনের পাচ 
বৃংসর, এবং একজনেবু সাড়ে তিন বৎসর, সশ্রম কারাদণ্ড হয়। 

৩০এ অক্টোবর ফরিদপুর জেলার নরিয়া ( পালং ) হাট পুট 
হয়। ৬৭০২ পাওয়া যাঁয়। ক্ষতি হয় ৬৪০০২ | ছুই জন লোক 
খুন হয়। কেহই ধৃত হয় না। 

৭ই নভেম্বর কলিকাতা ওভারটুন হলে সার এগ, ফ্রেজারের 
উপর জিতেন বায় পিস্তলের গুলি ছোড়ে । সার এগ. ফ্রেছার 
আহত হন না। জিতেনকে অকুস্থলেই ধরা হয় এবং তাহার 
দশ বৎসর কারাদণ্ড হয়। 
মই নভেম্বর সারপেনটাইন লেনে সাব ইন্সপেক্টর নন্দলাল 
ব্যানাজ্জীকে হত্যা কর হয়। কেহ ধৃত হয় না। 

১৪ই নভেম্বর টাকার রমনাতে যুবক সুকুমার চক্রবন্তীকে 
খুন করা হয়।. এ নভেম্বরেই হাঁওড়াডতি কেশবচন্্র দে ও ঢাকা 
রমনাতে অন্নদ! ঘোষকে খুন করা হয় । শেষোক্ত তিনটি হত্যায় কেং 


ষড়যন্ত্র মামলা ২১৩ 


ধৃত হয় নাই--বা কোন মামলা হয় নাই। সরকারী বিবরণীতে 
প্রকাশ, পুলিশের বিশ্বাস যে, এই তিন জনই সমিতির বিরুদ্ধে 
খবর ব৷ সাক্ষ্য দিবে এই ভয়েই তাহাদের হত্যা করা হয়। 

২৯এ নভেম্বর নদীয়া জেলার রাইত1 ডাকাতি হয়। কোন 
মামলা হয় না । 

২রা ডিসেম্বর হুগলী জেলার মোরিহালে ১৩০২ ডাকাতি হয়। 
একজন জথম হয় | মামলায় এক জনের সাত বছর সাজা হয়। 

এই ১৯০৮ সালের নভেম্ঘরেই প্রথম নয় জনকে তিন আইনে 
আটক করা হয়। ১১ই ডিসেম্বর ১৯০৮ সালে নূতন আইন পাশ 
হয় (01110017071 12৬ 10910016 ঞ&০৮ সিভি 1908 ).1 
এই আইনের বলে কতকগুলি মামল! জী বাঁদ দিয়াই তিন জন 
হাইকোর্টের বিচারপতি বারা তৈরী স্পেশাল বেঞ্চে হইতে পারিবে 
নির্দিষ্ট হয় এবং এই আইনের বলেই সপরিষদ বড় লাট কতগুলি 
সমিতিকে বে-আইনী বলিয়া ঘোষণা করিবার অধিকার লাভ 
করেন। এই আইনের বলেই ১৯০৯ সালের জানুয়ারী মাসে পূর্ব 
বাংলায় ঢাক৷ অনুশীলন সমিতি, ফরিদপুরের ব্রতী সমিতি, ময়মন- 
সিংহের স্থুহৃদ ও সাধনা সমিতি বে-আইনী বলিয়৷ ঘোঁষিত হয়। 

১৯০৯ সাল । ১লাআ্য়ারী কুমিল্লায় অস্ত্র অপহরণ করা হয়। 
টাকার ন্বাবেরও তিনটি রাইফেল চুরি যায়। 

১০ই ফেব্রুয়ারী কলিকাতায় পাবলিক প্রসিকিউটার 
আশুতোষ বিশ্বাসকে ( খঁনিই নরেন গৌসায়ের খুনের মামলায় 
সরকার পক্ষে ছিলেন ) হত্যা করা হয়। হত্যাকারীর ফাঁসি হয়। 


২১৪ ংলায় বিপ্লববাদ 


১০ই ফেব্রুয়ারী এবং ৫ই এপ্রিল যথাক্রমে বেলঘরিয়া ও 
আগড়পাড়ায় নারিকেল খোলের বোমা বিস্ফোরণ হয়। ছুই জন 
আহত হয়। 

২৭এ ফেব্রুয়ারী হুগলী জেলার হরিপাল থানার মাশুপুর 
গ্রামে ৫০০২ ডাঁকাতি হয় । দশ বার জন যুবক ডাকাতিতে ছিল। 
কোন মামলা হয় নাই । 

২৩এ এপ্রিল ১৪ পরগণার নেত্রায় / থানা ডায়মণ্ড ঠারবার) 
২.৪০০. ডাঁকাতি হয়। ডাকাতদের সঙ্গে বন্দুক ছিল। 

ওরা জুন ফরিদপুর জেলার ফতেজংপুরে প্রিয়নাথ চাটাজ্ঞা 
পিস্তলের গুলিতে নিহত হয়। তাহার ভ্রাতা গণেশকে হত্যা 
করিতে গিয়া "ছল ক্রমে তাহাকে তত্যা করা চচয় বলিয়া প্রকাশ 
পায়। মামলায় আসামীর সাজা হয় না। 

১৬৮ই আগষ্ট খুলনা জেলার নাংলায় ১০৭০২ ডাঁকাতি হয়। 
মামলার এক জনের সাত বধ্সর সাজা হয়। 

১৬৯ হইতে ৩*এ আগস্ট পর্যন্ত নাংল! ষড়যন্ত্র মামলা হয় । ছয় 
জনের সাত বসরের দ্বীপান্তর বাঁস হয়। তিন জনের পাঁচ বংসর 
এবং দুই জনের তিন বৎসরের সাজা হয়। 

২৪এ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলার হোগুলবুনিয়ায় ৫০. ডাকাত 
হয় । একজন লোক আভত হুয়। এই ডাকাতিতে বন্দুক ও 
পিল্তল ব্যবহৃত হইয়াছিল । 

১১ই অক্টোবর ঢাকা রাজেন্্রপুরে ২১০৭২ ট্রেণ ডাকাতি হয়! 
একজন দারোয়ান নিহত হয়, একজন আঁহত হয়। এই মামলায় 


ষড়যন্ত্র মামলা ২১৫ 


একজনের যাঁবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। পাট ব্যাপারী সাঁহেব কোম্পানীর 
টাকা নারায়ণগঞ্জ হইতে দারোয়ান মারফৎ যাঁইতেছিল। চলতি 
ট্রেণে দারোয়ানদের নিহত ও 'আহত করিয়া ২৩১,০০২ টাকা 
নেওয়! হয়। রাস্তায় অনেক টাকা পড়িয়া যাঁয়। ১১,৮৬৪, টাঁকা 
রাস্তায় পাওয়া যায়। 

১৯৬ই অক্টোবর ফরিদপুর জেলার দরিয়াঁপুরে ২,৬০০২ ডাকাতি 
হয়। এখানে পিস্তল বাবহৃত হইয়াছিল । 

২৮এ অক্টোবর নদীয়। জেলার হলুদ্ববাঁড়ীতে ১,৪০২ ডাঁকাঁতি 
হ্য়। এই ডাকাতি মামলায় পাঁচ জনের আট বৎসর এক জনের 
সাত বখসর, এক জনের পাঁচ বৎসর কারাদণ্ড হয়। পর 

১০ই নভেম্বর ঢাঁকার রাঁজনগরে ২৭,৮২৭২ ডাঁকাতি হয়। 
কে5 ধৃত হয় না। 

১১ই নভেম্বর ত্রিপুরা জেলার মতলব থানার মোহনপুরে 
১৬,৪০২ ডাকাতি হয়। একডন লোক আহত হয়। কেহ ধৃত 
হয়না । এই পর পর ছুইটি ভাকাতিই ঢাকা সমিতির সোনার 
স্থল কেন্দ্র হইতে পরিচালিত হয় বলিয়া! সিডিশন কমিটি তাহাদের 
বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন । 

২৪এ নভেম্বর আগরতলায় রাঁজ্যাতিষেক উপলক্ষে সন্নাসীবেশে 
ছুই জন ধৃত হইয়া! মুচলেকায় আবন্ধ হয়। 

২৭এ ডিসেম্বর যশোহর বাইকারা ৮১৪. ডাকাতি হয়। 
এই খানেও পিস্তল ব্যরুঘিত হইয়াছিল । কেহ ধৃত হয় নাই। 

১৯১০ সাল। ২৪এ জানুয়ারী কলিকাতা! হাইকোর্টে পুলিসেব' 


২১৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


ডেপুটি হুপারিণটেন্ডেন্ট সামশুল আলমকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা 
করা হয়। হত্যাকারীর ফাসি হয়। 

মার্চে হাওড়! ষড়যন্ত্র মামলার সূত্রপাত হয়। ৭ই ক্রেক্রয়ারী 
খুলনার সোলেগীতিতে ২০০২ ডাকাতি হয়। কেহ ধৃত হয় না। 

১১ই ফেব্রুয়ারী যশোহরের ধুলগ্রামে ৬১৭৫২ ডাকাতি হয়। 
কোন মামলা! হয় না। 

৩০এ মাচ্চ খুলনার নন্দনপুরে ৬,৫০০ ডাকাতি হয়। কোন 
মামলা হয় না । ৫ই জুলাই যশোহরের মহিষা (থানা মহম্মদপুর ) 
২১২০৪. ডাকাতি হয় । এই ডাকাতিতে একজনের ছয় বংসর এক 
জনের পাঁচ বৎসর, তিন জলের তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। 

২৯এ জুলাই ঢাক] ষড়যন্ত্র মামলার সুত্রপাত হয়। ২১এ জুলাই 
ময়মনসিংহ জেলার গোলকপুরে বন্দুক অপঙহাত হয়। ৫ই সেপ্টেম্বর 
ঢাকা হলদিয়াহাট (থানা লোহজং ) ১৫০০২ ডাকাতি হয়। 
একজন লোক নিহত হয়ঃ এবং অনেকে আহত ভয়। কেহ ধৃত 
হয় না। 

ণই নভেম্বর ফরিদপুর জেলার কালারগীঁজ ( থানা ভেদরগঞ্জ ) 
১২৬৬০২ ডাকাতি হয়। কেহ ধৃত হয় না। 

৩০এ নভেম্বর বাথরগঞ্জ জেলার দাদপুর ( থান! মেহেদীগঞ্জ । 
৪ ৯৩৬৮২ ডাকাতি হয় । পাঁচ জন লোক আহত হয়। কোন 
মালা হয় না। 

শেষোক্ত তিনটি ডাকাতি ঢাকা সমিতির সোনারঙ্গ স্কুল কেন্র 
হইতে পরিচালিত এবং সংগৃহীভ অর্থের কতকটা অংশ ঢাকা 


ষড়যন্্ মামলা ২১৭ 


ষড়যন্ত্র মামলা পরিচাঁলনে ব্যয়িত হইয়াছে বলিয়! সিডিশন কমিটির 
রিপোর্টে লিপিবদ্ধ হইয়াছে । 

১৯১১ সাল। ২১এ জানুয়ারী ঢাকা সোনারঙ্গে পিয়নকে 
মারধর করার জন্য সৌনারঙ্গ স্কুলের ছয় জনের সাজা হয়। €ই 
ফেব্রুয়ারী ফরিদপুর জেলার পণ্ডিতচরে ৫,৫০০. ডাঁকাতি হয়। 
মামলা হয় না । কেহ ধৃত হয় নাই । 

২০এ ফেব্রুয়ারী ঢাকা গাঁওদিয়া : থানা লোহজং ) ৭১৪৫৭ 
ডাকাতি হয়॥ মামলা হয় না! কেহ ধৃত হয় নাই। 

৩১এ মাঁচ্চ ম়্মনসিংহ সুয়াকৈর ১২০০২ ডাকাতি হয়। 
একজন লোক আহত হয়। 

১*ই এপ্রিল ঢাঁকা রাউৎভোগে মনৌমোৌহন দে নিহত হয়। 
কেহ ধৃত হয় না। মনোমোহন ঢীকা মামলায় ও মুন্সীগঞ্জ বৌমার 
মামলায় সাক্ষা দেয়। ২২এ এপ্রিল বাখরগঞ্জের লক্ষণকাটি 
১০,২০০ ভাঁকাতি হয় । কেহ ধৃত হয় না । ৩০এ এপ্রিল ময়মন 
সিংহ জেলার চরশসায় ২১৫০২ ডাকাতি হয়। কেহ ধত হয় না। 
ত্রিপুরা জেলার বরকাস্তায় ২৬০২ ভাকাতি। কেহ ধৃত হয় না। 

১৯এজুন ময়মনসিংহ সহরে পুলিশ সবইন্স্পেক্টর রাজকুমার 
গুলিতে নিহত হয়। 

১১ই জুলাই ঢাকা সোনারঙ্গে তিন জন লোককে হত্যা কর! 
ঈয়। কেহ ধৃত হয় না। ২৭এ জুলাই ময়মনসিংহ সারাচর 


ডাকাতি হয়। টাকা পঞ্না না। একজন যুবকের পাঁচ বংসরের 
সাজা হয়। 


২১৮ ংলায় বিপ্লববাদ 


৫ই সেপ্টেম্বর ঢাঁকা সিঙ্গইর বাঁজীর লুট হয়। ৮১৭০২ পাওয়া 
ধায়। কেহধৃতহয়না। 

৩রা অক্টোবর কুলিয়াচর বাঁজারে ৩,১২৫ ডাঁকতি হয়৷ 
একজন লোক আহত হয়। 

৬ই নভেম্বর রংপুরের বালিয়া গ্রামে ১২১৮৯ ডাকাতি 
হয়| 

১১ই ডিসেম্বর বরিশালে পুলিশ ইন্স্পেক্টর মনমোহন ঘোষকে 
০২০৮৪] [20017085007 দিনেই হত! করা হয়। ইন্স্পৈরীর 
ঢাকা যড়ন্ত্র মামলায় একজন সাক্গী ছিলেন । 

৩১এ ডিসেম্বর নোয়াখালির চাউল পলিতে ৯৯৭৭২ ভাঁকাঁত 
ভয় । কেহ ধুত হয়না। 

এট বৎসর যদিও অধিকাঃশ ঘটনা পূর্বববঙ্গে ঘটে, কিন্তু দুটি 
টল্লেখ যোগ্য ঘটনা! কলিকাতার রাস্তায় অনুষ্ঠিত হয়। 

গোয়েন্দা বিন্ভাগের হেড কনষ্রেবল প্ীশচন্ত্র চক্রবন্তীকে ২১এ 
ফেব্রুয়ারী ভত্যা করা হয় । এই ঘটনার একপক্ষ মধো ওরা মা্চ 
সন্ধ্যার সময় ১৬ বছরের একটি বালক কর্তৃক মিঃ কাঁউলি নামধ 
একজন ইউরোপীয় ভদ্রলোকের মোটর গাড়ীর উপর বোমা নিক্ষি€্ 
হয়। বোঁমাঁটি ফাটে না । কিস্কু নিক্ষেপকারী তথনই দূত হয়! 
পরে জানা যায় যে বোমাটি গোয়েন্দা বিভাগের বড় কর্ণচার 
ডেন্চ্যাম সাহেবের উদ্দেশ্তেই নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল । 

১৯১২ সাল। ২৩এ জাম্রয়ারী ঢাকা বাই টেওয়ারী 


১,৪৭৯. ডাকাতি হয়। 


ষড়যন্ত্র মামলা ২১৯ 


২১এ ফেব্রুয়ারী ঢাকা আইনপুর ( ঘিয়র থান1) ৭১৫৯৩ 
ডাকাতি হয়। 

কোল। ডাঁকাতিও এই সালেই অনুষ্ঠিত হয় । 

১৭ই এপ্রিল বাখরগঞ্রের কুসঙ্গল ডাকাতি হয় । বরিশাল 
ষড়যন্ত্র মামলায় প্রকাশ এই ডাকাতির উদ্দেশ্ত ছিল একটি সরকারী 
বন্দুক, তাহ! লভা হইয়াছিল । ১৯এ কাকুরিয়া ভাকাতি হয় । 

২৩এ মে বরিশাল জেলায় বিরঙ্গল ৮০৮০২ ডাকাতি হয়। 
কেহ ধরা পড়ে না। 

জন মাঁসে ফেণীতে সারদ। চক্রবর্তীকে হত্যা করা হয়। স্মিতির 
বিরুদ্ধে সে অপরাধ করিয়াছিল বলিয়াই নাকি সাজা! হিসাঁবে 
( 41501111787) এই হত্যাকাণ্ড অনঙ্গিত হয় । 

১১ই জুলাই ঢাকায় পানামে ২০,০০*২ ডাকাতি হয়। 
একজন লোক গুলিতে আহত হয়। গ্রামবাসীও বন্দূক ছু ডিয়াছিল। 

১৫ই জুলাই বাখরগঞ্জ জেলার প্রতাঁপপুরে ৭.৫৯৫২ ডাকাতি 
হর। দুইজন লোক আহত হয়। 

২৪এ সেপ্টেম্বর ঢাকা গোয়ালনগরে হেডকুন্ষ্টেবল রতিলাল 
রায়কে হত্যা করা হয়। কাহাকেও গ্রেফ তাঁর করা যাঁয় নাই ' 

২৭এ অক্টোবর কুমিল্লীয় ডাকাতি করার উদ্যোগ করার 
অপরাধে দশজনের সাত বৎসর করিয়া সাজ! হয় । 

১৪ই নভেম্বর ঢাকা লাঙ্ষলবন্দে ১৬,০০২ ডাঁকাঁতি হয়। 
রী ছুই শত গ্রামবাসী ফ্টাকাতদের বাঁধা দিতে সমবেত হইলে 
তাহারা (বিপ্লবীরা ) চার জনে গুলি ছুঁড়িয়া তাহাদের দূরে রাঁথে। 


২২০ ংলায় বিল্লববাদ 


এই ডাকাতির “মাল' পাওয়া যাঁয় বলিয়া! গিরীন্্রমোহন দাসের 
পাঁচ বংসরের সাজা হয়। সে একরার করিয়াছিল । 

২৮এ নভেম্বর চাকা ওয়ারীতে গিরীন্দ্র দাসের বাক্সে অন্্র-শ্ 
পাওয়া যায়। কতকগুলি বন্দুক, রিভলভার, কার্টি জ, গুলি বারুদ 
ইত্যাদি অন্ত্র-শস্্র এবং লাঙ্গলবন্দ ডাকাতির গহনা পত্র পাওয়া 
যায়। গিরীন্দ্রের পিতা ছিলেন ম্যাজিষ্ট্রেটে। পুত্র বিপ্রবীদলে 
মিশিয়াছে সন্দেচে তিনি পুত্রের বাক্স খোলেন--পুলিশকে ডাকিয় 
পুভ্রকে এবং অস্ত্রশস্ত্র ধরাইয়া দেন । গিরীন্র অবশেষে একরাব 
করে। আঅন্্ আইনে তাহার আঠার নাস সাঁজা হয়। বরিশাল 
বড়ব্ধ মামলায়ও সে এপ্রজার ইয়। 

১৩ই ডিসেম্বর মেদিনীপুর বোমার মামলার সাক্ষী আবদাৰ 
প্রহিমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তাহার গ্ুহে বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। 
বোমা বিস্ফোরিত হয়| কিন্তু আব্দার রহিম সে ঘরে পে রাত্রে 
ছিল না, তাভার কন্তা আশ্চর্য্য রকমে বাচিয়া যায় । 

১৯১৩ সাল। ৪ঠা.ফেব্রুয়া'রী ঢাঁকা ভরাকরে (থানা টঙ্গীবাড়ী। 
৩৪০০২ ডাঁকাতি, হয়। একজনের দুই বৎসরের সাজা হয়। 

৪ঠ] ফেব্রুয়ারী ময়মননিংহ ধুলদিয়ায় (থানা কৈঠাদি ) ৯,০৪৬, 
ডাকাতি হয়। একজন লোক নিহত হয়--ভিনজন আহত ই। 
পিস্তলের সঙ্গে বোমাও ব্যবহৃত হইয়াছিল । 

২৭এ মাচ্চ সিলেট মৌলবীবাজারে গর্ডন সাহেবকে বোগা 
মারিয়া হত্যা করার উদ্দেস্তে ছুইজন ঈবপ্রবী সমবেত হয়। হঠাৎ 
বোমা ফাটিয়া একজন বিপ্রবী এ বাগানেই মারা যায় । 


ষড়বন্ত্র মামলা ২২১ 


৩রা এপ্রিল গোপালপুরে ৬০৪৫২ ডাঁকাতি হয়। একজন 
লোক আহত হয়। 

২৯এ মে ফরিদপুর কাওয়াকুরীতে (মাদারীপুর থানায়) ৫,১৩০. 
ডাকাঁতি হয়। কেহই ধর! পড়ে না। 

২৮এ জুন ঢাকা কামারাঙ্গীচরে (রূপগঞ্জ থানা) ২১২৬০২ 
ডাঁকাতি হয়, কেহ ধর! পড়ে না! 

১৬ই আগষ্ট ময়মনসিংহ কেদারপুরে ১৯১৮০০২ ভাকাতি হয়। 
একজন ভৃতা হত হয় এবং পাঁচ জন লোক আহত হয়। কেহই 
ধরা! পড়ে ন!। 

২৯এ সেপ্টেম্বর কলিকাতা কলেজ স্কোয়ারে হেডকন্ট্রেবল 
হরিপদ দেবকে গুলির আঘাতে নিহত করা হয়। 

৩*এ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহে পুলিশ ইন্দ্পেক্টুর বঙ্কিমচন্তর 
চৌধুরীকে বোম! নিক্ষেপে হত্যা করা হয়। 

৭ই নভেপ্বর ২৪ পরগণা ছত্রবাড়িয়ায় ৮৬৮২ ডাকাতি হয়। 
কেহ ধরা পড়ে না। 

২৪এ নভেম্বর ময়মনমিংহ সাঁরাচর ৪+৩৯০ ডাকাতি হয়। 
কেহ ধরা পড়ে না। | 

৩০এ ডিসেম্বর ত্রিপুরা জেলার খারামপুরে (ত্রাহ্মণবাড়িয। ) 
৬০০০২ ডাঁকাঁতি হয়। কেহ ধর! পড়ে না। 

১৯এ ডিসেম্বর কুমিল্লা পশ্চিমসিংহে ৩,১০০ ডাঁকাঁতি হয়। 
একজন লোক আহত হয় 1৪ কেহ ধর! পড়ে না। 

৩এ ডিসেম্বর ডড্রেশ্বরে বোম! নিক্ষিপ্ত হয়। 


২২২ ংলায় বিপ্লববাদ 


নভেম্বর মাসে কলিকাতা রাজাবাজারে বোমা নিম্মীনের সরগ্তাম 
আবিষ্কৃত হয়। 

এই সালের মে মাসে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলার সুক্রপাত হয়। 
এই মে মাসেই লাহোরের রাস্তায় একটি বোমা বিক্ফোরণ 
হয়। ফলে একজন চাঁপরাঁশী নিহত হয়। একজন বাঙালী 
ইহা স্থাপন করিয়াছিল বলিয়া সিডিশন কমিটি লিপিবদ্ধ 
করিয়াছে । 

১৯১৪ সাল। এই সালের ঘটনাবলা গবর্ণমেণ্ট পিপোটে তিন 
ভাগে বিভক্ত হইয়াছে । পূর্ববঙ্গ, হুগলি ও ২৪ পরগণা জেলা 
এবং খাম কলিকাতা । আমরাও সেই বিভাগ অনুযায়ীই ঘটনার 
হিলাব দিতেছি । 

জাতয়ারী মাসে নয়মনসিংহ চারলিরার চরে ডাকাতির চেষ্টা 
হয । 

৮ই মে ত্রিপুরা জেলার গোনাইপুধে (নবীনগর পানা) ৫১৫০০৯ 
ডাকাতি হয় । একজন গ্রামবাসী আহত হয় । ৃ 

১৯এ মে চট্টগ্রাম সহরে সত্োন্্র সেনকে গুলি কারয়া ঠত্যা 
করা হয়। নি ব্যক্তি পুলিদে খবর যোগাইত বলিয়া বিধীরা 
সন্দেহ করিত । কেহ ধূত হয় নাই। 

১৯এ জুলাই ঢাকা সহ্থবে রামদাসকে গুলি করিয়া হ্যা কথ 
হয়। রামদাস ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেপ্ট বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের 
নির্দেশ অনুযায়ী বিপ্রবীদলের বিরুদ্ধে ষ্রাধ্য করিতেছিল । কেঃ 
ধূত হর নাই । 


বড়যন্ত্র মামলা ২২৩ 


২৮এ আগষ্ট ময়মনসিংহ বিতাই (নেত্রকোণা থানা ) 
১৭১৭০০২ ডাঁকাতি হয়। এক ব্যক্তি নিহত হয়, একজন আহত 
হয়। কেহই ধৃত হয় না। 

১৩ই নভেম্বর ময়মনসিংহ কৈঠিয়াদি থানার উকরাশালে 
৪১৮০০. ডাকাতি হয়। কেহ ধৃত হয় না। 

১৯এ নভেম্বর মাদারীপুরে বোমা বিস্ফোরণ হয়। ১৮৯ 
ডিসেম্বর ত্রিপুরা জেলার রাধানগরে ৪৯০০২ ডাঁকাতি হয়। কেহ 
পৃত হয় না। 

২৩এ ভিসেম্বর মরমনসিংহ দারিকপুরে ( ফুলপুর থানা ) 
২৩*০০০২ ডাকাতি হয়। একজন আহত হয়। কেহই ধুত 
হয় না। 

২৫এ ডিসেম্বর ত্রিপুরা জেলার মোচ-নাঁয় ডাকাতির চেষ্টা 
করা হয়। 

ফেব্রুয়ারী মাঁসে হুগলী বৈগ্যবাটী ডাকাতির চেষ্টা হয় । আঁগষ্টে 
বরানগরে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। ৭ই নভেম্বর ২৪ পরগণা 
শানুররাবাদে ১৭০০২ ডাকাতি হয়। কেহ ধৃত হয় না। এই 
ডাকাতিতে মসার পিস্তল বাবহৃত হইয়াছিল । 

এই মাসেই আলমনগরে ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। 

ডিসেম্বরে এড়িয়াদহে (২৪ পরগণা ) ৫১০২ ডাকাতি হয়। 
কেহ ধৃত হয় ন!। 

১৯১৪ সালেরই ২৬ আগষ্ট কলিকাতাঁর বিপ্রবীদলের 
চেষ্টায় বন্দুক ব্যবসায়ী রডা এও কোম্পানীর পঞ্চাশটি মসার 


২২৪ ংলায় বিপ্লববাদ 


পিস্তল ( পিস্তলগুলি এমন নূতন ভাবে তৈরী যে তাহা! রাইফেলের 
মতও ব্যবহৃত হইতে পারিত) এবং ৪৬,০০০ রাউিওু কার্টিজ, 
কোম্পানীরই একজন কেরাণীর দ্বারা . অপহৃত হয়। সিভিশন 
কমিটির রিপোর্টে বলা হইয়াছে, যে, পিস্তলগুলি অপহৃত হওয়ার 
অব্যবহিত পরেই বাংলার নয়টি বিভিন্ন দলে বিতরণ করিয়া 
দেওয়! হয় । কমিটি ইহাঁও বলেন আগস্টের পরে বাংলার অধিকাংশ 
খুন ও ডাকাতিতেই এই মসার পিস্তল বাবহৃত হইয়াছে । বাংলার 
বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন দলের পরবত্ত। ঘটনাবলীতে অস্ত্র ব্যবহারের 
ও ন্ত্র প্রাপ্তির যে সব নিদর্শন পাওয়া গিয়াছে তাহাতে প্রমাণিত 
হইয়াছে যে বাংলার প্রত্যেক দলের হাতেই এই মসার গিয়াছে 
অথবা আদান প্রদান হইয়াছে । পঞ্চাশটির মধ্যে একত্রিশটি পিস্তল 
বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন সময়ে পুলিশ হস্তগত করে। 

এই বৎসরের প্রথমভাগে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্ম্পেরীব 
নৃপেন্্র ঘোষকে চিৎপুর রোডে হত্যা করা হয়। ট্রাম হহতে 
জনাকীর্ণ রাস্তায় নামিবার সময় তাহার উপর গুলি নিক্ষিপ্ত হয়। 
আততারী বলিয়। নিশ্বীলকান্ত বাঁকে ধরা হয়। নিশ্মলকান্ত 
রায়কে যাভারা ধরিয়াছিল তাহাদের বাংলার লাঁট ধন্তাবাদ দেন 
ও পুরস্কৃত করেন। কিন্তু নির্মলকান্ত খালাস পায়। : এ মামলাঃ 
আসামীর পক্ষে মিঃ নর্টন, মি: সি. আর, দাস, মিঃ জে. এন. রায় 
প্রভৃতি দাড়ান। জুরীর! নির্থালকে নির্দোষ বলেন--জজ একনও 
না হইয়া পুনরায় বিচারের আদেখ দেল। নূত্ভন জুরী বদে। 
তান্ারাও বলেন, নির্দোষ ; জজ তবুও একমত হন না। তিনি 


ষড়যন্ত্র মামলা ২২৫ 


পুনরায় জুরী ভাঙ্গিয়। দেন_-তখন সরকার পক্ষ মামলা! তুলিরা 
লন। 

২৫এ নভেম্বর কলিকাতা মুসলমানপাড়ায় ডেপুটি সুপারিন্‌- 
টেণ্ডণ্ট বসস্ত চট্োপাধ্যায়ের বাটিতে ও বাঁটির বাহিরে বোঁমা 
নিক্ষিপ্ত হয়। বসস্ত বাবু দৌড়াইয়া রক্ষা পান-_-একজন হেড 
কন্ট্টেবল নিহুত হয়, দুইজন কন্টবেল, ও বসন্ত চট্টোপাধ্যায়ের 
একজন আত্মীয় আহত হয়। এই বোমার মামলায় নগেন্দ্রনাথ 
সেন ধৃত হইয়া! হাইকোর্টের বিচারে মুক্ত হয় । 

১২ই ফেব্রুয়ারী কলিকাতা গার্ডেন রীচে ১৮,০০*২ ডাকাতি 
হয়। একজনের সাত বতসরের কারাদণ্ড হয়। 

রাজনীতিক ডাকাতিতে ইহাই প্রথম ট্যাক্সি ডাঁকাতি। 
কলিকাত। চাঁটার্ড ব্যাঙ্ক হইতে বা কোম্পানীর দারোয়ান বিশ 
হাজার টাকা নিয়া যাইতেছিল, বিপ্রবীরা ১৮,০০০ টাঁকা পায়। 
সিডিশন কমিটির মতে এই ডাকাতি যতীন্ত্র মুখার্জী ও বিপিন 
গা্গুলীর তন্বাবধানে সম্পন্ন হইয়াছে । ইহারই এক সপ্তাহ পরে 
কলিকাতা বেঙিয়াঘাটার চাউলের ব্যবসায়ীর ক্যাসিয়ারকে 
তহবিলের ২৯১০০*২ টাকা দিতে বাধ্য করা হয় এই ডাকাতিতে 
যে ট্যাক্সি ব্যবত হইয়াছিল তাহার ড্রাইভারকে হত্যা করিয়া 
তাহার মৃতদেহ রাস্তায় পরিত্যক্ত হয়। ইহাও যতীন মুখাজ্জীর 
তত্বাবধানে হইয়াছে বলিয়া সিডিশন কমিটি লিপিবন্ধ করিয়াছে । 

২৪এ ফেব্রুয়ারী কল্সিকাতা পাথুরিয়াঘাটা স্রীটে নিরোদ 
হালদারকে গুলিতে নিহত কর! হয়। নিরোদ দৈবাৎ বিখ্যাত 


১৫ | 


২২৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


বিপ্রবী যতীন্দ্রনাথ মুখাজ্জী যে ঘরে ছিল সেখানে উপস্থিত হয় 
এবং যতীন্দ্রনাথকে চিনিতে পারিয়া তাহার নাম ধরিয়া ডাকে | 

২৮এ ফেব্রুয়ারী কলিকাতা কর্ণওয়ালিস্‌ স্্ীটে ইন্‌স্পেক্টর সুরেশ 
মুখাজ্জী জনৈক ফেরারী বিপ্রবীকে দেখিয়া তাহাকে গ্রেফ তাঁর করিতে 
অগ্রসর হইতেছিলেন, এমন সময় উক্ত ফেরারী ও তাহার চার 
জন সঙ্গী তাহাকে গুলি করিয়া হত্যা করে, আর্দীলী আহত হয়। 

এই বৎসরের সেপ্টগ্বরের মাঝামাঝি বালেশ্বর ইউনিভা রস্যাল 
এস্পোরিয়ামে তল্লাম কর! হয়, এবং পরে মযূবভগ্জ জঙ্গলে ঘতীন্রনাথ, 
চিত্তপ্রিয়, মনোরঞ্জন প্রভৃতি পাঁচ জন বাঙালীর সঙ্গে বালেশ্বরের 
ম্যাজিদ্ট্রেটের খণ্ড যুদ্ধ হয়| যথাস্থানে তাহ] বলা হইয়াছে। 
চিন্তপ্রিয় নিহত হয়, যতীন্দ্রনাথ ও অপর সকলেই গুরুতর আহত 
হয়। যতীন্তরনাথ এই আঘাতের ফলেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়। 
বিপ্রবীদের গুলিতে গ্রামবাসী একজন নিহত হয় এবং পুলিশ পক্ষের 
অনেকে আহত হয়। 

২১এ অক্টোবর মসজিদবাড়ীতে পুলিশ সাব ইন্‌স্পের গিরান 
ব্যানাজ্জীকে নিহত করা হয়, এবং সাব ইন্‌স্পে্টর উপেক্্ চ্যাটাজ্জী 
আহত হয়। ইন্স্পের সতীশ ব্যানার্জী রঙ্গা পায়। 

১৭ই নভেম্বর কর্ণওয়ালিস স্ত্রীটে ৮০০ ডাকাতি হয়| কেহ 
ধৃত হয় না। ূ 

৩,এ নভেম্বর কলিকাতা সারপেনটাইন লেনে একজন কন্টব্ 
এবং স্থানীয় একজন বালক পিস্তলের গুলিতে নিহত হয়। কেহই 
ধৃত হয় নাই । 


ষড়যন্ত্র মামল। ২২৭ 


২রা ডিসেম্বর কর্পোরেশন ট্রাটে ২৫১০০০২ ডাকাতি হয়। 
একজনের তের বৎসর, একজনের দুই বৎসর ও একজনের এক 
বদর সাজা হয়। 

১৪ই ডিসেম্বর শেঠবাগানে ৬+১০০২ ডাকাতি হয় । 

২৭এ ডিসেম্বর চাউলপার্ট রোডে এক ব্যক্তিকে আহত করিয়া 
৭৫০ টাকা সম্বলিত একটি হাত ব্যাগ ছিনাইয়া লওয়া হয়। 

নিম্নের ঘটনাগুলি কলিকাতা হইতে ব্যবস্থা হইয়া কলিকাতার 
আশে পাশে ঘটে। 

৬ই এপ্রিল এড়িয়াদহে ৫০০. ডাকাতি হয় । ৩০এ এপ্রিল 
নদীয়ার প্রাগপুরে ২,৭০০ ডাকাতি হয়। রাস্তা ভুল হওয়ায় 
অনেক পথ নৌকায় আসিতে হয়। একজন পুলিশ ইন্স্পের 
বহু লোকজন লইয়া তাহাদের আক্রমণ করে । এই গোলমালে 
বিপ্লবীরা একজন নিজের লোৌককেই ভুলক্রমে গুলি করিয়া বসে। 
আত্মর্ণার আর উপায় না থাকায়, সঙ্গীর মৃতদেহ নদীতে নিক্ষেপ 
করিয়া নৌকাখানা ডূবাইয়া তাহারা চলিয়া যায়। তিন জনের 
সতের বখসর এবং এক জনের আট বংসর দ্বীপান্তুর হয়। 

২রা আগঞ্ আগড়পাড়ার জনৈক বিল কালেক্টরকে আক্রমণ 
করা হইলে তাহার চীৎকাঁরে একটা গোলমালের সৃষ্টি হয়। ফলে 
ঘটনাস্থুলের কিছু দূরে বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা বিপিন গান্ধুলী পি্তল 
সমেত হত হন। তীহার পাঁচ বসর কারাদণ্ড হয় । 

২৫এ আগষ্ট যুরারী মিত্রকে তাহার বাড়ীতে পিস্তলের গুলিতে 
ইত্যা করা হয়। আঁগড়পাড়ীর ঘটনার তদস্তে মুন্তারী মিঅ ও 


২২৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


তাহার পুত্র প্রভাঁদ পুলিসকে সাহায্য করিতেছিল বলিয়া 
সিডিশন কমিটিতে লিপিবদ্ধ হইয়াছে । 

৩০এ সেপ্টেম্বর নদীয়া জেলার শিবপুরে ২০৭০২ ডাকাতি 
হয়। একজন কন্ষ্টেবল এবং একজন গ্রামবাসী হত হয়, এবং অপর 
এগার জন আহত হয়। নয় জন বিপ্রবী ধৃত হয়। আট জনের 
যাবজ্জীবন ও এক জনের দশ বংসরের দ্বীপাস্তর হয়। সিডিশন কমিটির 
মতে এই ডাকাতি বরিশীল হইতে ১৯১২ সালে কলিকাতায় আগত 
দল দ্বারা অনুষ্ঠিত হয় ২ এবং এই ডাকাতির পরে তাহার! একেবাবে 
কাবু হইসা পড়ে । 

এই সালেই নদীমাতুক পূর্বববঙ্গেও প্রাগপুর এবং শিবপুরের 
মতই নৌকাযোগে ডাকাতি অনুষ্ঠিত হয়। 

২২এ জানুয়ারী ত্রিপুরা জেলায় বাঘমারীতে ৪,১৭০২ ডাঁকাতি 
তয় । কেহ ধূত হয় না। 

ওরা মার্চ কুমিল্লা সহরে জেলা স্কুলের হেড স্রাষ্টারকে হত্যা করা 
হয়। হেডমাষ্টীরের ভৃত্য গুরুতর আহত হয়, এবং পরে মৃত্ঠামুখে 
পতিত হয়। একজন মুসলমান হত্যাকারীদের অনুসরণ করিতেছিল 
তাহাকেও গুলি করা হয়। ৃ 

১১ই মার্চ ত্রিপুরা জেলার বলদায় ৪১০**. ডাকাতি হয়। দু 
জন আহত হয়। 

২৫এ মে জ্রিপুরা জেলার আউরাইলে ৪,২৫০২ ডাকাতি হয়। 

৫ই জুন বাথরগঞ্জ জেলার গাজীপুরে ১৫,*০০২ ডাকাতি মা! 
কেছ ধৃত হয় লা। 


ষড়যন্ত্র মামলা ' ২২৯ 


১৪ই আগষ্ট ত্রিপুরা হরিপুরে ১৮০০*২ ডাকাতি হয়। 
একজন ব্যক্তি গুলিতে নিহত হয়। তিন জন আহত হয়। 

৭ই সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ চন্দ্রকোনায় ২১,৯০২ ডাকাতি হয়। 
একজন গ্রামবাসী নিহত হয় । ছয় জন আহত হয়। 

২৬এ নভেম্বর ময়মনসিংহ রসুলপুরে ৪৬০২ ডাঁকাতি হয়। 
একজন লোক গুলিতে নিহত হয়। 

১৯এ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ সশেরদীঘিতে (বাজিতপুর ) ধীরেন্্ 
বিশ্বাসকে গুলি করিয়া হত্যা করা হয়। বীরেন্দ্র পুলিশের ইন্ফর- 
মারের কাধ্য করিতেছিল বলিয়া প্রকাঁশ পায়। 

২২এ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে কালিয়া চাপড়া ( কৈঠাদি ) 
ডাকাতি হয়। 

২৯এ ডিসেম্বর ত্রিপুরা করকল্লায় (চান্দিনা থান! ) ১৫১০ ০০২, 
ডাকাতি হয়। ছুইব্যক্তি গুলিতে নিহত হয়। 

এই বংসরেই ১৮ই নভেম্বর থবর পাইয়া ঢাকা দলের এ সমর়ের 
নেতৃস্থানীয় অনকুল চক্রবর্তী ও অপর কয়েক জনকে পুলিশ 
গ্রেফতার করে। পরী সঙ্গেই কতকগুলি অস্ত্রশস্ত্র পুলিশের 
হন্গত হয়। 

এই সালেরই ১৯এ অক্টোবর ময়মনসিংহ সহরে পুলিশের 
ডেপুটি স্থপারিন্টেণ্ডে্ট যতীন্্রমৌহন ঘোষকে হত্যা করা হয়। 
তাহার শিশুপুজও ( ক্রোড়ে ছিল ) নিহত হয় । 

এই সালেই উত্তরবর্জে ২৩এ জান্য়ারী রংপুর কুরুল গ্রামে 
৫০০০০. ডাকাতি হয় । কেহ ধরা পড়ে না। 


২৩০ বাংলায় বিপ্লববাদ 


১৬ই ফেব্রুয়ারী রায় সাহেৰ নন্দকুমার বস্থুকে (এডিশনাল 
পুলিশ সাহেব) হত্যা করার উদ্দেস্টে চার জন বিপ্রবী তাহার বাড়ী 
যায় এবং তীহাঁকে ডাকিয়া আনিয়। গুলি ছেড়ে; তিনি অনাহত 
রক্ষা পান তাহার আর্দালী বাধা দিতে গিয়া গুরুতর আঘাতে 
নিহত হয়। 

২০এ ফেব্রুয়ারী রাজসাহী জেলার ধরাইলএ ( নাটোর) 
৩০1৪০ জ্তন যুবক অস্ত্রশস্ত্ে সুসজ্জিত হইয়া ২৫+০৮০. ডাকাতি 
করে। বাড়ীর দারোয়ান গুলিতে নিহত হয়। অপর দুইজনও 
আহত হয়। এইট ডাকাতিও কলিকাতা হইতে ঢাঁকা সমিতি 
কতৃক পরিচালিত হইয়াছে বলিয়া সিডিশন কমিটি লিপিবদ্ধ 
করিয়াছেন । 

১৯১৫ সালেই ভারতে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্টা হয় । ম্যাভেরিক 
জাহাজে জার্দেণীর অস্ত্রশস্ত্র জুনের মাঝামাঝি আসিয়া পড়বার 
কথা। জে অনুযায়ী যতীন মুখাজ্জী, নরেন্দ্র ভক্টীচাধা, অভভুলঘোষ 
প্রভৃতি এ অস্থ-শন্ত্র গ্রহণের ব্যবস্থা করিতেছিলেন । 

সিডিশন কমিটি লিখিতেছেন যে, বাংলার বিপ্লবীরা বিদ্রোঃ 
আরম হইলে যাহাতে বাংলার বাহির হইতে সৈল্গ আসিতে না 
পারে তজ্জন্ত স্থির করিয়াছিল যে, বতীন্ত্রনাথ বালেশ্বর হইতে 
মাদ্রাঞ্জের রেল লাইন আটকাইবেন, ভোলানাথ চ্যাটাজ্জীকে 
চক্রধরপুরে পাঠান হইয়াছিল বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ের তার 
নিতে, সতীশ চক্রবর্তীকে অঞ্জয়ে পাঠাকই়া ই-আই-আর রেলের 
বিজ্ঞ উড়াইবার কথা হয়, কলিকাতার দল নরেন ভট্টাচার্য্য ও 


ষড়যন্ত্র মামলা ২৩১ 


বিপিন গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে কলিকাতার ও কলিকাতার আশে পাশের 
সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র লুটিয়া লইয়! পরে ফোর্ট উইলিয়ম দখল করিবে । 
এবং স্থির হয় যে সব জার্্মীণ অফিসার ম্যাভেরিক জাহাজে আসিবে 
তাহার! পূর্বববন্গে থাকিবে, এবং সেইখানে সৈন্চদল গঠন করিবে 
ও শিক্ষা দিবে। 

ম্যাভেরিক জাহাজ রায়মঙ্গলে আসিলে স্থানীয় জনৈক জমীদারের 
লোকজনের সাহায্যে যাছুগোপাল মুখাজ্জী তাহা গ্রহণ করিবেন। 
আঁশা করা গিয়াছিল যে, এই ভাবে যে জার্্মীণ অস্ত্রশস্্ব আসিবে 
তাহা ১লা জুলাই সর্ধবজ্র বিতরিত হইবে। 

এই জুলাই মাসেই গবর্ণমেপ্ট জার্মীণ অস্ত্র আমদানীর খবর পাঁন। 

৭ই আগস্ট কলিকাতীয় হরি এণ্ড সনস্‌ তল্লাস করিয়া 
পুলিশ জন কয়েক গ্রেফতার করে। মাভেরিক জাহাজ আর 
আসে না। 

এদিকে ১৯১৫ সালের প্রথম ভাগ হইতেই বাঙালী বিপ্লববাদীরা 
সৈম্তদলে কাজ করিতেছিল; সমগ্র উত্তর ভারতের সৈন্য বিগড়ান 
কাজে তাহারা আত্মনিয়োগ করে এবং বিখ্যাত "্গধর, দলের 
বিপবকামীদের সঙ্গে যোগ স্থাপন করে। এই উদ্দেস্তে রাস- 
বিহারীর নেতৃত্বে, শচীন, নলিনী, পিংলে এবং আরও অনেকে 
কাশী, দিলী, মিরাট, জব্বলপুর, লাহোর প্রভৃতি স্থানে কার্য 
করিতে থাকে । প্রিয়নাথ, ভূপতি বেনারস কেক্লার সৈম্যদল 
বিগড়াইবার কার্যে নিচুক্ত হয়, ঈমলিনী বাগটী ( এই নলিনীই 
টাকা, কলতাবাজারে ১৯১৮ সালে পুলিশের সঙ্গে খণ্ড যুদ্ধে 


২৩২ বাংলায় বিপ্লববাদ 


নিহত হয়) জব্বলপুরে ( মধ্য প্রদেশে ) সৈন্য বিগড়াইবার কার্যে 
নিযুক্ত হয়। 

২১এফেব্রুয়ারী সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণার দিন নির্দিউ্ হয়। কিন্ত 
লাহোর হইতে তারিখ বদলাইবার সংবাদ আসে । এই সম্ভাবিত 
বিদ্রোহ ঘোষণার সংবাদ পূর্ববঙ্গের সমিতিগুলিতেও ব্যাপ্ত 
হইয়াছিল, এবং তাহারা উত্থানের জন্ত সজ্জিত ছিল। ২৩এ 
মার্চ মীরাটের কেল্লার মধ্যে পিংলে কতগুলি বোমা সমেত ধূত হয়। 

এই সালের প্রথম ভাগে ১৭ই জানুয়ারী ভাওড়াতে ৬৭০০০ 
ডাকাতি হয়। 

ওযা মার্চ হাঁওড়া দফরপুরে ২,০০২ ডাঁকাতি হয় । বলা ধাঁহল্য 
সর্বত্রই আশ্নে় অস্ত্র ব্যবহাত হইয়াছে । 

৩র! মার্চই বরানগর দল ও বরিশাল দলের অনেকে ধৃত হয়। 

এই সালেই ২৬এ জুন কলিকাতা গোপীরায় লেনে ১১,৫০০৯ 
ডাকাতি করিয়া লওয়া তয়। মালিককে একখানা বাংলায় পত্র 
লিখিয়! ধন্তবাদ দেওয়া হয়, এবং তাহার টাকা সদ সমেত ফেরত 
দেওয়া হইবে বলিয়া প্রতিগ্তুতি দেওয়া হয়। চিঠিতে তারিথ ছিল 
১৪৯ আঁযাঢ় ১৩২২ (২৮এ জুন)। পত্রের নীচে সছি থাকে 

],0391%800 

[12705 55009 10 0৩ 891681 [)াজাতো এ 
17705195795170 (517600]া) 06 9110 17015, 

৪ঠা আগষ্ট সালকিয়া ডোমপাড়াতে অতুল ঘোষ প্রভৃতি 
আত্মগোপন করিয়া আছে, এই সংবাদ পাইয়া! পুলিশ বাড়ী ঘেরাও 


ষড়যন্ত্র মামলা ২৩৩ 


করিয়া তল্লাস করিতে বায়। একজন ফেরারী ধৃত হয়। অন্য 
একজনকেও গ্রেফতার করা হয়। সে হেড. কন্ষ্টেবলকে পিস্তল 
দিয়া গুলি করিয়া পলাইতেছিল । 

এই ঘটনারই দিন কয় পরে রেল গাড়ীতে এক ট্রাঙ্কে একজনের 
মৃত দেহ বিকৃত অবস্থায় পাওয়া যাঁয়। এই মুত ব্যক্তিঃ অতুল 
ঘোষের আত্মীয় । সে পুলিশে খবর দিত বলিয়া তাহাকে সন্দেহ 
করা হইত--সিডিশন কমিটির ইহা অভিমত । 

১৯১৬ সাল। ১৬ই জানুয়ারী প্রাতে মেডিক্যাল কলেজের 
সম্মুখে সাব ইন্সপেক্টর মধুস্থদূন ভট্টাচাধ্যকে গুলিতে হত্যা করা 
হয়। এই সম্পর্কে পরে পাচ জনকে ধৃত করা হয়| তন্মধ্যে 
একজন, পিস্তল সমেত ধৃত, বপ্রিশাল দলের নেতা বলিয়া সিডিশন 
কমিটিতে লিপিবদ্ধ হইয়াছে । 

এই বৎসরের ৩০এ জুন পুলিশের ডেপুটি স্ুপাঁরিন্টেণ্ডেপ্ট 
বসন্ত চট্টোপাধ্যায়কে ভবানীপুর প্রেসিডেন্সি হাসপাতালের সন্িকটে 
দিনের বেলায় বহু জনাকীর্ণ স্বানে তাহার আঁদ্দীলী হেড কন্ষ্টেবলসহ 
উত্যা করিয়া গুলি ছুড়িয্া সকলেই পলাইয়] যায়। সিডিশন 
কমিটির মতে এই হত্যাকাণ্ড ঢাক দলের অন্ুঠিত | 

এই সালেই (১৯১৬ ) পৃ্ববঙ্গে নিয়লিখিত ঘটনা ঘটে :-- 

১৫ই জাহুয়ারী ময়মনসিংহ সুলতানপুর ডাকাতিতে একজন 
লোক নিহত হয়। 

১৯এ জানুয়ারী বাজিতপুরে শশী চক্রবর্তীকে হত্যা, করা হয়। 

৬ই মান্চ ত্রিপুরা জেলার গন্দোরায় (মুরাদনগর ) ১৪,৬৯০ 


২৩৪ বাংলায় বিপ্লববাদ 


ডাকাতি হয়। একজন জখম হয়। একজনের অস্ত্র আইনে ও 
টেলিগ্রাফ তাঁর কাটার জন্ত চার বৎসর সাজা হয়। 

৩০এ এপ্রিল ত্রিপুরা নাটঘরে ১৭,৫০২ ডাঁকাতি হয়। 
কেহ ধৃত হয় না। 

৯ই জুন করিদপুর ধানকাঁটিতে ৪৩,০০২ (হণ) ডাকাতি 
হয়| এই টাঁকার অধিকাংশই কোন কাজে আসে না। কে 
পুত হয় না। 

২রা সেপ্টেম্বর ত্রিপুরা কলার সাহাঁপাছুয়ায় ৩৩৭০২ ডাকাতি 
হয়। কেহ ধৃত হয় না। 

১১৯ সেপ্টেম্বর ত্রিপুর; জেলায় ললীতেশ্বরে ৫৩০২ ডাকাতি 
হয়। এখানে বিপ্রবী ডাকাতদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ভীষণ লড়াই 
হয়। ফলে পাঁচ জন গ্রামবাসী নিহত হয় পাঁচ জন আহত হর। 
এবং একজন বিপ্রবী নিহাত হয় । লিডিশন কমিটির মতে নিহত 
বিপ্লবী এই সালের জুলাই মাসে অস্ধরীণ আটক হইতে পলায়িত 
প্রবোধ তই্রীচাধা | 

সেপ্টেম্বরে ফরিদপুর পালং থানার ভাঙ্ডা ডাকাতির আয়োডণ 
কর! হয়। এই দ্রলষ্ট পরে ১৭ই অক্টোবর ময়মনসিংহ সাহিলদেও 
৮০,৯০২ ডাকাতি করে। বাঁড়ীর মালিক মুদলমান গুলির 
আঘাতে নিহত হয় এবং অপর ছয়জন আহত হয়। 

৩,এ সেপ্টেম্বর ঢাঁকা রামদিনালীতে ( থিয়র থানা ) ৬৫২ 
ডাঁকাতি হয়। সাতজন স্কুলের ছাজ ( ঈশান স্থূল ফরিদপুর ) 45 
হয় ও সাত বৎসর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়্। 


ষড়যন্ত্র মামলা ২৩৫ 


বৎসরের শেষভাগে ময়মনসিংহ ধরাইলে ডাকাতি হয়। বাড়ীর 
মালিকের পুত্র নিহত হয়। টাঁকা বেশী পাওয়া যায় না। 

২৭এ ফেব্রুয়ারী পাবনা জেলার কাদিমপুরে ডাকাতি হয়। 
টাকার কথা উল্লেথ নাই। 

এই সালে ( ১৯১৬ ) উল্লিখিত ঘটনা ব্যতীত ছুইটি ইন্ফরমাঁর 
নিহত হয়, একজন স্কুলের হেড মাষ্টার, বিপ্রবদলের বিদ্রকারী বলিয়! 
নিভত হয়, ঢাকাতে ছুইজন কন্ষ্টেবল নিহত হয়। তাহারা 
ফেরারীদের খোঁজে ছিল। 

১৯১৭ সাল। €ই জানুয়ারী গরাঁণহাটায় জ্ঞান ভৌমিককে 
হত্যার চেষ্টা হয়। জ্ঞান বিপ্রবী দলে ছিল, কিন্তু সে পুলিশে সংবাদ 
দেয় বলিয়া সন্দেহ ভয় । 

এই জান্ুয়ারীতেই সিরাজগঞ্জে রেবতী নাগকে খুন করা হয়। 

২৪এ ফেব্রুয়ারী ঢাকা পাইকারচরে ১,২০০ ডাকাতি হয়! 
কেহ ধৃত হয় না। ১৫ই এপ্রিল রাজসাহী জামনগরে ২৬,৫৬৭২ 
ডাকাতি হয়। এই ডাকাতির তিন মাঁস পর ঢাকা ষ্টেশনে 
ছুই জন বিপ্লবী ধৃত হয়। একজনের বাণ্ডেলে উপরোক্ত জামনগর 
ডাকাতির অলঙ্কারাদি পাওয়া যাঁয়। তাহারা পুলিশকে লক্ষ্য করিয়া! 
গুলি ছুড়িয়নাছিল, কিন্তু লক্ষ্য ত্ষ্ট হয়। ছুই জনের ৫1৬ বংসরের 
কারাদণ্ড হয়। 

"ই মে কলিকাতা আরমেনিয়ান স্্ীটে হবর্ণকারের দোকানে 
৫১৪৫৯ ডাকাতি হয়। দোঁকানের ছুই জন নিহত হয়, ছুই জন 
আাহত ইয়। বিপ্লবীদের একজন নিহত হয়। তাঁহার পেটে গুলি 


২৩৬ ংলায় বিপ্রববাদ 


লাগে। তাহাকে টাণক্সিতে বহন করিয়! নেওয়া হয়। কিস্ত আঘাত 
গুরুতর বলিয়! বিপ্রবীরাই তাহাকে একটা নির্জন স্থানে নামাইয়া 
গুলি করিয়া! মারিয়া ফেলিয়া যায় । মুত ব্যক্তিকে সনাক্ত করিয়া 
জানা যায় তাহার নাম সুরেন্দ্র কুশারী | 

২০এ জুন রংপুর রাখালবুরূজে ৩১১৮৬ ডাকাতি হয় 
বাড়ীর মালিক ও তাহার পুত্রকে হত্যা করা হয়। 

২৩এ জুলাই ঢাকা সহরে পুলিশ কর্মচারীকে তার চে 
করায় একজনের অটি বৎসরের কারাদণ্ড হয় । 

২৭এ অক্টোবর ঢাক আবছুল্লাপুরে ( থানা মুক্সীগঞ্জ ) ২৪,৮৩৭, 
ডাকাতি হয়। টেলিগ্রামের তার কাটা ভয়। যে বাটিতে 
ডাকাতি হয় সেখানে যাত্রাগান হইতেছিল । বছুলোক নমাগম 
হইয়াছিল। 

শর! নবেম্বর অ্রিপুরা জেলার মাঝিয়ারায় ৩৩,০০২ ডাকাতি হয়। 

এই বৎসর আরও অনেক ধর-পাকড় হয় । তন্মধো গোহাটির 
থণ্ড যুদ্ধ বিখ্যাত । গৌহাটিতে বহু বিশিষ্ট ফেরারী বিপ্লবী থাঁকিত। 
সেখানে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করিয়া সকলেই বাহির হইয়া যায়। 
মুনীন্্ রায়, প্রভাস লাহিড়ী জখম অবস্থায় পরে ধৃতি হয়, নলিনী 
কাস্ত ঘোষও শেষে ধৃত হয়--সেও জখম হইয়াছিল । বাঁকি কতটি 
ধুতি হয় না । তন্মধো নলিনী বাগচী পরে (তারিণী মজুমদারের 
সঙ্গে) কলতাবাজারে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করিয়া মারা যায়! 
পুলিশ পক্ষও হত ও গুরুতর ভাবে আহত হয়। তন্মধোে গোমেনা 
বিভাগের উচ্চ কর্খুচারী বসন্ত মুখোপাধ্যায়ের আঘাত অতার্ 


ষড়যন্ত্র মামল! ২৩৭ 
গুরুতর। বাকী কয়জন পরে গভর্ণমেণ্টের সঙ্গে সর্ত করিয়া আত্ম- 
প্রকাশ করেন। 

এই সালেই ঢাঁকা স্টেশনে পুলিশ কর্মচারী যোগেন্ত্র গুপ্তকে 
হত্যার চেষ্টা করার অপরাধে প্রফুল্ল বাঁয় ও সতীশ সিংহ ধুত হয়, 
এবং দীর্ঘ কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়। 

এই বৎসরেই সিরাজগঞ্জে গোবিন্দ কর, এবং নিকুঞ্জবিহারী 
পালকে ধরিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাহারা স্থদীর্ঘকাল লড়াই 
করে। ছুই পক্ষই গুরুতররূপে আহত হয়। গোবিন্দ করের 
শরীরে সাতটি গুলি বিদ্ধ হয়, নিকুঞ্জও আহত হয়। নিকুঞ্জের 
বার বৎসর ও গোবিনের সাত বৎসর কারাদণ্ড হয়। এই গোবিন্দ 
করেরই কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হইয়াছে । 


পরিশিষ্ট 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচ” 


বাংলার বিপ্রববাদ প্রথম সংস্করণ বাহির হইবার পর আরও 
কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই সম্পর্কে পুস্তক লিখিয়াছেন। তম্মধো 
আলিপুর বোমার মামলার অন্ততম আসামী, যুগান্তর যুগের 
অন্কতম প্রধান কন্মী শক্তি হেমচন্দ্র কান্গনগো মহাশয়ের “বাংলায় 
বিপ্রব প্রচেষ্টা” একখানা । তিনি এই পুত্তকে সাধারণভাবে বাংলায় 
বিপ্রববার্দীদের সম্পর্কে, বিপ্লব আন্দোলন সম্পর্কে, এবং সেই সুত্রে 
বাঙালী জাতি ও বাংলার সমাজ সম্পর্কে যে, হতাশার চিত্র 
'আকিয়াছেন। তাহা বহুলাংশে একদেেশদশিতাঁয় বিরুত সমগ্র 
আন্দোলনের সহিত পরিচিত না থাকায় অসত্য বলিয়াই বিবেচিত 
হইবে। তিনি ১৯০৮ সালেই দণ্ডিত ভরা দেশের বাহিবে_ 
সুতরাং আন্দোলনের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হহয়াছিলেন। আমরা গোড়ায়ই 
বলিয়াছি, বিপ্রব যুগকে ভাল বা মন্দ বলিবার উদ্দেস্ঠ আমাদের 
নাই) ধাহারা বিপ্রব যুগকে সরাসরি বিচার করিয়া এক কথায় 
“ভাল” বা! “মন্দ? বলিয়! খালাস হন, তাহার বিপ্লধ আন্দোলনের 
'অস্তনিহছিত রতি ধারাটির সন্ধান জীনিলে ভাল বা মন্দ বলিতে 
হয় ত 'আরও একটু বিবেচনা করিবেন। সেই কারণে যদিও 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৩৯ 


আমর! ঠিক ইতিহাস লেখার মত এই আন্দোলনের ইতিহাস, 
লিখি নাই, তবু যে সকল ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে, বিপ্লবীদের যে 
সকল কর্মমচেষ্টা প্রকাশ পাইয়াছে, বাহার প্রমাণ অকাট্য, তাহারই 
বিপরীত কতকগুলি মিথা! গবেষণার ফল, সমগ্র বিপ্লব আন্দোলনের 
ঘাড়ে না চাঁপাইয়াও হেমবাবু তাহার স্বীয় অভিজ্ঞতা এবং তাহারই 
বিশ্লেষণমূলক কাহিনী সাধারণকে জীনাইতে পারিতেন, ইহা 
আমাদের বিশ্বাস । হেমবাবুর প্রতিপাগ্য বিষয় যে বথার্থ নহে, 
তাহা দেখাইতে প্রতিবাদে “বাংলার বাণী'তে যে লেখাটি প্রকাশিত 
হইয়াছিল তাহারই কতকাংশ পাঠকদের সুবিধার জন্চ এখানে 
তুলিয়া দিলাম । 

“গোড়ায়ই বলি, উদ্দাহরণ দিয়া বিপ্লবকন্ম সম্পর্কে অনেক 
কিছু বলা-ই, বিশেষ প্রশংসাযোগ্য কিছু প্রমাণ করা বিপজ্জনক-_ 
গ্রন্ধকারের সে বালাই ছিল না!) তিনি প্রমীণ করিতে বসিয়াছেন 
বিপ্রবের ব্যর্থতা, ক্ষুত্রতা, হীনতা, চরিত্রগত দুর্বলতা ঃ বিপ্লবীদের 
তথা জাতির অযোগ্যতা । বিপ্লবীদের যথার্থ ইতিহাস, স্বাধীন 
দেশেই বথার্থরূপে লেখা সম্ভব। অধিকাংশ কর্ধচেষ্টাও প্রমাণ করা 
শক্ত। প্রামাণ্য নহে বলিয়া নহে, কিন্ত কেন--তাহা' আইনজ্ঞ 
মাত্রেই জানেন। গোপন কর্মের অতিরঞ্জনও সম্ভব, অতিনিন্দীও 
স্ভব। যথার্থ ব্যাপার শুধু দরদী ও সেই সঙ্গে দেশের হিতকামী 
: ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাসম্পন্প ব্যক্তির দ্বারাই প্রকাশিত হওয়া 
স্উব। সে যাঁহাই হউক, শবপ্লধীদলের সঙ্গে গ্রস্থকারের পরিচয় 
অতি সামান্ত। কোনও আন্দোলনের আঁদিতে থাঁকিলেই সেই 


২৪ ংলায় বিপ্লববাদ 


আন্দোলনের মধো ও অস্তে তিনি ছিলেন বা সেই মধ্য ও 
অন্তের ক্রমবিকাশের বিষয়ে তাহার কিছু বলিবার অধিকাৰ 
সাবাস্ত হয় না। গ্রন্থকার ১৯০৮ সালে ধৃত হন। তার পর 
যাঁন দ্বীপান্তরে । সেপানে দীর্ঘকাল নিজ “দুষ্কৃতি”র ফল 
ভোগ করিয়া ১৯২৭ সালে রেহাই পান। দদুষ্কৃতি” কথাটা 
বলিলাম, গ্রস্থকারেরই বইখাঁনা পড়িয়া । নিনি যাহা করিয়াছেন-_ 
সেই ভুল--সেই ভুলের অন্রতাঁপ, ভূলের সঙ্গীদের উপর বিদ্বেষই 
তাহার সমন্্ পুম্তকে ছড়ান। তিনি জন কয় বিপ্রবী কর্মীর 
( এদেরই বলিয়াছেন বিশিষ্ট নেতা, কর্খরবীর ) কথা আলোচনা 
করিয়া প্রমাণ করিয়াছেন, আমাদের জাতীয় চরিত্র! আর এ 
সকল দোষের জন্ক দায়ী আমাদের সমাজ । এমনি ভাবে কিন্তু 
দেশের জনকয় কন্্ীও নেতার কার্যের আলোচনায় ঠিক ইহার 
বিপরীত প্রমাণও দেওয়ণ যায়| সুতরাং জাতীয় চরিএরও বিপরীত 
য়, সমাঞ্জও সেই চে প্রশংসনীয় হইয়! দাড়ায় । জাতীয় চরিহ 
কিন্ধ এত সহজে প্রমাণ করা যায় না। ইহাই আমাদের বক্তব্য । 

গ্রন্থকার বারীন বাবু ও “ক” বাবুর আলোচনাই সমগ্র বির 
আন্দোলনের সমালোচনা বলিয়াছেন। কারণ “এরা দুজনই 
'আদিগুরুদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তি, সবচেয়ে দেশপৃজ্য ও আশ 
পুরুষ বলে গণ্য ।” 

সত্যানিষ্ঠ লেকের এই সকল হেয়ালীপূর্ণ যুক্তি ছুর্বোধ্য! 
কোন আন্দোলনের আদিগুরু বা*পাইওনিয়ারই আনোলনের 
সর্বসময়কার গুরু থাকেন না। এই মোটা কথাট আমরা সবাই 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৪১ 


জানি যে, কোন-একটা আন্দোলন গোড়ায় বে ভাবে আরম্ত 
হয়, যে সকল লোক ছারা চালিত হয় এমন কি যে উদ্দেস্টে যে 
আদশে তাহা সুরু হয়, ক্রমে তাহার বন্ধ পরিবর্তন ঘটে, ভাব 
বদলায় আদশ পরাস্ত বদলায় এবং নাঁনা অভিজ্ঞতায় পন্থা 
বদলায়; পূর্বে থে সব ব্যক্তি যৌগ্য ও শ্রেষ্ঠ বলিয়৷ গণ্য হইত, 
পরে সে যোগ্যতার মাপকাঠিও বদলায়। বে উপলক্ষে কোন 
একটা দল গড়িয়া উঠে সেই উপলক্ষটিও শেষে অবান্তর হইয়া 
দলের কাছে নৃতন বৃহত্তর আদর্শ ও আকাক্ষা স্থতরাং দায়িত্ব 
ও কম্মপ্রণালী প্রবসন্তিত হয়। *ক' বাবু ওরফে অরবিন্দ বাবু 
দেশপূজ্য, বিপ্লবী বলিয়া নহেন,--কিস্তু কেন, সেকথা শিক্ষিত 
বাঙালী জানেন। বারীন বাবুকে দেশপূজা বা আদশ পুরুষ বলিয়া 
আমরা জানি না। তবে বিপ্বযুগের অন্গতম পাঁইওনিয়ার 
বলিয়া ক্কাহাকে লোকে শ্রদ্ধা করে । এই বে কাহগনগো মহাশক্ 
জীভির ও বিপ্রবীদের নিন্দান্পপ অপকাষ্য আঁজ করিতেছেন-_ 
তীহাকেও লোকে তেমনি অন্ততম পাইওনিয়ার বলিয়াই গণা ও 
শ্রদ্ধা করে। কিন্তু বাংলার এবিপ্রবের চেষ্টার” ১৯০৮ সালের 
পর ১৯১৫-১৬-১৭ পধ্যন্ত যে সকল কন্মী দেখা দিয়াছেন-_ 
তাহারা, কর্মী হিসাবে,--অভিজ্ঞ ও নিষ্ঠাবান কম্মী হিসাবে-_- 
ত্যাগী হিসাবে যথেষ্ট যোগ্যতা দেখাইয়াছেন_-তাহাতে সন্দেহ 
শাই। এই বিপ্লব আন্দোলনে মৃত ও দণ্ডিত বনু ব্যক্তির নাম করা 
ধা-্বাহারা কি ত্যাগ, কি সাহস, কি শৃঙ্খলা, কি সম্কজপ, 
কি বিপ্রবনিষ্ঠা, কি স্বাধীনতার আকাঙ্ষান়্ হেমবাবুর বনিত 


১৬ 


২৪২ বাংলায় বিশ্লববাদ 


'ফাকিবাজ ধেৌয়াটেঃ নহেন। তিনিই লিখিয়াছেন “বারীনের 
উপর অনেকেই চটিয়াছিল-_-তার নেতৃত্ব কেউ আমল দিত না; 
আর বারীন নেতা না হইয়াও নিজকে নেতা বলিয়া জাচির 
করিয়াছিল! বারীন বাবু যখন এমনি মেকী নেতা, তথন 
ঠাহারই সমালোচনা, সমগ্র বিপ্লব আন্দোলনের সঠিক সমালোচনা 
বলিয়া কেন গ্রাহ্থ হইবে? বিপ্লব আন্দোলনে বরাবর “আদশ' 
ব্যক্তি বলিয়া গণা ও মানস একজন ব্যক্তির সমালোচনায়-বরিয়! 
নিলাম-_সমগ্র আন্দোলনের আলোচনা হয়, কিস্ক যখন তাহাদের 
দলের অনেকে তখনই বারীন বাবুর উপর চটিয়! গেলেন? তাহার 
নেতৃত্ব মানিতেন না-তথন তাহাকেই ধরিয়া “আদশ” দাও 
করাইবার চেষ্ট। কেন? এ দলেই কানাহ, সত্যেন সুশীল 
ভট্টাচার্য প্রভৃতি যদি ব্যতিক্রম, সমগ্র বিপ্লব আন্দোলনে বারান 
বাবুই বা ব্যতিক্রম নন কেন ?--“ক বাবু ভিন্ন ধাতের লোৌ-_ 
বিপ্লবের নাকি বিশেষ কিছু খুঝিতেন না; তবে ভাহাকেই ধারা! 
তাহার সমালোচনায় সমগ্র বি্িধ আন্দোলনের সমলোচনা কেন 
এখানে “আদি, লইয়াও কথা উঠে। বাংলার এই বব 
আন্দোলন, “ক? বীবুর এষ্টি নয়, বারীন বাবুরও নয়) কাগনগে 
দশায়ের “স* বাবুরও নহে । ইংরেজী শিক্ষা বিস্তার এবং চৈতন্ 
ও রাহমোহনের, বঙ্কিম বিবেকাননোর বাংলার নব ভাব গ্রাহী 
নুক্ত মনের উত্তরাধিকার সুত্রে বাংলা থে মন পাইয়াছিল তাহাই 
স্বদেশ! আন্দোলনের উপলক্ষে ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়। ্ 
পূর্ে *গপ্ু সমিতি স্থাপন করিয়া ইংরেজ মারার চেষ্টা যাধা 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৪৩ 


হইয়াছিল তাহা না হইলেও জাতীয় সাহিত্য প্রভৃতিতে 
থে স্বাধীনতার বাণী উচ্চারিত হইতেছিল--তাহাতে বে 
দেশাতআবোধ দেখা দেয়--তাহাই বীাধনহারা গতিতে বাংলার 
যুবকদের ক্রমে বিপ্লবের দিকে ঠেলিয়া দেয়; “ন্বদেশী”ও শেষে 
অবান্তর হয়--অরাজকতা! হৃষ্টিও শেষে আদর্শ হিসাবে পরিত্যক্ত 
হয়। এই আন্দোলন কৃত্রিম নয়-জাতির দ্বতংম্ঘুর্ভ দেশাজ্মবোধ 
আহত ও নির্জিত হইয়া স্বাধীনতা আকাক্ষায় বিপ্লবে »পাইয়া 
পড়ে ।--কেহু পথ দেখায় নাই--পথই পথে টানিয়াছে--ন্তোও 
'অবাস্তর ১ কন্মীর পর কন্মী এই পথে জুটিয়াছে,__ নেতা পিছাইয়া 
পড়িলে স্বাধীনতার আকাজ্কাই কর্মীদের “পথ নির্দেশ” করিয়াছে । 
এই আন্দোলন কোন সভা সমিতি বা বৈঠকে স্থির হয় নাই-- 
ইহা বাংলার জাতীয় জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ । আজ এই 
আন্দোলনকে খেলে! করিতে কাঁরো৷ কারো চেষ্টা চলুক, ইহার 
বার্থতাঁও স্থুল দৃষ্টিতে ধরা পড়িবে--কিন্তু পরাধীন জাতির এক 
অংশের স্বাধীনতার চেষ্টায়-আপ্রাণ চেষ্টার ফলে--যে সমগ্র 
জাতির মধ্যে স্বাধীনতার আকাজ্জা জাগ্রত করে তাং শত প্রতি- 
ক্রিয়ার পরেও বাংলার সমাজে রাষ্ট্রে সাহিত্যে রে হইয়া আছে । 
আমরা বলি না বা বিশ্বাস করি না! যে, তিনি এই ১৯০৮ সাল 
পথ্যন্ত যে সকল বিপ্লবীদের ( বারীন বাবু টা ) কুৎসা কীত্তন 
করিয়াছেন, ধাহাদ্দিগকে হেয় প্রতিপন্ধ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন 
তাহারা সবাই কব এই প্রকমই। যাঁদ ধরিয়াও রেওয়া যায়, 
থে বাঁবীন বাবু অবববিন্দ বাবু বা দেবব্রত বাবু । গ্রন্থকারের মতে 


বাংলায় বিপ্নববাদ 


দেবব্রত বাবুর মিথ্যা! বলাই ছিল অভ্যাস) প্রভৃতি এই রকমেরই, তব 
একথা প্রমাণিত হন না যে বিপ্লবী নেভারা, বিশিষ্ট কম্মীরা সবাই 
ছিলেন নামের পাগল, কর্তৃত্বপ্রিয়। ভীরু, নিজের মুক্তিই 'আগে 
চাহিতেন, ম্রিতে ও মাঁরিতে ভয় পাইতেন, স্বার্থপর, মন্তরশুপ্থি 
ছিল না, দৈবশক্তিতে বিশ্বাসী, বুক্তরুক ইত্যাদি ।-_ আমর 
সৌভাগ্যবশেই তবে ১৯০৮ সালের পরে বিপ্রব আন্দোলনে যোগ 
দিই । আমরা অনেক বিপ্রবী নেতা ও কন্ী দেখিয়াছি বাহারা নাঃ 
চান নাই--মন্ত্রগুপি ধাহাদের ছিল, একবার নহে বহুবার বিপদে 
পড়িয়াও, সাক্তা পাউয়াও সবার বিপ্রব দলে যোগ দিয়াছেন 
কোন কোন বিপ্রবী ১৯৮ সালে পভ দিত, লাঞ্চিত তহইযা 
১৯২৩-২৪-২৫-২৬ সালেও আবার "আন্দোলনে যোগ দিয়াছেন 
বলিয়া সরকার ধরিয়াছেন এবং বিচারে সাজা দিয়াছেন । একবার 
ছ্বীপান্তর হইতে ফিরিয়া বা জেলে গিয়া উাদ্দের নত বদলায় 
নাই-দলের নিন্দা করিয়া কেভাবও লেখেন নাহ । বাংলায় 
বিপ্লব আন্দোলনের আাহারাই মধ্য ও আন্ত | আদিতেও ছুই চার 
জন ছিলেন--ভাভারা কেহ মদ্িয়াছেন- কেহ লীরাধে আছেন 
্মপকল্্ করেন নার্ঁ। 

হগ্রস গোড়ার কি উদ্দেস্টে হ্াপিত হইয়াছিল? তৎপ 
কোন্‌ ধরণের রাজনীতিক 'আকাক্াসম্পন্ধ বাক্তি কংগ্রল 
নেতত করিত? সেট কংগ্রেম শাজ কোথায় মাসিয়াছে- আদশ। 
কন্দপদ্ধতি, ,বক্ছ্ী ও নেতৃত্বের যোগাতাঁ বদলাইয়া যায় নাই (ক? 
সেই ৫২ বছ্ধরের আগের কংগ্রেসের আলোচনা করিয়া সেই সং 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা ২৪৫ 


কন্মীদের আদর্শ ও যোগ্যতার কথা কহিয়া যদি কেহ বলেন--ছোঁঃ ! 
তবে কি তাহা আজ সত্য হইবে? ভা হইবে না; কিন্তু এমন 
অকৃতজ্ঞই বা কে আছে বে, এর ষে গ্রোড়ায় ধাহারা কংগ্রেস 
করিয়াছিলেন--তাহাদের সঙ্কীর্ণ আদর্শ সত্বেও তাহাদের প্রাপ্য 
সন্মান ও শ্রদ্ধা না করিবে? ১৯০৪ সালেরও পূর্ব হইতেই 
বাংলার সাহিত্যের মধ্য দিয়া বিশেষ ভাবে ক্কাধীনতা-বাণী প্রচারিত 
হইয়াছিল সত্য-_কিন্ক তবু এই বিপ্লব আন্দোলন এদেশে নৃতন। 
নূতন আন্দোলনে অনেক বাজে-লোক, ভবিস্ততের ভীষ্ণতা উপলব্ধি 
না করার জন্য প্রথমটায় যোগ দেয় অনভিজ্ঞতার দরুণ অনেক 
ভুল অনিচ্ছার হয়, প্রথমটায় আদর্শ ও কন্মপদ্ধতিও সুস্পষ্ট হইয়া 
উঠে না। এই সবই সব আন্দোলনের স্ত্রপাতেই হয়। কিন্তু তাঙা 
ধরিয়া পরের ক্রমবর্ধমান-স্ুনির্দিষ্ট আন্দোলনকে কেহ একতরফা 
বিচার করে না--করা যে সঙ্গত নহে তাঁহা বারীন বাবুর উপর 
বিদ্বেবশতঃ কান্গনগো মহাশয়ই হয়ত বুঝেন নাই-অন্থায় এ 
১০1৭: 1২১07থান। পড়িয়াও বুঝিতেন । গ্রন্থকার চ১০%1৪50 
1২৩০7 খানা পড়িয়া যেখানে আন্দোলনের ক্রটি আছে তাহাই 
বাহির করিয়াছেন ;কিন্তু,উ্র রিপোর্টেও যেখানে আন্দোলনের শৃঙ্খলা, 
সাহস, নিষ্ঠা, সন্মুথসংগ্রামপ্রবৃতি প্রভীতির বর্ণনা আছে,_তাহা 
তিনি দেখেন নাই। দেখার ইচ্ছা! গোড়া হইতেই তাহার ছিল না । 

হেমবাবু তাহার বইয়েঞলিখিয়াছেন আলিপুর মামলায় নাকি 
অনেকেই গুগ্তকথা প্রকাশ করিতে বাস্ত, খালাস পাইবার জন্থ 
দোষ শ্বীকারে ব্যস্ত, নেতারা মুক্তির জনক অতিব্যস্ত। এবং 


২৪৬ বাংলায়. বিলিববাদ 


ইহাই সমগ্র বিপ্লবীদের স্বভাব বলিয়াছেন। এ সব তিনি প্রকাঁশ 
করিয়া জাতির বিপ্রব-অযোগ্য স্বভাবেরই প্রমাণ দিয়াছেন। 
কিন্তু সরকারী মামলায়ই প্রকাশ, টাকা ফড়যন্ত্ মামলায় পর়তান্লিশ 
জনের মধ্যে একজনও গুগুকথা প্রকীশ করে নাই । কোন নেতাই, 
কোন কল্্ীই খালাস পাইবার জন্য অভিব্যন্ত ভয় নাই । দেশন 
আদালতে পুলিন বাঁবু বলিয়াছিলেন, “সমিতির সকল কাজের, 
জন্য একমাত্র আমিই দায়ী, আমি সাজ! নিতে প্রন্তত--াব 
সকলেই নির্দোষ 1,-মামলায় দীন দরিদ্র আসামীর হন্ও 
সি. আর. দাঁসই খাঁটিয়াছেন। সকলের জন্ত একই ব্যবস্থা । 
বরিশাল ষড়বন্্ মামলায় একে অপরকে বরং ালাদ কবিতে 
চাঙিগয়াছে । শেষে ব্যারিটারের সঙ্গে পরামশ মত সরকারের 
সঙ্গে একটা আপোস হয়। তাহাতে কতজন এই সন্ত দোং 
স্বীকার করেন বে+ নির্দিষ্ট কতটি কর্মীকে বেকম্্রর খালাস দিতে 
ভইবে, এবং স্বীকারের ফলে যাহাদের সাজা হইবে তাহাঁদেরও 
মেয়াদ নামমাত্র ভইবে । এই দোষ স্বীকার কিন্কু একরার নয় । কে 
কি করিয়াছে, থাকে কি করিয়াছে বলা নঙে, কেবল মাত্র 2 হাথ 
0021 91 0975178০--এইটুকু বলিয়াছে, তাহাও সঞ্লের 
সিদ্ধান্তে এবং বাকি সঙ-কর্মীদের মুক্ত করারই জন্য। সবাই 
থালাস পাওয়ার জন্ত (বিশেষ নেতারা ) যে অতি বাস্ত হন নাই' 
তাভারই প্রমাণার্থ এই কথা বলিলাম ৫ 

রাজ্জাবাজার বম কেসে দীলেশ দাসগুপ্ত যতক্ষণ তীহ'ব 
আম্মীয় তাহার অপর সঙ্গীদের মামলাও একজে করিবার বাবা 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৪৭ 


না করিয্নাছিলেন ততক্ষণ নিজে উকিলের সাহাষ্য নেন নাই ।--. 
সকলকে ছাড়িয়া নিজের মুক্তি ধনীও চায় নাই--বার টাকা আছে 
তার মামলাও যে আলাদা চলে নাই সেজন্তই এই একটা ঘটনা 
বলিলাম । এমনি আরো! প্রমাণ উল্লেখ কর! যায়। গ্রন্থকার কিন্তু 
তাহার অভিজ্ঞতায় বিপরীত কথাই বলিয়াছেন । 

বিপ্লবীরা ধৃত হইয়া সর্বত্র খালাস হইতে বন্য হয় নাই। 
্রন্থকারের বণিত আলিপুর মাঁমলান--নেতারা! খালাস হইবার 
জন্য বাস্ত হইয়। সব বলিয়া দিয়াছে--কন্শীরাও অনেকে তেমনি 
খালাস হইবার জন্য অতি ব্ন্ত ও 'গ্রতিযোগিতায়* ইনফরমেশন, 
দিয়াছে প্রভৃতি বদি সত্য বলিয়া ধরিয়াও নেওয়া যাঁয় তবু তাহাতে 
প্রমাণিত হয় না, স্ুদীঘ বিপ্লব আন্দোলনের ইতিহাসে অসংখ্য 
মামলার বিপ্লবী আসামীরা তেমনটাই করিয়াছেন। বরং করেন 
যে নাই ঠিক তেমনি ঘটনা আমার নিজেরই ২৮টি জানা আছে-_ 
আরে কত ত নিজেজানি না । 

সোনারঙ্গ মামলা-_-এগার জন আসামী, একজনও একটি 
কথাও বলে নাই। টাকা গুলিমারা মামলায় দুই জন, কেহই কিছু 
ধলে নাই। কুমিল্লা ডাকাতি মামলায় সাত জনই সাজা পায়, এক 
জনও কোন কথ! বলে নাই। রাজেন্দ্রপুর টণ ডাকাতিতে চার 
পাঁচ জন ধৃত হয়, কেহই কিছু বলে নাই। নরিয়া; বাহ্রা, গোপচরেও 
তেমনি। টট্টগ্রীম খুনের মামলায় একরার নাই। প্রাগণুর 
ডাকাতিতে কেহ কিছু”বলে নাই। লঙ্ষৌয়ে বাঙালী সুশীল 
লাহিড়ীর ফাঁসি হইলেও একরার করিয়া বাঁচিতে চাহে নাই। 


২৪৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


রাজাবাজার বম কেসে পাঁচজনই নুদীর্ঘ হ্বীপাস্তরে দণ্ডিত হয় 
একজনও 00101555101; করিয়া বাঁচিতে চায় নাই । বড়া কেছে 
ধৃত আসামীরা কেউ একরার করে নাই । চাক বসুর ফাসি হয়, 
একবার করে নাই, কাউকে জড়ায় নাই, বাঁচিতে চায় নাই । যতীন 
বার সার এগ, ফ্রেজারের উপর আক্রমণ করে-দশ বছর সাজা 
ভয়--একরার করে নাই । দক্ষিণেশ্বর বম কেসে ধৃত আট দশ 
জনের কেহই একবার করে নাই | দীঘ সাজা পাইয়াছে 1 গৌ্ছির 
গুলির মামলায় দীর্ঘ সাঙ্তা পাইয়াছে- কেহই একরার করে নাই । 
সিরাজগঞ্জের গুলির মামলায় দীথ সান্তা হই ল,কেহ কিছু বছে নাই । 
সক জমাদাঁর গলিতে পুলিশের সঙ্গে দাঙ্গাব মামলার 
সাক্তা হয়, আসামীরা কেহ একরার করে নাই । এছাড়া পাও 
কোন মামলায়ই নেতস্থানীয়গণ এব" বিশিষ্ট কল্্ী খালাস পাছার 
কল্প মোটেই কন্ফেশন করেন নাই । গ্রন্থকার প্রমাণ কাছে 
চাভিয়াছেন, জেল মন্ত 1610111)219৮বোধ হয় ভিনি বয় ও 
তংসঙ্গীদের 10101705000) দেখিয়া এই সিদ্ধাত। করিয়াছেন। 
তার বক্তবা এই-বাগালী বিপ্লবীদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নি 
ছিল না, ভাই একবার জেলে গিয়াই সবাই 46107170007 হইয়া 
গেল--আর পথ মাড়ায় নাই | “আমাদের দেশের জেলথানা 
ধাঁজপ্রোহীদের পক্ষে অব্যর্থরূথে বিফমে টরী”--একথা গ্রন্থকার 9 
তস্য সঙ্গীদের 'অনেকের বেলায় হয়ত ব! সত্যই কি বিপ্লব আন্দোলনে 
তাদের পর বাহারা ছিলেন, গোর্টা বাংলার সেকঈ বাঁপক 
আন্দোলনের ইন্ডিহাসে অধিকতর বিপ্রবনিষ্ঠঃ শক্তঃ ঘাঁঠাকে কন 


“বাংলায় বিপ্লুব প্রচেষ্টা” ২৪৯৮ 


5091017)8 সম্পন্ন ব্যক্তির অভাব হয় নাই। গ্রন্থকার তীহাঞ্জের 
“১৯০৮; পর্যন্ত পরমাধু বিশিষ্ট দলের নিষ্ঠার অভাব, স্থথগ্রিয়তা, 
দুর্বলচিত্ততা লক্ষ্যহীনতা । ত্বাহারই মতে ) প্রভৃতি দ্বারা যদি বিপ্রব 
'আন্দোলন তথা জাতীয় চরিত্রের অবোগ্যতা প্রমাণ করিতে চাহেন, 
তবে ঠিক তেমনি বিপরীত বহু দৃষ্টান্ত দ্বারা জাতীয় চরিত্রের বিপরীত 
দিকই প্রমাণ করা যায়। বিপ্লবীদের ভীয়লেন্স সমর্থন জন্ত নহে-_কিন্তু 
গ্র্তকারের উক্তি যে মিথ্যা সেজন্ত এসব কথা উল্লেখ করিতে হয়। 
বহু বিশিষ্ট বিপ্রব-কন্মী ১৯০৭-০৮ সালে একবার লাঞ্ছিত 
ভইয়। পুনরায় এই আন্দোলনেই ঘোগ দিয়াছেন, আবারও 
দণ্ডিত হইয়া মুক্ত হওয়ার পর পুনরায় এ আন্দোলনে ঝাঁপাইয়া 
পড়িয়াছেন, এর প্রমাণ আছে। এদিকে বাঙালী যুবকদের, 
তথা জাতির ১৭112 অভাব, নিষ্ঠার অভাব গ্রন্থকার 
দেখাইতে মিথ্যা কতগুলি বাজে কথা বলিয়াছেন, তাই এ লব 
কথা বলিতে হইতেছে । শ্রীযুক্ত গোবিন্দচন্ত্র করের পাঁবনা গুলিমারা 
( পুলিশের সঙ্গে বিপ্লবীদের লড়াঁই হয়, দুই দলই গুলি চালায়) 
মামলায় সাজা হয় সাত বৎসর দ্বীপান্তর। তাহার শরীরে বহু*স্থানে 
গুলি বিদ্ধ হইয়াছিল। হাসপাতালে গোটাকয় কাটিয়া বাহির 
করে--বাকি কয়টা শরীরেই থাকিয়া যায়। তাহাতে তাহার 
শরীরে ব্যাধিও দেখা দেয়। সাত বৎসর পরে তিনি মুক্ত হইয়া 
আসেন। সরকারেরই ওবিবরণীতে প্রকাশ, তিনি পুনরায় 
১৯২২-২৩ সালে বিপ্রবআশ্দোলনে যোগ দেন। কাকোরী ষড়যন্ত্র 
মামলায় তিনি একজন প্রধান আসামী, যাবজ্জীবন দ্বীপাস্তরে 


' ২৫০ বাংলায় বিপ্লিববাদ 


দরণ্ডিত। এসব লোক আমাদের হাতে হাতে স্বর্গ আনিয়া 
দিতে পারে নাই বা পারিত না বলিয়া এদের বিপ্রবনিঠা ব! 
স্বাধীনতা লাভের জন্ত আঁকাঙ্ষা ও তজ্জন্ত নিধ্যাতন ভোগের 
“আত্মপ্রসাদ” ছিল না, একথা বলা হেমবাবুরই শোভা পাঁয়, 
কারণ তিনি বারীন বাবুর ও তীহার নাম করিয়া সমগ্র বাঙালী 
জাতিরই নিন্দা করিতে বসিয়াছেন। 

শীধুক্ত যোগেশচন্্র চট্টোপাধ্যায়--কুমিল্লায় পুলিশের হেপাঁনত 
হইতে পাঁলাঁন, পরে গুপ্ভাবে থাকেন। ১৯১৭ সালে তিনি 
পাথুরিয়া ঘাটায় ধত হন | পরে তিনি যে নির্যাতন ভোগ করেন 
বলিয়া সংবাদপত্তে প্রকাশ, তাহা 0010130৮15৬ এ ছাপ! 
তইয়া আছে! ভাহার সর্বাঙ্গে বিঠা ঢালিয়া দিয়া জান না 
করাইয়া রাখিয়াছে'--জল পিপাসায় মূন্রপূন বোতল দিয়াছে । 
ধড়লাটের কাছেও পরে এই মন্মে দরখাস্ত ঘাঁয়। থাহাই হউক, 
নির্যাতনের কথা নহে ) কথা এই, এর পরও কাজনগো মহাশষে, 
78001178017, ত ঘটে নাট । পরে তিনি 1020101017এ 
'আটক হন--তাঁর পূর ১৯২০ সালে যুক্ত হন। আবার ১৯২, 
সালে অভিস্কান্দে আটক ভন।  30900678 না থাকিলে- 
সরকারী বিবরণ ও বিচারে প্রকাশিত ও সাব্যস্ত যাহা হইয়াছে 
ভাঙাই বলি-+১৯২৬ সালে কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলায় ভাহারই 
'আবার যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হইত না। ৪ তাহাতে প্রকাশ তিনি যুক্ত 
প্রদেশে বিহারে নানান্থানে বিপ্রব কেন্দ্র স্থাপন করিয়া কাছ করিতে 
ছিলেন। শুধু জেল নর, অমাচুধষিক নিধ্যাতন সহিবার পরেও 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৫৯ 


গ্রন্থকারের কথা মত সকলেরই 16011861011 হয় না দেখা গে) 
স্বাধীনতার আকাজ্ষাও কমে না। কুতকাধ্য হয় নাই বলিয়া 
ইহাদের স্বাধীনতার আকাক্ষা অন্বীকার করিব? বাংলার 
বুবকেরা স্বাধীনতার জন্ত নির্ধ্যাতন ভোগে আত্মপ্রসাদ লাভ 
করিত না বলিয়াই নির্যাতনে হীন হইত--গ্রস্থকারের এই উক্তি 
যে সতা নয়, এই জন্বই কথাগুলি বলিলাম । আর সব পরাধীন 
জাতির স্বাধীন হইবার যোগ্যতার মতই বাঙালীরও যে যোগ্যতা 
আছে তাহাই বলিতে চাই । এই প্রসঙ্গে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, রাঁজেন্জ 
লাঁহিভী গ্রভৃতি আরো কত নামই করা ধায়। তা ছাড়া পুনঃ পুনঃ 
দণ্ডিত হইয়াও স্বাধীনতা কামনা কমে নাই--বিপ্রব আন্দোলনের 
কন্মী বলিয়া পুনঃ: ধৃত, দণ্ডিত, 1২5৫৮170107 ও 0101780০5এ 
অন্তরিত ব্যক্তির নাম ত কতই করা বাঁর। আপাতত যে কর়টি 
নাম মনে আদিল দিলাম £-_-বৈলোক্ চক্রবস্তী। বারকয় সাজার পর 
পনের বছর দ্বীপান্তরে দ্ডিত হন, মুক্ত হইয়া পুনরায় 7২৪5, [তে 
বিপ্লবী বলিয়া অবরুদ্ধ হন ' পূর্ণচন্্র দাস, বিপিন গাঙ্গুলী, নরেন 
মোহন সেন, প্রতুল গাঙ্গুলী, রবীনত্রমোহন সেনু, ভূপতি মজুমদার, 
গিরীন্্র বন্দ্যোপাধ্যায় ্ুরেন্্র ঘোষ, রমেশ চৌধুরী, কিরণ মূখাজ্জী, 
বলমেশ আচার্য মনোরঞ্জন পু ইত্যাদি। 

বিপ্রবীরা ধরা পড়িলেই বাচিবার জন্ত বাঁকুল হইত--আর 
এই ব্যাপারটা “ছেলেখেন্াই” ছিল, বাচিতে পারিলে সেজন্যই 
ব্যস্ত হইত, এইসব প্রমাণ করিতে হেমবাঁবু তীহার দলের জন 
করেকের বীচিবার অতিবাস্তত! দেখাইয়াছেন। অবশ্য ছুই চার 


৫ বাংলায় বিপ্লববাদ 


41 


জনের নিভীকতার বর্ণনাও দিয়াছেন--কিন্ত তাহার মধোও নাদের 
নেশা। মন্ত্রগুপ্তির অভাব প্রভৃতির '(প্রমীণ দিতে ব্যন্ত হইয়াছেন। 
কানাই ও সত্যেনের কাধ্য সেই সব বাক্ভালের অস্থরালে পড়িয়া 
মান হইয়া গিয়াছে । 

বিপ্রব আন্দোলনে সব সময়ে কর্মপ্রণালী একভাবে চলে না। 
১৯১৪ সালের পর বিপ্রবীরা পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়েব ভাব 
দেখায়। তাহাতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হইয়াছে-বাগালা রবকেবা 
যে-কোন দেশের শ্বাধীনভাকামীদের মত সাহস, কোশল ও 
দুটতা-সম্পন্প । সুযোগ পাইলে তাভারা আপাতছ্টিতে অসান 
নেক কিছুই সাধন করিতে পারে। লড়াই করা বেখানে স্থির 
সেপানে তাচারা অল্পসংখাক বসংখ্যকের বিরুদ্ধে লড়াই কৰিছে 
“প্রাণের মায়া” দেখার নাই-বরং বিপরীত প্রমাণই দিয়া | 
'অথচ তখনও ইচ্চা করিলেই "অনেকেই একবার করিয়া বাচিতে 
পারিভ। ক্বেমবাবুর চোখে এসব পড়ে নাই--অথচ+ পবাংজায় 
বিপ্রবপ্রচে্ী” তিনি লিখিয়াছেন। দুষ্ট চারিটি ঘটনাই মাত বলিখ। 
বালেশখদে ম্যাজিট্রেটের বাহিনীর সঙ্গে যতীক্জুনাথ, চিন্তীগায়। 
মনোরঞুন লড়াই করে) এবং মুক্তা বরণ করে-এক জনের হাসি 
হয়। সে লড়াই ছেলেখেলাই বটে ! 

বলা যাইতে পারে ওতে আর কি ভইল ?--কি হইল গে 
কথার প্রমাণ বা প্রতিবাদ করিতে ঝুসি নাই। গ্রন্থকার যদি 
কেবল বলিতেন--বাংলার বিপ্লবীরা দেশে স্বাধীনতা আনিতে 
পারে নাই--তাহা মাথা পাতিয়! মানিভীম বা এই পথ ভাল নে 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৫৩, 


বলিলে নীরব হইতাম। কিন্তু তাহার্দের চেষ্টাকে খাটো করার, $ 
বঙ্গ করার, গুধু বাহিরের কাজ নয়, অন্তরটাঁকে পর্যন্ত ছোট 
করিয়া দেখানোর মতলবটাই আমাদের প্রতিবাদ করার 
বিষয়। কারণ উরাহার বই লেখার উদ্দেস্ট বারীন বাবু নন, সকল 
বিপ্লবী তথা সমগ্র বাঙালী জাতি । 

কলতাবাজার- ঢাকাতে নলিনী বাগচী ও তারিণী মজুমদার 
বহু সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে অনেকক্ষণ পর্ধান্ত লড়াই করে, অনেককে 
খুন জথম করিয়া শুলিতে আহত হইয়া গ্রাণত্যাগ করে। নলিনী 
বাগচী মরিবার সময়ও নিজ নাম প্রকাশ করিয়া যায় নাই। 
কেহ তাঁহাকে জানুক, ইহা তাহার কাম্য নহে। এমনি পারার 
'মন্ত্রুপ্তি” বিপ্লব 'মান্দোলনের ইতিহাসে বহু মাছে। আমরা 
তাহা জানি; হেমবাবুর জানা না থাকিলে প্রয়োজন হইলে সেই 
প্রমাণও দিব। এই মন্্গুপ্তির অভাব লইয়াও তিনি কত নিন্দা, 
বিদ্রপঃ নিরাশার কথাই না কহিয়াছেন ! 

গৌভাঁটিতে--শান্ত্ীদের বন্দুক একদিকে, বিপ্লবীদের পিস্তল এক 
দিকেঃথগুযুদ্ধ চলিল, শুধু চলিল ন৷-_সৈন্চদের ব্যহভেদ করিয়া গুলি 
ছঁড়িতে ছুড়িতে তাহারা জখম হইয়া ও জখম করিয়া বাহির হইয়া 
গেল। পরে ছুই চার জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধৃত হয়। অমানুষিক 
নির্যাতন সহিয়াও সেই দলের নলিনীকাত্ত ঘোষ, প্রবোধ দাসগুপ্ত 
নর প্রভৃতি কেহই একটি কথাঁও পুলিশকে বলে নাই। বগুড়াতেও 
বিপ্রবীরা খওষুদ্ধ করিয়া বাহির হইয়া যায়। তারতবাঁসীদের মধ্য 
যে জাতিহিসাবে বাঁগালীই মরিতে ও মারিতে স্বভাবতঃ ভীরু, 


2৫৮ বাংলায় বিশ্লববাদ 


'১গ্রস্থকারের এই উক্তি যে সত্য নয়, তাহারই প্রমাণের জন্য তাহার 
বণিত ঘটনার বিপরীত কয়েকটা বৃত্তান্ত বলিলাম। 
ডাকাতি, পরস্বাপহরণ কে সমর্থন করিবে? বিপ্লবীদের সেই 
কারা আমরা সমথন করিতে বসি নাই; কিন্ত এই অপকাধ্যটিকে 
হেমবাবু “বিধবার থটি চুবি আখ্যা দিয়া ইহার শ্বরূপটি বে বিকুত 
করিতে চাহিয়াছেন, তাহা সত্য নহে ইহাই বলিতে চাই । 
হেমবাবু উল্লেখ করিয়াছেন কাহাদ্দের টাকা ডাকাতি কৰা 
হইবে এহ প্রশ্ন উঠিয়াছিল | রাশিয়ার বা 'আনন্গঘঠের নত 
“যে অথশালী ব্যক্তি, খয়ের খাই বা নুখবীরের (1110110)0) 
কাজ করত, অথবা থে সাধারণের অপ্রিয়, অত্যাচারা, পর্স্বাপহারী, 
সদথোর--” তাহাদ্দেরই উপর বৈপ্লবিক ডাকাতি হইত 1কণা 
তাহার কোন হিসাব জানি লা| কিন্ত এই ডাকাতি গ্রন্ধকাৰ 
বণিত বিধবার ঘটি চুরি অর্থাৎ েখানে কোন ভয় নাই সেই 
নিরীহ বিধবার হাজার টাকা গ্রহণের বীরত্--যষে বিধবার “বাঁড়ার 
'মাশে পাশে এমন পুরুষ মানুষ কেউ ছিল নাঁ যেঃ ডাকাতগদ 
একটুও বাধা দিতে পাবে অথাৎ হিংসা কন্ডে পারে”-এমশি 
ডাকাতিই যে কেখল বিপ্লবীরা করিয়াছে ইহা সত্য নছে। 
ডাকাতি নিন্দার্ই মনে করি, কিন্তু বাংলার বৈপ্লবিক ভাকাও 


বির 
| 


বে গ্রন্থকারের বণিত বিধবার ঘটি চুরি নহে, বাহ ডাকাতি প্রভাত 
বন্ধ ডাকাতিতেই যে আক্রান্তের কেবল বাধা নহে বুকও 
চালাইয়াছে, বিপ্রবীরা বছ স্থলে আহতওখ্চইয়াছে, ইহা সত্য কথা। 
বলা বাল্য মাত্র যে, 'সীমরা ডাকাতি বা খুন কিছুই সমথন 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৫৫ 


করিতে বসি নাই। তবে গ্রন্থকার অন্যায় স্থযোগ গ্রহণ (এ 
সবের যথাবথ উত্তর দেওয়! যায় না বলিয়া) করিয়া যে বিপ্লবীদের 
জঘস্ক ভাবে খাটো করিতে কলম ধরিয়াছেনঃ অমর! তাহারই 
প্রতিবাদ করিতেছি । অনভিজ্ঞতা হেতুও তিনি এসব কথা বলিয়া 
থাকিতে পারেন, তাহার সকল কথার প্রতিবাদ করার স্থান 
ও কাল ইহা! বদিও নহে, তবু আমর! সামান্য ইঙ্গিত করিয়া! ইহাই 
বলিতে চাহিতেছি যে, বিপ্লবীদের সঠিক চিত্র তিনি কেন নাই-_ 
'আমাদের মনে হয় ইচ্ছা করিয়াই আকেন নাই । 

গ্রন্থকার ২০৬1৪৮1২০০৮ হইতে দেখাইতে চাহিয়াছেন 
বেঃ বিপ্লবীরা অনেকেই ও কথা সব বলিয়া দিয়াছিলেন। 
[২০14৮ 1২9০/1 বিপ্লবীদের খাটো করিবার সহজ মতলবেই 
লিখিত । তবু বলি, 1২০1৪ 1২০0০70এর শ্রী কথা ১৯১৮ সালের 
কথা। কিন্তু ১৯০৮ সাল হইতে ১৯১৮ সাল পধ্যন্তের ইতিহাস 
কোথায় % তখন কয়জন নেতা, কয়জন বিশিষ্ট কন্মী গুপ্ত কথা 
বলিয়াছে, কয়জন মন্ত্রগুপ্তি নষ্ট করিয়াছে? আসল কথা এই--১৯১৪ 
সালের পরে ১৯১৫-১৬ সালের মধ্যে গ্রায় সকল নেতাই ধৃত হন। 
তখন অত্যন্ত নূতন এবং অপরীক্ষিত অনভিজ্ঞ লোকই বিপ্লব 
আন্দোলন চালায় । ১৯১৭-১৮ সালেও বাহারা ধৃত হয়, তম্মধো 
বাহার পুরাতন বিশিষ্ট কম্মী তাহাদের সংখ্যা বেশী নহে+ (যথা 
শলিনীকাস্ত ঘোষ, অমৃত স্বরকার, ভূপেন্্র দত্ত প্রভৃতি )। তাহারা 
অমাঙগষিক নিধ্যাতন সহিষ্ছেন__ কিন্তু একটি কথাও ৮৬০৪১" 
করেন নাই। অমৃত সরকার ও নলিনীকান্ত ঘোষের অমানুষিক 


২৫৬ ংলায় বিপ্লববাদ 


নিধ্যাতনের কথা প্রকাশিত হয়। স্থতরাং শেষকাঁলের -১৯১৮ 
সালের, তখন দলের জমাট ভাঙ্গিয়! গিয়াছে--ধৃত কেহ কেহ ( সেই 
ংখ্যাও মোট বিপ্রববাদীদের তুলনায় অনেক কন) একরার 
করিয়াছে । ইহাদের মধ্যে অল্প সংখাকই নরেন গৌসাই শ্রেণীর। 
কেহ কেহ হতাশ হইয়াছে, কেহ কেহ মনে করিয়াছে পুলিশ 
যখন সবই জানে, তথন 'আর না বলিয়া মিছামিছি নিধাতন 
ভোগ করি কেন? কেহ আবার পুলিশ যতটুকু জানিয়াচ্ছ, 
ভাহাই বলিয়া 17061150] হইতেও  চাতিয়াছে-1তাঘাগতা 
হইতে পলাইতে পান্ধিবে, এই মতলবেও বলিক্কাছে। কাহাকেও 
পুলিশ ত্রান্তও করিয়াছে । অমুক অমুক বিশি্ট কম্মা এ 
বলিয়াছে--এই ভাবে মিথা বলিয়! ভ্রান্ত করিয়াছে । ইহা অবশ 
আমরাও বিপ্লব আন্দোলনের গ৭ বলি না কিন্তু ব্যাপারটা বা 
হইয়াছে তাহার সত্যকার দিকটা দেখানই কি কাসুনাগো মহীশরের 
কর্তব্য ছিল না? 

বিশেষ একটা সময়ের? বিশেষ একটা অবস্থার 'আহাশক 
ঘটনা, সমগ্র আন্দোলনের বাথ রূপ বলিয়া প্রমাণ করিতে বাওযা 
শশার সেই প্রমাণ বলেই সমগ্র জাতির দোষ্খণ কীর্ধন কর 
সমীচিন নহে । 

আমরা পূর্ধে দেখাইয়াছি যে, বিপ্লবী কন্মীরা ধরা পড়ি! 
সবাই খালাসের জন্ক বাস্ত হয় নাই, প১প্তকথা ব্যক্ত করে নাই, 
নাম জাহির করে নাউ, পরম্পরকে জড়ায় নাই-বছ মামলায়ও 
যে একরার .নাই, তাঁহাও দেখায়াছি। হেমবাবু, প্রথমটা 


“বাংলায় বিপ্রব প্রচেষ্টা” ২৫৭ 


বারীন বাবুর স্বীকাঁরোক্তির কথা টানিয়া আনিয়৷ বলিতেছেন, 
(বারীন কেন এমন করেছিল তার কারণ ঠিক ধরতে না পারলেও” ) 
'বারীনের অবস্থায় পড়লে যে দেশ-উদ্ধারকারীরাও ও-রকম কঃরে 
থাকে, তা দেখানোর জন্তই 'অত কথী লিখছি ।” গ্রন্থকারের 
উদ্বোস্ঠা ছু+টি এক ব্যক্তিগত হিসাবে বারীনবাবুকে ঘায়েল করা-_. 
অপর সমগ্র বিপ্লব আন্দোলন, তথা এই দেশবাসী--সবাই । 
“বারীনের 'অবস্থায় পড়লে সবাই বে তা ক'রে থাকে” (করে থে 
থাকে না, তাহা বহু ধৃত দর্ডিত বাক্তির ঘটনায় দেখাইয়াছি ) 
তাহা তিনি প্রমাণ করিয়াছেন--বীরেন্্র দভ্তগুপ্তের 50809170271 
হইতে । বীরেন দন্তগুপ্ত "অপেক্ষাকৃত বালক । বিপ্লব আন্দোলন 
তখনও এদেশে নৃতন। অভিজ্ঞতা কম। বীরেন সামসুল 
আলমকে ভাইকোটে হত্যা করে। বীরেন্দ্র ফাসির পূর্ববদিন স্বেচ্ছায় 
মাজিপ্রেটের (রাউলাট রিপোটের কথা ) সাদনে একরার করে। 
মে বলে, “জ্ঞানেন্ত্র মিত্র নামক বালকের হার! বতীন্দ্র মুখাঁজ্জি নামক 
একজন ভদ্রলোকের সহিত আমি পরিচিত হয়েছিলাম ।” (তার 
পর যুগান্তর পড়া ও বীরত্বপূর্ণ কী করার ইচ্ছী--পরে সাদস্ুল 
আলমকে হতা? করার পরামশ, ফতীনের আদেশ ইত্যাদি বলিয়া । 
“আমি যতীনের অনিষ্ট করবার জন্ক এই এজাহার দিচ্ছিনা । 
আঁম বুঝতে পেরেছি এনাঁকিজম্‌ দ্বারা দেশের কোন হিত হবে 
না। যেসকল নেতা 'আমাধু ওপর দোষারোপ ক'রে বল্ছেন”--এ 
কাণ্ড ঘটেছে কোনও মাঁথাপাগল বালকের দ্বারা, তীদের আমি 


দেখাতে চাই, আমি একলা এ কাজের জঙ্ক দায়ী নই । আমার 
৯৭ 


২৫৮ বাংলায় বিপ্লববাদ 


ও বতীনের পেছনে অনেক লৌক আছেন, কিন্ত আমি তাদের 
নাম এই এজাহারে উ/ল্পথ করতে চাই না। বে সকল নে; 
আমার দোষ দিচ্ছেন, তারা দয়া করে এগিয়ে আন্থন এবং 
আমার মত খালকদের সতপথে চালিত কর্ন 1৮ (সিডিল 
কমিটির রিপোর্ট হইতে গ্রন্থকারের অন্নবাদ )। 

সিডিসন কমিটি -স্থতরাৎ হেমবাবুও বলিয়াছেন এহ এজাহাঃ 
ল্বে-চছায়। বীরেছ দিয়াছে 1! কাল বাহাব ফাসি হইবে তাহাকে তে 
কোন লোভ দেখতিয়া এই একবার করান ভয় নাই-ইহী পা 
যায়। কিন্দ একই বালকটির 9৩০৪১এ]এর মুলে যে কত? 
মানসিক উত্তেজনা বডিয়াছে এবং এই অনভিজ্ঞ বুবকের মানসিক 
সাম্যতী শু করাব জল্গ ঘে কি কি ব্যবস্থা হইতে পারে ৭ 
ভইয়াছিল, ভাতার সংবাদ কে বলিবে? কিস্ক এই একরারেই বাছ 
প্রকাশ তাহা হতেই কি কাছনগো মশাই। বিপ্রকীদের এত আনশ্থ 

থাটিয়াও। এঠ মনপ্তক বুঝেন নাই! হত স্পষ্ট বঝা ঘা 
বাবরেনকে ভেলে সংবাদপর নিয়া দেখান হইত, ( আাধারণত। 
কিন জেলে সংবাদপত্র নিয়া পড়ায় না) সব শন্ঃ বছর 
বাছিয়া হে সংবাদপঞে বালককে নিন্দা করা হইয়াছে মাঘাপাগিণ 
বলা হষয়াছে। ভাভাই পড়ান হহত। 

দেশের লোক ভাহাকে পাগল সলিতেছে ইহা মে শীনয়াছে। 
হথন অনতিজ্ঞ বালকের মনে হতে পারে, সামি একা নত ধি 
মামাকে দোষ দিতেছ-মাধো অনেক লোক আছে। হাট 
যদি পাগল ভষ্, উহাঁরাও পাগল । নেতারা এখন নিলা ক 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেঞ্ী” ২৫৯ 


আগে বাহবা দিয়াছেন ; বাহারা নিন্দা করেন, তাহারা এগিয়ে এসে 
আমাদের মত ছেলেদের সৎপথে চালিত করুন ।--কেহ বিপ্রবী- 
কাণ্ডে ধরা পড়িলে, অপর পক্ষে পুলিশ কি কি ব্যবস্থা করিতে 
পারে এবং করে, কোন্‌ কোন্‌ কথা বলিয়া মন দমাইয়া দিতে 
চেষ্টা করে, স্বদেশের লোকদের দুর্বলতা প্রভৃতি দৌষ দেখাইয়া 
কি কি ভাবে ত্রাস্থ করিতে পারে তাহা বিপ্লবীরা ক্রমে অভিজ্ঞতা 
হইতে শিখে । বীরেন্্রকে পুলিশ সংবাদপত্রের ০০0৫৯ 
পড়াইয়া পড়াইয়া ও নেতারা যে তাদের মত ছেলেদের বিপদ্দে 
ফেলিয়া নিজেরা সাঁধু সাঁজিতেছে এবং দেশের সমস্ত ভাল লোকই 
যে তাহাদের নিন্দা করিতেছে, উহা বুঝাইয়া এই 91766079116 
কবিতে প্রেরণা দেয় বধঙলিয়াই এদেশে প্রচার । সুতরাং বারীন 
বাবুর স্বীকারোক্তিকে সমর্থন করিতে বীরেন্ছের শ্বীকারোক্তি 
তলিয়া সব “দেশোদ্ধারকারীরা' যে এমনই একবার করিয়া 
থাকে, তাঁত] বঙ্গা চলেনা । বহু ব্যক্তি ষে করে নাই? তাহা 
আমরা বলিয়াছি--হালের কাকোরী মামলায় ফাঁসির পূর্বের কেহ 
একরাবর করিয়াছে গ্রন্থকার জানেন কি? বীরেনের নজির 
্রন্থকারের কথামত মানিয়া নিলেও তাহার সিদ্ধান্ত প্রমাণিত 
ইয় না। কিন্তু বীরেনের বাঁপারও থে স্বতন্ত্র তাহাই বলিতে 
বীরেনের 5১091917167 একটু সমালোচনা করিলাম ! অবশ্থয 
বীরেনের মত বালকদের দল্লে টানার সঙ্গতি-অসঙ্গতি ভিন্ন কথা। 
ব্যক্তি হিসাবে বারীন বাবু বা কাহীকেও সমর্থন কর! আমাদের 
উদ্দেশ্ত নহে । যত বড় লৌকই হউন, যদি দেশের সেবায় 'ছেড়ে 


২৬০ ংলায় বিপ্লববাদ 


দিলাম পথটা বদলে গেল মতটা” এই নীতি অনুসরণ করেন তবে 
বেশী দিন তাহাদের প্রভাব গ্রতিপন্তি থাকে না। কিন্ত গ্রন্থকার 
লিখিয়াছেন যে কয়েকজন নেতা বা কম্মবীরের দোষ দেখাইয়া তিনি 
জাতীর চরিত্রের হীনত। প্রতিপন্ন করিয়াছেন। এই জন্তহই আমপাও 
ঠাহার লেখার প্রতিবাদ করিতে বাধা ইয়াছি। আমাদের 
জাতীর চরিত্রের নানা দোষ জ্রুটি নিশ্চয়ই আছে! নতুবা এখনও 
পরাধীন আছি কেন । কিন বারীন বাবুর দোষ ( ধরিয়। নিঙ্গাম) 
বদ প্রকুত পক্ষে খাকিছা থাকে। তাহা হইলে সমস্ত জাতীর 
চারজই কপুবিত হইয়া গিয়াছে এমন যুক্তি কোথাও শুনি নাই । 
আলিপুরের বোমার মামলার আসামীগণের মধো বেমন নানন 
গোস্বামী ছিল, তেমনি সতোন বসু 2 কানাই দর্তও ছিলেন, 
উল্লাকরও "আছেন । দেশের সকলেই পারাপ লোক একথা 
কিছুতেই প্রতিপন্ন হয় না। 

ফেমবাবু গবণমেণ্টের প্রকাশিত 139৯1000561) াদোনা 
শাল করিয়া পড়িলেই মোটামুটি বুঝতেন বে সম দেশাই 
ভাঙ্গার বর্ণিত ১5০8 মত ছিল না। ক নিলোভ' নিরঠদাধ 
নীরছদয় ঘূবক নীরবে নিশ্চিজ্গ হয়া বিপ্রব প্রচেষ্টায় আগদান 
কখিয়া গিয়াছে । থাহারা অজ্ঞাত অখ্যাত হইয়া পু আগা 
বলিদানের জাবন মার্ক মনে করিয়া গেল, সেই সন্ত চিরে, 
লোক হেমবাবুর চঙ্গে পড়ে নাই । নি “বিশ বাইশ বইসা 
নিদারণ 'অভ্ি্ঞতায়” নাকি বুঝিতে পারিয়াছ্ছেন থে ২:10 
নত ভীকর এদেশের সকলে । 


“বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা” ২৬১ 


এই “নিদারুণ অভিজ্ঞতা” শব্দেই তাহার মানসিক অবস্থা 
প্রকট হইয়াছে। আন্দামানের “নিদারুণ অভিজ্ঞতায়” অনেকের 
নত তাহারও জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হইয়াছে । আজ লাহ্ন। 
ভোগের পর তিনি নিজের হৃদয় দিয়া বুঝিতে পারিয়াছেন বে 
দেশের সমন্ত লোকই ভীরু, কাপুরুষ! 

কাজনগো। মহাশয় আমাদের জাতীম্ম অযোগ্যতা প্রমাণ 
করিতে বারীন বাবু, “অ” “বাবু “ক? বাকু তথা সমগ্র বিপ্লব 
'আন্দোলন এবং সেই সঙ্গে সমাজের দোব ক্রটির কালো চিত্র 
'আফকিয়াছেন | সমাজের দোঁষ-ত্রটি আছে, কিন্ত সমাজের দিক্‌ 
হতেও বাঙালীর নিরাশ হইবার কিছু নাই। আর মুক্তিকাষ 
বিপ্লবীদের কাঁছে সমাজ অপরিবর্ণনীয় বন্ধন বলিয়া মোটেই গ্রান্ 
হয় নাই। 'আমরা বলিয়াছি, আমাদের দেশে সমাজে দোষের 
অন্ত নাই । কিন্তু গত শত বর্ষ যাবত দেশে যে সামাজিক বিপ্রব 
আরম্ভ হইয়াছে তাহ! আজ পধ্যন্ত জাতিকে উন্নতির পথেই 
অগ্রসর করিয়া দিতেছে; জাতির উন্নতির পরিপন্থী সর্বপ্রকার 
কুসংস্কার ও সামাজিক কুরীতি ক্রমশ দূরীভূত হইতেছে | সমাজ- 
নংস্কার বিষয়ে জাতিহিসাবে আমরা জগতের কোন জাতি অপেক্ষা 
কম পরিবর্তনশীল নই ; ইহা আমাদের জাতির সামাজিক জাতীয় 
ইতিহাসের দ্বাদশ সহন্র বখসরের পাতীয় লিপিবদ্ধ । ঝাষ্্রবন্তা 
ধাহাকে, আজ অচলায়তনক্, করিয়া রাখিয়াছে--রাস্ী সপক্ষ 
হইলে তাহা দেশ কালের হাত ধরিয়া চলিতে পারিত ।-_যা 
ইহা তর্কের কথা। হেম বাবুর বধিত সমীজ-চিত্র সন্বেও ইহ! 


কি 


4১1৯ 5514 
1৯1৫ 





18৯ 8115. 


4 
১০০০ 
০০ 

ঈঠে 
(পারার 


11০৮ 


তল শা লা জাপা শী পশিপপপ? পজপশপর্৯প পাপ্পপী 





জপ 


পাতি £ 


এন এ | শ্র1হ হাস 


টা 2০৫ টিটি 





রসি পপ 


[৭,1০1 5 
ু 





€ 
লে 


ক 





২০০ ভাপ আপ পর পাপা পন পাপা 


শ্+ »৯ 
প্পাাপিপপীপাপাশি পাপা শা চি পিপি পাপ সা ২» ৮ সি পিল 


252 2৮38৯ ৪৪ 











। 89৮ 2৯ 1৬৮ 1৮৮৮ 2801813825৯355 
(5195 12519 5৯৪ 21৯ ৪৪ 51৮2৬ [61218 ১৪৮ 5 87৬৯515 55:৬৪৬৮ 2০৩৩ 15৯1৮ 19৮ 1 2158৯ 6৯৮ 0৮৬ 


৪৮৮০1৫ ৮5 0532 ইউ 87155) 5 82191৮58) 15785 187 জ5 138 ৪৯ ৪৮৭১ 219 ১০০৯) ৪15 
1৮৮৮ ভব 18 ৪৪ £525126 ৯5৬৯) 8151 (25 5৮০) ৮তশািতত ত815 1 4৪৪ ৪3 95280 88৯3৯ 29051 
1৬:১৫ 2৮ 1৮05 5৪)58 ৬০ 98৯8 ৬৩০ উ৬এ৬১০ ৯ কুছ) ৯০ ৪০৮ ৯১ 0৮ ৮৮০৩২১১৪৪৬১